মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০ টি পরামর্শ (পর্ব-০৬)
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ০৮ মে, ২০১৬, ১২:৩৫:৫২ দুপুর
১৯ গোপনীয়তা: পারিবারিক গোপনীয়তা প্রকাশ না করা
এই গোপনীয়তা কয়েকটি বিষয়কে অন্তর্ভূক্ত করে। যেমন:
-ঘনিষ্ঠ মুহুর্তগুলোর কথা প্রকাশ না করা
-বৈবাহিক দ্বন্দ্ব, টানাপড়েন বাইরে প্রকাশ না করা
-পরিবারের এমন গোপনীয় বিষয় বাইরে প্রকাশ করা, যা পরিবার অথবা এর কোন সদস্যের জন্য বিরাট ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।
প্রথম বিষয়টিকে হাদীসে হারাম বলা হয়েছে। “রোজ হাশরের দিন আল্লাহর কাছে মানুষ শয়তানদের মধ্য থেকে সবচাইতে বড় শয়তান হিসেবে উপস্থাপিত হবে সেই ব্যক্তি, যে স্বামী বা স্ত্রী পরস্পরের কাছে গেল, ঘনিষ্ঠ হয়ে মেলামেশা করল, অতঃপর তা (বাইরের কারো কাছে) প্রকাশ দিল”। (মুসলিম ৪/১৫৭)
একটি হাদীসে আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রাঃ) বলেন, তিনি রাসূল (স এর সাথে ছিলেন, যখন কিছু নারী এবং পুরুষ তাঁর সাথে বসা ছিল। তিনি বলেন, “আমি মনে করি এখানে কিছু পুরুষ আছে, যারা স্ত্রীদের সাথে যা কিছু করে তা বলে বেড়ায় এবং এমন কিছু মহিলা আছে, যারা স্বামীর সাথে যা কিছু করে, তা বলে বেড়ায়”। সবাই চুপ করে থাকে। আসমা বলেন, “হ্যাঁ, আল্লাহর শপথ, হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। পুরুষ এবং নারীরা আসলেই এমনটি করে থাকে”! তিনি বলেন, “এমনটি করো না। কেননা, মনে হয় যেন, একজন পুরুষ শয়তান একজন স্ত্রী শয়তানের সাথে রাস্তায় সহবাস করে, আর লোকজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সে দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে”। (আহমদ, ৬/৪৫৭)
আবু দাউদ থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে তিনি (রাসূল) বলেন, “তোমাদের মাঝে কি এমন পুরুষ আছে, যে তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করার সময় দরজা বন্ধ করে দেয়, পর্দা টেনে দেয় এবং আল্লাহকে এ বিষয়টি গোপন রাখতে বলে?” তারা বলে, “হ্যাঁ”। তিনি বলেন, “এবং তারপর তারা কি বলে বেড়ায়, আমি এমন করেছি, এমন করেছি?” একথায় তারা চুপ করে যায়। তারপর তিনি মহিলাদের কাছে যান এবং বলেন, “তোমাদের মাঝে কি কেউ এমন আছে, যে স্বামীর সাথে অন্তরঙ্গ মুহুর্তগুলোর কথা বলে বেড়ায়?” একথায় তারা চুপ করে যায়। তখন একজন যুবতী হাঁটুর উপর ভর করে বসেন এবং তাঁর ঘাড় উঁচু করেন, যাতে রাসূল তাকে দেখতে ও শুনতে পারেন এবং বলেন, “হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সত্যিকার অর্থেই পুরুষ এবং নারীরা এমনটা করে থাকে”। তিনি বলেন, “তোমরা কি জান যে, এই কাজটা কিসের মত? এটা হচ্ছে এমন যে, একজন নারী শয়তান তার পুরুষ শয়তান সঙ্গীর সাথে রাস্তায় সহবাস করে, আর লোকজন তা দেখতে থাকে”। (আবু দাউদ, ২/৬২৭)
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব, ঝগড়া-ঝাটি বাইরে প্রকাশ অত্যন্ত ক্ষতিকর, এবং এটা প্রমাণিত। এইসব কথা বাইরে প্রকাশ করলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার বিভেদ বাড়ে, বৈ কমেনা। কখনো কখনো অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, সমস্যার সমাধান করতে বাইরের কাউকে এনে মধ্যস্থতাকারী বানাতে হয়, যারা কিনা তাদের গোপনীয়তার আরো গভীরে ঢুকে পড়ে।
সমাধান করতে গিয়ে ফেইস টু ফেইস আলোচনা করে থাকে। আমাদের তো আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী দাম্পত্য কলহ মিটমাট করা উচিৎ। “... স্বামী এবং স্ত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে দু’জন সালিশ নিযুক্ত কর; যদি তারা উভয়ে শান্তি চায়, আল্লাহই তাদের পুনরায় মিলিয়ে দেবেন”। (সূরা আন নিসা ৪ : ৩৫)
২০ ঘরে সদ্ভাবের আবহ তৈরি করা
আয়েশা (রাঃ) বলেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ যখন একটি ঘরের লোকদের জন্য কল্যাণ বা মঙ্গল চান, তখন উক্ত ঘরের লোকদের মাঝে সদ্ভাব তৈরি করে দেন। (মুসনাদে আহমাদ ৬/৭১)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, “আল্লাহ যখন একটি ঘরের লোকদেরকে ভালোবাসেন, তখন উক্ত ঘরের লোকদের মাঝে সদয়ভাব তৈরি করে দেন”। (সহিহ আল যামী, ১৭০৪) বলা যায়, তারা পরস্পরের প্রতি অনুগ্রহ করতে শুরু করে।
ঘরে শান্তি বাড়ানোর জন্য অন্যতম একটা উপায় হচ্ছে পরস্পর পরস্পরের সাথে সদয়ভাব বজায়ে রাখা। স্বামী-স্ত্রী এবং সন্তানদের মাঝে সদয়ভাব জারি থাকলে তা ঘরে এমন সুফল বয়ে নিয়ে আসে, যা কর্কশ ব্যবহারের মাধ্যমে তা আসেনা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ কোমলতা, সদয়ভাব পছন্দ করেন, এবং এর জন্য এমনভাবে পুরস্কৃত করেন, তা তিনি কর্কশ বা অন্য কিছুর জন্য করেন না”। (মুসলিম ২৫৯২)
২১ ঘরকন্যার কাজে স্ত্রীকে সহযোগিতা করা
কিছু পুরুষ মনে করে, সাংসারিক কাজগুলো তার জন্য নয়। আবার কেউ কেউ মনে করে, যদি ঘরের কাজে স্ত্রীকে সাহায্য করে, তাহলে এতে তার ইজ্জত চলে যায়, স্ট্যাটাস নিয়ে টানাটানি শুরু হয়।
আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের কাপড় নিজেই পরিষ্কার করতেন। নিজের জুতা নিজে মেরামত করতেন এবং অন্যান্য পুরুষরা ঘরে যেসব কাজ করে থাকে, তিনিও তাই করতেন। (মুসনাদে আহমদ ৬/১২১)
আয়েশাকে (রাঃ) যখন জিজ্ঞেস করা হয়, নবী ঘরে কি কাজ করতেন। তিনি বলেন তেমনই জবাব দিয়েছেন, যেমনটা রাসূলকে করতে দেখেছেন। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, “তিনি ছিলেন অন্যসব মানুষদের মতই একজন সাংসারিক মানুষ।
আয়েশাকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করা হয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে কাজ করতেন কিনা, তখন তিনি বলেন, নবীজী (স ঘরের কাজে অভ্যস্ত ছিলেন। “তিনি ঘরে সাংসারিক কাজ করতেন, যখন নামাজের আযান হতো, তিনি নামাজের জন্য বেরিয়ে যেতেন”। (আল বুখারী, আল ফাতহ ২/১৬২)
বর্তমানেও যদি আমরা এমনটি করতাম, তাহলে তিনটা জিনিস অর্জন করতে পারতাম:
আমরা রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদাহরণ অনুসরণ করতাম বা করা হতো।
আমাদের স্ত্রীদের সহযোগিতা করা হতো।
আমরা উদ্ধত না হয়ে আরো নম্র হতে পারতাম।
কিছু পুরুষ চায় স্ত্রী ঝটপট করে বা মুহুর্তেই টেবিলে খাবার হাজির করবে, অথচ হাঁড়ি তখনও চুলার উপরে আর অন্য দিকে দুধের শিশু কাঁদছে। ঐ অবস্থায় স্বামীর একটু সহযোগিতার হাত না বাড়ানোটা খুবই দু:খজনক।
চলবে......
মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০ টি পরামর্শ (পর্ব-০৫)
মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০ টি পরামর্শ (পর্ব-০৪)
মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০ টি পরামর্শ (পর্ব-০৩)
মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০ টি পরামর্শ (পর্ব-০২)
মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০ টি পরামর্শ (পর্ব-০১)
বিষয়: বিবিধ
১৬১৭ বার পঠিত, ৩১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আয়েশা (রাঃ) বলেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ যখন একটি ঘরের লোকদের জন্য কল্যাণ বা মঙ্গল চান, তখন উক্ত ঘরের লোকদের মাঝে সদ্ভাব তৈরি করে দেন। (মুসনাদে আহমাদ ৬/৭১)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, “আল্লাহ যখন একটি ঘরের লোকদেরকে ভালোবাসেন, তখন উক্ত ঘরের লোকদের মাঝে সদয়ভাব তৈরি করে দেন”। (সহিহ আল যামী, ১৭০৪)
এতো সুন্দর, উৎসাহব্যঞ্জক মূল্যায়ন শুনে খুশি না হয়ে পারা যায়না। আমিও প্রীত হয়েছি আপা।
এখনও শেষ করিনি, আল্লাহ চাহেতো শিগগিরই ইতি টানার চেষ্টা করব।
আল্লাহ আমার আপাটাকেও উত্তম প্রতিদানে ধন্য করুন। আমিন।
-বৈবাহিক দ্বন্দ্ব, টানাপড়েন বাইরে প্রকাশ না করা
-পরিবারের এমন গোপনীয় বিষয় বাইরে প্রকাশ করা, যা পরিবার অথবা এর কোন সদস্যের জন্য বিরাট ক্ষতি বয়ে আনতে পারে"
আমি বুঝিনা আবিওইত্তা পোলাপান এগুলোর বুঝে কি???
যাইহোক কোরান হাদিসের আলোকে লিখাটা ভালো লেগেছে।
আপনার ভালো লেগেছে প্রীত হলাম ব্রাদার।
আরো ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
আল্লাহ আপনাকেও সঠিকভাবে উক্ত বিষয়গুলোতে আমল করার তাওফীক দিন।
০ প্রকাশ না করলেও চেহারা দেখেই ঘনিষ্টজনেরা সেটা বুঝে ফেলে । কারণ সবখানেই কম বেশী - একই কাহিনী। আর এখনকার জামানায় এসব দ্বন্দ্ব কেউ জিইয়ে রাখতে চায় না । তালাক দেবার অপশন তো আছেই ।
০ আল্লাহর কথা অবশ্যই সঠিক
মিয়া-বিবি রাজি
তো ক্যায়া করে গা কাজি
আর মনমালিন্যের সময় একজন শান্তি (মানিয়ে চলতে)চাইলেও অন্যজন যদি না থাকতে চায় তাহলে সেটা জোড় লাগানো সম্ভব হয় না , যদি হয়ও তাহলে যে শান্তি চেয়েছে তাকে পরবর্তী সময়ে নত হয়ে চলতে হয় আর যে চলে যেতে চাইছিল সে আরও উদ্যত ও বেপরোয়া হয়ে যায়,কঠিন ফাঁপড় চালায় শান্তি চাওয়া লোকটির উপর ।
ফলে শান্তি চাওয়া সেই বেচারাকে কঠিন দৌড়ের উপর থাকতে হয় , নিজের আত্মসন্মান বিকিয়ে দিয়ে।
সেটার তুলনায় তালাক অনেক ভাল , এটা হালালও।
২০ ঘরে সদ্ভাবের আবহ তৈরি করা
০ বিবাহিত জীবনে একজন চাইবে আরেকজনের উপর ডমিনেট করতে । যেহেতু স্বামীই তার স্ত্রীর জন্য খরচ করে , তাই আল্লাহ স্ত্রীকে স্বামীর অনুগত হয়ে চলতে বলেছেন । এখানে শরিয়ত মোতাবেক স্বামঈ ডমিনেট করার কথা ।
কিন্তু আমাদের মুসলিম সমাজে কি এটা আদৈ হয় ? বিভিন্ন মনুষ্য আইনের খড়গে ফেলে স্বামীর ডমিনেন্সি একেবারে বাতিল করে ফেলা হয়েছে । ফলে স্ত্রী স্বামীর অবাধ্য হলে একটা বিশেষ পর্যায়ে গিয়ে যে স্ত্রীকে প্রহার করার অধিকার রাখত শরিয়ত মোতাবেক সেটা করলে এখন আইনের ফাঁপড়ে পড়তে হয়।
এরকম সমাজে সংসারে কখনই আল্লাহ প্রদত্ত শান্তি আসার কথা না।
২১ ঘরকন্যার কাজে স্ত্রীকে সহযোগিতা করা
০ পুরুষেরা আয় করবে বাইরে থেকে , সেটা তার সংসারে কাজে লাগাবে । স্ত্রী তার স্বামীর সংসারের হেফাজত করবে স্বামীর অবর্তমানে আল্লাহর হেফাজতের মাধ্যমে।
স্বামী-স্ত্রী একজন আরেকজনের লিবাস।
সন্তান ধারনের কাজ যেমন আল্লাহ নারীদের দিয়েছে , তেমনি পুরুষদের দিয়েছেন শারিরীক সামর্থ্য , রিজিকের ব্যবস্থা যেটা দিয়ে সে তার স্ত্রী ও সংসারের দেখভাল করবে।
এখন যদি পুরুষেরা ঘরকন্যার কাজ করে তাহলে নারীরা বাইরে পুরুষের কাজ করতে যাবে/চাইবে। সে অনুযায়ী সংসারে সমান খরচও শেয়ার করা উচিত। কারণ সংসারটা উভয়েরই।
নারীদের যেসব স্পেসিফিক কাজ সেটাতে পুরুষেরও অংশগ্রহন করার দাবী নারী স্বাধীনতার সাথেই মিলে বেশী যেটার ফল আমরা হাতে নাতেই পাচ্ছি।
সবকিছু যদি পুরুষকেই করতে হয় তাহলে এত খরচ করে বিয়ে করা ও সেটা মেইনটেইন করা কেন ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন