শিক্ষামন্ত্রীর প্রলাপ প্রসঙ্গ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা
লিখেছেন লিখেছেন বোরহান উদ্দিন রুবেল ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৩:০২:৩২ দুপুর
শিক্ষামন্ত্রীর প্রলাপ প্রসঙ্গ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা
বোরহান উদ্দিন রুবেল
আওয়ামীলীগের কোন মন্ত্রীই যেন বিতর্কের বা সমালোচনার বাহিরে থাকতে চান না , তাহলে ওনারো থাকা উচিৎ না তাই ইতি মধ্যে লেটেস্ট সংযোজন হলেন আমাদের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী । তাও আবার এমন একটি বিষয় নিয়ে মন্তব্য করেছেন যে বিষয় নিয়ে যে কেউ মন্তব্য করতে একটু ভেবে চিন্তে করে , করে না তা নয় করা উচিৎ না তাও না , তা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় । তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ত্রুটিপূর্ণ । কিন্তু প্রশ্ন হলো শিক্ষামন্ত্রী কেন এই বিষয়টি নিয়ে কথা বললেন ? তাঁর চেয়েও আরও বড় ত্রুটি হলো মাদরাসার শিক্ষার্থীদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে বঞ্চিত করা অথচ তিনি এই বিষয়টি নিয়ে কেন প্রশ্ন তুলেন না ? তিনিতো শুধু কলেজ শিক্ষার্থীদের মন্ত্রী না তিনিতো মাদরাসা শিক্ষার্থীদেরও মন্ত্রী । বিশ্ববিদ্যালয়ে অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে কেন কথা বলেন না ? হলগুলোতে ছাত্রলীগের দখলদারিত্ব নিয়ে কেন বলেন না ? বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়তি করতে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতা অথবা UCC কচিং সেন্টার যখন জড়িত থাকে তখন কেন কিছু বলেন না ? এই প্রশ্নগুলো হয়তো আমার মতো অনেকের মনে অন্তত শিক্ষামন্ত্রী সম্পর্কে জাগতোনা । তাহলে কেনইবা এই ফুলের মতো প্রবিত্র মন্ত্রী সম্পর্কে এই প্রশ্নগুলো জাগলো তাঁর উত্তর পরে দিবো । এবার যদি শিক্ষামন্ত্রীর সুবাদে জিপিএ ৫ পাওয়া কোন ছাত্র তাঁর প্রতি তাঁর ফলাফলের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তাঁর প্রতি দয়া করে পক্ষনিয়ে বলে বিশ্ববিদ্যালয়তো একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান তিনি কেন মাদরাসা ছাত্রদের অধিকারের কথা বলবেন , অবৈধভাবে কুলাঙ্গার বা অযোগ্যদের শিক্ষক নিয়োগের বিরুদ্ধে কথা বলবেন , হলগুলোতে ছাত্রলীগের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে কথা বলবেন অথবা ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলবেন । এগুলো নিয়ে যিনি কথা বলেননা অথবা বলার অধিকার বা সাহস রাখেন না তিনি ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কথা বললেন কেন ? তাতে তাঁর লাভ কি ? না বললে কি ক্ষতি হতো ? তা বলার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৪-১৫ সেশনের ভর্তি পরীক্ষার সিনোপসিস টা দিয়ে নেই । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৫ টি ইউনিটে পরীক্ষা হয় । ‘ক’ ইউনিটের ফলাফল নিয়ে কোন কথা নেই কারন এখানে পাশের হার মোটামোটি ভালো । ‘খ’ ইউনিতে ২ হাজার ২২১ টি সিটের জন্য পরীক্ষা দিয়েছে ৪২ হাজার ৪১৭ জন । সেখানে পাসের হার হলো ৯.৫৫% । এটা স্মরণ কালের সর্বনিন্ম পাশের হার । তাও আবার ইংরেজিতে ভর্তির জন্য মাত্র ২ জন উপযুক্ত । ‘গ’ ইউনিটের ১১৭০ সিটের জন্য ৪৮ হাজার ৫৭ জন পরীক্ষা দিয়েছে , পাস করেছে ৯ হাজার ৯০৭ জন , পাসের হার হলো ২০.৬১% । ‘ঘ’ ইউনিটে ৮৭ হাজার ২০৩ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে মাত্র ১৬.৫৫% । ‘চ’ ইউনিটে ১৩৫ সিটের বিপরিতে পরীক্ষা দিয়েছে ৮ হাজার ৯৮৩ জন , পাস করেছে ২২৬ জন । পাসের হার হলো ৩.১০% । এই হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার বেহাল অবস্থা । এখন পাসের এই করুণ অবস্থা যদি শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হতো তাহলে শিক্ষা মন্ত্রীর কথার সম্মান কিছুটা থাকতো যখন দেখা গেল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও ‘ডি’ ইউনিটে পাশের হার ৮.২% । তখন তাঁর কথার সম্মান রইলো কোথায় অবশ্যই আমাদের মন্ত্রীদের পাহাড় সমান মান তাতে কিছু হবে না । আওয়ামী পাচাটা বিদেশী দালাল এই মন্ত্রী কেন ভর্তি পদ্ধতি নিয়ে কথা বলা ছাড়া তাঁর কোন উপায় ছিল না । কারন সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যাবস্থা ধ্বংসের যে প্যাকেজ হাতে নিয়েছে তা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এই ততাকথিত মন্ত্রীর উপর । তাতে আমাদের আওয়ামী সরকারের লাভ কি ? লাভ হল পাসের হার এবং জিপিএ ৫ বেশী হলে এই সরকারের আমলে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে বলে ভোটের রাজনীতিটা করা যাবে । ভোটের রাজনীতি করতে গিয়ে তারা যোগ্য অযোগ্য সবাইকে জিপিএ ৫ দিতে গিয়ে ২০১৪ সালে ৫৭ হাজার ৭৮৯ জনকে জিপিএ ৫ দিয়ে দিয়েছেন । কিভাবে দিলেন এই জিপিএ ৫ ? তাঁর দায়িত্ব দিলেন সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে প্রশ্নফাঁসের লাইসেন্সের মাধ্যমে । ২০১৪ সালে পিএসসি থেকে এইচএসসি সব পরীক্ষায় প্রশ্নপ্রত্রফাঁস তাঁর প্রমান ।
এখানে যদি হেগেলের সেই দ্বন্দ্বমূলক তত্ত্বের মানদণ্ডে রাখা হয় তাহলে থিসিস (thesis) হলো প্রশ্নপ্রত্রফাঁস আর এন্ট্রিথিসিস (antithesis) হলো পাসের হার বৃদ্ধিরসাথে বিশাল সংখ্যার জিপিএ ৫ আর সিনথিসিস (synthesis) হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পাসের চেয়ে জিপিএ ৫ এর হার কয়েকগুণ বেশী । শিক্ষামন্ত্রী সাহেব এতো পার হার বৃদ্ধি করার পর যখন দেখলেন তাঁর প্রযোজনায় ছাত্রলীগের পরিচালনায় প্রশ্নপ্রত্রফাঁস হওয়া শিক্ষার্থীরা তো দূরের কথা জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরাও যখন বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার যুদ্ধে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে নাস্তানাভুদ হয়েছেন । তখন ছাত্রলীগ দিয়ে ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়তির মাধ্যমে পাসের হার বাড়াতে চাইলেন তাতেও কোন কাজ হলোনা । যখন এসবকিছু করেও কোন কাজ হয়নি পাসের হার বাড়ানো যায়নি তখন তিনি প্রশ্ন তুললেন ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে । কারন ঢাবির ভর্তি পরিক্ষায়তো আর প্রশ্নপ্রত্রপাশ করা যায় না । প্রশ্নপত্রফাঁস করা গেলে হয়তো বিসিএস সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের অযোগ্য সন্তানদের কোটায় চাকরি দেয়া হয় তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অযোগ্যদের প্রবেশের মাধ্যমে বিদিশিদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা যেত । এভাবে বিদিশীদের টাকা খেয়ে যেভাবে দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থার বারোটা বাজাচ্ছে আগামি প্রজন্ম কোন দিকে যাবে যদি এই শিক্ষাব্যাবস্থা এভাবে চলতে থাকে । আমাদের শিক্ষাব্যাবস্থার আর কতটা বাজলে আমরা প্রতিবাদ করবো , আর কত জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে আমরা প্রশ্নফাঁসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবো । এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশে কোন বুদ্ধিজীবী তৈরি হবেনা , দেশ চালানোর মতো লোক থাকবেনা , যারা থাকবে তারা হলো মন্ত্রীদের ছেলেরা যারা তাঁদের অবৈধ টাকায় বিদেশে পড়ালেখা করে আসবে । আর বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জন্মনিবে তাঁদের পাচাটা কিছু গোলাম । যারা আজীবন পাচেটে যাবে আর বাংলাদেশে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে এই পরিবারতন্ত্র ও পাচাটাতন্ত্র ।
বিষয়: বিবিধ
১১১১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো লাগলো লিখাটি।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন