মে দিবসের কিছু কথা প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

লিখেছেন লিখেছেন বোরহান উদ্দিন রুবেল ২২ মে, ২০১৪, ০৫:৩২:৫২ বিকাল

১লা মে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে পালিত হয় শ্রমিক দিবস হিসেবে। আর এই মে দিবস পালনের আছে একটি প্রেক্ষাপট । মে দিবসের চেতনা শ্রমিকদের আন্দোলনের সাথে সম্পর্কযুক্ত । একটি সময় এমন ছিল যে শ্রমিকদের মালিকরা মানুষ মনে করতনা । তারা শ্রমিকদের দাসেরমত খাটাত, দিনে ১০/১২ ঘণ্টা কাজ করাত , সপ্তাহে সাতদিন কাজ করাত কিন্তু তাদেরকে তাঁর বিনিময়ে খুব সামান্য পারিশ্রমিকই দেয়া হত । তাদের মধ্যে এই জমে থাকা ক্ষোভ এক সময় বিক্ষোবে পরিনত হয় । তা প্রথম ১৮৮৪ সালের ৭ অক্টোবর শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজের ও ন্যায্য মুজুরির দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে বিক্ষোব করে । আর তারা তাদের এই দাবী মানার জন্য মালিক পক্ষকে ১৮৮৬ সালের ১ লা মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় । মালিক পক্ষ তা মানতে অস্বীকার করে । তাঁর প্রতীবাদে ১৮৮৬ সালের ৪ ঠা মে শিকাগোর হে মার্কেটে প্রায় তিন লক্ষ শ্রমিক সমবেত হয় । তারা আবার এটি করতে সাহস পেয়েছেন অথবা উদ্বুদ্ধ হয়েছে ১৮৭২ সালে কানাডার বিশাল শ্রমিক সমাবেশ থেকে ।

হে মার্কেটের এই সমাবেশে সমবেত শ্রমিকদের উদ্দেশে বক্তব্য অগাস্ট স্পিজ নামে এক শ্রমিক নেতা ঠিক সেই সময় সমাবেশের একটু দূরে পুলিশের উপর একটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় মালিক পক্ষের ভারা করা লোকেরা । তাতে একজন পুলিশ মারা যায় । আর পুলিশ শ্রমিকদের উপর হামলা চালায় তাতে ১১ জন শ্রমিক শহীদ হয় । এইদিকে পুলিশ হত্যা মামলায় শ্রমিক নেতা অগাস্ট স্পিজসহ আট জনকে অভিযুক্ত করে । তথাকথিত বিচারের মাধ্যমে ১৮৮৭ সালের ১১ নভেম্বর উমুক্ত স্থানে ছয় জনকে ফাঁসি দেয়া হয় । তাদের একজন আগের রাত্রে জেলখানায় আত্মহত্যা করে । আরেকজনকে পনের বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় । ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে অগাস্ট স্পিজ বলেছিল ‘ আজ আমদের এই নিঃশব্দতা তোমাদের আওয়াজ অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হবে ’ । ১৮৮৯ সালে ফরাসী বিপ্লোবের শত বার্ষিকী উপলক্ষে ফ্রেডরিক এঙ্গেলসের নেতৃত্তে প্যারিসে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠিত হয় । ওই বছরই সোশ্যালিস্ট লেবার ইন্টারন্যাশনাল সম্মেলনে জার্মান কমিউনিস্ট নেত্রী ক্লারা জেটকিন ঘোষণা দেন ১৮৯০ সালের পহেলা মে থেকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালন হবে ।

১৮৯০ সাল থেকেই প্রায় সারা বিশ্বে শ্রমিক দিবস পালিত হয়ে আসছে । যদিও তথাকথিত মানবতার ধজ্জাধারি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা এই দিবসটি পালন করেনা । বাংলাদেশে প্রথম এই দিবসটি পালিত হয় ১৯৩৮ সালে তখন এটি ব্রিটিশদের দখলে ছিল । এই শ্রমিক দিবসের চেতনা মূলত ছড়িয়ে পরে যখন সোভিয়েতে কমিউনিস্ট সরকার ক্ষমতায় আসে । সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পর বামরা এই দিবসটিতে তাদের আদর্শের প্রচারের কিছু সুযোগ পায় । তারা এই দিবসটিকে শ্রমিক শ্রেণীর আন্তর্জাতিক সংহতির দিন হিসেবে মনে করে । বাংলাদেশের দিকে যদি তাকানো হয় তাহলে দেখা যাবে বাংলাদেশের শ্রমিকেরা এখনো মুক্তি পায়নি যদিও রাজনৈতিক স্বার্থে অনেক ঘটা করে তা পালন করা হয় । যেই কারনে ১৯৮৬ সালে করা হয়েছিল শ্রমিক আন্দোলন তাঁর প্রত্যেকটি কারন এখন বাংলাদেশে বিদ্যমান ।

বাংলাদেশের বিশেষ করে গার্মেন্টস শ্রমিকেরা দৈনিক ১০/১২ ঘণ্টা কাজ করে , তারা সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিন কাজ করতে হয় আর সে তুলনায় তাদের বেতনও অনেক কম । এই খাতে ৫০০০ গার্মেন্টসে কাজ করে প্রায় ২৮ লাখ শ্রমিক । তথ্য মতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ প্রায় বছরে তের হাজার কোটি ডলার আয় হয় এই খাত থেকে । অথচ মালিকদের বেতন বৃদ্ধির কথা বলা হলে তারা বলে তাতে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশী পণ্যের দাম বেড়ে যাবে আর চাহিদা কমে যাবে । ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের তথ্য মতে বাংলাদেশ হল সবচেয়ে কম পারিশ্রমিক দেয় পোশাক শ্রমিকদের এই অথচ চীন দেয় ১৩৮ ডলার , কম্বোডিয়া ৭৫ ডলার , ইন্দোনেশিয়া ৭১ ডলার , ভেয়েতনাম ৬৭ ডলার , ভারতে ৬৫ ডলার আর বাংলাদেশে ৩৮ ডলার ।অন্যদিকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেন আমরাই সবচেয়ে বেশি বেতন বৃদ্ধি করেছি । আমাদের শ্রমিকদেরকে যে দাসের মত ব্যাবহার করা হয় তা দেখা যায় রানা প্লাজা ধবংসের দিকে দেখলে । ২৩ এপ্রিল ২০১৩ শ্রমিকরা যখন দেখলো প্লাজায় ফাটল ধরেছে তখন শ্রমিকরা আসতে না করেছিল কিন্তু যুবলীগের রানা তাদের আসতে বাধ্য করে ।

কারন তখন হরতাল চলছিল বিরোধী দলের আর সে যদি তাদের আনতে পারে তাহলে তাৎক্ষণিক হরতাল বিরোধী একটি মিছিল করা যাবে । তাঁর ফলাফল দেখা গেল ২৪ এপ্রিল যখন তা ধসে ১১২৭ জন মানুষ মারা গেল , পঙ্গুত্ব বরন করলো কয়েকশো শ্রমিক যারা এখনো কাজে ফিরতে পারেনা । তাতে আমদের একজন মন্ত্রী উদ্ভাবনের সুযোগ ফেল ঝাঁকুনি তত্ব আর সরকার তা আড়াল করতে সাঝাল সতের দিনের পর জিবন্ত রেশমা নাটক ।ঝাঁকুনি তত্ব আর নাটক মাঝে এভারেস্ট জয় না করে যিনি হয়েছেন প্রথম বাংলাদেশী এভারেস্ট জয়ী মুসা ইব্রাহীম তিনি গেলেন ফটোশপ করতে যতক্ষণে ১০ জন শ্রমিক উদ্ধার করা যেত । এইভাবে প্রতিবছর হাজার হাজার শ্রমিক মরবে আর মানুষের চোখ অন্যদিকে ফেরানোর জন্য একেকটা রেশমা নাটক হবে যার বহন হবে সাম্রাজ্যবাদী মিডিয়াগুলো । আর ভিবিন্ন দেশ আরও হাজার বছরও যদি এই দিনটিকে লালন করে রেলির মাধ্যমে কোন দিনও শ্রমিকদের মুক্তি আসবেনা । যদি তাদের মধ্যে মনুষত্ব জাগ্রত না হয় । তথাকথিত বামদের রেলি দ্বারা শ্রমিকদের মুক্তি হবেনা যদি কিছু হয় তা হল রাজনৈতিক নেতারা একটি মঞ্চ পাবে কিছু বলার জন্য , শ্রমিকরা একদিনের রাজনৈতিক প্রোগ্রামে আসবে ২০০ তাকার বিনিময়ে আর তা থেকে একজন শাহজাহান খান তৈরি হবে । যদি বাস্তবে শ্রমিকদের মুক্তি হয় মে দিবসের চেতনা তাহলে মুখে না বলে বাস্তবে পরিনত করা দরকার আগে ।

শিক্ষার্থী : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বিষয়: বিবিধ

১০৫০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

224741
২২ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৪
ছিঁচকে চোর লিখেছেন : ভালো লাগলো লেখাটা। আসলে একটা কথা বলতে কি যতদিন আমরা সভ না হবো ততদিন তাদের মুক্তি আসবে না। দোষ আমাদের রক্তের। অন্য কোথাও নয়।
225212
২৩ মে ২০১৪ রাত ১১:২৬
বোরহান উদ্দিন রুবেল লিখেছেন : ঠিক বলেছেন ভাই

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File