তাবাচ্ছুমের আবদারগুলো (আবদার-২)
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ০৪ মার্চ, ২০১৭, ১১:০২:৫৪ সকাল
সকালের ঘুম একটা বাজে অভ্যাস। মসজিদে জামাতের সাথে ফজরের নামাজ পড়ে বাজে অভ্যাসটা করতে যাব, তখনই মা আর বউ একজোট হয়ে বলছে, “নাস্তা বানাচ্ছি। খবরদার, নাস্তা না করে ঘুমানো যাবেনা”!
পুরুষ জাতীকে এই দুইটা মানুষইতো সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। শীত কি গরম, বারো মাসেই ভালো-মন্দ নাস্তা পাতি রেডি করে খাইয়ে তৃপ্ত মুখটা দেখেই অনাবিল শান্তি খুঁজে পায়।
কিছুক্ষণ পরেই তাবাচ্ছুম নাস্তা নিয়ে হাজির। ত্বরিত গতিতে ভালো রান্না করতে পারাটা নারীদের একটা বিশেষ যোগ্যতা। আজকের নাস্তার আইটেম চিতল পিঠা, গরুর ঝোল ও খেজুরের রসের রাব। শীতকালে এই পিঠাটা গরম গরম খাওয়ার মজাই আলদা।
গরুর ঝোল দিয়ে আগে খাওয়া শুরু করি। একটা পিঠার প্রায় অর্ধেক শেষ করে তাকিয়ে দেখি চোখ বড় বড় করে বউ আমাকে গিলছে! “এই হা করে দেখছো কি”? আমি জিজ্ঞেস করি।
“এত কষ্ট করে বানালাম, আমার পেটুক স্বামী একবার জিজ্ঞেস তো করলই না খেয়েছি কিনা, আর একটু সাধলও না খেতে”! তাবাচ্ছুম অনুযোগের সুরে বলে। আসলেই তো! “সরি, আসো খাই”। বউকে সরি বললে জাত যায়না, বরং সম্পর্ক আরো মধুর হয়।
“আচ্ছা, খাওয়া শেষ করেন, আপনার কাছে আমার একটা আবদার আছে”, তাবাচ্ছুম বলে। হঠাতই তাবাচ্ছুমের আবদারের কথা শুনে অবাক হই কিন্তু ভাবনায় পড়ে যাই, কি আবদার হতে পারে।
খাওয়া শেষ করে বউয়ের উর্ণা দিয়ে হাত মুখ মুছে নেই। এটা আমার আদিখ্যেতা। বউও তাতে আনন্দ পায়। তারপর তাবাচ্ছুম বলে, “আমার আবদারটি রাখতে আপনাকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। প্রথমত সকালে ঘুমানোর অভ্যাসটা বাদ দেবেন, আর দ্বিতীয়ত প্রতিদিন সকালে, রাতে ঘুমানোর আগে আমাকে কুরআন মাজিদ তেলাওয়াত করে শোনাবেন। এবং এই মুহুর্ত থেকেই শুরু করেন”।
স্বামী-স্ত্রীর প্রতি পরস্পরের আবদার এতো ব্যতিক্রমধর্মী হতে পারে, আমার তাবাচ্ছুমকে না দেখলে বিশ্বাসই হত না। আমিও স্বানন্দে সূরা বাকারার ১৫৩ নং আয়াত থেকে ১৫৭ নং পর্যন্ত তেলওয়াত ও তর্জমা করে শোনাই। “হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহ্র নিকট সাহায্য প্রার্থণা কর, আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন..........................................”।
টপ টপ করে বউয়ের গাল বেয়ে অশ্রু ঝরে চলেছে। আমার একটা হাত তার হাতের তালুতে কচলাতে কচলাতে বলে, “আমার যে কত্তো ভালো লেগেছে, বলে বুঝাতে পারবনা, শুধু জেনে রাখেন, এ অমীয় বাণী শোনায় কানেতে যে সুখ, মনে যে উপলব্দি, তাঁর তুলনা হয়না। আপনার প্রিয় মুখে কুরআনের বাণী শুনতে শুনতে যেন খোদা আমায় তুলে নেন”!
বিষয়: বিবিধ
১১৫৮ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পড়লাম, দোয়া করি- "স্বপ্ন" সত্য হোক!
জাযাকুমুল্লাহ..
বিশ্বাস এবং প্রত্যাশা করি, আপনার বিবিও একদিন এমনই হবে, ইনশা আল্লাহ্।
ইনশা আল্লাহ্, চালিয়ে যেতে চাই।
জামাইর বাড়ীর আবদার? না জানিয়ে কিছু করলে...................
আমিন আমিন আমিন
জাযাকাল্লাহু খাইর
শুকরিয়া
খুবই প্রীত হলাম
জাযাকাল্লাহু খাইর
০ ফজরের নামাজ পড়ে আবার ঘুম !!!
ভাইজানের লাইফ মনে হয় ভারতীয় সিরিয়ালের মত । কোন চাকরি বাকরি ছাড়াই সংসার চলে যায় ।
বিয়ে করা লোক সকালে যদি নামাজ পড়ে খেয়ে দেয়ে আবার ঘুম দেয় তাহলে অফিসের জন্য বের হবে কখন?
আজকের নাস্তার আইটেম চিতল পিঠা, গরুর ঝোল ও খেজুরের রসের রাব।
০ আমরা বলি চিতই পিঠা । গরুর মাংসের ঝোল আর সাথে আলু থাকলে কয়টা খেলাম সেটা আর মনে থাকে না । খেজুরের রস + নারকেল হলেও দারুন জমে ।
অনেক বছর আগে আব্বার সাথে দেশের বাড়ি গিয়ে ফুফুর বাসায় গিয়েছিলাম । সেখানে ফুফু চুলায় চিতই পিঠা বানাচ্ছিলেন আর আমাকে আর আব্বাকে দিচ্ছিলেন। মনে হয় ১৫-২০ টা করে খেয়েছিলাম প্রত্যেকে ।
০ সত্য ঘটনার চেয়ে কল্পিত কাহিনী মানুষ বেশী পছন্দ করে , কারণ এতে লেখক তার মনে মাধুরী মিশিয়ে কাহিনী সাজায় । প্রত্যেক চরিত্রকে নিজের পছন্দ মত করে সেট করে ।
পাঠক বা দর্শকরাও এরকম কল্পিত কাহিনী সত্য কাহিনীর চেয়ে বেশী পছন্দ করে । কারণ জীবনে তারা যা কামনা করে তার সামান্য মাত্র পায়, বাকীগুলো অপূর্ণ থাকে বা তার বিপরীত ঘটে ।
কিন্তু এসব কল্প কাহিনীতে সবকিছুই সেট আপ করা থাকে যেমনটা মানুষ আকাঙ্খা করে ।
আপনার এই অংকের শেষ প্যারাগুলো পড়তে বা শুনতে ভাল লাগলেও বাস্তবতার সাথে এর মিল খোঁজা বোকামী।
খাওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হয়, খাবার যত সুস্বাদুই হোক না কেন!!!!! হতচ্ছাড়াকে বলে কি লাভ!
এর মধ্য থেকে কিঞ্চিৎ ও যদি পাওয়া যায়, তাও কম কিসে। আমি শুধু এভাবে কামনাই করিনা, এর উল্টো দিকটাও জানি। তবুও আমি আশাবাদী।
এই গল্পগুলো মানুষকে অনুপ্রাণিত করার জন্যও। বাস্তবতার সাথে শতভাগ মিলতেই হবে। এমন কিন্তু নয়।
সেলফিশরা এমনিই হয়......হা হা হা
আপনাদের জন্য অনেক অনেক দোয়া রইলো।
আমাদের জন্য আপনার দুয়া আল্লাহ্ কবুল করুন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন