ছেলেটির মৃত্যু থেকে পালিয়ে বেড়ানোর চেষ্টা (পর্ব-০৪)

লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ১৩ নভেম্বর, ২০১৬, ০৫:৩২:১৫ বিকাল



আহমেদ দৌঁড়ে তার বন্ধু মৌয়ের কাছে চলে যায়।

“আহমেদ, এতোক্ষণ কোথায় ছিলে?”আহমেদ আসা মাত্রই মৌ জিজ্ঞেস করে।

“ওহ, আর বলো না, আমার বাবা-মা আবারও ধর্ম নিয়ে কিসব বিরক্তিকর নীতিকথা শুনিয়ে কান গরম করে ফেলেছে”।

“হা হা! তাদের লাইফ বলতে কি কিছু নেই? আল্লাহ্‌ তো বলছেন, তিনি ক্ষমাশীল, সুতরাং আমরা যদি তাঁর প্রতি বিশ্বাস রাখি, অন্য মানুষের ক্ষতি না করি, তাহলে তো আমরা জান্নাতে যাবো”, কোনো রকম ধর্মীয় জ্ঞান ছাড়াই মৌ কথাগুলো বলে।

মৌ এবং আহমেদ নাইট ক্লাবের দিকে হেঁটে চলে। আজকেই প্রথম নয়, মাঝে মাঝে তারা সেখানে আসা যাওয়া করে।

মৌ এবং আহমদ যেখান দিয়ে যাচ্ছে, তার কিছুটা দূরে কয়েক মিনিট আগে একটি টহল পুলিশ পাঁচটি গাড়িতে করে একটি চুরি হওয়া গাড়িকে ধাওয়া করছে।

আর চুরি হওয়া গাড়িটি তাড়া খেয়ে মৌ এবং আহমেদের দিকেই তীব্র গতিতে ছুটে আসছে। এক পর্যায়ে মৌ এবং আহমেদ শুনতে পায় তাদের দিকে আসা গাড়ির ক্রমাগত সাইরেনের আওয়াজ।

চুরি হওয়া গাড়িটি তাদের থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে, এমনই মুহুর্তে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি পার্ক করা গাড়ীতে ধাক্কা মেরে রাস্তার অপর পাশে আঁচড়ে পড়ে, যে পাশ দিয়ে মৌ এবং আহমেদ যাচ্ছে।

মৌ মুহুর্তেই চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে সরে যায়, কিন্তু আহমেদ কিংকর্তব্যবিমুর! ত্বরিত গতিতে ছুটে আসা গাড়িটির এক পাশ আহমেদের গায়ে সজোরে ধাক্কা মারলে সে কয়েক গজ দূরে গিয়ে ছিটকে পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে বেহুঁশ হয়ে যায়, মাটির উপর পড়ে থাকা নিথর দেহ থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়ে পিচ ঢালা পথ রক্তে ভেসে যায়। মৌ চিৎকার করতে করতে আহমেদের কাছে দৌড়ে আসে।

“ও মাই গড! আহমেদ কথা বল! কথা বল, তুমি মরতে পারো না!” মৌ তার শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে চিৎকার করে ওঠে।

পুলিশ অফিসার দৌড়ে এসে আহমেদের দেহ ধরে ঝাঁকাতে থাকা মৌকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন, যাতে আঘাত প্রাপ্ত দেহটির আরো বেশি ক্ষতি না হয়।

কিছু পুলিশ অফিসার আহমেদের কাছে উপস্থিত থেকে আর বাকিরা অপরাধীদের ধরতে চলে যায়।

মৌ আহমেদের বাসার দিকে দৌড়াতে থাকে আর সামনের দরজায় গিয়ে ধপাস করে পড়ে যায়।

আওয়াজ শুনে আহমেদের বাবা দরজা খুলেন।

“মৌ, কি হয়েছে?! আহমেদের বাবা শঙ্কা নিয়ে জিজ্ঞেস করেন।

“আহমেদ! সে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে!” মৌ এক নিঃশ্বাসে কথাটা বলেন।

“আমাকে দ্রুত তাঁর কাছে নিয়ে চল!” আহমেদের বাবা দ্রুত জুতা পরতে পরতে বলেন। আহমেদের মাও দ্রুত তাদের সাথে বেরিয়ে যায়।

আহমেদের বাবা এবং মৌ যখন দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখতে পান বেশ কিছু জরুরী চিকিৎসক আহমেদকে ঘিরে আছে।

“সে কি ঠিক আছে?” উদ্বিগ্ন কণ্ঠে আহমেদের বাবা একজন জরুরী চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করেন।

“এই মুহুর্তে সে বেহুঁশ অবস্থায় আছে এবং তার একটি কাঁধ ভেঙ্গে গেছে বলে মনে হচ্ছে। আমাদের উচিৎ, যত দ্রুত সম্ভব তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। জরুরী ভিত্তিতে মস্তিষ্ক স্ক্যান করে দেখতে হবে মাথায় বড় ধরণের চোট লেগেছে কিনা”।

আহমেদের বাবার গাল বেয়ে অনবরত অশ্রু ঝরতে থাকে।

আহমেদের বাবা-মা এ্যাম্বুলেন্স ডেকে আনেন, আর তাতে আহমেদের অবচেতন দেহ স্ট্রেচে করে তোলা হয়।

“আমিও আসতে চাই” মৌ আহমেদের বাবার কাছে যাওয়ার অনুমতি চায়।

“না। বাসায় যাও এবং আজ রাতে যে দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছ, তা নিয়ে চিন্তা কর, ভাবো, যদি বা নিজেকে শোধরানো যায়”, তিনি জবাব দেন।

এ্যাম্বুলেন্সের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। আহমেদের নিথর দেহ এবং তাঁর উদ্বিগ্ন বাবা মাকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটে চলে।

সবাই চলে যায়, মৌ ঠায় দাঁড়িয়ে, দূর থেকে কানে ভেসে আসে সাইরেনের আওয়াজ, এদিকে পুলিশ বাহিনীর কয়েকজন সদস্য দুর্ঘটনাস্থল তদন্ত করতে সেখানে থেকে যায়।

মৌ ঘুরে দাঁড়ায়, বাসার দিকে না গিয়ে আবার নাইট ক্লাবের দিকে যাত্রা করে।

“..... আজকের রাতটি বাসায় থেকে কেন নিজেকে বিতৃষ্ণ করে তুলবো? আহমেদ সহ রাতটি উপভোগ করার পরিকল্পনা যখন আগেই করে রেখেছি, তখন কেউ আমাকে থামাতে পারবেনা....” নাইট ক্লাবের দিকে যেতে যেতে মৌ নিজেই নিজেকে বুঝায়।

চলবে------

আগের পর্বগুলো পড়তে নিচের লিংকগুলোতে ক্লিক করুক-

ছেলেটির মৃত্যু থেকে পালিয়ে বেড়ানোর চেষ্টা (পর্ব- ০১)

ছেলেটির মৃত্যু থেকে পালিয়ে বেড়ানোর চেষ্টা (পর্ব- ০২)

ছেলেটির মৃত্যু থেকে পালিয়ে বেড়ানোর চেষ্টা (পর্ব-০৩)

বিষয়: বিবিধ

১৩৮৯ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

379686
১৩ নভেম্বর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৫৮
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : peace be upon you. Heart touching story. May Allah reward you with goodness.
১৩ নভেম্বর ২০১৬ রাত ০৮:১৯
314331
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম।
যথার্থই বলেছেন, হার্ট টাচিং গল্প।
আমীন।
আল্লাহ্‌ আপনাকেও উত্তম প্রতিদানে ধন্য করুন।
379694
১৪ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১২:১২
১৪ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১২:১৭
314337
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : ধন্যবাদ জনাব ফুলসমেত মন্তব্যের ঘরে পদচারণার জন্য
379696
১৪ নভেম্বর ২০১৬ রাত ০১:০৩
স্বপন২ লিখেছেন :
ভালো লাগলো / ধন্যবাদ
১৪ নভেম্বর ২০১৬ দুপুর ০১:৫৭
314340
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। আমার তো মনে হয় আমার লেখা পড়তে নয়, আপনাদের ইসলামী সমাজের প্রচারণার অংশ হিসেবেই মন্তব্যের ঘরে এসে একটা ভিডিও লিঙ্ক বা অন্য কিছু দিয়ে যাওয়া। সত্যিই এটা খুব বিরক্তিকর। আশা করি এমনটা আর করবেন না
379699
১৪ নভেম্বর ২০১৬ রাত ০৩:১৫
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহামাতুল্লাহি ওবারাকাতুহু। অসংখ্য ধন্যবাদ মূল্যবান সময় ব্যায় করে শিক্ষনীয় জীবনী অনুবাদ করে আমাদের পড়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য। আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন, আমিন।
১৪ নভেম্বর ২০১৬ দুপুর ০১:৫৯
314341
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়া রাহামাতুল্লাহি ওবারাকাতুহু।
আমিও আমার কিছু সময় ব্যয় করে আপনাদের পড়ার সুযোগ করে দিতে পেরে খুবই আনন্দিত।
আমার জন্য আপনার দোয়া আল্লাহ্‌ কবুল করুন।
379727
১৫ নভেম্বর ২০১৬ রাত ০১:১৬
আফরা লিখেছেন : গল্পটা ভালই হচ্ছে । ধন্যবাদ সাকা ভাইয়া ।
১৫ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ০৯:৪৪
314347
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ্‌
মূল্যায়ন শুনে খুবই খুশি হলাম, কিন্তু আরো খুশি হব যদি গল্পের মেসেজটা পাঠকের উপলব্দিতে পৌছে যায়
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ পনি
379773
১৭ নভেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৫:৫৯
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহামাতুল্লাহি ওবারাকাতুহু। অসংখ্য ধন্যবাদ মূল্যবান সময় ব্যায় করে শিক্ষনীয় জীবনী অনুবাদ করে আমাদের পড়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য। আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন, আমিন। সহমত
২৩ নভেম্বর ২০১৬ দুপুর ১২:০৪
314534
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু বুবু
রহিম ভাইয়ের মতই আমার জন্য একই রকম ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য শুকরিয়া।
জাযাকাল্লাহু খাইর
379790
১৮ নভেম্বর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:১৭
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু সুপ্রিয় ছোট ভাই।


অনেক মর্মস্পর্শী গল্প মাশাআল্লাহ্‌!

জাযাকাল্লাহু খাইরান।
২৩ নভেম্বর ২০১৬ দুপুর ১২:০৬
314535
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু আপা
ঠিকই বলেছেন। খুবই মর্মস্পর্শী।
আপনাকেও আল্লাহ্‌ উত্তম প্রতিদানে ধন্য করুন।
আমিণ
379874
২১ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ১০:৫৬
দ্য স্লেভ লিখেছেন : বেশ দারুন গল্প জনাব। চলুক....
২৩ নভেম্বর ২০১৬ দুপুর ১২:০৬
314536
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : মূল্যায়ন শুনে খুবই হলাম, স্পৃহা পেলাম।
আল্লাহ্‌ চাহেতো চলবে, তাই সঙ্গেই থাকুন
380001
২৩ নভেম্বর ২০১৬ রাত ০৯:৩৭
হতভাগা লিখেছেন : নাইট ক্লাবে গিয়ে মৌ তার মৌ মৌ গন্ধ বিলাবে
২৪ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১২:০২
314563
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : তা না হয় বুঝলাম, কিন্তু আমিতো ভাবলাম আপনি আবার হারিয়ে যাওয়া ব্লগারদের তালিকায় শামিল হয়ে গেলেঙ কিনা!
২৪ নভেম্বর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৪৯
314605
হতভাগা লিখেছেন : এখন আমি মহাব্যস্ত হয়ে গেছি । ব্যস্ত হবার ভাব না নিলে কেউ সাধারণত দাম দেয় না ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File