মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০ টি পরামর্শ (পর্ব-০৫)
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ০৪ মে, ২০১৬, ০৫:০০:১৯ বিকাল
পরিবার, বিয়ে, দাম্পত্য সম্পর্ক, সন্তান প্রতিপালন সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার, অন্তত আমার মতো আবিয়াইত্তার জন্য। কিন্তু মানুষের কাছ থেকে ভালো ভালো পরামর্শগুলো সংগ্রহ করে সবার মাঝে বিলিয়ে তো দিতে পারি। তাই মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০ টি পরামর্শ নিয়ে হাজির হলাম। পরামর্শগুলো দিয়েছেন ‘শেখ মুহাম্মদ আল মুনাজি’। আমি ইংরেজি থেকে বঙ্গানুবাদ করেছি মাত্র। তাহলে চলুন দেখে আসি সে পরামর্শগুলো কী।
১৮। ঘরের বাইরে নারীদের কাজ বা চাকুরীর পুনর্মূল্যায়ন
ইসলামের আইন-কানুন নারী এবং পুরুষ, উভয়ের জন্য সম্পূরক। আল্লাহ্ যখন নারীদেরকে নির্দেশ দিলেন, ‘......তোমরা ঘরেই অবস্থান কর......’। (আল আহযাব ৩৩:৩৩)। তখন নারীদের ব্যয়ভার বহন করা পুরুষদের উপর অত্যাবশ্যক করে দিয়েছেন।
মূলনীতি হল, নারীদের ঘরের বাইরে গিয়ে কাজ বা চাকুরী করা উচিৎ নয়, যদি না উক্ত কাজটি করতেই হয়। যখন মুসা (আ: ) দেখলেন একজন ন্যাককার ব্যক্তির দুই মেয়েকে ঘর ছেড়ে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন, যারা পানি আনতে বের হয়েছে, তখন তিনি তাদের বললেন, “......’কি ব্যাপার’?তারা বলেন, ‘আমাদের পরিবার প্রধান বা পুরুষ পানি না আনলে আমরা পানি পাইনা। আমাদের পিতা বৃদ্ধ মানুষ’। (আল কাসাস ২৮:২৩)।
তারা লজ্জিত হয়েছিল এই জন্য যে, তাদের অভিভাবক বার্ধক্যের কারণে পানি আনতে অক্ষম বিধায় তাদেরকেই পানি আনতে বাইরে দূরে আসতে হল, নচেৎ তারা আসতনা। সুতরাং তারা প্রয়োজন তাগিদ ছাড়া বাইরে যাওয়াকে নিজেদের জন্য উচিৎ মনে করেনি। “... তাদের দুজনের একজন বলল, ‘ও বাবা, এমন কাউকে নিয়ে আস, যে শক্ত সমর্থ এবং বিশ্বস্ত”। (আল কাসাস ২৮:২৬)। এই নারী পরিষ্কারভাবেই ফিরে গিয়ে ঘরে থাকার ইচ্ছাই ব্যক্ত করেছেন, যাতে বাইরে কাজ করতে গিয়ে উত্যক্ত হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন।
আধুনিক সময়ে এসে দুইটি বিশ্বযুদ্ধের পর কর্মক্ষেত্রে পুরুষদের অভাবে নারীদেরকে খাটিয়ে মারার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করল বিধর্মীরা এবং তখন অর্থনীতির অবস্থা এতোই শোচনীয় ছিল যে, তা পুনরুদ্ধারে নারীদের কাজে নামিয়ে দেওয়া যথার্থই মনে হল। আর নারীদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া আদায়ের জন্য আন্দোলনে নামতে উস্কে দেওয়া এবং ঘর থেকে বের করে তাদের (মুসলিম নারী) বেহায়াপনায় ছেড়ে দিয়ে মাথা নষ্ট করা, সর্বোপরি পুরো সমাজ ব্যবস্থার শৃঙ্খলা ভেঙ্গে দিতে ইহুদীদের হীন চক্রান্তের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হল। এইভাবেই নারীদের বাইরে যাওয়ার বা চাকুরী করার ধারাটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল।
মুসলিম পুরুষরা নারীদের সুরক্ষা দিয়ে থাকে এবং তাদের জন্য ব্যয় করে। নারী স্বাধিকার আন্দোলন এখন মুসলিম দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেযে যে, নারীদেরকে পড়াশোনার জন্য বিদেশ পাঠানো হচ্ছে, এবং কামনা করা হয় তারা যে সেখানে চাকুরী করে, যাতে তাদের ডিগ্রি বিফলে না যায়।
আমরা বলছিনা, নারীদের বাইরে যাওয়াই যাবেনা এবং চাকুরী করাই যাবেনা। যার মানে হল, কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজন মোতাবেক নারীরা ঘরের বাইরে যাবে, চাকুরী করবে, যেমন শিক্ষকতা, ডাক্তারি ইত্যাদি। তবে তা হতে হবে ইসলামী শরীয়তের শর্তাবলীর আলোকেই।
মহিলাদের বাইরে কম যাওয়াই উত্তম, যখন আমরা লক্ষ করি, কিছু নারী কোনো কারণ বা প্রয়োজন ছাড়াই বাইরে যায় এবং কেউ কেউ খুব অল্প বেতনে চাকুরী করে। কারণ তারা মনে করে যে, তাদেরকে ঘরের বাইরে যেতেই হবে, এমনকি যদি প্রয়োজন নাও থাকে। অথবা তারা এমন জায়গায় কাজ করে, যা তাদের কাজের উপযোগী নয় অথবা বলা যায় নারী প্রকৃতির সাথে একেবারেই যায়না। আর এসবইতো তাদেরকে ফিতনার দিকে ঠেলে দেয়।
নারীদের বাইরে কাজ করার বিষয়ে সেকুলার মতাদর্শ এবং ইসলামী মতাদর্শ বা মূলনীতিতে মৌলিক একটি পার্থক্য হল, “......’তোমরা ঘরেই থাক’......” (আল আহযাব, ৩৩: ৩৩)। তবে যৌক্তিক প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার অনুমতি তো রয়েছেই- “প্রয়োজনে তোমাকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে”। (আল হাদীস)। অন্য দিকে, সেকুলার মূলনীতি হল, বাইরে যেতে পার, যেকোনো পরিবেশে, যেকোনো অবস্থায়।
আমরা বলছি, বলা উচিৎ, এমন নারীদের বাইরে গিয়ে কাজ করা উচিৎ, যার স্বামী মারা গেছে অথবা কাজ করতে অক্ষম, কিংবা পিতা বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন।
অনৈসলামিক সমাজে একজন স্ত্রীকে পরিবারের ব্যয়ভার বহন করার জন্য তার স্বামীকে কর্মক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে হয়। একজন পুরুষ তার স্ত্রীকে বাইরে কাজ করতে প্রস্তাব করতে পারেনা, যদি না সে কাজ করতে চায়। আর কিছু পুরুষ তো বিয়েতে শর্তই দিয়ে রাখে, স্ত্রীকে চাকুরীজীবি হতে হবে!
একজন নারী ইসলামিক পারপাসে যেমন, শিক্ষা ক্ষেত্রে মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে অথবা সময়ের সদ্ব্যবফার করার জন্য, অথবা এমন কিছু নারী যাদের সন্তান নেই, দাওয়াতী কাজে সময় দিতে পারে বেশি।
নারীরা বাইরে কাজ করলে যে নেতিবাচক দিকগুলো দেখতে পাই-
-প্রায় এমন কিছু ঘটনা ঘটে থাকে, যা ইসলামে নিষেধ। যেমন নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, তাদের সাথে একান্তে সময় কাটানো, গায়রে মাহরাম পুরুষের নিকট সাজ সজ্জা প্রদর্শন করা ইত্যাদি। যা অনৈতিক কাজে উদবুদ্ধ করে বা পরিচালিত করে থাকে।
-স্বামীর প্রতি অধিকার যথাযথ পালন করা হয়না, ঘরকে অবজ্ঞা করা হয়, শিশুদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়না।
-স্বামী হচ্ছে ঘরের পরিচালক, নারীদের ভেতরে এই অনুভূতি নষ্ট হয়ে যায়। যেমন, একজন নারী, যার যোগ্যতা স্বামীর চেয়ে বেশি অথবা সমান, (যদিও যোগ্যতা সমান বা বেশি হওয়া ভুল বা অন্যায় নয়), সে কি স্বামীর প্রয়োজনীয়তার যথার্থতা অনুভব করবে অথবা স্বামীকে মান্য করবে? অথবা সে কি মনে করবে যে, স্বামির কাছে সে স্বাধীন? সে ঘরে কতটুকু সময় দিচ্ছে এবং কর্মক্ষেত্রে কতটুকু দিচ্ছে, এই বিতর্কগুলো কখনোই শেষ হবেনা।
-শারীরিক দিক থেকে দুর্বলতা, মানসিক এবং স্নায়ুবিক চাপ নারী প্রকৃতির সাথে ম্যাচ করেনা।
নারীদের বাইরে কাজের ব্যাপারে আলোচনার পর আমরা সমাপ্তি টানতে পারি এইভাবে যে, আল্লাহকে আমাদের ভয় করতেই হবে। প্রত্যেকটা বিষয়কে শরীয়তের আলোকে দেখতে হবে, এবং জানতে হবে কোন কোন প্রয়োজনে নারীরা বাইরে যেতে পারবে, আর কোন কোন ক্ষেত্রে যাওয়া যাবেনা।
চলবে......
মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০ টি পরামর্শ (পর্ব-০৪)
মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০ টি পরামর্শ (পর্ব-০৩)
মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০ টি পরামর্শ (পর্ব-০২)
মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০ টি পরামর্শ (পর্ব০-০১)
বিষয়: বিবিধ
১৪৪৫ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চালিয়ে যান।ধন্যবাদ।
আসল কাজে নামলেই ধরে শ্রীঘরে ঢুকিয়ে দিচ্ছে, আর বদ কাজে নামতে উৎসাহ দিচ্ছে, করছে সহযোগিতা।
পাশে থাকলে চালিয়ে যেতে বোধ করি কষ্ট হবেনা।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
স্ট্যাটাসের ব্যাপারে পুরুষদের চেয়ে নারীরা বহুগুণ এগিয়ে। কোনো অনুষ্ঠানে স্বামী দামী একটা গিপ্ট দিতে না পারলে স্ত্রীর মান ইজ্জত লাটে উঠে!
এটা সবাই বুঝে, নারীদের বাইরে কাজ করার অধিকার দিয়েছে, কিন্তু সাধে তো আর এখন পুরুষরা নারীদের চাকুরী করতে বাধা দেয়না, দেয় বিশেষ কারণে, যেটা আমি আপনি সবাই ভালো করেই বুঝি। একটা ফেত্না থেকে বাচানোর জন্য স্বামী যদি স্ত্রীকে বাইরে চাকুরী করতে বাধা দেয়, আমি এখানে নির্যাতনের কিছু দেখিনা।
চাহিদার পারদ যত উঁচুতেই উঠুক, আমি না উঠলে কার সাধ্য আমাকে উঠায়। আমাদের সমস্যাটা হচ্ছে, ইসলামিক পরিবার অথবা জেনারেল পরিবার, লোকে কি ভাববে, এই চিন্তায় আয়ের চেয়ে কয়েকগুণ বাড়িয়ে ব্যয় করে, তাহলে দুজনকেই চাকুরী না করে উপায় আছে!
আমার কাছে স্বামীর আয়ের সীমাবদ্ধতার চাইতে অন্যের কাছে প্রেস্টিজ রক্ষা করা অনেক কঠিন!
আমি একজন পুরুষ, আমার আয় দুই টাকা, অথচ বউয়ের মুখে একটু হাসি ফুটাতে, তাও আবার ফালতু সাজ সজ্জার জন্য খরচ, শ্বশুর বাড়ির লোকদের কাছে ফুটানি মারতে লাখ টাকা খরচ করি! এত খরচ করার পরেও কি ভালবাসার মাখামাখি থাকে? থাকেনা! যে নারী বা পুরুষ অল্পতে তুষ্ট হতে পারবেনা। তারা দুইজন কেন, ৩২ জন চাকুরী করলেও চাহিদার পারদ উঁচু থেকে উঁচুতে উঠতেই থাকবে।
সত্যি বলেছেন, সমস্যা বিশ্বজুড়ে এতো গভীরে চলে গেছে যে, কোন উপদেশ, শাসন বারণ, কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা।
সব কিছুতেই নারীর চেয়ে পুরুষ এগিয়ে, পুরুষ থেকে নারী এগিয়ে, এই বিতর্ক চলতেই থাকে।
আপনার দোয়া, আমার চিন্তা ভাবনা, তারপর উত্তম প্রচেষ্টা, সর্বোপরি আল্লাহর সাহায্যই আমার জন্য এমন জীবন সঙ্গী টুক টুক করে হেঁটে আসবে।
আল্লাহ আপনাকেও উত্তম প্রতিদান দিন।
সুন্দর পোষ্টটির জন্য শুকরিয়া।জাজাক আললাহ
সুন্দর মূল্যায়নের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
জাযাকাল্লাহু খাইর।
অনেক সময় দেখা যায়, প্রযোজন থাকলে ও কিছু নারি বাইরে বেরুতে চায় না,
আমার এক দুরসম্পরকের ভাবির প্রথম পিচ্ছি সিজারে হয়,
পরবর্তীতে তিনি মাসতুরার সংস্পর্শে এসে, পরদা র বিষয়টা মাথায় নেন,
দ্বিতীয় পিচ্ছির সময় তিনি আর হাসপাতালে যেতে রাজি হলেন না,
বাসার সবাই উনার এই সিদ্ধানে খুব রাগারাগি করলো, কিন্তু তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল,
গত সিজারে একজন পুরুষ ডাক্তার ছিলো তাই এবার তিনি কিছুতে ই বাসার বাইরে যাবেন না।
যদি ও শেষ পর্যন্ত সব কিছু ভালোয় ভালোয় সমাধা হয়েছিল।
আপনি যে নারীর কথা বলেছেন, আমি মনে করি না তার বাইরে যাওয়ার ইচ্ছে নেই। কিন্তু কেন যাননি অথবা যেতে চাননা, কারণটাও আপনি বলেছেন।
এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে একজন নারির পিছুটান থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। পিছুটান না থাকাটাই বরং অস্বাভাবিকতা।
অনেক মেয়ে বা নারী কিছুদিন আগে ফেসবুকে এবং বিশেষ আলোচনায় খুব খেলামেলাভাবে বলেছে, হাসপাতালে মেয়েলি সমস্যা অথবা ডেলিভারির জন্য গেলে অবাঞ্ছিত.. জন্য কিভাবে পুরুষ এবং নারী ডাকতাররা মিলে তাদের নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে!!!!
তোমাদের সহযোগিতা পেলে হতেও পারে।
আপনার মূল্যবান উপস্থিতি এবং গুরুত্বপূর্ণ সম্মতি জরুরী। দয়া করে হাজিরা দিন।
হাজিরা দিয়ে দিলাম!!!
রমজান সম্পর্কে কিছু লেখা তৈরি করে নিন।
ভালো লেগেছে জেনে প্রীত হলাম। ভালো লাগা অব্যাহত রাখবেন।
স্বামীর অঢেল সম্পত্তি থাকার পরও মেয়েরা চাকুরী করা মানে পর পুরুষের সংস্পর্শ না পেলে তাদের আত্মা শান্তি পায় না।
ধার্মিক শুধু পরকে উপদেশ দেওয়ার বেলায়, জানি না নিজের ব্যক্তি জীবন কতটুকু গোছাতে পেরেছি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ
ভালো লেগেছে শুনে প্রীত হলাম।
সে আমিও জানি। জায়গামত হিট করলে প্রিয়জনেরাও মুখ পেঁচার মত করে রাখে।
যখন চিন্তা হবে আমি ঠিক মত পারছিনা কিনা, চেষ্টাটা তখনই শুরু করে দিলে পারবেন না কেন। অবশ্যই পারবেন।
আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ জনাব।
বর্তমান যুগ নারী স্বাধীনতার যুগ । এখনকার নারীরা যে কাজ দিনে করে সেটা রাতেও এলাউড হওয়া উচিত। না হলে কিভাবে আমরা আমাদের আধুনিক , সভ্য ও মুক্তমনা জাতি বলে দাবী করবো ?
নারী স্বাধীনতা নিয়ে কাব যাব করলে সোজা নারী নির্যাতন আইনে ফাঁসিয়ে দেবে যেখানে একজন নারীর ১ টা অভিযোগ ( যদিও সেটা যতই মিথ্যা হোক না কেন )হাজার জন পুরুষের হাজারটা সত্যের চেয়েও বেশী গ্রহনযোগ্য এবং এটাতে নাকি কোন বেইল নাই ।
অতএব .... খুব খেয়াল কইরা
মন্তব্য করতে লগইন করুন