বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে র (RAW) ও সিআইএ (CIA) :একটি সারমর্ম

লিখেছেন লিখেছেন বোরহান উদ্দিন রুবেল ০৭ মে, ২০১৪, ১২:৫৯:০৩ দুপুর

বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে র (RAW) ও সিআইএ (CIA) :

একটি সারমর্ম

<><><><><><><><><><><>><><><>

বোরহান উদ্দিন রুবেল

এই বইটির লেখক হল মাসুদুল হক । তিনি পেশায় একজন সাংবাদিক । তিনি এই বইটির মধ্যে খুব ভাল ভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে তৎকালীন দুই প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা RAW এবং CIA এর ভূমিকা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন । তাছাড়া তিনি স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েও তাদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেছেন । তিনি এই বইটি মূলত ১৩ টি আধ্যায়ে লিখেছেন । প্রতিটি অধ্যায়ে অনেক তথ্য উপাত্ত দিয়ে তিনি আলোচনা করেছেন । তাছাড়া তিনি কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তির সাক্ষাতকার দিয়েছেন ।

(১) আজকের বাংলাদেশ শুধু ১৯৭১ সালের নয় মাসের ফল নয় বরং ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের পর উপমহাদেশের রাজনীতিতে যে পরিবর্তন সূচিত হয় তাঁর পরিনতি এটা । ১৯৬২ সালের ২০ অক্টোবর চীন-ভারত যুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানকে যুক্তরাষ্ট অনুরুধ করে ভারতের পক্ষ হয়র চীনের বিপক্ষে যুদ্ধ করার জন্য । আইয়ুব তা পত্তাক্ষান করে । তারপর সিআইএ নেমে পরে আইয়ুব উৎখাতে আর ‘র’ নেমে পরে পাকিস্তানের পৃথকীকরণে ।

(২) আইয়ুব হঠাতে সিআইএ দুইটি পরিকল্পনা মাথায় নেয় । একটি হল সামরিক চাপ আরেকটি হল রাজনৈতিক চাপ ।

(ক)সামরিক চাপটা হল তারা পরিকল্পনা করে ভারত-পাকিস্তান একটি যুদ্ধ বাধিয়ে দেয় ১৯৬৫ সালে । তাতে তাদের ধারনা ছিল পাকিস্তান এই যুদ্ধে ভারতের কাছে হেরে যাবে তখন সেনাবাহিনী দিয়ে তাকে উৎখাত করা হবে । কিন্তু রাশিয়া ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে তাসখণ্ড চুক্তির মাধ্যমে তাদের আশা ভঙ্গ করে দেন ।

(খ)সিআইএ এর রাজনৈতিক চাপ হল ছয় দফা আন্দোলন ( আর এই ছয় দফার লেখক ছিলেন রুহুল কুদ্দুছ । যদিও আওয়ামীলীগ তা অস্বীকার করে )।

(৩) এইদিকে raw ছাত্রসমাজের মাধ্যমে পূর্বপাকিস্তানের স্বাধীনতা সম্বলিত কিছু লিপলেট ছাপিয়ে ছড়িয়ে দেয় পুরো পূর্বপাকিস্তানে বিশেষ করে ছাত্রসমাজের মধ্যে । যাদের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেয়ে হয় তা হল তাদের দ্বারা তৈরিকৃত ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ নামের একটি দল । শেখ মুজিব অবশ্য তাদের চরমপন্থি বলেছেন ।

(৪)১৯৬৯ সালের গণআন্দলনের মাধ্যমে ইয়াইয়া খানের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করে আইয়ুব খান পদত্যাগ করে । ইয়াইয়া খান আন্দলন থামানোর জন্য ১৯৭০ সালের নির্বাচন ঘোষণা করে । ৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ বিশাল ব্যবধানে জয় লাভ করে । সামরিক জান্তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করে যার ফলে ৭১ সালের ২৫ মার্চ হত্যাযজ্ঞ চালায় ।

(৫) ২৫ শে মার্চের পর ‘র’ তাদের অনেক দিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পস্তুতি শুরু করে । আর এইদিকে সিআইএ পাকিস্তানের ভাঙ্গন ঠেকানর জন্য নেমে পরে । ভারত তাদের পুরানো শ্ত্রুর বিরুদ্ধে যাওয়ার আগে যেকোন একটি পরাশক্তির সাহায্য দরকার মনে করে । তারা রাশিয়ার সাহায্য পাওয়ার পর যুদ্ধ শুরু করে । তবে ভারত অবশ্যই এই যুদ্ধ শুরু করে ভারত-পাকিস্তানের তৃতীয় যুদ্ধ হিসেবে ।

(৬)এইদিকে স্বাধীনতার যুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেয় প্রবাসী সরকার কিন্তু প্রবাসী সরকারের নিয়ন্ত্রণে মুজিব বাহিনী যুদ্ধ করতে অস্বীকার করে । তাদের এই বিরোধিতার সুযোগ নেয় ‘র’ । তারা স্বাধীনতার পরবর্তীতে তাদের ব্যাবহারের জন্য তৈরি করে বিশেষ করে বামপন্থি নির্মূলে ।

(৭) মুজিব বাহিনী ৭১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের ভিতরে প্রবেশ করে পাঁচ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে । তারা প্রবেশ করার দুই মাস আগে মুক্তি বাহিনী বাংলাদেশের ভিতরে যুদ্ধ শুরু করে । তারা পাকিস্তানিদের বিপক্ষে যুদ্ধ না করে বামপন্থি মুক্তিযুদ্ধাদের হত্যা শুরু করে । তারা মুক্তিযদ্ধাদের অবাঞ্চিত , ডাকাত ও সাম্প্রদায়িক বলে ভারতে প্রচার করে ।

(৮) এইদিকে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের সাথে ভারতের গোপন ৭ টি চুক্তি হয় তা র মধ্যে একটি ছিল বাংলাদেশের কোন সেনাবাহিনী থাকবেনা আভ্যন্তরীণ নিরাপওার জন্য একটি প্যারা মিলেটারি থাকবে যা পরবর্তীতে রক্ষীবাহিনী হয় । পূর্বে যারা মুজিব বাহিনিতে ছিল তাদের নিয়েই রক্ষী বাহিনী গড়ে তলে ‘র’ শেখ মুজিবের নির্দেশে । তারা প্রায় ৪০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ও ভিন্ন মতের মানুষকে হত্যা করে ।

(৯)ছয় দফার মূল লেখক যে রুহুল কুদ্দুস এই বইটিতে তাঁর প্রমান দেয়া হয় । রুহুল কুদ্দুস নিজেই তা স্বীকার করেন । আর ছয় দফা পেশ করার পর পাকিস্তানের প্রতিটি পত্রিকা ভাল করে সংবাদ করে তাঁর মূল কারন সিমলা চুক্তিকে আরাল করার জন্য । আর পাকিস্তান সরকারই পত্রিকাগুলোকে আদেশ করে ।

(১০) শেখ মুজিব সম্পর্কে এই বইটিতে বলা হয় তিনি হলেন একজন দ্বিচরিত্রের লোক । আর তিনি কখনও কার উপকার স্বীকার করেন না । এই জন্য দেখা যায় তিনি ছয় দফাকে নিজের বলে চালিয়ে দিয়েছেন ।

(১১)সর্বশেষ যেই কথাটি বলা হয় তা হল মুজিব বাহিনী থেকে শেখ মুজিবের আদেশে ‘র’ রক্ষী বাহিনী তৈরি করে আর ‘সিআইএ’ তৈরি করে গণবাহিনী । রক্ষীবাহিনী ও ‘র’ কে প্রতিহত করার জন্য গণবাহিনী তৈরি করা হয় ।

এই বইটির শেষে মোট পাঁচ জনের সাক্ষাতকার দেয়া হয় তারা হল হুমায়ূন রশিদ চৌধুরী ( মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের দিল্লী মিশন প্রধান ছিলেন) , রুহুল কুদ্দুস (ছয় দফার প্রকৃত লেখক ) , আব্দুর রাজ্জাক (মুজিব বাহিনির চার জনের এক জন ) ,তোফায়েল আহমেদ ((মুজিব বাহিনির চার জনের এক জন ),হাসানুল হক ইনু (মুজিব বাহিনির প্রশিক্ষক ছিল) ।

শিক্ষার্থী – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বিষয়: বিবিধ

১০১০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File