নিয়তি
লিখেছেন লিখেছেন আরিফা জাহান ১৩ মার্চ, ২০১৮, ০৩:৫০:৩৭ রাত
বাচ্চার ট্রলিটা যেন সবশক্তি দিয়ে ঠেলে আগাচ্ছিল । কাঁধে আবার বিশাল ব্যাগ ।
পাশে জামা ধরে তিন থেকে চার বছরের বাচ্চাটা কাঁদছে , হাঁটতে চাইছে না ।
বারবার মায়ের সামনে গিয়ে দুই হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে কোলে উঠার জন্য ।
মায়ের অবস্হা দেখে খুব কষ্ট লাগলো । ভালো করে হাঁটতে পারছে না , ভীষন অসুস্থ মনে হচ্ছে ।
মহিলার বয়স কত হতে পারে?
একত্রিশ -বত্রিশ এর মত ।
মাথায় কালো হিজাব, অসম্ভব সুন্দর ফর্সা চেহারায় ওই ভাষাহীন ক্লান্ত নীলদুটো চোখ সহজেই বুঝিয়ে দেয় জীবনের সাথে চলছে এক নির্মম কষ্টের পরোক্ষ লড়াই ।
বাচ্চাটার কান্নায়ও মহিলা নির্বিকার হয়ে একইভাবে হেঁটে যাচ্ছে।
মাঝে মাঝে হাঁটা থামিয়ে বড় বড় নিঃশ্বাস নিচ্ছিল ।
মহিলাটি যখন হাঁটা থামাচ্ছিলো বাচ্চাটা ভাবছিলো তার মা হয়তো এবার তাকে কোলে নিবে ।
সে ছোট ছোট দু হাত মেলে তার মা'র সামনে গিয়ে দাঁড়াচ্ছিলো ।
কিন্তু মা নিঃশ্বাস নিয়ে আবার হাঁটা শুরু করে ।
মহিলাটি সিরিয়ান না হয় ফিলিস্তিনি হবে ।
আমি তখন হাঁটা পথে ফিরছি ।
অনেকক্ষন ধরে এই দৃশ্য দেখে আসছিলাম । খুব ইচ্ছে করছিলো একটু সাহায্য করতে ।
আশেপাশে সবাই যার যার পথে যাচ্ছে -আসছে ।
এই মুহূর্তে আমি গিয়ে যদি কিছু বলি মহিলাটি কি আমায় খারাপ ভাববে?
ধান্দাবাজ ও তো ভাবতে পারে !
কিন্তু সার্বিক অবস্হা দেখে মনে হলো যাই হোক গিয়ে দেখি ।
আমি গিয়ে নরমাল সম্বোধন করি, উত্তর নাই ।
আমি জিজ্ঞেস করি " কোথা থেকে এসেছেন?
টার্কিশ বুঝে না । আরবী তে বলতেই বলে " ফিলিস্তিন।
আমার দিকে তাকিয়ে বলে " ইরান??
আমি বলি ' আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি । এই শহরেই থাকি ।
উনি জিজ্ঞেস করে, স্টুডেন্ট ?
আমি, জি, আপনার হাঁটতে অনেক কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছি । আপনি চাইলে আমি সাহায্য করতে পারি ।
মহিলা কিছু বলে না ।
জিজ্ঞেস করি, কোথায় যাবেন?
হাত দিয়ে সামনে দেখায় । হয়ত নাম জানেনা ।
বাচ্চাটা ততক্ষণে কান্না থামিয়ে তার মায়ের গা ঘেঁষে মুখে আঙুল দিয়ে আমাকে দেখছে ।
পাখির বাসার মত চোখ দুটো তে তখনো পানি টলমল করছে ।
মহিলা মলিন হাসি দিয়ে বলে " ধন্যবাদ , আমি যেতে পারছি । আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন ।
কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছি ।
কিন্তু এই অজানা জায়গায় কোন অপরিচিতা সাহায্য নিতে হয়ত উনার মন সায় দিচ্ছে না ।
আমি আর কি করতে পারি !
"আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করুন " বলে আমার পথে চলে আসি ।
কিন্তু বাচ্চাটার মা'র দিকে হাত বাড়িয়ে কান্না আর মহিলার ওই করুন মুখটা অন্তরে বারবার ঘাঁই দিচ্ছিলো ।
এই দৃশ্যগুলো আমরা আশেপাশে প্রায়ই দেখছি । হাজার হাজার সিরিয়ান -ফিলিস্তিনি রিফুজিয়ানদে জীবন ।
সয়ে গেছে সব!
কিন্তু সইতে পারেনি এখনো ছোট ছোট দু’হাত বাড়িয়ে কাঁদতে থাকা বাচ্চাটা !
সইতে পারেনি এখনো
ওই মায়ের ক্লান্ত - মলিন চেহারায় অসহায় নীল চোখ দুটো!
বিষয়: বিবিধ
১০৪৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন