এক হতভাগ্য তরুণের সত্য মিথ্যা করুণ কাহিনী
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ০৫:৪৩:১৯ বিকাল
এক হতভাগ্য প্রবাসীর (বাংলাদেশী) বিদেশ বিভূঁইয়ে দুঃসহ অভিজ্ঞতার বাংলা বিবরণ ইংরেজিতে অনুবাদ করতে গিয়ে অসংখ্যবার শরীর কেঁপেছে, গলা ধরে এসেছে, মন ভারাক্রান্ত হয়েছে। কিভাবে টাকার নেশায় পড়ে মানুষ, বিশেষ করে পরিচিত জন এমন নির্দয় আচরণ করতে পারে, সে ভেবে বিস্ময় লেগেছে।
তরুণ বয়সের ছেলেটি হত দরিদ্র, অসুস্থ, কর্মে অক্ষম বাবাকে সাহায্য করতে, পরিবারে সুখ স্বাচ্ছন্দ আনতে পাড়ি জমায় আমেরিকায়। কিন্তু সুখ কি হাতে ধরা দেয়, জীবনের মোড় কি ঘুরে যায়? আসুন একটু দেখে নেই।
উক্ত লেখার বর্ণনা মতে-
প্রচন্ড অভাব অনটনে পরিবারটির পাশে এসে দাঁড়ায় এক নিকটাত্মীয়। একবার দু’বার নয়, অসংখ্যবার শুভাকাঙ্ক্ষী দোহাই দিয়ে চেষ্টা সাধনা করে পরিবারটিকে বুঝাতে সক্ষম হয়, টাকা একটু বেশি লাগলেও আমেরিকায় গেলে আর কখনই পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না। তাদের বলা হয়, উক্ত নিকটাত্মীয়ের শ্যালক থাকে আমেরিকায়। সেই করবে সব।
তারপর হালের গরু, দোকান বিক্রি করে, জমি বন্ধক রেখে, ব্যাংক ও সমবায় সমিতি থেকে টাকা ঋণ নিয়ে ১২ লাখ টাকা জোগাড় করে ছেলেটি আমেরিকা যেতে সক্ষম হয়। ভিসা প্রদানকারীর ভাষ্য মতে যার মাসিক বেতন হবে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা!
কিন্তু হায়, আমেরিকা গিয়ে দেখে আসলে তা আমেরিকা নয়, বরং আমেরিকার একটি দ্বীপ! এতেই শেষ নয়। দীর্ঘ ৪ মাস চাকুরী বিহীন, কিছুদিন সে নিকটাত্মীয়ের শ্যালকের বাসায় গৃহবন্দী, কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বললে সে লোকের স্ত্রীকে ধর্ষণের মিথ্যা অপবাদ, তারপর অন্যত্র বাসা নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন, ভাড়া মেটাতে না পারায় সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় গ্রহণ করে।
এদিকে, ব্যাংক আর সমবায় সমিতি নির্দিষ্ট সময়ে ঋণ ফেরত না পেয়ে ছেলেটির বাবার বিরুদ্ধে দেয় মামলা ঠুকে। বন্ধকী জমি নিয়ে নেয়। বোন থেকে ৪ লাখ টাকা ধার নিয়ে পরিশোধ করতে না পারায় শ্বশুর বাড়িতে বোনের লাঞ্ছনার জীবন যাপন। স্বপ্নগুলো যেন সারিবদ্ধ হয়ে অকাল মৃত্যু বরণের পথে শামিল হতে চলেছে।
ঘটনার সার সংক্ষেপ মোটামুটি এটুকুই।
লেখা শেষে জিজ্ঞেস করি, এই ঘটনা যাকে নিয়ে, তিনি কি সত্যিই সত্যিই এমন বর্বতার শিকার?
‘আরে না ভাই। সব সত্য নয়। তবে কিছু তো সত্য। উক্ত ভিসা প্রদানকারীর বিরুদ্ধে সে দেশে মামলা করা হয়েছে। মামলা জিতে আমেরিকান নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্যই এতো লম্বা কাহিনী’।
শুনে থ হয়ে গেলাম! বলে কি! ১৯ পাতার সত্য মিথ্যার বিশাল বিবরণ তাহলে অধরা একটা আমেরিকান নাগরিকত্ব ধরার জন্যই!
মানুষের অসহায়ত্বে আমার বিশ্বাসের জায়গাটা আবারও নড়বড়ে হয়ে ওঠল......
বিষয়: বিবিধ
১৩০৮ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বেটা মানুষ বটে!
শিক্ষণীয় এবং নিন্দনীয়ও বটে!!
আপনাকে যদি বলে যে, আপনি দেশে যে পজিশনে যে বেতনে চাকরি করেন আমেরিকাতে গেলে আপনাকে একই পজিশনে একই অংকের বেতন ডলারে দেওয়া হবে ।
এ অফার পেলে কে না যাবে
আমার হিসেব মতে বাংলাদেশ থেকে প্রবাসী হয় দুই রকমের
এক রকমের আছে যারা মিডল ইষ্টে যায় । তারা সেখানে যা হোক একটা কাজ করে দেশে টাকা পাঠায় । দেশে তাদের পরিবার এই টাকায় মাশা আল্লাহ মোটামুটি ভালই চলে । এরা বাংলাদেশি হয়েই থাকে বেশীর ভাগ।
আরেক রকমের আছে যারা ইউরোপ আমেরিকায় যায় মেলা টাকা খরচ করে । সেখানে পড়াশুনা বা চাকরি যাই করুক না কেন দেশে টাকা পাঠায় না , উল্টো দেশ থেকে তাদের জন্য টাকা পাঠাতে হয় ।
এরা আমেরিকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করে বাংলাদেশের নাগরিকত্বকে লাথি মেরে । আমেরিকার পতাকাকে এরা হিজাব হিসেবে দেখিয়ে লাইকের পর লাইক পেতে চেষ্টা করে ।
তবে বিদেশে যাবার ব্যাপারে আমার মোটেও আগ্রহ নেই, বিশেষত টাকা কামাইয়ের জন্য।
এভাবে আশ্রয় প্রার্থণা করাটা কতইনা নিকৃষ্ট কাজ!
ধিক্কার সেই প্রবাস জীবনকে, যাকে পেতে হলে জীবন বাজী রাখতে হয়। ১০/১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে বাংলাদেশেও প্রতিমাসে ৪০/৫০ হাজার টাকা খুব সহজেই আয় করা যায়। অতি লোভ এই জাতীর স্বভাবেই পরিণত হয়েছে।
ধন্যবাদ আপনাকে
সেটি করেনা বলেই দুঃখের সীমা থাকেনা।
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই
বাস্তবতা যে থাকে, তাতে কোনো রকম সন্দেহ নেই। তা দিবালোকের ন্যায় সত্য। তবে এর ভিড়ে যে কিছু ডাহা মিথ্যাও থাকে, সেটাই তুলে আনা হয়েছে।
জাযাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন