বিয়ের বাজারে সৎ পাত্ররা অবমূল্যায়িত হচ্ছে
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ০৩ জুন, ২০১৭, ০৭:৫৭:১০ সকাল
বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলেদের কোন যোগ্যতাটি প্রকৃতঅর্থে আবশ্যক? এই প্রশ্নটি গুরুত্বহীন। বস্তুবাদের এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে একজন মেয়ে কিংবা তার পরিবারের বেঁধে দেওয়া কতগুলো শর্ত পূরণ করতে পারাই প্রকৃত যোগ্যতা। যেমন ইউনিভার্সিটিতে প্রথম সারির ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট+ইর্ষণীয় রেজাল্ট, হ্যান্ডসাম লুকিং, ফার্স্ট ক্লাস জব, বিগ বিজনেসম্যান, রাজধানীতে সেটলড অথবা অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট-বাড়ি, সৎ চরিত্রবান হওয়া ইত্যাদি।
সৎ পাত্র অথবা চরিত্রবান এবং উপরোক্ত যোগ্যতাগুলো কি একই সময়ে কারো মাঝে বিদ্যমান থাকে (কিছু ব্যতিক্রম ধর্তব্য নয়)? একজন পুরুষ ২৫-২৭ বছরে শারীরিক এবং মানসিকভাবে বিয়ের উপযুক্ত হয়, একই সাথে এই বসয়ে উল্লেখিত যোগ্যতাগুলোর সবক’টা অর্জন বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রায় অসম্ভবই বলা যায়।
তাই একটা ছেলেকে বিয়ে করতে হলে, যদি সমাজের বেঁধে দেওয়া যোগ্যতাগুলো পূর্ণ করতে হয়, উপযুক্ত বয়স ছাড়িয়ে অনেক পরে বিয়ে করতে হয়। স্বীকার করি আর না করি, প্রাকৃতিক নিয়ম মতে বিলম্বে বিয়ে শরীর এবং মনের দিক থেকে প্রতিটি যুবকের জন্যই কষ্টকর। আর হঠাৎ করেই এতগুলো যোগ্যতা অর্জন অসম্ভব, বেকারত্বের গ্লানি টানার কষ্টতো রয়েছেই।
এমতাবস্থায় সবচেয়ে বেশি যাতনা সহ্য করতে হচ্ছে সচ্চরিত্রবান যুবকদেরকে। ইসলামী জীবনব্যবস্থায় বিয়ের ক্ষেত্রে ‘সচ্চরিত্রবান’, ‘পরহেজগারিতা’ এবং ‘স্ত্রীর দেন মোহর ও ভরণ পোষণ যোগান দেওয়ার ক্ষমতা’র মত যোগ্যতাগুলো অর্জন করা সত্ত্বেও ভোগবাদী বস্তুবগত চিন্তা-ভাবনা থেকে উৎসারিত এবং অত্যাবশ্যকীয়তায় রূপ নেওয়া যোগ্যতাগুলো দ্রুততম সময়ে অর্জন করতে না পারায় জীবনের অপরিহার্য অংশ বিয়ের বাজারে অযোগ্য বিবেচিত হচ্ছে!
বিয়েতে মোহর কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং আবশ্যক, বোধ করি তা প্রতিটি ব্যক্তি মাত্রই অবগত আছেন। তবে বাস্তব চর্চা-অনুশীলন বলে ভিন্ন কথা। বিয়ের রেজিস্ট্রেশন খাতায় টাকার অংকে এর সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে প্রতিযোগিতা চলে, আদায় নিয়ে চলে মিথ্যা প্রবঞ্চনা ও ছলচাতুরী। যেটা অনাবশ্যক, সেটাই এখন আবশ্যক। মোহর দেওয়া জরুরী, গহনাপাতি, উপহার-উপটৌকন দেওয়ার বিষয়টি ঐচ্ছিক বা খুশি হয়ে প্রদান করার ব্যাপার। অথচ মোহর ছাড়া বিয়ে চলে, স্বর্ণ-গয়না ছাড়া অসম্ভব! শুধু তাই নয়, বিয়ের সময় কথা পাকাপাকি না হলেও স্বর্ণ-গয়নাকে মোহরের অংকে মিলিয়ে দিয়ে উসুল দেখানো হয়!
স্ত্রীর ভরণ পোষণের ব্যবস্থা করা বরের অবশ্য কর্তব্য। আমার মতে একজন ছেলে নিজে যা খায়, পরে, তার স্ত্রীর ভরণ পোষণও ঠিক তাই অথবা কিছু বেশি। এটুকু যোগান দেওয়া সুস্থ-সবল একজন ছেলের পক্ষে কষ্টসাধ্য হলেও অসম্ভব নয়। আর সন্তানাদি হতে হতে ছেলেটা তার আয় রোজগার অনেকটাই বাড়িয়ে নিতে পারে। কিন্তু ভরণ পোষণ মানে যদি হয় প্রতিবেলায় বাজারের মিনিকেট চাল, বেশি দামের গরু-মুরগীর মাংস ও মাছ ভক্ষণ, নিত্য নতুন রেসিপির যোগানদান, ঘরে টেলিভিশন, সোফা, আলমিরা, সুকেস, বক্স খাট, ওয়ারড্রব সহ অত্যাধুনিক আসবাব পত্র ক্রয়, বছরের ঈদ, পূজা পার্বণ সহ সবক’টা বিশেষ দিন-উৎসবে লেটেস্ট ফ্যাশনের জামা কাপড় কিনে দেওয়া, প্রসাধনী ব্যয় বহন, তাহলে উপযুক্ত বয়সে বিয়ে করতে আগ্রহী পাত্র সৎ হলেও এরকম ভরণ পোষণ প্রদানে একেবারে অযোগ্য।
উপযুক্ত বয়সে উপনীত হওয়া অসংখ্য যুবককে জানি, যারা সর্বোচ্চ মানের ভালো মানুষ, ভাল পাত্র হওয়া সত্ত্বেও বিয়ে করতে না পারার কষ্টে ভুগছে দিনকে দিন এবং ‘একটা কিছু করতে পারা’র প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দাঁতে দাঁত কামড়ে। কেননা রাসূলের (স) সুন্নাহর অনুসারী, সাধারণ ঘারানার মেয়ে নির্বিশেষে সবাই (কিছু ব্যতিক্রম বাদে) শর্ত হিসেবে পরহেজগার পাত্র চাওয়ার পাশাপাশি ওইসকল শর্তগুলোও জুড়ে দিচ্ছে যেমন ভাল জব, ঢাকায় বাসা বাড়ি নিয়ে থাকার যোগ্যতা ইত্যাদি। আজকাল মেয়েরা, এমনকি ধার্মিকরাও প্রকৃত যোগ্যতার দাবীদার দ্বীনদার পাত্রদেরকে পার্থিব কিছু যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থতা অথবা বিলম্ব হওয়ার কারণে অবলীলায় ফিরিয়ে দিচ্ছে!
বিস্ময়ে হতবাক হই একথা ভেবে, এই মানুষগুলো তো এসব অর্জন কিছুকাল পরে করতেও পারে বা করার সামর্থ রাখে, তবুও সম-সাময়ীক সফলতা-ব্যর্থতাই কেন মেয়েদের কাছে বা তাদের পরিবারের কাছে পরহেজগারিতার উপর বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় আল্লাহ্র রাসূলের শিক্ষাতো এটাই যে, কোনো সৎ পাত্র কোনো মেয়ের বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসলে যেন ফিরিয়ে না দেয়। অথচ আমরা কি করছি। মুখে বলি সুন্নাহর অনুসারী, কাজে প্রমাণ দিচ্ছি ভোগবাদিতা আর স্ব-প্রবৃত্তির দাসত্বগিরি!
আমার ওয়াইফকে দিয়ে বেশ কয়েকজন সুপাত্রের জন্য পরহেজগার পাত্রীর সন্ধান করি। কিন্তু তাদের ডিমান্ড আর শর্তের কথা শুনে আহত হয়েছি দারুণভাবে। জীবন যাপনে আমরা হতে পারছিনা আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (স), আবু বকর (রা), ওমর (রা), ওসমান (রা), আলী (রা), ফাতেমা (রা) প্রমুখের মত। আজ আপনারা যে এতো যোগ্যতা-শর্ত দিচ্ছেন, আল্লাহ্র রাসূল, সাহাবায়ে কেরাম, সোনালী যুগের মানুষদের দেখুন, দেখুন তাদের জীবনাচার, বিয়ে-শাদী। আর মিলিয়ে নিন তারা কি করেছেন, আর আপনার কি করছেন। আপনার অন্যায়ভাবে প্রত্যাখানের কারণে একটি যুবক যদি বিয়ে পূর্ব পাপের কাজে লিপ্ত হয় অথবা শামিল হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করে, আপনি দায়মুক্ত নন।
একটা সময়ে অভিভাবকগণ শুধু ছেলেকে বিয়েই করাতেন না, বরং ছেলে কর্মক্ষম অথবা কোনো কাজে যোগদান করার পূর্ব পর্যন্ত নব দম্পতির ভরণ পোষণের যোগান দিতেন। আলহামদুলিল্লাহ্, আমার বাবা আমাদের দু’ভাইয়ের বিয়ে পরবর্তী থাকা খাওয়ার জন্য বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছে সুন্দর একটা পাকা দালান করে দিয়েছেন। বিয়ের সময় সিংহভাগ খরচের যোগান দিয়েছেন। এখন আর এমন খুব একটা দেখা যায়না। বরং সাফ জানিয়ে দেয়, আগে একটা ভাল চাকুরী, তারপর বিয়ে! এই বাবারাই কিন্তু পারেন চাকুরী বা ব্যবসার আয় থেকে ছেলের বিয়ের জন্য একটা বাজেট বরাদ্দ রেখে উপযুক্ত বয়সেই বিয়ে করিয়ে দেওয়া। ছেলে সন্তানকে উপযুক্ত বয়সে বিয়ে করানো বাবা মায়েরই দায়িত্ব। ইসলামের শিক্ষা এটাই। তাহলে আমরা করছি কি! এই কাজটা উল্টো মেয়ের বাবারা মেয়ের জন্য করে, অথচ জরুরী হচ্ছে ছেলের বাবাদের জন্য।
মেয়ের বাবারা এ বিষয়গুলো বিবেচনা করলে, মেয়েরা নিজেরা সৎ পাত্রদের পরহেজগারিতাকে মূল্যায়ন করলে, পাত্ররা স্বয়ং দৃঢ় প্রত্যয়ী হলে উপযুক্ত বয়সেই বিয়ে করা সম্ভব, সম্ভব বিয়ের কিছুকাল পরে আয়-রোজগারের পথ প্রশস্ত করে নেওয়া। সবাই সবার জায়গা থেকে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। ইনশা আল্লাহ্, সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমি নিজে উপযুক্ত বয়সে বিয়ে করেছি বলেই এতগুলো কথা বলার সাহস পাচ্ছি। তাই কথাগুলোকে কেউ আবেগতাড়িত হয়ে লিখেছি মনে করে তুচ্ছ করবেন না।
বিষয়: বিবিধ
১৭৯১ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এরকম কথা আমি অনেকবার আপনার ও অন্যান্য ব্লগারদের পোস্টে বহুবার লিখেছি । কেউই পাত্তা দিতে চায় নি ''বউ তার সাথে সেক্স করবে না'' এই ভয়ে ।
মুখে স্বীকার করেন আর নাই বা করেন বিয়ে করে কোন পুরুষ মানুষই সুখী হয় না । যদি দেখেন যে সুখে আছে সেটা তবে বাইরে বাইরে এবং এই সুখ তাকে পেতে হয়েছে বউয়ের গোলামী করে / পা চেটে যেটা শরিয়তের খেলাফ।
বিয়ে করা একজন পুরুষ মানুষের জন্য সম্পূর্ণ লস একটা খাত । তবে আল্লাহর বিধান তো - না মেনে উপায় নেই ।
এমন মন্তব্য আপনার ইসলাম নিয়ে অজ্ঞতার পরিচয় দেয়।
সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতে বলাই আছে স্ত্রীদের স্বামীর প্রতি অনুগত থাকতে কারণ স্বামীরা তাদের জন্য ব্যয় করে।
বর্তমানে এমন একটিও দাম্পত্য জীবন নেই যেখানে স্ত্রীরা স্বামীর অনুগত হয়ে চলে । দাম্পত্য জীবনের দায়দায়িত্ব স্ত্রীদের সেরকম করে পালন করতে কাগজে কলমে বলা হয় না বলে এবং নারীরা শরিয়তের চেয়ে মনুষ্য আইনেই বেশী কমফোর্টেবল ফিল করে বলে তারা দাম্পত্য জীবনে দেবার চেয়ে পেতেই বেশী তটস্থ থাকে।
একজন পুরুষ বিয়ে করে একজন নারীর কাছে কি পায় - সেক্স ছাড়া ? এটাও তারা না দিতে শত বাহানা খোঁজে । কিন্তু ১৬ আনা দাবীর উপর ৩২০ আনা দাবী তাদের সব সময়ই থাকে ।
টাল্ডি বাল্টি টাইপ পোলাপান এত তেলায় না । যেহেতু বউ শরিয়তকে ফলো করে না দেবার বেলায় তাই এসব পোলাপান পরকীয়া করে বউকে প্যারায় রাখে ।
সৎ পোলাপানদের এটাই দূর্বলতা । পায় না বউয়ের কাছ থেকে সেক্স , পরকীয়াও যে করবে সেখানেও ধর্মের কড়া বারণ থাকে।
এখনকার মেয়েরা সেজন্যই চায় এরকম সৎ তথা বোকা টাইপ পোলাপানকেই বিয়ে করতে । ইচ্ছে মত খসাবে , পঁচাবে , প্যারায় রাখবে । আর যেহেতু সে সৎ ছেলে , স্ত্রীর কাছে উত্তম হয়ে সবার মধ্যে উত্তম হতে চায় - তাই বউয়ের এই অধীনস্ত তথা অনুগত হয়ে চলাতেই সে শান্তি খুঁজতে চাইবে।
আমি যেটা বললাম সেটা বাস্তবতার নিরিখেই
বললাম । আপনাদের মত তো বিশাল জ্ঞানের অধিকারী হতে পারি নাই যারা কল্পনার সাগরে ভেসে বেড়ান । মাটিতে পাই পড়তে চায় না।
আগেও মনে হয় বলেছিলাম - বেশী দূরে যেতে হবে না । নিজের ভাই বা পুত্রের দিকে তাকালেই
বাস্তবতা টের পাবেন । নাকি সেই স্টেজে এখনও আসেন নি?
ভালো লাগলো , ধন্যবাদ
আসলে আমাদের বতর্মান সমাজে বিয়েটা দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
অনেক দিন পর না এসে ঘন ঘন আসবেন।
ধন্যবাদ আব্দুর রহিম ভাই
আপনার লিখার সাথে একমত এবং এ নিয়ে এ ভাবে লিখার জন্য ধন্যবাদ।
কিন্তু নিচের এই ফ্যাক্টস্ এর ভিত্তি কি?
''একজন পুরুষ ২৫-২৭ বছরে শারীরিক এবং মানসিকভাবে বিয়ের উপযুক্ত হয় ----''
বয়োঃপ্রাপ্ত একজন ছেলে কিংবা মেয়ের বিয়ে দেওয়া - গার্ডিয়ানের দায়িত্ব, সমাজের দায়িত্ব, মুসলিম মিল্লাতের দায়িত্ব বলেই আমি জানি। দায়িত্বের অবহেলা - মাত্রই ধর্মের অবমাননা ও নিজেদের উপর অভিশাপ এর আহ্বান বলে আমার মনে হয়।
যদি ঐ বয়সে তথা বয়োঃপ্রাপ্ত হলে বিয়ে দেওয়া হবে না, কিংবা কেউ ইচ্ছা করে বিয়ে করবে না, করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করবে - তবে তার রেজাল্ট হিসাবে ঐ ছেলে মেয়ে এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষজনের উপর সমূহ আপদ নেমে আসবে - যার সাইড এ্যাফেক্ট এর অনেকগুলো আপনি যেমন উল্লেখ করলেন - মিঃ হতভাগা ও বলতে চাইলেন।
আল্লাহ ভাল জানেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন