শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও কিছু প্রশ্ন
লিখেছেন লিখেছেন বোরহান উদ্দিন রুবেল ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০১:৩৪:৫৭ রাত
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও কিছু প্রশ্ন
বোরহান উদ্দিন রুবেল
১৯৭১ সালের বিজয় লাভের ঠিক দুইদিন আগে ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবীদের উপর এক নারকীয় অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশকে মেধা শূন্য করা হয় । এই দিনটি আজ বাংলাদেশী মানুষের কাছে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পরিচিত । বাংলাদেশের মানুষ এই দিনটি খুব ভালভাবেই পালন করে , কোন না কোন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় । কিন্তু এই বুদ্ধিজীবী হত্যা কেন হয়েছিলো ? কারা এই হত্যার সাথে জড়িত ছিল ? এই প্রশ্নগুলো জনমানুষের মনে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মনে জাগ্রিত হয় বেশি । কিন্তু মানুষের এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে গিয়ে আওয়ামী বুদ্ধিজীবীরা সবসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাঁদের সহযোগীদের দায়ি করে আসছে । তাঁদের এই উত্তরগুলো কি সঠিক ? তারা কি পুরোপুরি নিরপেক্ষভাবে বলছে ? নাকি আওয়ামী চেতনায় নেশাগ্রস্ত হয়ে তারা আবল তাবল বলছে ? এতদিন মানুষের মনে এই প্রশ্নগুলো না জাগলেও এ কে খন্দকারের “ ৭১ এর ভিতরে ও বাহিরে ” এবং তাজউদ্দীন আহমেদের মেয়ের বই প্রকাশের পর নতুন করে জেগে উঠেছে । আরো জেগে উঠে যখন দেখি বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস পালন করা নিয়ে আওয়ামী ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের দুই পক্ষের গোলাগুলিতে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সংখালুগু ছাত্র , তাপস পাল নিহত হয় । অন্যদিকে শাহবাগের শত শত চেয়ারে ২০/২৫ জন বসে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করছে পুরো রাস্তা বন্ধ করে । বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস নিয়ে যখন এতো অপরাজনীতি দেখি তখন বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন মনের অজান্তেই জেগে উঠে । যে প্রশ্নগুলোর উত্তর দেখলে আবার ইতিহাস ও প্রতিষ্ঠিত চিন্তা-চেতনা পাল্টে যাবারও সম্ভাবনা থাকে ............... তা হলো
(১) পাকিস্তানিবাহিনী ও তাঁদের সহযোগীরা চূড়ান্ত পরাজয়ের ঠিক দুইদিন আগে কেন বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করলো ? এতদিন এতো মানুষ হত্যা করলো তাঁদের কেন হত্যা করেনি ?
(২) ১৪ ডিসেম্বর পুরো দেশ প্রায় মুক্তিবাহিনীর দখলে ছিল অথচ পাকিস্তানী বাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যা মিশনে তারা কোন বাঁধার সম্মুক্ষিন না হয়েই হত্যাকাণ্ড চালালো কিভাবে ?
(৩) পাকিস্তানী বাহিনী না হয় হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে কিন্তু তাঁদের এই দেশীয় সহযোগীরা চূড়ান্ত পরাজয় নিশ্চিত হয়েও কেন সহযোগিতা করলো ? তাদেরতো ভয় থাকার কথা ছিল । কারণ তাঁদের এইদেশে থাকতে হবে ।
(৪) বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করে ভারতের উপর নির্ভরশীল করার মতো বোকা কাজটি কি বুদ্ধিজীবী হত্যার মাধ্যমে পাকিস্তান করবে ? নাকি ভারত মুজিববাহিনীর মাধ্যমে চীনপন্থি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে বাংলাদেশকে চীনের প্রভাবমুক্ত করেছে ?
(৫) যারা এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে তাঁদের মধ্যেতো কোন আওয়ামী বুদ্ধিজীবী ছিলনা । যারা হত্যা হয়েছে তাঁরা মূলত কম্যুনিস্ট ছিল তবে রাশিয়াপন্থী নয় তাঁরা ছিল চীনপন্থি । ভারত রাশিয়ার সমর্থন নিয়েই পাকিস্তানের বিপক্ষে হামলা চালাতে সম্মত হয় তাঁর আগে তাঁরা হামলা চালায়নি । আর চীন ছিল পাকিস্তানের পক্ষে । পাকিস্তান কি তাঁদের মিত্র চিনপন্থিদের হত্যা করার মতো বোকা কাজটি করেছে ? না করলে চিনপন্থিদের হত্যা করেছে কারা ?
(৬) আওয়ামী বুদ্ধিজীবী আ গা চৌ , মুনতাসির মামুন , শাহরিয়ার কবিরের মতো মুক্তযুদ্ধের সৈনিকদের ( যাদের প্রশ্ন করলে বলে আমরা যুদ্ধে যাইনি কারণ আমরা মারা গেলে দেশ মেধাশূন্য হয়ে যাবে ) হত্যা না করে তাঁদের চেয়েও কম পরিচিত শিক্ষকদেরও কেন হত্যা করা হল ?
(৭) ৭১ সকল হত্যা না হয় রাজাকাররা করেছে তাহলে ৭২ সালে জহির রায়হান কে কারা হত্যা করেছে ? এখানেও কি সে পাকিস্তানী বাহিনী আর রাজাকাররা ? নাকি পশ্চিমবঙ্গে বসে আওয়ামী নেতাদের অপকর্মের ডকুমেন্টারি তৈরি ছিল তার অপরাধ ?
সর্বশেষ এটা বলবো , জাতির উচিৎ বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবসে তাঁদের সম্মানের সহিত স্মরণ করা এবং যারা অপরাজনীতি করে এটার মাধ্যমে ফায়দা লুটতে চায় তাঁদের বয়কট করা । আর আরেকজন জহির রায়হানের জন্মদেয়া যাতে তাঁদের অপকর্মের ডকুমেন্টারি জাতির কাছে উম্মুক্ত করে জহির রায়হানের আত্মাকে শান্তি দিতে পারে ।
বিষয়: বিবিধ
১২০৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন