মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০ টি পরামর্শ (পর্ব-০৭)
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ২৪ মে, ২০১৬, ০৪:৫০:৩১ বিকাল
পরিবার, বিয়ে, দাম্পত্য সম্পর্ক, সন্তান প্রতিপালন সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার, অন্তত আমার মতো আবিয়াইত্তার জন্য। কিন্তু মানুষের কাছ থেকে ভালো ভালো পরামর্শগুলো সংগ্রহ করে সবার মাঝে বিলিয়ে তো দিতে পারি। তাই মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০ টি পরামর্শ নিয়ে হাজির হলাম। পরামর্শগুলো দিয়েছেন ‘শেখ মুহাম্মদ আল মুনাজি’। আমি ইংরেজি থেকে বঙ্গানুবাদ করেছি মাত্র। তাহলে চলুন দেখে আসি সে পরামর্শগুলো কী।
২৫। “এমন জায়গায় বেত বা চাবুক ঝুলিয়ে রাখো, যাতে পরিবারের সবাই দেখতে পারে” (আল হিলিয়া, ৭/৩৩২)
রাসূল (সাঃ) বলেন, “ঘরের এমন জায়গায় বেত বা চাবুক ঝুলিয়ে রাখো, যাতে পরিবারের সবাই তা দেখতে পারে। শৃঙ্খলা বিধানের জন্য এটা খুবই কার্যকর একটা মাধ্যম”। (আত তাবারানি, ১০/৩৪৪-৩৪৫)
যাদের মনে খারাপ কাজের বাসনা জাগবে, শাস্তি প্রদানের জন্য ঝুলিয়ে রাখা বেত বা চাবুক দেখে তারা শাস্তির কথা মনে করে সেসব করা থেকে বিরত থাকবে। ইবনে আল আনবারি (রাঃ) বলেন: “এখানে ঝুলিয়ে রাখা বেত বা চাবুক দিয়ে মারার কথা বলা হয়নি, কারণ আল্লাহর রাসূল কাউকে এমন নির্দেশ করেননি। যার মানে হল, শৃঙ্খলা আনয়নের জন্য বেত বা চাবুক রাখতে বলেছেন (যা দেখেই তাদের মাঝে ভয়ের সঞ্চার হবে)”। (মানাওয়ি, ৪/৩২৫)
প্রহার করা কোনো সমাধান নয়; তবে যখন অন্য কোনো উপায় প্রয়োগ করেও কাজ হয়না, অথবা যখন শৃঙ্খলার কাজে কাউকে বাধ্য করার প্রয়োজন হয়, যেমনটা আল্লাহ বলেছেন, “...... যদি স্ত্রীদের অবাধ্যতার আশংকা কর, তবে প্রথমে তাদের সৎ উপদেশ দাও৷ এরপর তাদের শয্যা থেকে পৃথক কর এবং তারপরও অনুগত না হলে তাদেরকে শাসন কর৷ এরপর যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়, তবে তাদের সাথে কর্কশ আচরণ করো না৷ নিশ্চয়ই আল্লাহ সমু্ন্নত-মহীয়ান৷" ((সূরা নিসা, ৩৪), তবেই কেবল বেত বা চাবুকের প্রয়োগ করা যাবে।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “তোমাদের সন্তানদের সাত বছর হলে তাদের সালাতের নির্দেশ দাও, তাদের বয়স দশ বছর হলে এ জন্য তাদের প্রহার করো এবং তাদের পরস্পরের বিছানা পৃথক করে দাও”। (আবূ দাউদ : ৪৯৫; মুসনাদ আহমদ : ৬৬৮৯)
প্রয়োজন ব্যতিরেকে প্রহার করাটা অন্যায়। অন্যদিকে যারা মনে করে, শৃঙ্খলা বিধানের জন্য কোনো অবস্থাতেই প্রহার করা যাবেনা, বিধর্মী শিক্ষার কিছু থিউরির প্রভাবে প্রভাবিত, এটা ভুল কনচেপ্ট, এমন ধ্যান ধারনা শরীয়তের বিরুদ্ধে চলে যায়।
২৩। পরিবারের সদস্যদের প্রতি স্নেহশীল হওয়া এবং কৌতুক বা দুষ্টমি করা
স্ত্রী এবং সন্তানদের প্রতি স্নেহপূর্ণ ব্যবহার ঘরে সুখ-শান্তি ও বন্ধুভাবাপন্ন পরিবেশ সৃষ্টিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এভাবেই আল্লাহর নবী (সাঃ) জাবিরকে (রাঃ) কুমারী মেয়ে বিয়ে করার উপদেশ দিলেন, “কেন তুমি কুমারী মেয়ে বিয়ে করনি? যার সাথে তুমি দুষ্টমি করতে পারবে, সেও তোমার সাথে দুষ্টমি করবে, এবং তুমি তাকে হাসাবে আর সেও তোমাকে হাসাবে”। (আল ফাতহ, ৯/১২১)
নবী করীম (সাঃ) স্ত্রী আয়শার (রাঃ) সাথে গোসল করার সময় দুষ্টমি করতেন। আয়েশা বলেন, “রাসূল (সাঃ) এবং আমি একই পাত্রে একত্রে গোসল করতাম, তিনি মিছামিছি সবটুকু পানি একাই ব্যবহার করার চেষ্টা করতেন, যাতে আমি বলি, ‘আমার জন্য কিছু পানি রাখেন, আমার জন্য একটু রাখেন না,’”- তাদের উভয়ই তখন জানাবাত অবস্থায় থাকতেন। (মুসলিম ৪/৬)
রাসূল (সাঃ) শিশু এবং কিশোরদের প্রতিও খুব স্নেহপূর্ণ আচরণ করতেন। তিনি হাসান (রাঃ) এবং হুসাইনের (রাঃ) প্রতি খুবই স্নেহ-মমতা দেখাতেন। যখন আল্লাহর রাসূল (সাঃ) সফর থেকে ফিরে আসতেন, বাচ্চারা দৌঁড়ে এসে উনাকে অভিবাদন জানাতো। যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, “যখনই আল্লাহর রাসূল (সাঃ) সফর থেকে ফিরে আসতেন, বাচ্চাদের বাইরে নিয়ে আসা হতো তার সাথে দেখা করানোর জন্য”।
রাসূল (সাঃ) তাদের আপন মমতায় জড়িয়ে ধরতেন। যেমনটা বলছেন আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর (রাঃ), “যখনই রাসূল (সাঃ) সফর থেকে ফিরতেন, তখন তাঁর সাথে আমাদেরকে দেখানোর জন্য বাইরে নিয়ে আসা হতো। একদিন হাসান, হুসাইন এবং আমি তাঁর সাথে দেখা করি। তিনি আমাদের একজনকে সামনে, এবং অন্য দুজনকে পিঠে তুলে নিলেন, যতক্ষণ না আমরা মদীনায় পৌঁছালাম”। (মুসলিম- ৪/১৮৮৫)
আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) যুগের সাথে তুলনা করলে আমরা এখন দেখতে পাই যে, অনেক পরিবারেই সত্য-নির্মল কৌতুক নেই, নেই দয়া মায়া। যারা ভাবে যে, শিশু সন্তানকে চুমু খেলে পিতার সম্মান নষ্ট হয়, তাদের উচিৎ আল্লাহর রাসূলের নিম্মোক্ত কিছু হাদীসের অনুসরণ করা: আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, “আল্লাহর রাসূল (সাঃ) হাসান ইবনে আলীকে (রাঃ) চুমু খেলেন, এবং ইকরা ইবনে হাব্বিস আল আততামিইকে (রাঃ) তাঁর পাশে বসা ছিলেন। ইকরা (রাঃ) বলেন, ‘আমার দশটি শিশু সন্তান আছে, যাদেরকে আমি কখনই চুমু খাইনি’। রাসূল তার দিকে তাকালেন এবং বললেন, যে দয়া দেখায় না, তার প্রতিও দয়া দেখানো হবেনা”।
২৪। ঘরে খারাপ বৈশিষ্ট্য বা আচরণ ঘটতে না দেওয়া
ঘরের প্রতিটা সদস্যদের মাঝে সহজাত কিছু খারাপ বৈশিষ্ট্য থাকে, যেমন মিথ্যা বলা, বাজে গল্প ইত্যাদি ইত্যাদি। এইসব খারাপ বৈশিষ্ট্য পরিহার করতে হবে, করাতে হবে।
কিছু লোক মনে করে, শারীরিক শাস্তিই হচ্ছে এইসব বন্ধের জন্য একমাত্র উপায়। নিম্মোক্ত হাদিসটি এই বিষয়ে খুবই শিক্ষণীয়: আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রাসূল (সাঃ) জানতেন, তাঁর পরিবারের কেউ মিথ্যা কথা বলেছেন, তখন তিনি তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতেন, যতক্ষণ না সে অনুতপ্ত হতো”। ।(মুসনাদে আহমাদ ৬/১৫২)
রাসূলের (সাঃ) হাদিস থেকে এটা পরিস্কার যে, শারীরিকভাবে শাস্তি প্রদান করার চাইতে কথা না বলে অথবা এড়িয়ে চলার মাধ্যমে শাস্তি অনেক বেশি কার্যকর। সুতরাং বাবা মায়েদের এই বিষয়ে ভাবতে হবে।
মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০ টি পরামর্শ (পর্ব-০১)
মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০টি পরামর্শ (পর্ব-০২)
মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০ টি পরামর্শ (পর্ব-০৩)
মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০ টি পরামর্শ (পর্ব-০৪)
মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০ টি পরামর্শ (পর্ব-০৫)
মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০ টি পরামর্শ (পর্ব-০৬)
বিষয়: বিবিধ
১৪৮৫ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ আপনাকেও উত্তম প্রতিদান দিক।
স্ত্রী একেবারেই অবাধ্য হলে তাকে কিভাবে শাসন করতে হবে ( আমি তো শাসনের জায়গায় প্রহার পড়ে এসেছি এতদিন)?
এক্ষেত্রে নারী নির্যাতন আইনে ফেঁসে যাবার ১০০% গ্যারান্টি আছে
স্ত্রী অবাধ্য হল .... সেটার জবাবও লেখায় আছে।
নারী নির্যাতন আইন নারীকে রক্ষা করতে গিয়ে পুরুষকে মজলুম বানিয়েছে
শাসন করা মানে কি বোঝায় ?
শাসন করা মানে হতচ্ছাড়ার মাথা, আমার মুন্ডু।
শাসন করা মানে কি বকা ঝকা করা , নাকি প্রহার করা ? একেবারে স্পেসিফিকভাবে কি বলা আছে ?
প্রথমে বোঝানোর কথা , এতে কাজ না হলে শয্যা আলগ করা এবং এরপরেও কাজ না হলে প্রহার করার কথা বলা আছে।
বুঝাই যাচ্ছে প্রেম পরিনয়ে রুপ পেতে চলেছে , তাই হবু স্ত্রীর মন্জয় করার জন্য প্রহার করাকে শাসন করার ব্যাপকতায় ট্রান্সলেট করা হয়েছে।
শাসন করা মানে প্রহার করা নয়, তবে শাসনের সর্বশেষ অস্ত্র পিটুনি।
আপনার উল্লেখিত কুরআনের আয়াত খানিতো আমার লেখায় উল্লেখ করেছি, তারপরেও আমাকেও দেখাতে হবে কেন!
উপকারী লিখা মাশাআল্লাহ।
তাই বুঝি। শুনে বেশ লাগলো।
উপকার পেলেই আমাদের পরিশ্রম স্বার্থক।
মন্তব্য করতে লগইন করুন