দ্রুত যাবো বলে চড়ে বসি রিক্সায়..........
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ০৪ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১১:৪০:৪৬ সকাল
পর পর তিনটা বাস মিস করেছি। ধাক্কা ধাক্কি করে ওঠা যায়, কিন্তু তাতে মন সায় দেয়না।
নিরুপায় হয়ে ১৫ গুণ বেশি ভাড়ায় রিক্সায় চড়ে বসি। টাকা যায় যাক, জাস্ট টাইমে অফিসে ঢুকতে চাই।
রিক্সা চলছে ধীর লয়ে। ভাবলাম ধীরে ধীরে গতি বাড়াবে। কিন্তু বহুক্ষণ পরেও অবস্থান পরিবর্তন না দেখে বলি-
“ভাই, স্পীড বাড়ান, আমাকে ৯ টায় অফিসে ঢুকতে হবে”।
“আচ্ছা মামা, ঠিক আছে”।
আবারও একই অবস্থা। বারবার ডানে বামে তাকাচ্ছে, মনে হলো যেন শরীরের পুরো শক্তি খরচ করে আমাকে আর রিক্সাটাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ আমার বয়সী যুবক। চালাচ্ছে একেবারে রাস্তার পাশ ঘেষে। আমিও তার পায়ের দিকে তাকাচ্ছি। যেখানে অন্যেরা দ্রুত চলে যাচ্ছে, আমার রিক্সা চালক পা প্যান্ডেলে পা ঘুরাচ্ছে কিন্তু স্পীড বাড়ছেনা!
“ভাই, আপনি এইভাবে চালাচ্ছেন কেন? আমার তো ভয় হচ্ছে, কখন বাস রিক্সা আপনাকে মেরে দেয়”।
“মামা, আমি ঢাকায় একেবারেই নতুন”। বলেই চুপ মেরে যায়। অন্য রিক্সা গাড়ির চালক ফেল ফেল করে তার দিকে তাকাচ্ছে।
কি আর করা। হোক না একদিন অফিসে দেরি। তবুও তো নির্দয়ভাবে বলতে পারিনা এই হট হট হট!
একদিকে অফিসে দেরি, সে অস্থিরতা, অন্যদিকে চালকের অনভিজ্ঞতা। এভাবেই আসছিলাম।
আমিও কিছু জানার চেষ্টা করিনি। কিছু জিজ্ঞেস করলে তার মনোযোগ যদি আমার দিকে চলে আসে, চালনায় ব্যাঘাত ঘটে।
হঠাৎ গুলিস্তানের কাছে এসে রিক্সা থামিয়ে “মামা, একটু বসেন, আমার বমি বমি লাগতেছে”।
নেমেই পাশে ওয়াক ওয়াক বমি করতে শুরু করে। আমিও নেমে কপাল চেপে ধরি। দুজন তখন এমন জায়গায় ছিলাম যে, আশে পাশে কোনো দোকান নেই, নেই তার মাথায় পানি দেওয়ার মত কোনো ব্যবস্থা। তারপর বাস থামিয়ে আমি আর আরেকজন পানির বোতল নিয়ে মাথা পানি দেই।
কষ্টে ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে ওঠে। এমতাবস্থায় কে তার সেবায় এগিয়ে আসবে। কোথায় মমতাময়ী মা, কোথায় বাবা, কোথায় আপনজন।
আমি যাবো বিজয় নগর। কিন্তু এই অবস্থায় তাকে নিয়ে সেখানে যাওয়া আমার মন কোনোভাবেই সায় দেয়নি। তাই বললাম-
“আপনি রিক্সাটা কোথাও পার্ক করে বিশ্রাম নিন। আমি হেঁটেই যেতে পারবো”।
এই বলে ১০ টাকা বেশি দিয়ে আমি অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই।
রিক্সা চালক আমার মনে আজ পচন্ড নাড়া দেয়। আপনাদেরকেও বোধ হয় নাড়া দিয়েছে। যাওয়ার তাড়া আছে, তাই আমরা শুধু বলি, দ্রুত চালাও, দ্রুত চালাও, কিন্তু তার শারীরিক সুস্থতা অসুস্থতা, সক্ষমতার দিকেও যে খেয়াল রাখতে হয়।
আমরা যারা বিভিন্ন অফিসে জব করি। সময় মত আসার জন্য আমাদের চেষ্টা সাধনার কোনো ত্রুটি থাকেনা। একটু খানি দেরি হতে পারে ভেবে অস্থির হয়ে পড়ি। তবুও আমাদের দেরি হওয়াটা কর্তৃপক্ষের কাছে নিতান্তই অবহেলা, উদাসীনতা, আন্তরিকতার অভাব, মিথ্যা অজুহাত ইত্যাদি ইত্যাদি।
হ্যাঁ, মানছি, কেউ কেউ কোনো কারণ ছাড়াই, অথবা খামখেয়ালিপনার অংশ হিসেবে অফিস মিস দেয়, অসময়ে আসে, অফিস সময় শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই বের হয়ে যায়। এ ক’জনার কারণে সবাই হারায় কর্তৃপক্ষের আস্থা বিশ্বাস।
বিষয়: বিবিধ
১০৯৭ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দুনিয়াতে এখনও ভাল মানুষ আছে।
যাই হোক- ঢাকা শহরের রাস্তার যা অবস্থা (জ্যাম)তাতে সময় নিয়ে ই অফিসের উদ্দেশ্যে বের হওয়া উচিৎ। ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ মাহী ভাই
দুঃখ নেবেন না। আমি আমার বায়োডাটা আপনার সাথে শেয়ার করতে পারছিনা।
তবে গণতন্ত্র বিষয়টি ছাড়া বাকি সব শর্তগুলো পূর্ণ করার যোগ্যতা ইতোমধ্যেই আমার রয়েছে। গণতন্ত্র নিয়ে আমি স্টাডি করছি........
আপনার কথার সাথে সম্পূর্ণ সহমত
আপনাকেও ধন্যবাদ
-গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করার ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন