কাজি নজরুল ইসলাম ছিলেন বিদ্রোহী কবি প্রেমের কবি
লিখেছেন লিখেছেন আরিফা জাহান ২৮ আগস্ট, ২০১৪, ০৩:১৮:৪৩ রাত
বিশ্ব রাজনীতি অর্থনীতির প্রতিযোগীতার অঙ্গনে বিশ্ব দরবারে বাংলাকে মহামান্নিত করে তোলার মহান পুরুষ কবি কাজি নজরুল ইসলাম (১৮৯৯--১৯৭৬) । আজ এই মহান কবির ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী ।
কাজি নজরুল ইসলাম ছিলেন বিদ্রোহী কবি প্রেমের কবি । বাংলা সাহিত্য ও সঙ্গীতে তিনি তিনি উপহার দিয়েছেন বিপুল জ্ঞানভাণ্ডার । তাঁর কবিতা ছিল অসত্য আর আর অসুন্দর মুছে দেয়ার অনলপ্রবাহ । তাঁর রচনায় ছিল প্রেমময় ছন্দের মধুর ধ্বনি । ছিল স্বপ্ন আর আশার হিল্লোলে নতুন সূর্য দেখার অনুপ্রেরণা । সাম্যবাদী .. চিরবিদ্রোহী ...প্রেমিক সবকিছু ছাপিয়ে তিনি এক মানবতাবাদী কবি ।
কবি ছিলেন কৃষক পরিবারের সন্তান । সাধারন মানুষের হৃদয়ের সাথে তাঁর হৃদয়ের বন্ধন ছিল দৃঢ় । তাই তাঁর রচনা দ্রুত সব শ্রেণীর মানুষকে আচ্ছন্ন করে ফেলতে পেরেছে । সমসাময়িক বিখ্যাত কবিরা যখন বিচ্ছিন্নতাবাদী কাব্যচর্চা করছিলেন তখন কবি নজরুল ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের জন্য সাধারন মানুষের ভাষা যুগিয়েছেন । তাঁর সৃষ্ট ভাষার তীব্রতা অত্যাচারী শাসকের মসনদ কাঁপিয়েছে বহুবার । সম্রাজ্যবাদী ইংরেজ শোষণের হাত থেকে ভারতকে মুক্ত করার প্রেরনা তিনি । এর জন্য তাঁকে কারাবন্দী জীবনও গ্রহণ করতে হয়েছে ।
আজ নজরুল আমাদের জাতীয় কবি । আমাদের সাহিত্যভাণ্ডার আজ পরিপূর্ণ তাঁর উজার করে দেয়া প্রেম ভালবাসার ছন্দমালায় । কিন্তু তাঁর জীবনের শূন্যতা প্রতিধ্বনিত হয়েছে তাঁর রচিত বহু গানে .... কষ্ট আর চাপাকান্না সব ঢাকা তাঁর রচিত কাব্যর ছন্দে ...............
.....আমি বঞ্চিত ব্যাথা পথবাসী চির গৃহ হারা যত পথিকের
আমি আবমানিতের মরম বেদনা বিষজ্বালা চির লাঞ্ছিত গতিকের ।
কখনোবা শোনা যেতো তাঁর কবিতায় প্রেমময় হৃদয়ের দূর্বার সুর ..............
আমি গোপন পিয়ার চকিত চাহনি ছল করে দেখা আনুখন
আমি চপল মেয়ের ভালোবাসা তার কাকন চুড়ির কনকন ।
অথবা .......
মোর প্রিয়া হবে এসো রানি
দেবো খোঁপায় তারার ফুল ।
ইসলামী সাহিত্যে রয়েছে কবি অনেক অবদান । জাগরণীমূলক রচনা আর তাঁর সৃষ্ট গল্প উপন্যাস আমাদের দেয় আত্নবিশ্বাস অর্জনের উপলব্ধি ।
আল্লাহ আমার প্রভু আমার নাহি নাহি ভয়
আমার নবী মোহাম্মদ যাঁহার তারিফ জগতময় ।
কখনো নবীর প্রেমে গেয়েছেন ..........
পাপীর তরে দাস্ত যাহার কাওসেরের পিয়ালা
হের আজ অংশে এলেন মোদের নবী কামলিঅয়ালা ।
কবির ব্যাক্তিগত জীবনে হয়ত সব চাওয়ার পাওয়া হয়নি । ব্যাক্তিগতজীবনে ধর্ম নিয়ে বিতর্কিতও হয়েছিলেন । কিন্তু ইসলামের জন্য ছিল তাঁর সীমাহীন ভালবাসা ।
জীবনের শুরু থেকেই কষ্ট নিয়ে বেড়ে উঠা কবি কখনোই অন্যায়ের সাথে আপস করেননি ।
বিরল প্রতিভা নিয়েও ছিলনা কোন আত্নগরিমা । সীমাহীন কষ্ট বুকে চাপা রেখে কবিতার ধারায় নিজের চোখের জল মোছে রেখেছেন । তিনি গেয়ে গেছেন তারুন্যের গান ... সত্যের গান । তার সাম্যের সুরের রাগে মুছে গেছে সব হৃদয়ের কালিমা জাগিয়েছে প্রেমময় হৃদয় । অন্যায় অবিচারের প্রতিবাদে প্রচণ্ড আক্রোশে তার লেখনীর তীব্রতায় কেঁপেছে জালিমের আত্না ।
তার হৃদয়ের সমস্ত ভাণ্ডার উজাড় করে আমাদের জন্য তিনি অনেক কিছু দিয়ে গেছেন কিন্তু তাঁর জীবনের হিসেবে কোথায় যেন গড়মিলের অব্যক্ত বেদনায় বহুদিন স্তব্ধ ছিলেন এই মহান প্রতিভা । সেই বেদনা নিয়েই চিরনিদ্রায় গেয়েছিলেন অভিমানী কবি । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন মহান কবি .....গানের বুলবুলি । আজানের ধবনির সাথে বাতাসে আজো যেন ভেসে তাঁর গান ..........
মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই
যেন গোরে থেকে মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই ।
বিষয়: বিবিধ
২৩৩১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন