কিছু কথা (১)
লিখেছেন লিখেছেন আরিফা জাহান ২৭ মার্চ, ২০১৮, ০৪:৪২:৩৪ রাত
কাছের দূরের কিছু মানুষ আছেন যাদের প্রতি পাঁচ মিনিট কথার মাঝে তিন মিনিটেই থাকবে হা-হুতাশ,আর নানান সমস্যার গান ।
এটা কোন বয়স কিংবা লিঙ্গভেদের ব্যাপার না ।
আন্ডা বাচ্চা থেকে বুড়ো, নারী -পুরুষ সব কিসিমেরই হয় ।
যাদের জীবনটা খুব স্বাভাবিক ভাবেই চলতে থাকলেও ছোটখাটো অনেক ব্যাপার তাদের জীবনে দুঃখ কষ্টের উথালপাতাল ঢেউ ছাড়া কিছুই দেখে না !
খুব ....খুব কমন সমস্যা , যেগুলো প্রতিটা মানুষের জীবনে হরহামেশাই হয় ।
বড় ধরনের রোগ, শোক, সমস্যা কিংবা কোন বিপদ না ।
তারপরেও তারা তাদের জীবন নিয়ে যে কতটা কষ্টে থাকে তা তাদের সাথে কথা না বলে বুঝা যাবে না!
এই ধরনের মানুষগুলো কেমন আছো /আছেন /আছিস এর উত্তরে জীবনের ভালো সব খবর স্কিপ করে ইনিয়ে বিনিয়ে সমস্যাগুলো শুনানোটাকে প্রেস্টিজের ব্যপার মনে করে ।
কোনদিন সরাসরি প্রথমেই আলহামদুলিল্লাহ গলা দিয়ে বের করতে পারে না ।
( আর ভালো!! কোন রকম আছি, পেট ব্যাথা, হাঁটুর বাটি ব্যাথা, ঘুম কম, খাবারে অরুচি , অটো টয়লেট , ভালো লাগেনা এরকম হাজারো কমন সমস্যা যেগুলো পরিবারের কাছের কেউ আর ডাক্তারকে ছাড়া আর কাউকে বলার কোন মানেই হয়না )
আগে ভাবতাম বাংলাদেশেই মনে হয় শুধু এই ধরনের পাব্লিক ।
কিন্তু না ।
দেশের বাইরে আসার পর বুঝলাম খোদার এই দুনিয়াতে প্রত্যেকটা দেশে, পরিবারে, সার্কেলে এ ধরনের রেডিমেড কারেক্টার থাকেই!
জাম্বিয়ার বন্ধু, ভার্সিটি আসছে -যাচ্ছে, খাচ্ছে, পড়ছে, সন্ধ্যায় ধুমায়া বাস্কেটবল, ভলিবল, টেনিস খেলছে, রাতে হাত-পা ছড়িয়ে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে ।
তার ফুরফুরে জীবনের সাক্ষী আমি ।
তারপরেও যদি জিজ্ঞেস করা হয়, কেমন যাচ্ছে? ?
মুখটা শুকনো করে বলবে, কিছুই ভালো যাচ্ছে না, পড়তে পারিনা, ঘুমোতে পারি না, খেতে পারিনা ব্লা ব্লা ।
কোনদিন আল্লাহর এই বান্দার মুখে "ভালো আছি " শব্দটা শুনি নাই!
যদিও দেখতে পাচ্ছি জীবন তার আর দশটা স্টুডেন্টের মতই ভালো যাচ্ছে ।
আমাদের সার্কেলেও দু একজন আছে একসাথে দু একদিনের জন্য ট্যুরে কিংবা ক্যাম্পিং এ গেলে ঘুম -খাওয়া সবার মত হলেও মন খারাপ আর কন্টিনিউ গাঁইগুঁই " ভালো ঘুম হয়নি, পেটের এই কোনা খালি ওই কোনা ভারি ।
মাঝে মাঝে এসব ছোটখাট ব্যপার নিয়ে অভিযোগ করতে করতে দলের অনেকের মুড নষ্ট করে দেয় ।
এগুলো আসলে চরম আত্মকেন্দ্রিক আর স্বার্থপর আচরন ।
আমার মত আসা বাকিদেরও তো আমার মত সমস্যাগুলো হতে পারে , সেখানে শুধু আমার সমস্যাটা নিয়েই গাঁইগুঁই করছি!
যা আসলে নিজেকে আর সবার কাছে বিরক্তিকর করে তোলা ছাড়া আর কিছু হচ্ছে না ।
মাত্র ত দু এক দিন ।
তারপর না হয় জার্নি শেষ করে নিজের জায়গায় ফিরে গিয়ে প্রিয় ডিশ গলা পর্যন্ত গিললেন , হাত-পা ছড়িয়ে ভুসভুস করে ঘুমোলেন!
কিন্তু সবার সাথে থাকার সময় নিজেকে স্পেশাল হাইব্রিড প্রোডাক্ট বানাতে গিয়ে বিরক্তিকর হবেন না !
জীবনের কমন সমস্যাগুলো হাইলাইট করে যারে তারে ইনিয়ে বিনিয়ে শুনিয়ে শ্রোতার কাছ থেকে আহা উহু, চুক চুক শুনার সস্তা প্রচেষ্টা দেখলে বিরক্ত লাগে, রাগ উঠে ।
কিছু কথা বলতে ইচ্ছে করলেও প্রচলিত ভদ্রতার খাতিরে কিছুই বলা যায় না ।
একবার ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরে ভালোকরে চোখ বুলান, দেখুন আপনার মতোই কতশত মানুষ যাদের ঘর নেই,
খাবার নেই, জীবনের নিরাপত্তা নেই, কেমন আছো জিজ্ঞেস করার মত কেউ নেই, রোগে শোকে ধুঁকে ধুঁকে মারা গেলেও একটি বার হাসপাতালে যাওয়ার ভাগ্য নেই ,
শত শত শোষিত জীবনে ন্যায় বিচার নেই , পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ভরসা বিনা দোষে জেলে পচছে দিনের পর দিন ,
পরিবার হারা হাজার হাজার ভবিষ্যতহীন এতিম শিশু, পথের পাশে কুকুর বিড়ালদের সাথে ভুখা মানুষের খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি, আশা -ভরসার স্বপ্নের শিক্ষাঙ্গনগুলোতে কত শত সুন্দর ভবিষ্যতের নির্মম মৃত্যু, পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ, কারারুদ্ধ নিরপরাধ পিতার কষ্ট দেখে বুকে পাথর বেঁধে সন্তানদের পথচলা, পথেঘাটে নির্যাতিত আর ধর্ষিতাদের লাশ ,
পরিবারের নিখোঁজ সদস্যের কোন খোঁজ নেই, কান্না, অশ্রু,রক্ত!
আপনার কষ্ট কি সেগুলোর থেকেও বেশি?
আপনার সমস্যাগুলো কি সেগুলোর থেকেও বেশি ভারি? ??
যদি নাই হয়, তাহলে এসব ছোটখাট খাটো সমস্যা নিয়ে হা-হুতাশ করা আর জনে জনে বলার মাঝে কোন কোন বাহাদুরি নেই ।
প্রেস্টিজ কমে বৈ বাড়ে না ।
যখন যেখানে যেভাবে আছেন সর্বাবস্হায় আলহামদুলিল্লাহ বলার ক্ষমতাটাই হচ্ছে আসল বাহাদুরি ।
আল্লাহর উপর আস্থা-ভরসা আর ভালোবাসা পুরোপুরি থাকলে ছোট -বড় যত সমস্যা, বিপদেই আসুক না কেন সব কিছুই মোকাবেলা করা সহজ ।
হতাশ হওয়ার কিছু নেই ।
আল্লাহ আছেন ।
তিনি তাঁর বান্দার সর্বোত্তম অভিভাবক !
#ধৈর্যধারনকারীদের_আল্লাহ_পুরস্কৃত_করবেন
বিষয়: বিবিধ
১০৭২ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হ্যাঁ ঠিক এরকমই ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন