ছেলেটির মৃত্যু থেকে পালিয়ে বেড়ানোর চেষ্টা (পর্ব-০৩)
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ০৭ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:০০:৩০ সকাল
১০ পর্বের ধারাবাহিক গল্পটি 'HaqIslam' ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া।
অনুবাদ- গাজী সালাউদ্দিন
আহমেদের বাবা মুহাম্মদ নাস্তার টেবিলে বসে অনিমেষনেত্রে গরম চায়ের কাপ হতে উড়ে যাওয়া ধোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আছেন। আহমদের মা আলিয়া এসে স্বামীর মুখোমুখি বসেন।
“প্রাণের স্বামী আমার, আপনাকে এমন বিমর্ষ দেখাচ্ছে কেন”?
“আমাদের আহমেদ, তার জন্যই কাঁদছি”। আমি একটি কঠিন জীবন অতিবাহিত করেছি, আমার শিশুকাল যথাযথ ছিলনা। আমার দ্বারা অনেক পাপ হয়েছে এবং জীবনের অনেকগুলো বছর হেলায় কাটিয়েছি, যে সময়গুলোতে আল্লাহ্র ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকতে পারতাম। সার্বিকভাবে আমি তো এমন একজন সন্তান চেয়েছিলাম, যে আল্লাহ্র ইবাদত করবে, যাতে করে আমি যা করতে পারিনি (সৎ কাজ), তাকে দিয়ে সেসব করাতে পারি এবং বিচার দিবসে আমার সন্তানকে সাথে করে প্রভূর দরবারে হাজির হতে পারি, দেখো, আমরা কি করেছি! আমরা আমাদের জীবনকে সম্পূর্ণভাবে আল্লাহ্র দিকে নিবদ্ধ করেছি আর আমাদের সন্তান হাঁটছে তাঁর উল্টো পথে! যদি সে এখন মারা যেতো এবং জাহান্নামে যায়? কিভাবে আমি এই অপরাধ নিয়ে বেঁচে থাকব..... আমার সন্তান, আমার সন্তান!” বলতে বলতে আহমেদের বাবা হঠাৎ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তা দেখে আহমেদের মা কান্না চেপে রাখতে পারেন নি, স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন।
তিন দিন অতিক্রান্ত হতে চলেছে, আহমেদের জীবনের আর বাকি ৭ দিন।
আহমেদ কানে ইয়ার ফোন লাগিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। চোখ হাতে রাখা ম্যাগাজিনে, কান এবং মন পাপ পূর্ণ গান শোনায় মগ্ন।
অনেক সময় পেরিয়ে যায়। ওদিকে সূর্য ডুবতে শুরু করেছে। আহমেদ বিছানা থেকে লাফ দিয়ে ওঠে, বন্ধুদের সাথে দেখা করতে বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। রেডি হয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে গেলে সামনের দরজায় তার মা পথ আগলে দাঁড়ায়।
“মা, কি করছ তুমি?”
“তুমি এখন ঘরের বাইরে যেতে পারবেনা! রাত প্রায় ৯ টা বাজে এবং আমরা সবাই এখন রাতের খাবার খাবো!”
“কি! আজ রাতে মৌয়ের সাথে দেখা করব বলে কথা দিয়েছিলাম!” আহমেদ চেঁচিয়ে ওঠে।
“অনেক রাত হয়েছে, আমরা এখন খেতে বসব। তোমার অন্য ভাই বোনেরা বাবা মাকে মান্য করলে তুমি কেন অবাধ্য হবে?”
“কারণ উপভোগ করার মত আমার একটি জীবন আছে, যা তাদের নেই!”
“কত বড় দুঃসাহস তোমার! তারা তো আল্লাহ্র ইবাদত করে; উত্তম কাজগুলোই করে..... আহমেদ, নিজের দিকে তাকাও! তুমি কি দেখতে পাচ্ছনা, কি করে যাচ্ছ তুমি?”
“সরে দাড়াও” বলে আহমেদ তার মাকে কনুই দিয়ে ধাক্কা মেরে হন হন করে চলে যায়। এদিকে ধাক্কা লেগে দেয়ালের সাথে আঘাত খেয়ে আহমেদের মা মাটিতে পড়ে যান।
আল্লাহ্, আমার ছেলেকে ক্ষমা করে দাও, আমার সন্তানকে ক্ষমা করে দাও!” ঘটনার আকস্মিকতায় আলীয়া নিজেকে স্থির রাখতে পারেন না, অঝোর ধারায় কান্না শুরু করে দেন।
স্ত্রীকে এমন করে কাঁদতে দেখে আহমেদের বাবা সান্ত্বনা দিতে দরজার দিকে দৌঁড়ে আসেন। তিনি আহমেদকে কিছু বলার আগেই সে সিঁড়ি বেয়ে তার বন্ধুর উদ্দেশ্যে চলে যায়। আহমেদের বাবা স্ত্রীর পাশে বসেন, যিনি কিছুক্ষণ আগে নিজের সন্তানের আচরণে দারুণ কষ্ট পেয়েছেন এবং তাকে বাহুতে টেনে মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
আলিয়া সোজা মুহাম্মদের চোখের দিকে তাকান, আর দেখতে পান তাঁর গাল বেয়ে অশ্র গড়িয়ে পড়ছে, কষ্টের তীব্রতায় চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।
“কেন, কেন এমন হতে হবে? আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য আমার সন্তানকে রক্ষায় আমি মারা যাবো। সে আমারই অবিচ্ছেদ্য অংশ, যাকে আমি প্রচণ্ড ভালোবাসি। সে আমার সাথে যা করেছে, তাতে মনে হয় আমার শরীর থেকে আত্মাটা বেরিয়ে যাচ্ছে। হে আল্লাহ্, আমি তাকে ভালোবাসি। তাকে সঠিক পথ দেখাও, বিপথে যাওয়া হওয়া থেকে রক্ষা করো....” আলীয়া আবারও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
আহমেদের বাবার কানে এইসব কথা ঢুকছেনা, তাঁর কাছে শুধু মনে হচ্ছে, হৃদয়টা ভেঙ্গে দু টুকরা হয়ে গেছে।
আহমেদ কি জানত যে, কেউ যখন তার মায়ের ক্ষতি করে বা কষ্ট দেয়, আল্লাহ্ তাকে কঠিন শাস্তি দেন.......
চলবে......
আগের পর্বগুলো দেখতে নিচের লিংকগুলোতে ক্লিক করুন-
ছেলেটির মৃত্যু থেকে পালিয়ে বেড়ানোর চেষ্টা (পর্ব-০১)
ছেলেটির মৃত্যু থেকে পালিয়ে বেড়ানোর চেষ্টা (পর্ব-০২)
বিষয়: বিবিধ
১২৩০ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ঘুম সঙ্গেই থাকুন, দেখিনা শেষটা কি হয়।
আলহামদুলিল্লাহ। আপনাদের সঙ্গ পাওয়াটা নি:সন্দেহে অনেক কিছু আমার জন্য।
আমীন আমীন।
এ সম্পর্কে এখন কিছু বলা যাচ্ছেনা।
বুবু, আল্লাহ্ আপনাকে অনেক বেশি ভালো রাখুন।
আপনার ভালো লাগা মানেইতো আমার জন্য বাড়তি কিছু। প্রিয় জনদের কাছ থেকে উৎসাহব্যঞ্জক মন্তব্য খুব ভালো লাগে।
আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।
এই গল্প লিখতে গিয়ে ছোটবেলায় বাবা মায়ের সাথে কিছু বাজে আচরণের কথা মনে পড়ে যায়।
পনি, কথা দিয়ে কথা রাখতে পারেন নি!
কমেন্ট পেলে খুবই ভালো লাগে, তবে যখন বুঝতে পারি আমার লেখা কেউ পড়ছে, তখনও কিন্তু কম ভালো লাগেনা।
আপনার মূল্যায়ন হোক ছোটা ভাইয়ের জন্য প্রেরণার অন্যতম উৎস।
জাযাকাল্লাহু খাইরান
মন্তব্য করতে লগইন করুন