ফুটবল জাদুকর সামাদ।

লিখেছেন লিখেছেন শার্লক হোমস ০৪ জুন, ২০১৪, ০৯:১৬:৪৯ রাত

প্রায় ৮০ বছর আগের ঘটনা। তখনো ফুটবল বিশ্বের কিংবদন্তী ব্রাজিলের পেলের জন্ম হয় নি। আর আরেক কিংবদন্তীর ম্যারাডোনার কথা তো বহু দূরে।

সালটা খুব সম্ভবত ১৯৩৩ কি ৩৪ হবে। ফুটবল তখন হালের ক্রেজ। সর্বভারতীয় ফুটবল দল সফরে গেছেন ইন্দোনেশিয়া। খেলার মাঠে প্রজাপতির মত উড়ছেন ৬ ফিট উচ্চতার এক কৃষ্ণকায় যুবক। ইন্দোনেশিয়ার ৪-৫ জন প্লেয়ারকে কাটিয়ে বল মারলেন গোলপোস্ট বরাবর। আফসোস, গোল হল না। বল লাগল গোলবারে। কি অদ্ভুত ব্যাপার স্যাপার। মিনিট ৫এর ভেতর আবারো সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এইবার গো ধরে বসেছেন যুবকটি। তার শর্ট মেজারমেনট তো এমন হবার কথা না। তিনি সরাসরি ম্যাচ পরিচালনা কমিটির কাছে নালিশ করে বসলেন। গোলপোস্টের মাপ ছোট আছে। অবিশ্বাস্যের সুরে মাপা হল গোলপোস্ট। হ্যাঁ, আসলেই ইঞ্চি চারেক ছোট গোলপোস্ট। কি আর করা। শেষে বারে লাগা সবগুল শর্ট গোল হিসেবে ধরা হল।

যে মানুষটির কথা এতক্ষন বলা হল তিনি আর কেউ নন। আমাদের দেশের মানুষ। সামাদ জাদুকর। ফুটবল জাদুকর সামাদ। যিনি কিনা পেলে , ম্যারাডোনা্‌ ষ্টেফানো, গারিঞ্জা, বেকেনবাওয়ার, পুস্কাসের বহু বছর আগেই ফুটবলকে দান করেছিলেন শৈল্পিকতা, আর নৈপুণ্যতা। যিনি কিনা পায়ের জাদুতে হতবাক করেছেন হাজারো দর্শককে। মুলত তার একক নৈপুণ্যে সর্বভারতীয় ফুটবল টিম তৎকালীন গ্রেট ব্রিটেনের মত শক্তিশালী টিমকে ৪-১ গোলে আর ইউরোপীয় টিমকে ২-১ গোলে পরাজিত করে। হতবাক হয়ে যায় পুরো ইউরোপের ফুটবল বোদ্ধারা।

ফুটবল জাদুকর সামাদ তার বর্ণাঢ্য ফুটবল ক্যারিয়ারে এমন অনেক বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছেন। তার ২৫ বছরের বর্ণাঢ্য ফুটবল ক্যারিয়ারের সূচনা হয় কিন্তু রংপুরের তাজ ক্লাবের হয়ে। সেখান থেকে তিনি যোগ দেন কলকাতার এরিয়েন্স ক্লাবে। পরবর্তীতে তিনি ইষ্ট বেঙ্গল রেলওয়ে ক্লাব, কোলকাতা মোহনবাগান, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের হয়েও খেলেছেন। ক্যারিয়ারের শেষের দিকে তিনি কোলকাতা মোহমেডানের হয়ে কিছুদিন খেলেছেন।

খুব কষ্ট লাগে আমাদের দেশের তরুনেরা পেলে চেনে, ম্যারাডোনা চেনে, হালের মেসি রোনাল্ডো, নেইমারকে চেনে, কিন্তু দেশের গর্ব সামাদ জাদুকরকে চেনে না। ভাল মত জানে না। অবশ্য এদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। সরকার ই যখন জানানোর ব্যাবস্থা করে না, পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি করে না, তখন পোলাপান জানবেই বা কিভাবে। আমার জানা নেই জাদুকর সামাদের নাম বইয়ের কোন চিপায় লেখা আছে কিনা।

ও হ্যাঁ। সৈয়দ আব্দুস সামাদের নামের আগে জাদুকর উপাধি টি দিয়েছিলেন তৎকালীন বাংলার গভর্নর। তিনি তাকে ডাকতেন wizard of football বলে।

courtesy: Honduras Football Team Supporters of Bangladesh

বিষয়: বিবিধ

১২৭১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

230663
০৪ জুন ২০১৪ রাত ০৯:৪৪
শেখের পোলা লিখেছেন : অনেক ছোটেলায় জেনেছিলাম,নিজের নামের সাথে মিল হওয়ায় গর্বও করতাম৷
230669
০৪ জুন ২০১৪ রাত ১০:১৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ধন্যবাদ এই ভুলে যাওয়া মানুষটিকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য। আমার দাদার মুখে এই নামটি প্রথম শুনেছিলাম। পরে তার সম্পর্কে পড়ার সুযোগ হয়। তিনি চাকরির সুত্রে কলকাতা লিগে রেলওয়ের পক্ষে খেলতেন। শেষ জিবন বেশ কষ্টে কাটান সম্ভবত পার্বতিপুর এ। শিশু একাডেমি তার একটি ছোট শিশুতোষ জিবনি প্রকাশ করেছিল। আর ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে "মুসলিম জাগরনে মোহামেডান স্পোর্টি" নামে একটি বইতেও তার সম্পর্কে মোটামুটি আলোচনা করা হয়েছে। সেই সময় এর কয়েকজন নামকরা খেলোয়াড় ছিলেন হাফিজ রশিদ,জুম্মা খান, তাজ মুহাম্মদ। একজন এংলোইন্ডিয়ান খেলোয়াড় ম্যাকওয়া কয়েকবছর আগে চট্টগ্রামে মারা গেছেন।
230685
০৪ জুন ২০১৪ রাত ১০:৫৮
সন্ধাতারা লিখেছেন : সুন্দর একটি লিখার জন্য অনেক ধন্যবাদ
230734
০৪ জুন ২০১৪ রাত ১১:৫৭
মু. মিজানুর রহমান মিজান (এম. আর. এম.) লিখেছেন : সত্য কথাই বলেছেনঃ সরকার যেখানে জানাবার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়না তো আমরা কী করব?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File