সেই দিনগুলো
লিখেছেন লিখেছেন আরিফা জাহান ২৫ এপ্রিল, ২০১৭, ০৩:০৪:১৭ রাত
পশ্চিমাকাশের ডুবো ডুবো সূর্যটা এই পৃথিবীটাকে যেন বিষণ্ণতার আলোয় ঢেকে দিয়ে চলে যাচ্ছে । সকালের সেই আদুরে কোমল কমলা রং নেই ।শেষ বেলার গোধূলি ঢেকেছে যেন রক্তের আবিরে ।
মাঝে মাঝে এই সময়গুলোও বড় বিষণ্ণ হয় ।জানালার পাশে বসলে দেখা যায় পাহাড়ের সারি ।
কয়েকদিন আগে আমি লেইলা আর মেরভে ক্লাস শেষে আমাদের ক্যাম্পাসের কাছাকাছি যে মাঝারি সাইজের পাহাড় আছে ওটার চুড়ায় ওঠতে গিয়েছিলাম । দেখে মনে হয়েছিল বিশ মিনিটেই উঠে যাবো ।
কিন্তু ত্রিশ মিনিট উঠার পর যখন হাঁপাতে হাঁপাতে আমাদের জিহ্বা বের হয়ে আসছিল তখন আবিষ্কার করলাম যে আমরা পাহাড়ের মাঝামাঝি এসেছি মাত্র !
আর দেখলাম ওখান থেকে আরো খাড়া আর পাথুরে রাস্তা শুরু হয়েছে । পাথরের খাঁজে খাঁজে কাঁটাওয়ালা অচেনা গাছ ।এগুলু মাড়িয়ে ওঠা মানে পরেরদিন নিজেরদের হাসপাতালের বেডে বিশ্রামে নেয়া ।
পাহাড়ে উঠা এত কঠিন !
তিনজন পরস্পরের দিকে তাকিয়ে যা বুঝলাম সবার মনেই একটাই কথা ‘’ ল যাইগা ‘’
জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে যে পাহাড়ের চূড়াটা ওটা এখান থেকে কত দূরে বুঝতে পারছিনা । কিন্তু আমি প্রায়ই দেখি । বিশেষ করে এইরকম নিরব বিষণ্ণ সন্ধ্যাগুলোতে ।
বিদেশে কিছু কিছু সময় আসলেই অনেক অদ্ভুত । বিশেষকরে সন্ধ্যাগুলো । এই সময়টাতে কেন জানি দেশের কথা বেশি মনে পড়ে !
মা-বাবা ভাইবোন বন্ধুদের কথা । কাশফুল ফোটা শরতের বিকেল পাখির কিচির করা সেই পরিচিত সুন্দর সকাল সেই প্রিয় ক্লান্ত নিরব দুপুর ।
একটা ফ্রেমে সবকিছু বন্দি করে আমি যেন একা অনেক দূরে চলে এসেছি । বড় ইচ্ছে করে একটা টাইম মেশিনে আবার ফিরে যাই সেই দিনগুলোতে !
বিদেশে অনেক বন্ধু আছে আছে সুখ-দুঃখ মজার কত ঘটনা কত আন্তরিকতা কিন্ত সবকিছুতেই কেমন যেন একটা মেকি ভাব থেকেই যায় একটু বেশিই ফর্মাল ।
দেশের বন্ধুদের সাথে কত দুষ্টুমি ফাজলামো পচানো সেই লেভেল এর ঝগড়া সব অকৃত্তিম ছিল বলেই হয়ত ভালবাসাটাও খাঁটি ছিল ।
ওদের সাথে সাধারন দিনগুলোর কথা মনে পড়লেও আসে একবুক দীর্ঘশ্বাস !
আনেক দুষ্টুমি করতাম । আমাদের মাঝে ছিল ২টা ত্যাড়া রগের সব সময় সব কিছুতেই ত্যাড়ামি করত । সুমি আর পারভিন ।
একবার পরীক্ষার শেষে আমরা সবাই একসাথে । সন্ধ্যার সময় সুমি আর পারভিনরা এক ঘরে বসে গল্প করছিল । আমি কাজল দিয়ে মুখে দাড়ি –মোচ এঁকে একটা সাদামত বোরকা (গায়ে দিলে ঠিক জুব্বার মত দেখতে) সেটা পরে আর মাথায় একটা সাদা স্কার্ফ পাগড়ীর মত বেঁধে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেই চমকে ওঠি । পুরাই একটা ভণ্ডপীরের মত লাগছিল । অন্যরা হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছিল ।
আমি আস্তে আস্তে পারভিন আর সুমির ঘরে দরজা দিয়ে ঢুকেই মোটা গলায় ‘’ হক মাওলা ‘’ বলে ওদের দিকে লাফ দিই । ওরা দুজন ভয় পেয়ে এমন চিল্লানি দেয় যে আমি নিজেই ভয় পেয়ে সব ভুলে আমি আরিফা ! আমি আরিফা বলে পাগড়ি ফাগরি খুলে সুমিকে গিয়ে ধরি । ও থরথর করে কাঁপছিল আর চিল্লাচ্ছিল ! ততক্ষণে রুমে বাকিরা চলে আসে । পারভিন স্বাভাবিক ছিল কিন্তু সুমি ভীষণ ভয় পেয়েগেছিল । ওর এই অবস্থা দেখে সবাই মজা ভুলে ওকে দোয়া-টোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে বুঝিয়ে সুঝিয়ে অনেক্ষনে ওকে স্বাভাবিক করে । এই ঘটনার জন্য বড়দের অনেক বকা খেয়েছিলাম । আর সুমি আমার সাথে চার-পাঁচদিন কথা বলেনি।
তখন ওই ঘাড় ত্যাড়াটার সাথে কথা বলার জন্য ওরে কত তেল আর ঘুষটুষ দিতে হয়ছিল !
এসব স্মৃতি মনে হলে মনের অজান্তেই হেসে ফেলি । আবার সেই সাথে আসে দীর্ঘশ্বাস ।
কোথায় সেই দিনগুলো ?
যখন বিষণ্ণ একাকী সন্ধ্যায় জানালার পাশে বসে তাকাই ওই নিঃসঙ্গ পাহাড়চূড়ার দিকে তখন স্মৃতির ক্যামেরায় ফ্ল্যাশব্যাকে ভেসে আসে এরকম হাজারো হাসি কান্না আর সুখদুঃখের ছবি ।
পেছনের রঙ্গিন গল্পগুলো আসে সাদাকালো হয়ে !
বিষয়: বিবিধ
৯০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন