ফিরে দেখা পলাশী
লিখেছেন লিখেছেন আরিফা জাহান ২৩ জুন, ২০১৪, ০৮:২৮:১৩ রাত
বিশ্বমানচিত্রে যে দেশটি দেখে আমাদের হৃদয়ে ভালোবাসা জাগে যার সবুজ বুকে দাঁড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে পশ্চিমাকাশে ডুবন্ত রক্তিম লাল সূর্যটাকে দেখে নিরবে ভাবি এক সাগর রক্ত আর লক্ষ তাজা প্রান দিয়ে দেশটাকে কেনার ইতিহাস । কিন্তু এই ইতিহাসই শুধু নয় । কোটি হৃদয়ের প্রানের স্পন্দন এই বাংলাদেশের রয়েছে অনেক প্রাচীন ইতিহাস । স্বাধীনতা রক্ষার ইতিহাস যে ইতিহাস গুলো জাগ্রত করে জাতির মাঝে ঘুমিয়ে থাকা অবচেতন তন্ত্রীগুলো । ইতিহাস ফিরে আসেনা কিন্তু সময়ের আবর্তে স্মৃতির বার গুলো উঁকি দেয় আমাদের চলমান সময়ে। শিখিয়ে দেয় সামনে এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্র । সেই রকম এক ইতিহাসের নাম .... পলাশী.... ।
যে ইতিহাসের পাতায় পাতায় রয়েছে গাদ্দারির কাল দাগ...ভূখণ্ড রক্ষার আকুল প্রচেষ্টা ....জনগণকে ইনসাফ আর শান্তির চাদরে ঢাকার তামান্না ....অপরদিকে বেইমান সেনাপতির গাদ্দারি .আলোতে মুখ দেখিয়ে অন্ধকারে বেইমানির অট্টহাসি ....প্রাসাদের অন্দরমহলের নগ্ন নীল নকশা ...।
১৭৫৭ সালে স্বাধীন বাংলার নাবাব সিরাজুদ্দুল্লার সেনাপতি মীরজাফর ইংরেজদের সাথে হাত মিলিয়ে যে কুমতলব করেছিল তারই ফলে এদেশে ইংরেজ রাজত্বের সূচনা হয় । এরপর ইংরেজরা মীরজাফরের কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয় ।১৮৫৭ সালে দিল্লীর শেষ মোঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে গোটা ভারত উপমহাদেশে ইংরেজ রাজত্ব কায়েম করে আর সেই সাথে উপমহাদেশবাসীর ভাগ্যাকাশ ঢেকে যায় কষ্ট আর জিল্লতির কালো মেঘে ।
১৭৫৭ সালের ১২ জুন কলকাতা থেকে ইংরেজ বাহিনী যুদ্ধ যাত্রা করেন । মুর্শিদাবাদের পথে হুগলী ...কটুয়ার দুর্গ ..অগ্রদ্বীপ ও পলাশীতে নবাবের সামন্ত বাহিনী থাকা সত্বেও ইংরেজদের বাধা না দেয়ায় নবাব বুঝতে পারলেন তার সেনাপতিরাও এই ষড়যন্ত্রে শামিল । বিদ্রোহের আভাস পেয়ে প্রধান সেনাপতি মীরজাফরকে ক্ষমা করে দিলেন এবং শপথ নিতে বললেন । মীরজাফরও সেই মর্মে কোরআন ছুঁয়ে শপথ করল যে শরীরের শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাবে । নবাব এই সমস্যা সমাধান করে মীরজাফর ...রায় দুর্লভ ..ইয়ার লতিফ ..মিরমদন..মুহনলাল আর ফারাসি সেনাপতি সিনফ্রেকে সেনা পরিচালনার দায়িত্ব দেন । ২২ জুন রবার্ট ক্লাইভ কলকাতা থেকে তার বাহিনী নিয়ে পলাশী লক্ষ্মবাগ নামে আমবাগানে ঘাঁটি করেন । বাগানের উত্তর পশ্চিমদিকে ছিল গঙ্গা নদী । আর উত্তর পূর্ব দিকে দুই বর্গমাইল ব্যাপী আমবাগান । সকালবেলা সেনাপতি মিরমদন তার বাহিনী নিয়ে হঠাৎ করে ইংরেজদের প্রবল আক্রমণ করেন এবং সেই তীব্র আক্রমণের মুখে ক্লাইভের বাহিনিরা বিচলিত হয়ে পড়ে এবং আমবাগানে আশ্রয় নেয় । তখন একমাত্র মিরমদনই সক্রিয় আর অন্য সেনাপতিরা ছিল নিশ্চুপ । দুপুরের দিকে আকস্মাৎ বৃষ্টিতে নবাবের সব গোলা বারুদ ভিজে যায় । তবুও সাহসী মিরমদন যুদ্ধ আব্যাহত রাখে । একপর্যায়ে হঠাৎ কামানের গোলার আঘাতে মিরমদনের মৃত্যু ঘটে । সেই সময় নবাবের আদেশ থাকা সত্বেও সেনাপতিরা নিশ্চুপ ছিল আর ইংরেজদের প্রবল আক্রমণের মুখে সঠিক নির্দেশনার অভাবে নবাব বাহিনী যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করে এটাকে পরাজয়ও বলা চলে ।
উপায় না দেখে নবাব রাজধানী রক্ষার জন্য দুহাজার সেনা নিয়ে মুর্শিদাবাদে রওনা হন । কিন্তু সেখানে তিনি কোন সাহায্য পাননি । নবাব তার স্ত্রী আর ভৃত্যকে নিয়ে ভগবানগোলায় যান এবং সেখান থেকে জলপথে মহানন্দায় উত্তর অভিমুখে যাত্রা করেন । তার মনে তখনো আশার আলো জ্বলছিল যে পাটনা গিয়ে রামনারায়নের কাছ থেকে সেনাবাহিনি নিয়ে ফরাসি বাহিনির সহায়তায় বাংলাকে রক্ষা করবেন ।
কিন্ত হায় !! বেইমান সেনাপতির গাদ্দারির কারনে করুণ নিয়তি নবাবকে উনার আশার মঞ্জিল পর্যন্ত যেতে দিলনা !
আর বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর মসনদের লোভে দেশ আর জাতির সাথে বেঈমানি করে ইংরেজদের কাছ থেকেও পেলনা তার স্বপ্নালু চোখে দেখা সালতানাতের শাহী পেয়ালা । পেল ইতিহাসের কালো অধ্যায়ে ঠাই আর বেইজ্জতি জিন্দেগী ।
রবার্ট ক্লাইভের অন্যায়ভাবে অর্জিত ক্ষমতা আজ আমাদের কাছে দুশো বছরের কালো ইতিহাস । যে ইতিহাসে আমরা দেখি বেইমান গাদ্দার মীরজাফরের বেইজ্জতি জিন্দেগী ......আর উপমহাদেশের মজলুম জনতার করুন হাহাকার আর রক্তের দাগ নিয়ে রবার্ট ক্লাইভের জিল্লতির মউত ।
বিষয়: বিবিধ
১১৬৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কিন্তু শিক্ষা খুব কমই নেয়া হয়!
মন্তব্য করতে লগইন করুন