তাবাচ্ছুমের আবদারগুলো (আবদার-১)
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ০৩ মার্চ, ২০১৭, ১০:৩৬:৪২ সকাল
হাতের কাজ সেরে অনেক রাত হয়ে যায় ঘুমাতে। এদিকে তাবাচ্ছুম তো ঘুমের রানী হয়ে নাক দিয়ে গড় গড় বাঁশি বাজাচ্ছে। গ্রামে এমনই হয়, রাত ৮ টা ৯ টা বাজলেই সবাই মরে যায়। আমার তাবাচ্ছুম একটু পর পর এদিক ওদিক ডিশিম ডিশিম হাত পা ছুড়ে মারছে। বাল্যকালের অভ্যাসটা এখনো যায়নি!
ঘুমের মধ্যে তাঁর মাত্রাতিরিক্ত নড়াচড়া, গায়ে পা তুলে দেওয়া তাবাচ্ছুম নিজেও কিছুটা জানে, তাই আমাকে আলাদা কাঁথা নিয়ে শোয়ার পরামর্শ দেয়। সে পরামর্শ কিছু কাল মানতে পারলেও অধিকাংশ সময় ডিশিম ডিশিম শঙ্কা নিয়েই স্বেচ্ছায় এক কাঁথায় ঢুকে পড়ি। শত হলেও বউ তো!
ঘুমের দুয়া পড়ে ডান কাত হয়ে শুয়ে পড়ি। আল্লাহ্র রাসূলের অভ্যাস ছিল ডান কাত হয়ে শোয়া। দ্রুত ঘুমানোর চেষ্টা করি, কিন্তু প্রতিদিনকার মত আজও মাথায় মাথায় কিলবিল করতে থাকে মৃত্যু চিন্তা। আজই যদি জান কবজের জন্য আজরাইল ফেরেশতা এসে যায়, কী হবে? সামান্য নেক আমলের বিপরীতে পাহাড় সমান পাপ নিয়ে জান্নাতের আশা করাও তো অন্যায়! এভাবে ভাবনার গভীরে হারিয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়ি জানিনা।
কপালে আদ্র হাতের ছোঁয়ায় শরীর কেঁপে ওঠে। ঘুমের ঘোরে ঠিক বুঝে ওঠতে পারিনা। এইবার বাম হাত বুকের উপর রেখে ডান হাতের পাঁচ আঙ্গুল দিয়ে চুলে মৃদুলয়ে বিলি কেটে চাপা স্বরে ডাকছে “এই উঠেন”। আর বুঝতে বাকি নাই, বউ আমায় ডাকছে। ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলার তাঁর চমৎকার স্টাইলটা আমার কাছে অসাধারণ লাগে। কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলি “জাগালে কেন, ফজরের সময় হতে এখনও অনেক দেরি”! “ওঠেন, আমি ওজু করে এসেছি, আপনিও আসেন। একসঙ্গে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ব”।
এ কথায় চুপ মেরে ভাবি, এ যুগেও এমন মেয়ে থাকতে পারে! কৃতজ্ঞতায়, আনন্দে মন ভরে যায়। তবুও আজ ওঠা সম্ভব নয়, তাই বলি “মন খারাপ করো না, আজ অনুরোধ রাখতে পারছিনা, অনেক রাতে ঘুমিয়েছি। একা পড়ে নাও। আগামী দিন থেকে ইনশা আল্লাহ্, আমিও তোমার সঙ্গে পড়ব”।
শুধু এটুকুতেই সন্তুষ্ট হওয়ার মানুষ নয় তাবাচ্ছুম। প্রতিশ্রুতি আদায় করেই নেবে। “আমরা সবসময় চেষ্টা করব সকাল সকাল ঘুমিয়ে রাতে ওঠে তাহাজ্জুদ পড়তে। আমি বই পড়ে জেনেছি, তাহাজ্জুদ নামাজে অনেক ফজিলত। আল্লাহ্র প্রিয় বান্দা হওয়ার অন্যতম মাধ্যম এটি। খুবই খুশি হব, যদি আপনি আমাকে সঙ্গ দেন। কথা দিচ্ছেন তো?” উত্তরের আশায় আমার দিকে চেয়ে থাকে তাবাচ্ছুম।
হতাশ করিনি তাবাচ্ছুমকে। পরম ভালোবাসায় জড়িয়ে ধরে বলি, “বোকা মেয়ে, এমন প্রতিশ্রুতি একবার কেন, হাজারবার দিতেও আমি রাজি...........................”।
বিষয়: বিবিধ
১২০২ বার পঠিত, ৩০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আজকাল আমাদের মুসলমান সমাজে মেয়েরা তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে ফুটানির জন্য। খোঁজ নিয়ে দেখবেন যে দিনের বাকি ৫ ওয়াক্ত নামাজের ব্যাপারে তারা এতটা সিরিয়াস না যতটা তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার জন্য । যেমনটা রমজান মাস আসলেই কেউ কেউ সিজনাল মুসলমান হয়ে যায়।
তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার পর ফজরের নামাজ পড়েছিলো কি ?
এরপর কি আবারও ঘুমিয়ে পড়েছিল নাকি সাংসারিক কাজকর্ম শুরু করেছিল?
তাহাজ্জুদ পড়া এতো সোজা না যে কেউ ফ্যাশন হিসেবে পড়বে, তবে রমজানে সৃজনাল হয়ে যায়, এটি একেবারেই সত্য।
এমন সময়ে ওঠে, যখন তাহাজ্জুদ ও ফজরের সময়টা কাছাকাছি, তাই তাহাজ্জুদ পড়ার কিছু পরেই ফজর পড়তে পারে সহজেই।
না ঘুমায় না। তবে খুব সকালে নাস্তা রান্না বান্না শেষে বেশ এক দেড় ঘন্টা ঘুমিয়ে নেয় রাতের ঘুমটা কাভার করার জন্য।
হতভাগা ....!!
জাযাকুমুল্লাহ্ এমন স্ত্রী পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।
তা আপনার বিয়ের খবর কি???????????????
হতচ্ছাড়াটা মনে প্রতি রাতে বউয়ের হাতে জনমের ধোলাই খায়, এই জন্য তাঁর এই হাল।
তাহাজ্জুদ তো তাদের পক্ষেই পড়া সম্ভব, যারা নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। কেননা এটি কঠোর অনুশীলনের বিষয়।
যথার্থই বলেছেন, আল্লাহ্ তাদের উপর বেশি খুশি।
লেখাটা খুব সাদামাটা ভাষায় আমার অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ।
সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।
বিয়ে না করলে বউ আসল কোথা থেকে, আমার বউয়ের কথাই বলছি......
সুন্দর চমৎকার মূল্যায়নে প্রেরণা খুঁজে পেলাম।
জাযাকাল্লাহু খাইর
আমি সাদামাটাভাবেই লিখে যাই, জানিনা কতটুকু কি হয়। মূল্যায়ন তো আপনারা করবেন। যাক,আপনার মূল্যায়নে প্রেরণা খুঁজে পেলাম।
এভাবে ঘটে যাওয়া বিরল, কিন্তু বিশ্বাস করি অসম্ভব নয়।
ইনশা আল্লাহ্
শুভকামনা প্রিয়
অনেকদিন পর ব্লগে এসে আপনার লেখাটি পড়ে বুঝতে পারছিলামনা যে তাবাস্সুম চরিত্রটি কি সত্যিই আছে নাকি কাল্পনিক ! এই লেখাটি এবং মন্তব্য পড়ে বুঝতে পারলাম যে তিনি আপনার জীবন সঙ্গিনী। আমার অনিয়মিত উপস্থিতির জন্যই হয়ত বিয়ের খবর মিস করেছি। আপনাদের দুজনের জন্যই শুভকামনা রইলো।
না, আপনি ঠিকই ছিলেন প্রথমে, পরেই ভুল করলেন।
আমি এখনও বিয়ে করিনি।
আমাদের দুজনের জন্য আপনার শুভেচ্ছা আগামীর জন্য তুলে রাখলাম।
তবে, এ শুধু লেখাই, আমি সত্যিই এমন কিছুর বাস্তবায়ন দেখতে বিয়ের পর।
আশা করি, আল্লাহ্ আমায় হতাশ করবেন না।
আপনি কেমন আছেন আপু ? সবাই ভালো আছে তো? অনেক দিন হয় আপনার লেখা পড়ি না। আসলে ব্লগে আসা হয়না তো ; সেটাই প্রধাণ কারণ! অনেক দিন পরে আপনাকে দেখলাম। ভালো লাগলো । আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপু।
ডুব তো দিছিলেন, ভায়া আপাদের চা খাওয়ানোর ভয়ে, ব্লগে তাইলে ভাইসাই আছেন, গুডসসসসসসসসস!
আপনার স্ত্রীর সাথে আমার স্ত্রীর আলহামদুলিল্লাহ ৯৯% মিল আছে। আমার স্ত্রী ডিসুম ডিসুম করেনা আর কপালে একটু আদর করে তারপর ঘুম থেকে আমাকে সজাগ করে।
ভাবিকে আমার সালাম দিয়েন, আপনাকে মাইরের উপর রাখার জন্য ভাবিকে ধন্যবাদ।
কি বলেন, তাহলে তারা কি একজন আরেকজনের কার্বন কপি!!!!!
আদর করে ঘুম থেকে জাগানোর রীতিটা যেন আজীবন থাকে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন