নারীর নামে ঝড়ের নাম
লিখেছেন লিখেছেন ফাহমিদা সুলতানা শিল্পী ১০ মে, ২০১৪, ০৩:১৭:৪৬ দুপুর
ধেয়ে আসছে ক্যাটরিনা। ঘণ্টায় ২৮০ মাইল বেগে আসা এই ঝড়ের কারণে ফ্লোরিডাতে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা জারি করা হয়েছে।
যখন কোনো ঝড়ের সংবাদ এভাবে পত্রিকায় পড়ি তখন মনে হয় ঝড়ের নাম কেন মেয়েদের নামে করা হলো ? মেয়েরা কি এতই বিধ্বংসী নাকি ইচ্ছা করেই এমন নাম দেয়া হয়? শুধু বাংলাদেশে নয় পৃথিবীজুড়ে বেশির ভাগ ঝড়ের নাম নারীদের নামে রাখা হয়।
নার্গিস, ক্যাটরিনা, মারিয়া, হেলেন, লায়লা, রেশমী, নিলুফার, নিশা, বিজলী, প্রিয়া, চপলা, মালা, তিতলী, মোরা, কোমেন, আইলা, কেইলা, নিনা, পাউলাইন, আইনিকি, সিডর, নাডা মাদী, হিক্কা, তালাশ-এসবই মেয়েদের নামে ঘূর্ণিঝড়ের নাম।
আবহাওয়াবিদদের ভাষায়, ঝড়ের নাম এমনভাবে রাখা হয় যাতে সহজে কেউ ভুলে না যায়। নাম হবে সংক্ষিপ্ত, খুব পরিচিত এবং দ্রুত লিখতে, পড়তে ও বলতে পারা যায়। আবার ঝড়ের ভয়াবহতা বোঝাতেও নামগুলো তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এনসারস্ ডট ইয়াহু ডটকম-এ কেন নারীদের নামে ঝড়ের নাম রাখা হয় এ প্রশ্নের তাৎক্ষণিক উত্তর এসেছে যে নারীদের সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি না থাকায় এ ধরনের নাম রাখা হয়। আবার অনেকে নারীদের ভয়াবহতার কথা তুলে ধরে বলেছেন তাই ঝড়ের নামে এদের নাম রাখা হয়।
১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে দেখা গেল যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ও নৌবাহিনীর আবহাওয়াবিদরা গ্রীষ্মম-লীয় ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিতে শুরু করেন মেয়েদের নামে । খামখেয়ালীভাবেই এসব নাম দেয়া হতো। পরে আবহাওয়াবিদরা বর্ণমালার ক্রমিক অনুযায়ী ঝড়ের নাম দেয়া শুরু করে। যেমন বছরের শুরুতে যে ঝড়টি হবে তা এ' দিয়ে এ্যানী' নাম দেয়া হবে। ১৯ শতকের শেষের দিকে দক্ষিণ গোলার্ধের আবহাওয়াবিদরা পুরুষের নাম দেয়া শুরু করে। বিংশশতাব্দীতে এক অস্ট্রেলিয়ান আবহাওয়াবিদ সাইক্লোনের নামকরণ করতেন তার অপছন্দের রাজনীতিবিদদের নামে।
২০০০ সালে ওমানের মাসকাটে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার ২৭তম সভায় আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগরের সাইক্লোনের নামকরণ নিয়ে একটি ঐকমত্যে পেঁৗছে। সদস্য দেশগুলোর অনেক দেনদরবারের পর ২০০৪ সাল থেকে আমাদের এ অঞ্চলে ঝড়ের নাম দেয়া শুরু হয়।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পাওয়া একটি নামের তালিকা থেকে দেখা যায়-নর্থ ইন্ডিয়ান ওসানের নামকরণের তালিকায় ভারতে মেয়েদের নামে ঝড়ের নাম খুবই কম রাখা হয়েছে। শুধু একটি নাম ছিল বিজলী। বাকি নামগুলো হলো-অগি্ন, আকাশ, জল, মেঘ, সাগর, বায়ু, লেহার ছিল। ৮টি নামের মধ্যে ভারত একটি নাম মেয়েদের দিয়েছে। বাংলাদেশ মধ্য অবস্থায় থাকলেও পাকিস্তানে ৮টি নামের মধ্যে ৭টিই মেয়েদের নামে ঝড়ের নাম রেখেছে। যেমন নিলুফার, তিতলী, নার্গিস, লায়লা, কেইলা, ভারদা (অর্থ গোলাপ ফুল), নিলাম। বাংলাদেশে ৭টি নামের মধ্যে ৩টি নাম মেয়েদের নামে দিয়েছে। যেমন-নিশা, হেলেন, চপলা। ঝড়ের নামকরণে নির্দিষ্ট নিয়ম থাকলেও কোনো দেশই তা অনুসরণ করে না। তা ঝড়ের নাম দেখেই বোঝা যায়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এস এম কামরুল হাসান জানান, আমাদের এখানে চিন্তা করে নাম দেয়া হয় না। ছেলে বা মেয়ে অর্থাৎ লিঙ্গভিত্তিকভাবে চিন্তা করে আমরা নাম দিই না। নামগুলো সাইক্লোন সম্পর্কিত কিনা তা দেখা হয়।
অর্থাৎ মেয়েরা বিনাশকারী, অপয়া। তাই তাদের নাম ঝড়ের নামে রাখা হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক জানান, ৮টি দেশ মিলে (বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড) প্যানেল মিটিং হয়, সেই মিটিংয়ে নাম স্থির করা হয়।
ইবাইস ইউনিভার্সিটির শিক্ষক নজরুল ইসলাম রাসেল জানান, ওই মিটিংয়ে যারা বসেন তাদের মধ্যে জেন্ডার বায়াসনেস কাজ করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নাসরীন আহমেদ জানান, আগে ঘূর্ণিঝড় সাইক্লোনসহ
বিভিন্ন ঝড়ের নাম বিভিন্ন ভাষার অক্ষর পরম্পরায় রাখা হতো। কিন্তু এতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও অধিকাংশ নামই মেয়েদের নামের সঙ্গে মিলে যেত। বিষয়টি যখন কর্তৃপক্ষের কাছে ধরা পড়ে, তখন থেকে এর পুনরাবৃত্তি ঘটেনি। মেয়েদের নাম ছাড়াও অসংখ্য ঝড়ের নাম ভিন্নভাবে এসেছে।
তিনি বলেন, ঝড় মৌসুমের আবহাওয়া অধিদপ্তর ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, সিংহলসহ বিভিন্ন ভাষায় নাম দিত। কিন্তু এগুলো বাংলাদেশি মেয়েদের নামের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। কিন্তু এটাই যে তাদের উদ্দেশ্য এটা নিশ্চিত করে বলার অবকাশ নেই।
নার্গিস, ক্যাটরিনা, মারিয়া, আইলা অন্যান্য ভাষায় মেয়েদের নাম হিসেবে ব্যাবহার হয় কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্যান্য ভাষায় মেয়েদের নাম না হলেও আমাদের দেশি ভাষায় এগুলো যে মেয়েদের নাম এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই। তবে সামগ্রিক বিবেচনায় বিশ্ব আবহাওয়া অধিদপ্তরের রাখা অধিকাংশ ভাষাতেই এ নামগুলো মেয়েদের নামে হয়ে যেত বলে তিনি জানান ।
নারীর নামে ঝড়ের নাম এই বিষয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে দৈনিক যায় যায় দিনে লিখা আর্টিকেলের পেপার কার্টিং
বিষয়: বিবিধ
১১৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন