মুক্তিযুদ্ধার সন্তান বনাম সম্মান প্রসঙ্গ কোটা পদ্ধতি

লিখেছেন লিখেছেন বোরহান উদ্দিন রুবেল ১৬ মে, ২০১৪, ০৪:১৮:১৪ বিকাল

মুক্তিযুদ্ধার সন্তান বনাম সম্মান প্রসঙ্গ কোটা পদ্ধতি

বোরহান উদ্দিন রুবেল

এইতো আগামি ২৪শে মার্চ শুরু হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপুণ্য ও লোভনীয় চাকরি বিসিএস(BCS) পরীক্ষার লিখিত পরীক্ষা । এটি ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষা । তবে এই পরীক্ষা যারা দিতে চায় বা দেয় তারা আবার দুই ভাগে বিভক্তি প্রথম পক্ষ হল মুক্তিযুদ্ধার সন্তান আর দ্বিতীয় পক্ষ হল বাংলাদেশের সন্তান । এই কথাটি কেন বললাম সবাই না বুঝলেও যারা এই পরীক্ষা সহ যেকোনো প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় যারা অংশগ্রহণ করে বা করবে তাদের কাছে এটা পরিস্কার । বাংলাদেশ একটি স্বাধিন দেশ!!!! ১৯৭১ সালে যারা পশ্চিম পাকিস্তানের আদিপত্ত থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে মুক্ত করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে আমরা তাদের মুক্তিযুদ্ধা বলি । এই পূর্ব পাকিস্তান যখন স্বাধীন হল আমরা পেলাম এই বাংলাদেশ । যদিও দলবেদে আমদের মতানৈক্য রয়েছে যে আমরা কেন স্বাধীন হলাম ,আমদের স্বাধীনতার উদ্দেশ্য কি ছিল । সব উত্তর এক না হলেও এই একটি উত্তর এক তা হল আমরা একটি বৈষম্য মুক্ত সমাজ ,দেশ ও জাতি হিসেবে বাঁচার জন্য । এবার আসেন আমরা দেখব আমরা এটা কি পরিমান করতে পেরেছি নাকি বৈষম্যটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছি ।আমদের মুক্তিযুদ্ধে কতজন শহীদ হয়েছে তানিয়ে খোদ বিতর্কটা আমদের জাতির পিতাই করে গেছেন । কিন্তু মুক্তিযুদ্ধার সংখ্যা বাড়িয়ে কী লাভ বা মুক্তিযুদ্ধাদের তালিকায় নাম উঠিয়ে কী লাভ তা আসলেই যারা মুক্তিযুদ্ধা তারা না জানলেও চেতনা বেবসায়িরা খুব ভাল করেই জানে ।মুক্তিযুদ্ধাদের তালিকা সরকারী ভাবে শুরু হয় ১৯৯৪ সালে তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি (BNP)সরকার তাদের হিসাব অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধাদের সংখ্যা ৮৬ হাজার । তারপর যখন ক্ষমতায় আসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (BAL).তারা যদিও জামায়াতে ইসলামিকে সাথে নিয়ে ক্ষমতায় এসে ছিল । ১৯৯৮_২০০১ সালে আরেকটি তালিকা করা হয় তখন তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মত বেড়ে গিয়ে আলহামদুলিল্লাহ্‌ ১ লাখ ৮৬ হাজার হয়ে যায় । জোট সরকার ক্ষমতায় এসে আবার তালিকা করে সেখানে সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাড়ায় ২ লাখ ১০ হাজারে । এই ভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধার সংখ্যা বেড়ে গেলে আমাদের কোন সমস্যা হতো না সমস্যা দাঁড়িয়েছে আরেক যায়গায় যেটা নিয়ে আজ লেখা । আমাদের বিসিএস পরীক্ষাসহ সরকারী চাকরিগুলুতে কার্যত মেধার কোন মূল্যায়ন হয়নি । কারন কোটা পদ্ধতি ,স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির কারনে মেধাবীরা ঘাঁটে এসে তরী বিরাতে পারেনা । বাংলাদেশের মতো এরকম অবৈধ কোটা পৃথিবীর অন্য কোন দেশে নাই এই কারনে বাংলাদেশের নাম গ্রিনিজ বুকে উঠানো উচিত । তবে এই রেকর্ড করতে সরকারকে ইসলামি ব্যাংকসহ অন্য কোন প্রতিষ্ঠান থেকে রাষ্ট্রীয় চাঁদা তুলতে হবে না । যারা সবকিছু করে সংবিধানের স্বার্থে তাদের সংবিধান লঙ্গনের সরূপটি একটু পরে দেখাচ্ছি চাকরি ভাগাভাগিটা দেখিয়ে নেই । জেলা কোটা ১০% ,মহিলা কোটা ১০% ,উপজাতি ৫% আর মুক্তিযুদ্ধাদের সন্তানদের জন্য ৩০% আলহামদুলিল্লাহ্‌ । আর বাংলাদেশের সন্তান্দের জন্য রাখা হয়েছে ৪৫% তাঁর মানি তারা কোটায় পরে গেছে । এই ৪৫% এর মধ্যে রাজনৈতিক কোটা ১০% , স্বজনপ্রীতি কোটা ১০% ,আর আর্থিক লেনদেনের কোটা ১৫% আর মেধাবী কোটা ১০% সত্যিই মেধাবীরা আজ কোটায় পরে গেছে । কিন্তু কোটা আমাদের সংবিধানের সাথে যায় কিনা নাকি তা সংবিধান বিরোধী তা দেখা যাক । সংবিধানের ২৭,২৮ অ২৯ নং ধারা অনুযায়ী সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী তবে সমাজের অনগ্রসর জাতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা যাবে । এই বিধান অনুযায়ী জেলা ,উপজাতি ও মহিলা কোটার ভিত্তি আছে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধা কোটার কোন ভিত্তি নাই । কারন মুক্তিযুদ্ধারা কোন অনগ্রসর জাতি না । আর যদিও কিছু কিছু মুক্তিযুদ্ধা অসচ্চল আছে তাদের জন্য ভাতার বেবস্থা করা উচিত ।কিন্তু প্রকৃত অবস্থা অন্য রকম যারা আসচ্চল তারা ভাতা পায় না ভাতা পায় যারা সচ্চল তারা কারন তারা দলের লোক । এভার আসি মূল যায়গায় যারা প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধা তাদের যদি বলা হয় আপনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন কেন ?তারা বলবে দেশের জন্য । তাদের যদি আবার বলা হয় আপনি কি চাকরির জন্য করেছেন ? সে অবশ্যই বলবে না ।তাহলে কেন এই কোটা ? কেন এই অসম্মান ?তাতে লাভ কার ? এটা কেন বললাম, আমি একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে চা খাচ্ছিলাম আমার সাথে একজন বড় ভাইও ছিল । তিনি হঠাৎ তাঁর আরেক বন্ধুকে বলল এই মুক্তিযুদ্ধার সন্তান । তাঁর বন্ধু তাঁর সাথে রেগে গিয়ে বলল এভাবে আর ডাকা যাবেনা । আমার প্রশ্ন হল যেখানে তাঁর এটা শুনে গর্ব করার কথা সেখানে সে রেগে গেল কেন । তাঁর মানে এটা মানুষ এখন আর খায় না । আর যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করে মুক্তিযুদ্ধাদের বিপক্ষে আর স্লোগান দেয় আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ চাই তখন সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধারা নিবৃতে চোখের পানি পেলে ।আর যারা কোটার ভাগীদার তারা হাসে কারন তারা সফল মুক্তিযুদ্ধাদের অসম্মান করিয়ে ,তারা সফল তাদের দলের লোকদের চাকরি দিয়ে আর তারা সফল মুক্তিযুদ্ধাদের গালি হিসেবে ব্যাবহার করাতে । যদি এভাবে মুক্তিযুদ্ধাদের নিয়ে অপরাজনীতি চলতে থাকে তাহলে কলিকাতায় যেভাবে সুচিত্রা সেনের বিপরীতে উত্তম কুমার প্রচলিত হয়ে গেছে তেমনি বাংলাদেশে সম্মানের বিপরীতে মুক্তিযুদ্ধা শব্দটি প্রচলিত হয়ে যাবে ।তাহলে তারা সফল হয়ে যাবে কারণ ইতিহাস সাক্ষী তারা মুক্তিযুদ্ধ করেনি ।

শিক্ষার্থী: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বিষয়: বিবিধ

১৩০৪ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

222303
১৬ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:১৬
থার্ড আই লিখেছেন : ভালো লাগল।
222313
১৬ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০৯
হারিয়ে যাবো তোমার মাঝে লিখেছেন : অনতিবিলম্বে কোটা পদ্ধতির সংস্কার করে মেধাবীদের দেশ ও জাতি গঠনে নিয়ে আসতে হবে।
222321
১৬ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এই ফালতু কোটর আশু অবসান প্রয়োজন।
222831
১৭ মে ২০১৪ রাত ১১:০৭
বোরহান উদ্দিন রুবেল লিখেছেন : ধন্যবাদ@ থার্ড আই
222833
১৭ মে ২০১৪ রাত ১১:১০
বোরহান উদ্দিন রুবেল লিখেছেন : মেধাবিদের আনলেতো চেতনা থাকবেনা @ হারিয়ে যাব তোমার মাঝে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File