ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সাহেবের নিকট খোলা চিঠি
লিখেছেন লিখেছেন বোরহান উদ্দিন রুবেল ১৮ অক্টোবর, ২০১৪, ১০:২৬:০৫ রাত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সাহেবের নিকট খোলা চিঠি
বোরহান উদ্দিন রুবেল
জনাব আপনাকে কি বলে ডাকবো বুঝতে পারছিনা কারন আপনি প্রাচ্চের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভিসি । যদিও আপনার বড় একটি নাম রয়েছে । আর সেই নামটি হলো আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক । তবে যেহেতু আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র তাই আপনাকে শুধু আরেফিন স্যার বলেই ডাকবো । স্যার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বাংলাদেশের জনমানুষের বলেন আর শিক্ষার্থীদের যে প্রত্যাশা , তা হয়তো মাপার কোন যন্ত্র না থাকলেও তা আপনি বুঝতে পারেন । বাংলাদেশের মানুষ মনে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই বেরিয়ে আসবে ফররুখ আহমেদের সেই কাঙ্ক্ষিত পাঞ্জেরী । আমরা আমাদের স্বাধীনতার ৪৩ বছর অতিবাহিতো করলেও আমরা সেই কাঙ্ক্ষিতো নেতৃত্ব পাইনি যেমনটি পেয়েছিল মালয়েশিয়া মাহাথিরের মতো । তাই হয়তো বাংলাদেশের মানুষ চেয়ে থাকে ছাতক পাখির মতো যে সেই পাঞ্জেরী হয়তো ঢাবি থেকেই আসবে । আর যেহেতু আপনি ঢাবির মহামান্য ভিসি তাই আপনার কাছেও মানুষের প্রত্যাশাটাও একটু বেশি । স্যার আজ যে জন্য চিঠি লিখতে বসেছি তা বলার আগেই এই কথাগুলো কেন জানি বলে ফেললাম বুঝতে পারছিনা । বলার কারন এও হতে পারে ঢাবির ছাত্র হিসেবে মানুষের মুখে ঢাবি সম্পর্কে যা শুনেছি তাই নিজের ভাষায় মনের অজান্তে বলে ফেলেছি । আর বাঙ্গালিতো তাই বাস্তবতার চেয়ে আবেগটাও একটু বেশি কাজ করেছে । স্যার আপনি দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা না নেয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা অনেকের কাছে ভালো না লাগলেও আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে । অনেকেই হয়তো বলছে এটা এইবার না করে আগামিতে করলে ভালো হতো তাদের এটাও জানা উচিৎ তাহলে ২০১৫ সালে যারা আলিম বা এইচ এস সি পরিক্ষা দিবে তখন তারাও যদি বলে এটা আগামিতে করা হোক । এইখানেও তাদের অযুক্তিকতা কোথায় । সবচেয়েও বড় কথা হলো যেকোন এক বছরের পরীক্ষার্থীদের ছাড় দিতেই হবে । তাছাড়া UCC র মতো কুচিং সেন্টার আর ছাত্রলীগের জালিয়তি প্রতিকারেও এটি একটি ভালো উদ্যোগ । কিন্তু স্যার আপনার এই সাহসি সিদ্ধান্ত নিয়ে হয়তো খুব বেশি প্রশ্ন উঠতোনা যদি আপনি তার চেয়েও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কাজগুলোর সমাধান করতেন । তার সাথে স্যার আপনাকে হয়তো এগুলোও শুনতে হতো না যে , আপনি ঢাকা কলেজ থেকে অনার্স করেছেন আর রাজনৈতিকভাবে এখানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অথবা রাজনৈতিকভাবে ভিসি হয়েছেন । সমালোচনাকারিরা সমালোচনা করবে এতাই স্বাভাবিক কিন্তু স্যার তারা যা বলছে তা সব কি ভুল আর সবকিছুই সঠিক নয় বলবেন আপনি ? স্যার আপনি কি একটু বেশিই রাজনৈতিক হয়ে যাননি । স্যার ঢাবিকে সকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনুসরণ করে যার প্রমাণ হলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ও দ্বিতীয়বার পরীক্ষা বাতিল করেছে । স্যার সেই হিসেবে আপনাকেও তো অনেকে অনুকরণ করবে ব্যেক্তি হিসেবে না হলেও অন্ততো ঢাবির ভিসি হিসেবে । তাই স্যার আপনার কাছে এই চিঠিটি লেখা । আপনি কোন দল করেন আর আমি বা আমরা অথ্যাৎ শিক্ষার্থীরা কোন দল করে তা মূল কথা নয় আপনার সাথে আমাদের সম্পর্ক হলো ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক । স্যার তাই এমন কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই যে বিষয়গুলো আপনি সমাধান করলে বিশ্ববিদ্যালয় ফিরে পাবে তার নিজস্বরূপ আর সফলতার মুখ দেখবে তার উদ্দেশ্য । সেই বিষয়গুলো হলো ............
(১) স্যার আপনি দ্বিতীয়বার পরীক্ষা বাতিল করেছেন ভর্তির ক্ষেত্রে জালিয়তি তার অন্যতম কারন । কিন্তু স্যার শিক্ষার্থীরা তো মাত্র ৫ বছরের জন্য এখানে প্রবেশ করবে তাতেই আপনার তাদের জালিয়তি নিয়ে এতো ভয় । অথচ শিক্ষকগণ যখন রাজনৈতিক জালিয়তির মাধ্যমে ৩০ বছরেরও বেশি সময়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায় তখন আপনার মনে জালিয়তির ভয় কি জাগে স্যার ? স্যার দয়াকরে অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ বন্ধের ব্যাবস্থা গ্রহন করেন নতুবা এটা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের রেংকিংয়েও থাকবে না বিশ্বেরতো দূরের কথা ।
(২) স্যার অযোগ্য শিক্ষকগণ যখন ক্লাস নেয় তখন ছাত্ররা আর ক্লাস করেনা তাদের বাধ্য করতে আপনারা করলেন ক্লাসে পারসেন্টেজের ব্যাবস্থা করলেন । কিন্তু স্যার তার মাধ্যমে শুধু ছাত্রদের একটি ফ্রেমে নিয়ে আসলেন শিক্ষকদের ক্ষেত্রে কি এমন কোন আইন করা আছে যে তারা ক্লাস না করলে তাদের শাস্তি এই । স্যার এখন ক্লাস ভালো লাগেনা কেন জানেন স্যার ? কারন তারা আমাদেরকে তাদের ছাত্র থাকা অবস্থায় যে সিট পড়েছে টা পড়ায় । পারসেন্টেজের ব্যেবস্থা না করে ভালো শিক্ষক নিয়োগ দিলেই সবাই ক্লাস করবে । ভালো শিক্ষক নিয়োগের কথা দুইবার বললাম কারন স্যার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের সিংহভাগই তাদের জন্য ।
(৩) স্যার আপনার একটা সুনাম রয়েছে যে আপনার আমলে ক্যাম্পাস কোনদিন অনাকাঙ্ক্ষিতো কারনে বন্ধ হয় নি । কিন্তু স্যার আপনার আশ্রয়ে থেকে ছাত্রলীগ যখন বিরোধীদলের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মেরে হলের ছাঁদে চিতপটাং করে শুয়িয়ে রেখে পুলিশের হাতে তুলে দেয় তখন আপনার মেরুদণ্ডহীন প্রোক্টর সাহেব যখন কোন ব্যেবস্থা নেয় নি । এমনকি আপনিও কোনদিন সহাবস্থানের জন্য উদ্যোগ নেননি । স্যার দয়া করে রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধে উঠে সকল ছাত্রের নিরাপত্তার ব্যেবস্থা করুন ।
(৪) স্যার সর্বচ্চো বিদ্যাপীঠের গণতান্ত্রিক অবস্থার দিকে একটু নজর দিবেন । যে ডাকসু ছিল মানুষের অধিকারের আন্দোলনের অন্যতম মাধ্যম আজ সেখানেই গনতন্ত্র । বরং ডাকসুর দোতালায় নিয়ে ছাত্রলীগ এখন সাধারণ ছাত্রদের উপর নির্যাতনের স্ট্রিমরুলার চালায় । ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অধিকার পিরিয়ে দেয়ার ব্যেবস্থা করুন । আর যদি নির্বাচন নাই দিবেন তাহলে কেন প্রতিবছর ছাত্র সংসদের নির্বাচন বাবদ শিক্ষার্থীদের থেকে টাকা আদায় করেন এতা একটু ভাবে দেখবেন ।
(৫) স্যার মাদ্রাসার ছাত্রদের সাথে আপনি যে ব্যাবহার করেছেন তা কি আপনার বিবেককে একটুও নাড়া দেয়না । তারা তাদের মেধার মাধ্যমে আসলেও আপনি তাদের মেধার মূল্যায়ন করেননি । এতোগুলো ছাত্রের নিরব কান্নায় হয়তো আপনি ভেসে যাবেন কখনো কি এমন ভয় আপনাকে আচ্ছন্ন করেনি স্যার ? তারা হয়তো মনেমনে একটু সান্ত্বনা পাবে যে, আমাদের ভিসি স্যারতো ঢাবিতে অনার্স করেনি তাই তিনি তার মর্যাদা বুঝেনি কিন্তু স্যার তাতে কি আপনার মর্যাদায় একটুও লাগবেনা । স্যার মাদ্রাসা ছাত্রদের মেধার মূল্যায়নের মাধ্যমে ভর্তি হতে পারে সেই ব্যেবস্থা করে তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করে ভালো হয় ।
(৬) স্যার আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সর্বশেষ যে নোংরামি করল ডঃ পিয়াস করীমের লাস শহীদ মিনারে আনার আনুমুতি না দিয়ে তাতে কি আপনার বিবেক একটুও কাপলোনা । স্যার একটু চিন্তা করে দেখেন আপনারা তার লাসের সাথে নোংরামি করলেও তার জানাজায় জনতার ঢল নেমেছে । বাংলাদেশে এই প্রথম হয়তো কোন প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত না এমন ব্যেক্তির জানাজায় এতো লোক হল । স্যার সবাইকে যেহেতু মরতে হবে তাই বলছি আপনি যদি এই সরকারের আমলে না ইন্তেকাল করে অন্য সরকারের আমলে করেন তখন যদি প্রশাসন আপনার লাস শহীদ মিনারে নিতে না দেয় এখন যেই কারনে আপনারা পিয়াস করীমের লাস নিতে দেন নি সেই কারনে তাহলে কেমন লাগবে ভেবে দেখবেন ।
স্যার আপনি হয়তো ভাবছেন আপনাকে কেন এগুলো বলছি , হলের যা কিছু তাতো হল প্রভোস্ট দেখবে , বিশ্ববিদ্যালয়ের যা কিছু আছে তা দেখবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন , ডাকসু নির্বাচন হবে কি হবে না তা দেখবে ছাত্রসংগঠনগুলো । স্যার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মানুষ কি আপনার বা আমার এই কথাগুলো মেনে নেবে , তারা কি বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে এতটাই অজ্ঞ স্যার ? সবশেষে যা বলবো তা হলো স্যার আপনি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক সমস্যাগুলো সমাধান করেন তাহলে তা আবার প্রাচ্চের অক্সফোর্ডে পরিণত হবে । আর শিক্ষার্থীরা ফিরে পাবে তাদের ন্যায্য অধিকার । আর জাতি পাবে এমন কতগুলো কণ্ঠ যারা কথা বলবে জনতার পক্ষে , গনতন্ত্রের পক্ষে , সুশাসনের পক্ষে , দুর্নীতি আর পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে । তাহলে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে বিশ্বের অন্যতম মডেল যার অন্যতম অংশীদার হবেন আপনি । আপনাকে আল্লাহ তায়ালা সেই মডেলের অংশীদার হবার সদিচ্ছা ও যোগ্যতা দান করুক । স্যার ভুল হলে মাপ করবেন ।
বিষয়: বিবিধ
১১৫৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন