কিছু কথা (2)
লিখেছেন লিখেছেন আরিফা জাহান ১৪ এপ্রিল, ২০১৮, ০৫:৩৭:৪৬ বিকাল
আমি এক মধ্যবিত্ত সন্তান ।
বাংলাদেশে থাকলে পড়াশুনার জন্য আমাকেও হয়তো হলে থাকার জন্য যুদ্ধ করতে হতো যেমনটা করেছে আমার বন্ধুরা।
বিদেশে পড়াশুনার সময়টুকু আমি হলেই থাকি ।
আমি খুব সাধারণ একটা সরকারী হলে থাকি।
কিন্তু বাংলাদেশের সরকারী হলেগুলোর অবস্হা আর বন্ধুদের কাছে তাদের প্রতিদিনের হলজীবনের ফিরিস্তি শুনে মনে হয় আমি বোধহয় কোন রাজমহলে থাকি ।
শুধু আমি না, আমার মত যারা দেশের বাইরে হলে থাকে বাংলাদেশের হলজীবনের সাথে এখানকারটা কম্পেয়ার করলে এটাই বলবে ।
আকাশ পাতাল তফাত মনে হয় ।
এখানে হলের প্রভোস্টরা প্রত্যেকটা ছাত্র ছাত্রীর সব ধরনের সুযোগ -সুবিধা দিতে বাধ্য ।
এবং তাঁরা আন্তরিকও ।
প্রতি সপ্তাহে বেড কভার চেঞ্জ করা থেকে শুরু করে জানালার পর্দা থেকে প্রতিদিন, ফ্রিজ, আলমিরা, ফ্লোর, করিডোর, সিঁড়িসহ বাথরুম, টয়লেট পরিষ্কারের জন্যে আলাদা আলাদা ক্লিনার ।
আলাদা ওয়াশিং মেশিন ,ড্রাই মেশিন ।
বাংলাদেশে হলে ছাত্রদের নিত্য সাথী ছারপোকা তেলাপোকা ত অনেক দূরের কথা এখানে মশা মাছির কথাও ভুলে গেছি ।
একদিন জাস্ট কয়েক ঘণ্টার জন্য গরম পানির লাইন বন্ধ ছিলো, কতৃপক্ষ মাইকে এনাউন্স করে তার কারণ বলে আন্তরিক ভাবে স্যরি বলল ।
এখানে গরম পানি না আসাতে তাদের কোন হাত ছিলো না।
তারপরেও তারা স্যরি বলে নিজেদের বড়ো বৈ ছোট করে নি।
খাবার সার্ভ করার ,ডাইনিং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ঝকঝকে তকতকে রাখার আলাদা আলাদা কর্মচারী ।
সবাই সবার সাথে আন্তরিক ।
কেউ তার নির্দিষ্ট দায়িত্বের বাইরে কোন কথা কিংবা কাজ কিছুই করছে না ।
আমি সাধারণ সরকারি হলগুলোর কথা বলছি ।
প্রাইভেট হলগুলোর সার্ভিস ও দেখেছি যার সাথে ভিআইপি বিশেষণ যোগ করলে অতিরিক্ত বলা হবে না ।
এখানে আমাদের বেডরুম, স্টাডিরুম,ডাইনিং থেকে শুরু করে সবখানে সবার অধিকার, প্রাইভেসি নিয়ে যার যার সাতন্ত্র্য জীবন ।
সিনিয়ররা জুনিয়রদের আন্যায় ভাবে ডমিনেট করা তো দূরের কথা কারো সাথে অযৌক্তিক অহেতুক খারাপ আচরণকারীর বারোটা বাজতে বাধ্য, সে যেই হউক না কেনো ।
অনেক দেখেছি ।
এগুলো শুনা কিংবা পড়া কিছু না।
বিদেশে আমার হলজীবনের অভিজ্ঞতা এটা ।
খুব অল্প বলেছি ।
সব লিখা সম্ভব না ।
আর দেশের হলগুলোর দুরবস্থার কথা তুলে বিদেশী হলে নিজের ভালো থাকার কথা বলার মতো
নির্লজ্জতা ,ছ্যাবলামি দেখাচ্ছিনা বিশ্বাস করুন ।
এটা এই জন্য বল্লাম যে, এরা দেশের ভবিষ্যতের কর্ণধার , আগামী পৃথিবীর ভরসা এই ছাত্রদের সবরকম সেবা, আন্তরিকতা আর ভালোবাসায় তাদের যথাযথ অধিকার নিশ্চিত করছে ।
আর বাংলাদেশে সরকারী হলগুলোতে? ??
নিরীহ ছাত্র ছাত্রীদের মানবেতর জীবন, পলিটিক্স, তথাকথিত বড়ো ভাই /আপুদের দৌরাত্ম্য, সিটের জন্য যুদ্ধ, সিনিয়রদের কাছে অপমান -অপদস্থ, শারীরিক -মানসিক টর্চার, দলাদলি, বিচারহীনতার যে বাস্তব চিত্র তাতে হলগুলোকে নিরীহ ছাত্রদের জন্যে জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না ।
জাহান্নামের মত এখানেও স্তর আছে ।
নতুন ,ফার্স্ট ইয়ার, সেকেন্ড ইয়ার হিসেব করে অত্যাচার ভিন্নতা থাকে !
কঠোর পরিশ্রম আর হাজারো স্বপ্ন নিয়ে দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠগুলোতে এসে যখন একটা নিরীহ মেধাবী ছেলে /মেয়ে এরকম জাহান্নামে এসে পরে মানবেতর জীবন কাটায় তাতে যে ওই মেরুদণ্ডহীন,অথর্ব,নপুংসক প্রভোস্ট,হাউজ টিউটরদের কিছু যায় আসে না তা এই অহিংস কোটা আন্দোলনে ছাত্র ছাত্রীদের উপর অত্যাচার আর এদের অক্ষমতা,গোলামী আচরণ আবারো তা প্রমাণ করেছে ।
ইউটিউবে ভিডিওগুলোতে সরকারী হলগুলোতে ছাত্রদের থাকার অবস্হা দেখে মনে হলো মেধাবী এই সন্তানদের যে রকম বাস্তুহারা আর বস্তির মত মানবেতর জীবন যাপন উপহার দিচ্ছে এই নপুংসক কতৃপক্ষ তাতে ছাত্ররা যদি এদের লাত্থায়া, থাপড়ায়া অরাজকতাও করে তাতে 80%ই দায়ী হবে রাষ্ট্র, প্রশাসন আর হল কতৃপক্ষ দের ব্যর্থতা ।
কারন দেশের আগামী কর্ণধারদের উষ্টাইতে উষ্টাইতে এরা ধৈর্য্যের শেষ সীমানায় নিয়ে এসেছে ।
বিদেশে একদিন রুমে মাছির মত কিছু দেখলেই ছাত্ররা যে রকম রিএক্ট দেখায়, আমার দেশে দিনের পর দিন চারপাশ থেকে নানা ধরনের মারে অপমানে নির্যাতিত ছাত্রটা তার সিকি ভাগও প্রকাশ করতে পারে না !
এত নির্মমতার মাঝে, নপুংসক কতৃপক্ষ, বড়ো ভাই /বোন নামের রাজনৈতিক শুয়োর কুকুরদের টর্চার-দৌড়ানি , প্রশাসনের নির্লিপ্ততা, হাজারো যন্ত্রণা আর অমানবিকতার বিপরীতে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার যুদ্ধ পৃথিবীর কোন সভ্য দেশ,কোন সভ্য জাতির মাঝে দেখিনি !
বিষয়: বিবিধ
৯৪৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন