মানবতা বনাম আমরা
লিখেছেন লিখেছেন আরিফা জাহান ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০১:১২:২৬ রাত
সন্ধ্যা উতরে গেছে । ক্যাম্পাস থেকে আসার পথে । প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ! তাপমাত্রা মাইনাস পাঁচ ডিগ্রির মত !
তার উপর প্রচণ্ড বাতাস । মনে হচ্ছিল একটা ঠাণ্ডা ছুরি এসে নাকে মুখে আর হাতে আঘাত করছে !
খুব দ্রুত হাঁটছিলাম ।
সারা দিন ক্লাস আর নানা ধরনের ব্যাস্ততায় ব্রেকফাস্ট কিংবা লাঞ্চ কোনটাই করিনি ।
কতক্ষণ পর পর কফিই আমার দিনটা চালিয়ছে কিন্তু দিনশেষে বুঝতে পারছিলাম সমস্ত দিনের ক্ষুধা আজ আমার উপর প্রতিশোধ নিতে পেটের ভিতর ভালই মেতেছে ।
ল্যাম্প পোস্টের নিয়ন আলোয় নিরব রাস্তাটা ধরে দ্রুত যাচ্ছিলাম ডরম এর দিকে ।
ব্যাগের ভিতর ফোন বাজছে ।
বুশরা আপু । মিশরের । মাস্টার্স করছে সেলজুক ইউনিভারটিতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ ।
আনাতুলো ইয়ুথ এসোসিয়েশান এ কাজ করি একসাথে । আপুটা প্রচণ্ড দায়িত্বসচেতন আর অমায়িক ।
''''''''''' সালাম আরিফা তুমি কোথায় ?
''''' রাস্তায় ডরমে যাচ্ছি ।
'''' যদি সম্ভব হয় তাড়াতাড়ি একবার অফিসে আসো ।
কুইক প্লিজ !
আমি আর কোন প্রশ্ন করার আগেই লাইন কেটে দিলো ।
আমি কি করি ! আবার উল্টা হাঁটা ধরলাম বাস স্টপেজের দিকে ।
ত্রিশ মিনিট পরে অফিসে পৌঁছে দেখি উনি আর ২ জন আপু ।
আমাকে দেখে বুশরা আপু এগিয়ে এসে বলল '' আমাদের হাতে সময় নেই আর তাই তোমার সাহায্য এখনি দরকার । কাল খুব ভোরেই আলেপ্পোবাসীদের জন্য এই সাহায্যগুলো গুছিয়ে পাঠাতে হবে । আর আমরা আছি মাত্র কজন ।
তোমার কাজ হচ্ছে হচ্ছে সেমিনার কক্ষে মারিয়াম কে সাহায্য করা ।
মারিয়ামের সাথে কাজ করার সময় চোখে পরে কয়েকদিন আগে হুরিয়া ম্যাডামের বানানো বিশ্বে নির্যাতিত মুসলিম জনপদগুলোর সম্প্রতি অবস্থা নিয়ে বানানো ডকুমেন্টারি দিকে ।
যেখানে বেশিরভাগ অংশ জুড়ে ইয়ামেন, আরাকান আর আলেপ্পোর ঘটনা ,কারন, সমাধানের সম্ভাব্য পথ আর আমদের ভূমিকা ।
একপর্যায়ে
ডকুমেন্টারিটাতে এই অঞ্চলগুলোর ভয়াবহতা এবং সাহায্যের ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ভুমিকার ব্যাপারগুলো উঠে আসে ।
যেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতিবেশি বাংলাদেশের উদাসীনতা আর সহমরমিতার অভাব যথেষ্ট পরিমাণ পীড়াদায়ক এবং তাদের বিবেচনাহীন যুক্তিগুলো শুনার পর সত্যিই লজ্জার ।
আজ হাজার হাজার যুদ্ধবিধস্ত সিরিয়ানদের সাহায্য করার জন্য টার্কিতে সব শ্রেণীর মানুষ দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে । প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে সীমান্তে ওদের জন্য খাবার-পানি তাঁবু বানিয়ে ওদের বাসস্থানের জায়গা করে দিচ্ছে । ওদের জন্য অপেক্ষা করে দিচ্ছে ; সেখানে আমরা কতটুকু করছি নির্যাতিত আরাকানবাসীদের জন্য ?
স্বার্থ আর নির্লজ্জ দালালী করে নিজেদের আর কত নিচে নামাবো ?
কি ভাবে ভুলে যাই একাত্তরে এই আমরাও দীর্ঘদিন ছিলাম অন্য দেশে শরণার্থী হয়ে ?
সেক্ষেত্রে আমাদের ত সবার আগে ওদের সর্বাত্মক সাহায্য করার কথা, ওদের অশ্রু মুছে বুকে টানার কথা !
স্রষ্টার করুণার সাথে বেইমানি করার কি জবাব দিবো আমরা সেই মহাকালের শেষ দিনে ?
আর কত অকৃতজ্ঞ প্রমান করব নিজদের ??
নির্লজ্জতা আর বিবেকহীনতার প্রতিযোগিতায় আর কত উপরে উঠলে আমাদের বিবেকের দ্বার খুলবে ?
এ যেন মানবতা বনাম আমাদের নির্লজ্জ নিষ্ঠুর প্রতিযোগিতা !
বিষয়: বিবিধ
১০১৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এখনো অনেক ভালো আর মহানুভব হৃদয় আছে যারা সত্যিই মানবতার জন্য নিজেদের বিলিয়ে দিচ্ছে কিন্তু তাদের সংখ্যা নগণ্য !
আপনাদের উদ্যোগ ভাল লাগলো।
আর মানবতা সে শব্দটা আমরা অনেক আগেই পিছনে ফেলে এসেছি!!
হুম সেটাই !
উচিত সৈন্য + যুদ্ধ জাহাজ পাঠিয়ে জালিম শাসকদের কাছ থেকে নিপীড়িতদের এলাকাকে মুক্ত করানো ।
শুনেছি তুরষ্ক নাকি যুদ্ধ জাহাজ পাঠাচ্ছে মায়ানমারকে সাইজ করবে বলে ? মালয়েশিয়াও হাম তাম শুরু করেছে দেখলাম ।
এগুলোর কার্যকর পদক্ষেপই হচ্ছে আসল সাহায্য।
কিন্তু কথা হচ্ছে যুদ্ধ বিদ্ধস্ত নারী পুরুষদের জন্য প্রাথমিক যে সাহায্য দরকার সেটা কি জালিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে করা সম্ভব ?
হ্যাঁ এটা উচিত যে জালিমদের দমানোর জন্য এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পদক্ষেপ নেয়া ।
আর মজলুমদের সাহায্য করার জন্য খাবার আর আশ্রয় দেয়ার কোন বিকল্প নেই ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন