শিশু নির্যাতন এবং আমরা

লিখেছেন লিখেছেন ফাহমিদা সুলতানা শিল্পী ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১২:১২:২১ দুপুর



আমার দেখা ১ টি ঘটনা বলি। শিশুটির নাম নুর। বয়স ৬ বছর। ভিকারুন নেসা স্কুলের প্রথম শ্রেনীর ছাত্রী। পিটানোর জন্য তার মায়ের হাতে থাকত একটা লাঠি। রাতের ঘুম বাদে সারা ক্ষণ পড়ার টেবিলে থাকতে হত তাকে। একটি ৬ বছরের শিশুকে পরার জন্য অনবরত চাপ দিত তার মা। পড়তে গিয়ে এক চুল ভুল করলে গাল ধরে টেনে দিত। মাঝে মাঝে আমার সন্দেহ হত নিজের মেয়ে কিনা। তার মায়ের খুব ইচ্ছে তার মেয়ে ডাক্তার হবে। অথচ ডাক্তার পেশা সম্পর্কে কিছুই জানে না নুর। নুরের শৈশব মানেই পরার জন্য লাঠির আঘাত,গাল টানা আর মায়ের ভর্ত্সনা।

প্রতিটি বাবা মা তাদের সন্তান কে খুব ভালবাসে। তাইতো জীবনে নিজেরা যা হতে পারেননি তা সন্তানদের মাঝে দেখতে চান। সন্তানের মধ্যে নিজের আকাঙ্খা চাপিয়ে দেন। জন্মের ৪/৫ বছর পর শিশুটি যখন জগত সম্পর্কে কিছুই জানে না তখন থেকেই তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হয় বড় হয়ে কি হবে। সব বাবা মা চায় ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবে তার সন্তান। এইচাওয়ার মাঝেই শিশুটির স্বাভাবিক বেড়ে উঠার প্রথম পেরেক মারা হয়।

সব শিশুর মানসিক গঠন একরকম নয়।অথচ সব শিশুর জন্যই আমরা একই পাঠ সূচী রাখি। এর ফলে কোনো শিশু পরীক্ষায় ভালো করে কেউ খারাপ করে। এতে তাদের মধ্যে হীনমন্যতাবোধ জন্ম নেই। ক্লাসে প্রথম ,দ্বিতীয় ,তৃতীয় - ভালো ছাত্রের এই ক্রম বিন্যাসও শিশুদের মধ্যে হীনমন্যতাবোধ জন্ম দেয়। অর্থাত আমরা স্কুলে পাঠিয়ে তাদের মধ্যে এক ধরনের হীনমন্যতাবোধ জন্ম দেয়ার ব্যবস্থা করি। অথচ শিশুটি জানলোই না এটার জন্য সে দায়ী না।

বাবা মা হলেন শিশুদের মডেল। তারা সব সময় বাবা মাকে অনুসরণ করে। আর বাবা মা শিশুদের এতই আদর করেন যে সব কাজের সিদ্ধান্ত তাদের ওপর চাপিয়ে দেন। এর ফলে বড় হয়ে ওই সন্তানটি আর নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না ,সারা জীবন সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগে ।

ইদানিং যমুনা টেলিভিশন শিশু দের সাংবাদিক হওয়ার লোভনীয় প্রস্তাব দিচ্ছে। এর ফলে যে বাবা মায়ের সাংবাদিক হওয়ার ইচ্ছে ছিল তারা তাদের সন্তানদের নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়বে। আর যে সব শিশুরা যেতে পারবে না তারা নিজের ভাগ্য কে দোষারোপ করবে।মিডিয়ার উচিত নয় অন্তত শিশু দের নিয়ে এরকম কাজ করা।

বিষয়: বিবিধ

১৩৭৮ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

262286
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:৩৪
নিউজ ওয়াচ লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
262287
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:৪০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার জরুরি একটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন। এখন কার তথাকথিত শিক্ষিত পিতামাতারা নিজেদের ইচ্ছাকে সন্তানদের উপর এমনভাবে চাপিয়ে দিতে চান যেন সেই সন্তান এর কোন নিজস্ব ব্যাক্তিসত্বা নাই।একবার কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজারে একটি ঘটনা পড়েছিলাম। রোগাক্রান্ত একটি ১০-১১ বয়সি মেয়ে শয্যাশায়ি। তার পাশের শয্যায় থাকা মহিলাটি হঠ্াত মেয়েটির কান্নার শব্দ শুনে দেখেন যে মেয়েটির মা এক হাতে বই নিয়ে তাকে পড়াচ্ছেন আর আরেক হাতে না পারলে তাকে মারছেন। এই ভাবে যে সকল তথাকথিত ভাল ছাত্রছাত্রি তৈরি হচ্ছে তাদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে আত্মকেন্দ্রিকতার। যারা নিজেদেরকে মনে করে মানুষের চেয়ে উপরের কেউ। আর তার ফলে সমাজে সৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন সমস্যার।
262294
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:৫৬
কাহাফ লিখেছেন : শিশু সন্তানদের কে কঠোর শাসনে নয়,বরং স্নেহ-ভালবাসা মিশ্রিত মৃদু শাসনে গড়ে তুলতে হবে। প্রচন্ড চাপ শিশুর মন বিগড়ে দিতে পারে।
262307
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:১০
ইমরান ভাই লিখেছেন : শিশুদের শৈশব হোক আমাদের সন্ধাতারা আপাজির কবিতার মতো Big Grin
262319
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:৩৪
মাহফুজ আহমেদ লিখেছেন : সুন্দর শিক্ষামূলক লেখা পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
262325
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:৫৭
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : শিক্ষনীয় পোস্ট দেয়ার জন্য ধন্যবাদ লেখককে
262347
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৯
নূর আল আমিন লিখেছেন : || অসাধারন একটি গুরুত্বপুর্ণ টপিক তুলে ধরেছেন!!! তবে একটা জিনিস জানি!! রশি বেশী টাইট দিতে গেলে ছিড়ার সম্ভাবনাই বেশী
262348
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৯
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসলে অনেক চিন্তায় আছি, ছেলে মেয়েদের কিভাবে মানুষ করবো! কিভাবে শিক্ষা দিলে তাদের মনমানসিকতাও ঠিক থাকবে এবং পড়া লেখা ও আখলাখ চরিত্রও সঠিক ভাবে গড়ে উঠবে! এখন সিদ্ধান্ত নিলাম প্রথমে ৩ বছর নূরানীতে দিবো। তারপর মেধা ও মানসিক দিক বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবো ইন-শা আল্লাহ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File