জামায়াত নিষিদ্ধের সম্ভাব্য কারণ: একটি সরলীকরণ
লিখেছেন লিখেছেন বোরহান উদ্দিন রুবেল ১৭ মে, ২০১৪, ১১:১৫:২০ রাত
বাংলাদেশের মধ্যে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত অথবা সমালোচিত একটি দল হল বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী । এই আলোচিত অথবা সমালোচিত হওয়ার কিছু কারণ আছে । তার মধ্যে অন্যতম কিছু কারণ হল বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে বিরোধিতা , সরকার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সাম্প্রতিক ২০১৪ সালের উপজেলা নির্বাচনে অভাবনীয় ফলাফল । জামায়াত একটি গণতান্ত্রিক দল এবং তারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিশ্বাস করে । বর্তমানে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এমনকি গ্রাম পর্যন্ত তাদের সমর্থন পৌঁছে গেছে যদিও তাতে রয়েছে সরকার তথা আওয়ামীলীগের বিশাল অবদান ( এটি অন্যদিন বলবো )। এটি আরও পরিস্কার হয়েছে উপজেলা নির্বাচনে অনেক দিনের অমীমাংসিত বিষয়কে মীমাংসিত করায় । তা হল কোন দল বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম দল এটি ছিল দোটানার বিষয় জামায়াত সফলতা ও কৃতিত্বের সাথে তদের অবস্থান দেখিয়ে দিয়েছে তারা বাংলাদেশের তৃতীয় শক্তি । এইবার আসা যাক এত বড় একটি গণতান্ত্রিক শক্তিকে আওয়ামীলীগ অথবা সরকার বিচার বিভাগের মাথায় বন্দুকের নল ঠেকিয়ে কেন নিষিদ্ধ করতে চাইছে । জামায়াত নিষিদ্ধের অন্যতম একটি কারণ হল তারা স্বাধীনতার যুদ্ধে বিরোধিতা করেছে । এই কারণে জামায়াত নেতাদের বিচার করা হচ্ছে তথাকথিত ট্রাইব্রুনালে । যদি এইটা হয় নিষিদ্ধের কারণ তাহলে স্বাধীনতার সময় যেইসব দল বিরোধিতা করেছে সবগুলো দলকে নিষিদ্ধ করতে হবে বা করার কথা । যাদের মধ্যে রয়েছে মুসলিম লীগ , পিজিবি , নেজামে ইসলাম , কনভেনশন মুসলিম লীগসহ আরও কিছু দল কথা তাদের কেন নিষিদ্ধ করা হচ্ছেনা । যদি ব্যক্তিকে বিচার করা হয় তাহলে শেখ হাসিনার বেয়াই ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন , মখা আলমগির সহ যারা আওয়ামীলীগে আছে তাদের বিচার কেন হচ্ছেনা । দ্বিতীয় কারণ হল তাদের গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে সকল ক্ষমতার মালিক আল্লাহ তায়ালা এই কারণে পহেলা আগস্ট ২০১৩ (১-৮-২০১৩) জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্ট । মজার ব্যাপার হল নিষিদ্ধের জন্য রিট করেছিল তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব অথচ তাদের গঠনতন্ত্রেও লেখা আছে সকল ক্ষমতার মালিক আল্লাহ তায়ালা । এখন প্রশ্ন হল তাদের কেন নিষিদ্ধ করা হল না । জামায়াত নিষিদ্ধের তৃতীয় কারণ হল তারা একটি জঙ্গি দল । জঙ্গি বলতে আমাদের দেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা যা বুঝায় তা হল তারা মারামারি করে ,পুলিশের গুলি আর টিয়ারশেলের বিনিময়ে ঢিল মারে , ছাত্রলীগের অস্ত্র আর চাপাতির বিনিময়ে লাঠি নিয়ে নামে আর কোরআন হাদিস ও ইসলামী সাহিত্য পরে যা তারা বলে জিহাদি বই বলে । এই কারণে তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত । অন্যদিকে যারা বিশ্বজিৎকে চাপাতি দিয়ে হত্যা করে , টেন্ডার নিয়ে মারা মারি করতে গিয়ে চারজনকে খুন করে , কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের কর্মীকে হত্যা করে আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোবায়েরকে হত্যা করে তারা জঙ্গি নয় । আর তাদের নিষিদ্ধের কথা কেউ বলেনা কেন ? অথচ একই কারণ দেখিয়ে জামায়াতকে কেন নিষিদ্ধের কথা বলে তাহলে মূল কারণটা কোথায় যেই কারণে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে চাইছে সরকারসহ তাদের মিত্র দেশগুলো । আওয়ামীলীগ এটা ভাল করে বুঝে গেছে যে ভবিষ্যতে আওয়ামীলীগের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি দল জামায়াত । কারণ বিএনপির যে অবস্থা তা অল্প কিছুদেনের মধ্যে যে কালের উত্থান পতনে তারা বিলিন হয়ে যাবে ইতিমধ্যে দেশের মানুষকে বিএনপি জানিয়ে দিয়েছে সেটা উপজেলা নির্বাচনে মানুষও দেখিয়ে দিয়েছে জামায়াতকে ভোট দিয়ে । অন্যদিকে আওয়ামীলীগের অন্যতম মিত্রদেশ ভারত আবার আমদের সীমান্তবর্তী দেশ তারা আবার চায় জামায়াত নিষিদ্ধ হোক যা তাদের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং এরশাদকে বলে গেছে । কারণ তাদের উদ্বেগ হল জামায়াত আসলে তারা বাংলাদেশের মানুষের অধিকার যেভাবে খর্ব করছে এভাবে পারবে না , তাদের চিরাচরিত শত্রু পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ভাল হবে আর তাদের সীমান্তবর্তী জায়গা বিশেষ করে সেভেন সিস্টারস অঞ্চলগুলো স্বাধীন হওয়ার আন্দোলন আরও শক্তিশালী হবে । সবচেয়ে বড় কথা হল জামায়াতের যে আদর্শ তা ভারত, আওয়ামীলীগ, বাম ও তাদের মিত্রদের জন্য একটি হুমকি । এখন দেখার বিষয় যেই কারণে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে সেটা কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সরকারসহ তাঁর মিত্ররা ।
শিক্ষার্থী : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বিষয়: বিবিধ
১০২৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যারা জামায়াত কে সহ্য করতে পারে না তাদের জানা উচিত সেই কথা যা মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন সুরা সফ্ফে “তারা চায় মুখের ফুৎকারে আল্লাহুর নুর কে নিভিয়ে দিতে অথচ আল্লাহ তার প্রজ্জ্বলিত রাখবেনিই তাতে কাফেরদের যতই মর্মপিড়া হোক না কেন ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন