গর্ভবতী এক অসহায় নারীকে অনিরাপদ অবস্থায় ছেড়ে এলাম!
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৮:২৭:০৯ সকাল
দেশজুড়ে প্রতিটি মানুষ যখন বিজয়ের সুখ স্মৃতি রোমন্থন করে আনন্দে উদ্বেলিত, আমি তখন ভারাক্রান্ত মনে হাজির হলাম এক অসহায় বোনের অসহায়ত্বের কথা শোনাতে।
সন্ধা সোয়া ছয়টায় অফিস থেকে বের হয়ে কয়েক গজ এগোতেই চোখে পড়ে কিছু মানুষের জটলা। কৌতুলবশত কাছে গিয়ে দেখি এক বোন, বয়স আনুমানিক ৩০-৩৫, হাত পা ছেড়ে দিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছেন। হাত ধরা একটি পানির বোতল আর লোকের গুজে দেওয়া ক'টা টাকা। বড় বড়
নিঃশ্বাস ছেড়ে চলেছেন
একটু পরেই খাওয়া পানি বমি করে বের করে দিচ্ছেন। এ জন ও জন এটা ওটা জিজ্ঞেস করলে জবাবে অস্ফুট স্বরে যা বলছেন, তা বুঝতে পারা কষ্ট সাধ্য।
উৎসুক লোকদের জিজ্ঞেস করে জানতে পারি, হাঁটার পথে হঠাৎ ঘুরে পড়ে গিয়ে এ অবস্থা।
কেউ কেউ বলছেন, হাসপাতালে নেওয়া দরকার। সেখানে উপস্থিত একজন বয়স্ক মহিলা যখন জানতে চান, আপনারা কে কে এই মহিলাকে হাসপাতালে বা বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নেবেন? তখন সব লোক সরে যায়, থেকে যাই কেবল আমি, বয়স্ক মহিলা আর একজন লোক।
আমিও সরে যেতাম, কিন্তু ঐ অসহায়ার পেটের দিকে চোখ পড়ায় থমকে দাঁড়াই। উনি যে গর্ভবতী! কল্পনায় ভেসে ওঠে আমার গর্ভবতী বোন অথবা আমার গর্ভবতী বউ যদি
এমনভাবে রাস্তায় ঘুরে পড়ে.........
যাওয়ার তাড়া আছে, তবুও আমরা তিনজন ধরাধরি করে পার্শবর্তী খাবার হোটেলে বোনটিকে নিয়ে যাই। কেননা আদো আদো স্বরে বোনটি এটাই বলছিল, তিনি খুব ক্ষুধার্ত, হতে পারে অত্যাধিক ক্ষুধায় রাস্তায় পড়ে যান।
খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে কথা বলে জানতে পারি, তিনি গিয়েছেন গাজিপুর, ফিরতি গন্তব্য চাঁদপুর। ঢাকায় এসে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছেন। নেই সাথে কোনো ভ্যানিটি ব্যাগ অথবা মোবাইল, এমনকি কারো মোবাইল নম্বরও জানেনা। এর চেয়ে বেশি কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগও ছিলনা। কারণ কথা বলতে উনার বেজায় কষ্ট হচ্ছিল।
চাঁদপুর যদিও আমার পার্শ্ববর্তী জেলা। কিন্তু কখনোই যাইনি। এর মধ্যে হোটেল বয়দের দুএকজনের বাড়ি চাঁদপুর। তাদেরকে অনুরোধ করি কিছু একটা ব্যবস্থা করার জন্য, আর গাড়ি ভাড়ার টাকা আমরা তিনজনেই দেই। বোনটিকে খেতে দিয়ে আমার গন্তব্যে রওয়ানা হই। যদিও মন কোনোভাবেই সায় দিচ্ছিলনা এইভাবে মানুষটিকে ছেড়ে আসতে, তবুও আমার তো ঢাকায় ফ্যামিলি নেই, যেখানে উনাকে রাখতে পারি।
আমি চলে আসি। আর ছটপট করতে করতে থাকি। শেয়ার করি আমার এক পরিচিত ধার্মিক ভাইয়ের সাথে। তিনি আবার বউ নিয়ে ঢাকায় থাকেন। তিনি আগ্রহ পোষণ করেন উক্ত ভুক্তভোগীকে বাসায় নিয়ে যেতে।
আমি আমার অফিস সহকারীকে ফোন দিয়ে বলি নিচে গিয়ে হোটেলটিতে খোঁজ নেওয়ার জন্য। কিন্তু সে খোজ নিয়ে জানতে পারে ততক্ষণে হোটেলের লোকজন এ অবস্থায় বোনটিকে ছেড়ে দেয়।
রাত বাড়ছে, এতো রাতে কোথায় যাবে, কিভাবে যাবে সুদূর চাঁদপুর, আদৌ যেতে পারবে কিনা, কোনো বিপদ আপদ হবেনা তো? কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি আসবে কি এগিয়ে? এইসব আশঙ্কা এখন অবধি আমাকে ভাবিয়ে যাচ্ছে।
তাঁর অনাগত সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার পর বড় হয়ে মায়ের দুরবস্থার কথা উপলব্দি করতে পারবে কি?
বোনটিকে ছেড়ে এসে রাস্তায় হাঁটছি, গাড়িতে চড়ছি, বাসায় এসেছি কিন্তু আমার মন মগজ বেদনার আবর্তে ঘুরপাক খেয়ে যাচ্ছে, বোনটির জন্য অজানা শংকায় অন্তর কেঁপে কেঁপে ওঠছে।
এটাই বেশি ভাবাচ্ছে, আমার প্রিয়জনদের গর্ভবতী কেউ যদি এমন অবস্থায় পড়ত............
বিষয়: বিবিধ
১৩৫৬ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহতালা আপনাকে এর উত্তম প্রতিদান করুক। কেমন জানি দিন দিন আমাদের ভিতর থেকে মিনিমাম মানবতাটুকু হারিয়ে যাচ্ছে।
আমীন
আপনি যথার্থই উপলব্দি করেছেন ভাই
তারাও দায়সাড়া ভাবে তাকে বিদায় দিয়েছে
আপনি তো চেষ্টা করেছেন।
আমাদের সবাইর সাধ্য মত সহায়তা করা উচিত অসয়হায়দের।
আবার সমস্যা আছে অনেকে বান দরে থাকে পৌছে দিয়ে গিয়ে তাদের চক্রান্তের মুখোমুখি হতে হয়।
আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুক।আমিন।
ঠিক বলেছেন। সবারই সৎ কাজে চেষ্টা করা উচিৎ
এইরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় বলেই মানুষ ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এগিয়ে আসেনা
আমীন
হ্যাঁ, হাদীসটা আমি সারা জীবন মেনে চলার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
আমীন আমীন
যাইহোক যতটুকু করছেন সেই জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। জাজাকাল্লাহ।
বোনটির জন্য অনেক অনেক দোয়া রইলো।
জাযাকাল্লাহু খাইর
আল্লাহ্ আপনার দোয়া কবুল করুন
ভাবিকে আমার সালাম বলবেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন