ছেলেটির মৃত্যু থেকে পালিয়ে বেড়ানোর চেষ্টা (পর্ব-০৬)
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ২৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ০৮:২৪:৩৮ রাত
১০ পর্বের ধারাবাহিক গল্পটি 'HaqIslam' ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া।
অনুবাদ- গাজী সালাউদ্দিন
আহমেদের মনে আজ একটি চমৎকার পবিত্র সুখানুভূতি হয়। বিপথগামী হওয়ার পর আল্লাহ্র রাস্তায় ফিরে আসলেই কেবল এমন অনুভূতি হতে পারে।
আহমেদ রাস্তায় হাঁটছে, কানে ভেসে আসছে পাখির কিচির মিচির ডাক, যারা গেয়েছে খোদা তায়ালার প্রশংসা গীত।
হঠাৎ করেই মৌ ছুটে আসে আহমেদের দিকে।
‘আহমেদ! তোমাকে আবারও দেখতে পেলাম!’ চিৎকার করে বলে ওঠে মৌ।
আহমেদ মৃদু হাসে।
‘তুমি গম্ভীর কেন?” মৌ জানতে চায়।
“মৌ, সৎ পথে ফিরে আসো, আমি মসজিদে যাচ্ছি”।
“কি, পাগল হয়েছ নাকি, ঐ খানে যাবে তুমি!”
“শোন মৌ। তুমি বুঝবে না, কেননা দুনিয়ার মোহে অন্ধ হয়ে গেছ তুমি”।
“তোমার চোখ খোলা আছে বুঝি”, মৌ ব্যাঙ্গ করে জবাব দেয়।
“আমি অন্তত চেষ্টা করছি”। আহমেদ শান্ত মেজাজে প্রতিউত্তর করে।
“আহমেদ, বিরক্তিকর সব বিষয় নিয়ে তুমি জীবন যাপন করছি, কর, কিন্তু মনে রেখো, দিন শেষে আমিও তোমার মত জান্নাতবাসী হবো। তখন আমাকে সেখানে দেখে তুমি দুঃখ করবে আজকে, কেননা দুনিয়ায় আনন্দ করে গেলে না”।
“মৌ, তুমি কি নিশ্চিত জান্নাতে যাবে”?
“হ্যাঁ। কেননা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সা) সে কথাই তো বললেন”।
“যাই হোক, তুমি তাহলে নিশ্চিত জান্নাতবাসীরা দুনিয়ায় ভোগ বিলাসে মত্ত না থাকার কারণে আফসো করবে”!
মৌ কটাক্ষ করে বলে, “বিশ্বাস করতে পারছিনা, কিভাবে তুমি ব্রেইন ওয়াশ হয়েছ”।
মৌকে আর শুনতে ইচ্ছে করছে না আহমেদের, তাই সে দ্রুত মসজিদের দিকে যাত্রা করে।
মসজিদের দরজা খুলে দেখে ভেতরটা একেবারেই ফাঁকা, নীরব নিস্তব্দ। মসজিদের এক কোণে গিয়ে আহমেদ কিবলামুখী হয়ে বসে।
“হে আল্লাহ, আমায় ক্ষমা করুন! আপনার ভয়ে আমি খুবই ভীত। আপনার অপছন্দ করেন, এমন অগণিত অপকর্ম স্পর্ধা নিয়ে করেছি, যদিও আপনি এখনও আমায় বাঁচিয়ে রেখেছেন......”। আহমেদ একাধারে দুই ঘন্টা কাঁদে এবং আল্লাহ্র সাথে মনের সব ব্যাথা বেদনা ব্যক্ত করে। চোখ দুটো যেন অশ্রুর ফোয়ারা হয়ে আছে।
স্থানীয় ওস্তাদ মসজিদে প্রবেশ করে আহমেদের পেছনে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ নীরবে তার মুনাজাত শুনেন। শুনতে শুনতে এতো বেশি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন যে, অশ্রু সংবরণ করতে পারেন না। আহমেদকে বসা থেকে উঠিয়ে জড়িয়ে ধরেন।
“ওস্তাদ...আমি...আমি খুবই দুঃখিত...”, লজ্জাবনত আহমেদ কথা শেষ করতে পারেনা, তার আগেই ওস্তাদ মৃদু হেসে বলেন:
“আহমেদ, সমস্যা নেই। আমি দেখতে পাচ্ছি, কৃত কর্মের জন্য তুমি লজ্জিত হয়েছ, এভাবে লজ্জিত হওয়াটা নিঃসন্দেহে একটা মহৎ কাজ”।
ওস্তাদ আরো বলেন, “তোমার বাবা মা অবশ্যই গর্ববোধ করবে তোমাকে নিয়ে। কেননা তুমি নিজেকে আল্লাহর প্রতি নিবদ্ধ করেছ”।
উত্তম পরামর্শ পাওয়ার আশায় আহমেদ ওস্তাদকে জিজ্ঞেস করে, “ওস্তাদ, বাবা মাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। এখন কিভাবে তাদের মুখে হাঁসি ফুটানো যায়?
“ইতোমধ্যেই তাদের সুখী করে ফেলেছ। তোমার বাবা মা তোমাকে নিয়ে খুবই গর্বিত”।
“আমি আমার শ্রদ্ধেয় বাবা মাকে কিছু একটা উপহার দিতে চাই”।
ওস্তাদ: “বেশ, তুমি কিছু ফুল অথবা চকলেট তোমার মায়ের জন্য নিয়ে যেতে পার আর বাবার জন্য সুগন্ধী”।
আহমেদ: “দারুণ আইডিয়া। আমি তাই করব”।
ওস্তাদ একটি কলম ও দুইটি ছোট পেপার আহমেদকে দিয়ে বলে, “গিফট কেনার পর বাবা মা প্রত্যেককে একটি করে মেসেজ লিখে গিফটের সাথে তা লাগিয়ে রাখবে”।
“আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন ওস্তাদ। আমার আর তর সইছে না, যাচ্ছি, শিগগিরই বাবা মায়ের হাঁসি মাখা মুখ দেখতে চাই! আহমেদ পরমানন্দে বলে ওঠে।
ওস্তাদ: “বারাক আল্লাহু ফিক আহমেদ! আজ রাতে এশার নামাজে তোমাদের বাবা ছেলেকে একসঙ্গে দেখতে পাবো ইনশা আল্লাহ্”।
ওস্তাদ: “আপনি আমাদের দুজনকেই দেখবেন, ইনশা আল্লাহ্”।
আহমেদ তাঁর বাবার জন্য কয়েকটি সুগন্ধী পারফিউম এবং মায়ের জন্য চকলেটের বক্স কিনে সেগুলোর উপর মেসেজগুলো লিখে নেয় এবং বাড়ির দিকে যাত্রা করে।
এমন একজন মানুষ অথবা জীন এই দুনিয়ার বুকে মুক্তি পায়নি যখন আল্লাহ্ মৃত্যুর ফেরেশতাদেরকে তাদের জান কবজ করার জন্য আদেশ করেছেন, আহমেদও কি অন্তীম সময়ে এসে পড়েছে?
আহমেদ যখন বাড়ির দিকে যাত্রা শুরু করেছে, মৌও তখন অর্ধ উলঙ্গ একটি মেয়ের সাথে জড়াজড়ি করে সে পথ দিয়ে যাচ্ছে। একজন বয়স্ক ধার্মিক মহিলা রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করছে......। আহমেদও রাস্তা পার হবে...... আহমেদকে দেখতে পেয়ে মৌ দ্রুত রাস্তার মাঝখানে দৌঁড়ে যায় আর চিৎকার করে ডাকে, ‘আহমেদ, দেখো, তোমার জন্য এই সুন্দরীকে নিয়ে এসেছি, তোমার সাথে দারুণ মানাবে”!
“হে আল্লাহ্, আমাকে সাহায্য করুন.........!” আহমেদ এভাবেই আল্লাহ্র কাছে সাহায্য চেয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে দৃষ্টিকে অবনত রাখতে, কেননা সে জানে তার দুর্বল জায়গা হচ্ছে নারী......। বয়স্ক ধার্মিক মহিলাটি রাস্তা পার হওয়া শুরু করেছে......এদিকে মৃত্যুর ফেরেশতারাও সকল দিকে থেকে তাকে চেপে ধরার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে.........!
সঙ্গেই থাকুন
আগের পর্বগুলো দেখতে চাইলে নিচের লিংকগুলোতে ঘুরে আসুন।
ছেলেটির মৃত্যু থেকে পালিয়ে বেড়ানোর চেষ্টা (পর্ব-১)
ছেলেটির মৃত্যু থেকে পালিয়ে বেড়ানোর চেষ্টা (পর্ব-২)
ছেলেটির মৃত্যু থেকে পালিয়ে বেড়ানোর চেষ্টা (পর্ব০৩)
ছেলেটির মৃত্যু থেকে পালিয়ে বেড়ানোর চেষ্টা (পর্ব-৪)
ছেলেটির মৃত্যু থেকে পালিয়ে বেড়ানোর চেষ্টা (পর্ব-৫)
বিষয়: বিবিধ
১৩৮৩ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনি আনন্দিত হয়েছেন জেনে আমরাও আনন্দিত।
মূল্যায়ন শুনে ভাল লাগল
ইনশা আল্লাহ
০ কাফেররা দুনিয়াতেই সব চায় । ফলে আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়াতে দিলেও আখেরাতে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম।
মুমিনরা পরকালকে বেশী প্রাধান্য দেয় বিধায় আল্লাহ তাদের জন্য দুনিয়াতে কাফেরদের মত জৌলুস না দিলেও তুলনামূলকভাবে শান্তিতে রাখেন । সঠিকভাবে চললে পরকালে তাদের জন্য আল্লাহ জান্নাত রেখেছেন ।
আমার প্রশ্ন (সবারই প্রশ্ন হবার কথা) :
মৌ কোথা থেকে জানলো , কার কাছ থেকে জানলো এ কথা - যে খুল্লাম খুল্লা ও উদ্দাম হয়ে চললে দিন শেষে সে জান্নাতে যাবে আর মুমিনেরা দুনিয়াতে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও মৌজমাস্তি না করাতে আফসোস করবে ?
অবিশ্বাসীরা জাহান্নামে থাকবে চিরকাল । সেখান থেকে তাদের বের হওয়াকে তুলনা করা হয়েছে সূঁচের ছিদ্রের ভেতর দিয়ে একটা হাতি ঢোকার সম্ভাব্যতার সাথে বা যতদিন না আকাশ ও পৃথিবী এক হয়ে যায় - এর সাথে।
মৌদের কুরআন হাদীস পড়ে জানতে হয়না, বরং আন্দাসে মেরেই অথবা নিজেদের কাজকে হালাল করার জন্যই তারা মাঝে মাঝে ইসলামী বিশেষজ্ঞ বনে যায়।
মৌদের কুরআন হাদীস পড়ে জানতে হয়না, বরং আন্দাসে মেরেই অথবা নিজেদের কাজকে হালাল করার জন্যই তারা মাঝে মাঝে ইসলামী বিশেষজ্ঞ বনে যায়।
খুব চেষ্টা থাকবে দ্রুত নিয়ে আসার
মন্তব্য করতে লগইন করুন