তাবাচ্ছুমের আবদারগুলো (আবদার-৪)
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ০৬ মার্চ, ২০১৭, ১১:১১:৫২ সকাল
তাবাচ্ছুম সুর করে টেনে টেনে কুরআন তেলওয়াত করছে। মেয়েদের কুরআন পড়ার স্টাইলটা দারুণ। শুদ্ধ করে পড়তে না পারুক, সুর থাকবেই তাতে। এভাবেই চলতে থাকে খতমের পর খতম।
কৌতুহলবশত আজ তাবাচ্ছুমের পাশে গিয়ে বসি। তেলওয়াত থামিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কিছু বলবেন”? বলি, “না, তোমার তেলাওয়াত শুনব”। লজ্জায় মুখ লাল হয়ে যায়। “না না না, আমি কিচ্ছু পারিনা”, তাবাচ্ছুম লজ্জা পায়।
“বোকা মেয়ে, পড়ো, স্ত্রীর ভুল ত্রুটি সংশোধন করা অথবা শিখিয়ে দেওয়াই তো আদর্শ স্বামীর দায়িত্ব। তুমি কি চাওনা আমাকে আদর্শ বর হিসেবে দেখতে?” জিজ্ঞাসা করি। জবাবে তাবাচ্ছুম, “অবশ্যই চাই, কিন্তু লজ্জা করে”!
লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে আছে মুখ! এমন দৃশ্য প্রতিটি স্বামীর জন্যই আনন্দের। বড় ওড়না দিয়ে চুল, কান, গলা সহ সমস্ত শরীর আবৃত। আজকাল মেয়েরাতো নামাজ ও কুরআন পড়ার সময় কেবল পর্দা করে। অন্যদের সাথে তাবাচ্ছুমের পার্থক্যটা এখানেই। সে ঘরে-বাইরে সব জায়গায় একই রকম পর্দা করে। আলহামদুলিল্লাহ্।
সংকোচ কাটিয়ে শেখার জন্য প্রস্তুত হয়। শুরু করার আগেই কুরআন শেখার ভীতি দূর করতে বলি, “দেখো, শুদ্ধ পড়তে পারাটা সময় সাপেক্ষ ও নিয়মিত চর্চার বিষয় হলেও অসম্ভব কিছু নয়। তাছাড়া তুমি তো প্রতিদিন অভ্যাসবশত কয়েকবার কুরআন পড়, আর এই অভ্যাসটাকে সিস্টেম ফলো কাজে লাগালেই দু’এক সপ্তাহই তোমার জন্য যথেষ্ঠ”।
“তাই নাকি”! তাবাচ্ছুম অবাক হয়। জবাবে বলি, “হ্যাঁ, কুরআন সকল শ্রেণী পেশার মানুষের উপযোগী। একজন মুর্খ লোকের পক্ষে মাতৃভাষা ব্যতিত অন্য ভাষা আয়ত্তে আনতে যেখানে মাসের মাস, বছরের পর বছর লেগে যাবে, সেখানে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে সে লোকটি মোটামুটি শুদ্ধ করে কুরআন পড়তে পারবে”।
তারপর এক ঘন্টা ব্যয় করি তাবাচ্ছুমকে কুরআন শেখাতে। কতগুলো কাঠামোবদ্ধ নিয়ম যেমন মাখরাজ কী, মদ কত প্রকার, গুন্নাহ ইত্যাদি মুখস্ত না করিয়ে পড়ার সময় আয়াতের মাঝেই অক্ষরের উচ্চারণগুলো বলে দেই, আর বাংলা অক্ষরের সাথে আরবী হরফের মিল খুঁজে দেওয়াতে শেখাটা অনেক সহজ হয়ে যায়। সর্বশেষ দেখার চেষ্টা করি কতটুকু পারছে অথবা পারবে। প্রথম দিনেই আমার তাবাচ্ছুম আমাকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে, মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে অনেক অগ্রগতি করেছে!
বাহ বাহ দিয়ে ওঠতে যাব, তখনই হাত ধরে টেনে বসিয়ে বলে, “আমার একটা আবদার! সহিহ শুদ্ধ করে কুরআন তেলওয়াত আয়ত্তে আনতে যতদিন সময় লাগে, ততদিন আপনিই আমায় শেখাবেন। আজ থেকে আপনাকেই আমার ওস্তাদ মানলাম”!
মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে বলি, “ক্ষুদ্র, অতি নগন্য জ্ঞান আমার। নেই শেখানোর কোনো যোগ্যতা, তবুও কথা দিলাম শেখাবো এবং এ প্রচেষ্টায় আল্লাহ্র সাহায্য কামনা করছি”।
বিষয়: বিবিধ
১৩৯১ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
প্রেরণাদায়ক মন্তব্যের জন্য অনেক শুকরিয়া।
জাযাকাল্লাহু খাইর
আমীন আমীন আমীন
আলহামদুলিল্লাহ, আমার শশুর জামে মসজিদের খতিব ও আলেম হওয়াতে পুরো পরিবারই ইসলামীক মাইন্ডেড। এইদিক থেকে আমি ভাগ্যবান।
আমীন আমীন
সেজন্য আপনাকেও শতভাগ আলেম হওয়ার চেষ্টায় কঠোর অনুশীলন করতে হবে। বলতে পারেন আপনার দায়িত্ব বেড়ে গেল
মন্তব্য করতে লগইন করুন