কত রঙের মানুষ রে দুনিয়ায়
লিখেছেন লিখেছেন আরিফা জাহান ০৬ জানুয়ারি, ২০১৫, ০২:২৫:৩৬ রাত
সবুজ আসমানে নীল হাতি উড়ার খোয়াব দেখার শেষে ঘুম যখন ভাঙল তখন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সর্বনাশ ! ৮ .০০ টা বেজে গেছে !! তারমানে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে !
রাগে দুঃখে ঘুম আর আজাইরা স্বপ্নের চোদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করতে করতে কোনরকম রেডি হয়ে বের হলাম ।
জানি ভার্সিটির গাড়ি আর পাবোনা তাই গিয়ে পাবলিক বাসেই উঠলাম । বাসে দেখি আমারই ক্লাসের কয়েকটা বান্দা । ওদের দেখে নিজের অবস্থা ভুলে খুব হাসি পেল কারন ওদের মত আজকে আমার নামও লেট লতিফের লিস্টে ওঠলো ।
যাই হোক বাসের কার্ড দেখানোর জন্য লাইনে দাঁড়ালাম । আমার সামনে এক ভদ্রলোক । পরনে জিন্সের প্যান্ট আর কালো একটা জ্যাকেট । এই সাদা চামড়ার দেশে এই পোশাকে পিছন থেকে নারী পুরুষ নির্ণয় করা কঠিন । তারপরও উনার পোশাকের স্টাইল আর চুলের কাটিং দেখে আমি ১০০% শিউর ছিলাম যে উনি পুরুষ ।
কিন্ত উনি যখন কার্ড দেখিয়ে পিছন ফিরলেন আমিতো আবাক ! দেখি উনি একজন আমার মায়ের বয়সী একজন ভদ্রমহিলা !!
এখানে আশেপাশে সব সময় .হিজাবপরা .... হাফপ্যান্ট গ্যাঞ্জি পরা ..ফুলপ্যান্ট শার্ট ... মিনি স্কারটসহ নানান ধরনের ড্রেস পরা মহিলা ..... মেয়েদের দেখি । এবং এদের কালচারে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু এই মহিলার দিকে অবাক হয়ে দ্বিতীয় বার না তাকিয়ে পারলামনা । পুরুষদের প্যান্ট জ্যাকেট ..... ব্যাগ .ঘড়ি চুলের স্টাইল.......সব । যেন স্রষ্টার দেয়া মেয়েলী সব চিহ্ন মুছে দেয়ার আপ্রাণ অপপ্রয়াস ।
আমি যখন সিটে বাসলাম পাশে দেখি আমারই বয়সী এক মেয়ে । টার্কিশ .। তার পরনে অসম্ভব টাইট প্যান্ট আর টি শার্ট অবশ্য তা মেয়েলি ফ্যাশনের । ব্যাপারটা এখানেই শেষ না দেখার বাকি ছিল আজিব এক দৃশ্য ! এই পোশাকে সে মাথায় হিজাব পরছে !
বড় এক উরনা ডিজাইন করে প্যাচিয়ে দেখে মনে হচ্ছিল নাসিরুদ্দিন হুজ্জার পাগড়ী মাথায় বসাইয়া রাখছে । এটা হিজাব না অন্য কিছু ! তাকে দেখে কেন জানি বন্যা প্লাবিত অঞ্চলের খড়ের গাদার ছবি ভেসে উঠল । পানি থেকে খড় বাঁচানোর জন্য একটা বাঁশের আগায় খড়ের গাদা বানিয়ে ঝুলিয়ে রাখত । আর ওইসব খড়ের গাদার সাথে এইসব হিজাবিদের (!!!!) অদ্ভুদ সাদৃশ্য!
(বোরকা পরে সুন্দর করে হিজাব পরা অনেক মেয়ে আছে তুর্কিতে কিন্তু ওই মুহূর্তে হিজাবের নামে অদ্ভুত হাস্যকর পাগড়ী চোখে পরেছিল )
আমার সামনের সিটে বসে ছিল এক আফ্রিকান যুবক । তার চুলের সাজ দেখে মনে হচ্ছিল তার জিবনে বোধহয় জাউগাছ হওয়ার খুব শখ । তার হাতে ...গলায় .... কানে ... আঙ্গুলে এত পরিমাণ খটখটে গটগটে দ্রব্যাদি ঝুলানো যে তাকে মনে হচ্ছিল একটা চলন্ত হরেক মালের
দোকান ।
এসব দৃশ্য আর রকমারি বাহার দেখে মনে হল আসমানে হাতি উড়া দেখার জন্য ঘুমিয়ে স্বপ্নে জেতে হবেনা আর এসব দেখলেই হাতিসহ উরন্ত জলহস্তীও দেখা হয়ে যাবে ।
ভদ্র শালীন আর মার্জিত রুচির অনেক মানুষ রয়েছে কিন্তু তাদের মাঝে এই রঙবেরঙের চিজগুলো উঁকি মারে চোখে ।
আল্লাহর দেয়া সুন্দর চেহারা পরিবর্তন করার চেষ্টায় কি তৃপ্তি আর মজা যে পায় ওরা আল্লাই যানে !
হাহ ! .......... কত রঙের মানুষরে দুনিয়ায় ..কত রঙের খেলা ................
বিষয়: বিবিধ
১৪১৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার উপস্হাপনা পড়ে সাধারণ কমেন্ট ব্লগার হিসেবে অনেক পুরানো একটা প্রবাদই উদৃত করলাম শুধু-
"নদীর এ পার খে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস,
ওপারেতে যত সুখ আমার বিশ্বাস!!"
কোন এক ব্লগারের পোস্টে তুরষ্কের কথা জানানোয় জানতে পারলাম যে , সেখানে কোন এক মহিলা মিনি স্কার্ট পড়ে মাসজিদে এসে গায়ে বোরকা জড়িয়ে নেয় ব্যাগ থেকে বের করে । নামাজ শেষে বোরকা খুলে ব্যাগে ঠুকিয়ে আবার সেই আগের মত ড্রেসে হন হন করে চলে যায় ।
এটা নাকি তুরষ্কের আধুনিকতার লক্ষণ ।
এখন পৃথিবীর কোন দেশ আধুনিক আর কোন দেশ ব্যাক ডেটেড তা মেয়েদের পোশাকেই বিবেচ্য হয়ে থাকে । ছেলেদের পোশাক সব দেশেই More or less একই রকম ।
নিজের দেশকে আধুনিক , মুক্তমনের ও স্বাধীনচেতা দেখাতে ডিজাইনাররা মেয়েদের পোশাকের উপরই বেশী গুরুত্ব দেয় । এবং নিজেদের স্ট্যাটাস সবসময়ই আপগ্রেডেড রাখতে মেয়েরাও প্রতিনিয়ত আধুনিক পোশাক পরিধান করে।
১। তাকে দেখে কেন জানি বন্যা প্লাবিত অঞ্চলের খড়ের গাদার ছবি ভেসে উঠল । পানি থেকে খড় বাঁচানোর জন্য একটা বাঁশের আগায় খড়ের গাদা বানিয়ে ঝুলিয়ে রাখত । আর ওইসব খড়ের গাদার সাথে এইসব হিজাবিদের (!!!!) অদ্ভুদ সাদৃশ্য!
২।তার চুলের সাজ দেখে মনে হচ্ছিল তার জিবনে বোধহয় জাউগাছ হওয়ার খুব শখ । তার হাতে ...গলায় .... কানে ... আঙ্গুলে এত পরিমাণ খটখটে গটগটে দ্রব্যাদি ঝুলানো যে তাকে মনে হচ্ছিল একটা চলন্ত হরেক মালের দোকান ।
কথা গুলো মনে পড়লে, আমি ঘুমের মধ্যেও হাসবো ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন