সিজোফ্রেনিয়া
লিখেছেন লিখেছেন আরিফা জাহান ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ০৭:০৫:১৬ সন্ধ্যা
২দিনের জন্য ক্যাম্পে গিয়েছিলাম । রাতের বেলা ঘুমানোর সময় আমার রুমমেট হিসেবে ছিল adana'র মেয়ে elmas। খুব চুপচাপ শান্ত স্বভাবের মেয়ে ।আমাদের টিমে থাকলেও তার সাথে টুকটাক ফর্মাল কথা ছাড়া তেমন কোন কথা হয়নি কখনো ।
নতুন জায়গা তার উপর প্রচণ্ড ঠাণ্ডা । ঘুম ভালো হচ্ছিলো না । আধো ঘুম আধো জাগরণ হাল । ভোররাতের দিকে দেখি পাশের বিছানা থেকে elmas নামল । ভাবলাম ওয়াশরুমে যাবে টাবে বোধহয় । কিন্ত অবাক হয়ে দেখলাম সে বিছানা থেকে নেমে রুমের মধ্যেই টালমাটাল এলোপাথারি হেঁটে বিড়বিড় করে কি সব বলে আবার শুয়ে পরল ।
পরের দিনও একি কাহিনী ! আমি জিজ্ঞেস করি '' কোন সমস্যা ? সাহায্য লাগবে ?? তোমার কি খারাপ লাগছে ?
সে খুব শান্ত স্বাভাবিক গলায় উত্তর দেয় ''না ''
পরেরদিন সকালে তাকে রাতের ঘটনাটা বললাম । সে বলে তার কিছুই মনে নেই ! তার কাছের বান্ধবি merve জানায় elmas প্রায় রাতেই নাকি ঘুমের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করে ।
বুঝলাম !
ঘুমের মধ্যে হাঁটা '' স্লিপিং ওয়াক'' এর কথাটা আমরা সবাই কমবেশি জানি । ছোট থেকে এ নিয়ে কত গল্প-কাহিনী পড়েছি ।
এই ''স্লিপিং ওয়াক'' এর ব্যাপার থেকে কাল্পনিক কত গা ছমছম করা থ্রিলার-হরর উঠে এসেছে ।
ঘুমের মধ্যেই জেগে উঠে একজন নিরীহ মানুষ কিভাবে ভাম্পায়ার, ড্রাকুলা, ম্যানিটো হয়ে উঠে !
হাহ ! আসলে ''স্লিপিং ওয়াক''টাই সত্য আর ওসব ড্রাকুলা-ফাকুলা আমাদের মনের ফ্যান্টাসি মাত্র ।
আমাদের গ্রামাঞ্চলের কারো এরকম সমস্যা থাকলে মানুষেরা বলে '' জিন-ভূতের আছর'' । রাতের বেলা ঘুম থেকে ডেকে তুলে বাইরে নিয়ে যায় !
এ সমস্যায় আক্রান্ত বেচারার উপ্রে চলে কবিরাজি ঝাড়ফুঁক, দলাইমলাই, তাবিজ-কবজ আর মাদুলির তুফান ।
তো যাই হোক ''ঘুমের মধ্যে হাঁটা'' এই সমস্যাটাকে বলা হয়
''সিজোফ্রেনিয়া '' খুব সাধারন মানসিক সমস্যা এটি । এই রুগে আক্রান্ত ব্যাক্তিকে বলা হয় '' সিজোফ্রেনিয়াক'' ।
শব্দটার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে '' দ্বৈত স্বত্তা '' ।
এই রোগে আক্রান্ত মানুষের মনে দুটি স্বত্তার জন্ম নেয়। অনেকটা যেন দুটো আলাদা মানুষ একই শরীরে আটকা পড়েছে ।দুটো আলাদা ব্যাক্তি, আলাদা চিন্তাধারা কিন্ত শরীর একটাই ।
মানুষের মন একটি গোলকধাঁধা আর এটির সত্যতা প্রমান করেছে যেন এই ''সিজোফ্রেনিয়া'' নামের রোগটি ।
একজন ''সিজোফ্রেনিয়াক'' কখনোই বুঝতে পারে না যে সে এই রোগে আক্রান্ত।কেবলমাত্র তার আশেপাশের মানুষেরাই বুঝতে পারে ব্যাপারটা। কিছু সাধারন ব্যাপার যেমন;
*নিজের সাথে কথা বলা
*কিছুক্ষন আগেই বলা কথা কিংবা কাজ ভুলে যাওয়া ।
*ঘুমের মধ্যে হাঁটা এসব ব্যাপার দেখে সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্তদের শনাক্ত করা যায়।
প্রচণ্ড মানসিক আঘাত অথবা মানসিক চাপ থেকে এই সমস্যা হতে পারে আবার জেনেটিক বা বংশগত কারনেও হতে পারে ।
এই সমস্যাটা কতটা বিপজ্জজনক তা নির্ভর করে রুগীর আচার-আচরনের উপর ।
ইতিহাসে অনেক ভয়ংকর-নির্মম হত্যাকাণ্ডও পর্যন্ত ঘটেছে এই রোগে আক্রন্তকারীর হাতে ।
আমার ভাগ্য ভালো যে আসার দিন টের পেয়েছি এলমাসের সমস্যা । না হলে সারারাত ভয়ে জেগে থাকতাম এই ভেবে যে কখন না জানি elmas ঘুমের ঘোরে উঠে এসে আমার গলাটিপে ধরে :p
একজন সিজোফ্রেনিয়াককে নিয়ে ১৯৬০ সালে Alferd hitchcook একটি সিনেমা বানিয়েছিলেন যার নাম ছিল'' সাইকো''(psycho) ।
এই মুভিটা দেখতে পারেন ।
একজন সিজোফ্রেনিয়ার রুগীকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মধ্যেই রাখা এবং শুরুতেই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত ।
এবং নিয়মিত কাউন্সিলিং এর মধ্যেই রাখা উচিত কারন এই সমস্যা কখনোই সম্পূর্ণ নিরাময় হয় না ।
এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে সর্বদা দুশ্চিন্তা আর মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকতে হবে সর্বপোরি মহান আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে ।
বিষয়: বিবিধ
১৪১৭ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন