হিজাবী ছাত্রীকে ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ায় 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার' ফেসবুক গ্রুপে প্রতিবাদের ঝড়। অতঃপর গ্রুপটিকে 'বাঁশেরকেল্লা' আখ্যায়িত করে কিছু লোকের গ্রুপ ত্যাগ!
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ২৮ এপ্রিল, ২০১৬, ০৫:০৬:১৭ বিকাল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগেও অনেকবার এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু প্রতিবাদ হয়েছে খুব সামান্যই। এইবারের চিত্রটা যেন খুবই আলাদা। যদিও প্রতিবাদ বা প্রতিক্রিয়া স্যোশাল মিডিয়ায় সীমাবদ্ধ, তবুও আশার দিক হচ্ছে, ক্লাসেই একটি মেয়ে প্রতিবাদে দাঁড়িয়ে বলেন “ঢাবির কোন ড্রেসকোড নেই, আমি যেমন জিন্স পরে ক্লাস করছি, তারও বোরখা পরে ক্লাস করার অধিকার আছে”। এছাড়াও ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামক ফেসবুক গ্রুপে এইসব বিষয়ে প্রতিবাদ প্রতিক্রিয়া তেমন হয়নি বললেই চলে। তবে এইবার হচ্ছে। এখন পর্যন্ত উক্ত ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ৩৩ টি পোস্ট হয়েছে, এবং দুইজন ইতোমধ্যে গ্রুপটিকে ‘বাঁশেরকেল্লা’ আখ্যায়িত করে গ্রুপ ত্যাগ করেছে। গ্রুপটি ক্লোজড বিধায় বাছাইকৃত কিছু প্রতিক্রিয়া (মন্তব্য) ব্লগে নিয়ে আসলাম।
‘মেয়েটা তো শাহাবাগে গাজা খায় না, সুশীলরা কেন ওর জন্য প্রতিবাদ করবে?’
‘ঘটনা যদি উলটা হইতো অর্থাৎ আল্ট্রা মডার্ণ ড্রেস পরার কারণে যদি কাউকে বের করে দিতো তাহলে বামদের চিল্লাচিল্লিতে ক্যাম্পাস এতক্ষণে অতিষ্ট হয়ে যেত’।
‘তাকে বহিষ্কার করলে বাসায় কাজের বুয়াকে নির্যাতন করবে , তার চেয়ে চলেন সবাই জুতার মালার সংবর্ধনা দেই’।
‘তিনি মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক হয় কি করে? তারতো মন মানসিকতায় ব্যাপক সমস্যা। তার মত লোকের চাকুরি এখনও থাকে কি করে? বহিস্কার করা হচ্ছে না কেন তাকে’?
‘দেশের বাহিরে দশটা পি এইচ ডি করার চেয়ে পাবনায় দশ দিনের কোর্স করা অধিক শ্রেয়...’
‘কেউ কেউ তার পক্ষে সাফাই গাইছেন। বলছেন এটা ষড়যন্ত্র। হয়তো শুধু অনলাইনে সংবাদ প্রকাশিত হলে তাকে উড়িয়ে দেয়া যেতো। কিন্তু ভিডিওতে গোটা ক্লাস যেভাবে প্রতিবাদমুখর হয়েছে তাতে বুঝা যায় ঐ শিক্ষক তার আচরণের চরমসীমা অতিক্রম করেছিল, আর তাই শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদী হতে বাধ্য হয়'।
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু কুলাঙ্গার শিক্ষক সবসময় ছিল, আছে। যৌন হয়রানি, শিক্ষার্থীদের মার্ক কম দেয়া ও শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্ণবাদী ও দলবাজী আচরণ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য’।
‘মুখ খোলা রাখা বোরখা পরিধান করা মেয়েরাও প্রতিনিয়ত তার কটুক্তির শিকার। ১০ বছর আগেও আমার এক ফ্রেন্ড তার তারা অপমানিত হয়েছিলো, প্রতি বছরই এরকম ঘটনা ঘটে। অসাম্প্রদায়িকতার লেবাসের এক সাম্প্রদায়িক কিট সে...’
‘বাংলার মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আজিজ স্যারের মত ইসলাম বিদ্বেষী শিক্ষক থাকা সত্যি দুর্ভাগ্যজনক’।
‘ঢাবির ভর্তি নির্দেশিকায় কোথাও লেখা নেই যে, এখানে ক্লাস করতে হলে বোরকা, হিজাব খুলে ক্লাস করতে হবে’।
‘কেউ অতিরিক্ত নিরাপত্তার কারণে নেকাব করলে সেটা তার ইচ্ছা। তবে আসলে ঐ ব্যক্তির ছদ্মবেশে অন্য কেউ এলো কিনা তা যাচাই করার জন্য নারি শিক্ষকদের মধ্যে কেউ এসে চেক করে দেখতে পারে’।
‘ও ব্যাটা মনে হয় ওর বাসার কাজের মহিলারেও শাড়ি পড়তে দেয় না, জিন্স-টপস পড়ে কাজ করতে আসতে বলে’।
‘হিজাবের পক্ষে দুইটা কথা বললেই গ্রুপ যদি বাঁশের কেল্লা হয়ে যায় তাহলে এখন কি হবে ফ্রান্স’??
‘ভাবতে লজ্জা লাগছে এমন শিক্ষকও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন, যিনি ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে এভাবে আচরণ করেন, যার অপরাধ "হিজাব" পড়া’।
‘এটা ভেবে গর্ব হচ্ছে এমন শিক্ষার্থীও আছেন যিনি এমন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে পারে এবং নিজের সহপাঠির পাশে দাড়াতে পারে’।
‘উনারে আমাগো ডিপার্টমেন্টেরর এক স্যার জানোয়ার কইছে।হেতারা নাকি পাশাপাসি বাসায় থাকত এহন স্যারে জানোয়ারেনন মুখ দেখফার চায় না’।
‘অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস এখনো আমাদের আছে দেখা যাচ্ছে। স্যালুট এই বোনগুলোকে যারা ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা না করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ দিয়ে আগুন বের করেছে’।
‘আমি লজ্জিত।আমার হলের সাবেক প্রভোস্ট। ধিক’!
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক এখনো মানুষ হতে পারে নি’ ।
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড না পশ্চিমের হরগঙ্গা কলেজ এই তর্ক করা এখনো প্রয়োজন কি না জানি না তবে এখানকার শিক্ষকরা এখনো কে কী পরে ক্লাসে আসে এটা খেয়াল করার সুযোগ কিংবা মানসিকতা যে এখনো পোষণ করেন সেটা ভাবলেই আমার হাসি পায়। ১৮ বছর আগে আমাদের এক মেয়েকে প্রাণরসায়নের এক শিক্ষক বকা দিয়েছিলো এই মেয়ে তুমি একেকদিন একেক কাপড় পরে ক্লাসে আসো, বড়লোকী দেখাও? আর এখন বলে ক্লাসে হিজাব পরা যাবে না’।
‘কিছু কিছু লম্পট টিচার আছে যাদের লোলুপ দৃষ্টি থেকে ছাত্রীরা রেহাই পায় না। তারা চায় না কোন ছাত্রীর চেহারা বা শরীর ঢাকা থাকুক। কারণ বোরখা পরলে লম্পটগুলো তাদের চক্ষুর ক্ষুধা মিটাতে পারবে না’।
‘আমি মনোবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স এর ছাত্র। এনার ক্লাস আমাদের সময়েও অনেকটা এমন ছিলো। তিনি একদিন বলেছিলন বোরকা পরে সব মেয়েরা সন্ধ্যার পরে শহিদ মিনারে গিয়ে................. ভিডিও টি দেখার পর আমি সত্যিই খুব ব্যথিত এবং লজ্জিত’।
‘মনোবিকারগ্রস্ত মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক’!
‘একজন শিক্ষক জানেন না তার দায়িত্ব টা কী? এইটা আমাদের দূর্ভাগ্য! আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে অনড় থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিবাদে আমি গর্বিত, মুগ্ধ। আমার আশংকা, এই শিক্ষক প্রতিবাদী ছাত্র-ছাত্রীকে তার ইনকোর্স বা টিউটোরিলে নম্বর কম দিতে পারেন। তবু প্রতিবাদ টিকে থাক...’
‘বোরকা পরা মেয়েদের দেখলে মনে হয় বামদের চেতনা জাগ্রত হয়না’।
‘আপনারাই বলেন পোশাক পছন্দের স্বাধীনতা সবার আছে। তাহলে বোরখা কিংবা লম্বা জামা টুপি পড়লে কাউকে বাধা দেয়াটা দ্বী-মুখী নীতি না?...... সাহেব (মনো বিজ্ঞানের শিক্ষক) মুখে বলেন ভ্যালু এন্ড ইথিক্সের কথা, কাজে করেন অনৈতিক কাজ’।
‘ওনার এতই চুল্কানি যে প্রভোস্ট থাকা কালীন এ এফ আর হলে তাবলীগের জামাত ঢুকতে দিত না, এটা কি অসাম্প্রদায়িকতা’?
ভিডিউটি দেখতে-
বিষয়: বিবিধ
২৮২৫ বার পঠিত, ৩১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভিডিওটি দেখে এই ভেবে অন্তত ভালো লাগলো যে প্রতিবাদী মানুষ এখনো আছে, দুর্গন্ধময় নরক কীটের ভীড়ে।
প্রতিবাদমুখর জাতি হিসাবে মহান রব আমাদেরকে কবুল করুন। আমীন।
এই আল্ট্রা মডার্ন প্রতিবাদী মানুষগুলো একদিন বোরকাওয়ালীদের সংস্পর্শে থেকে নিশ্চয় নিজেও বোরকা ধারণ করবে। আমি আশাবাদী।
আমিন ছুম্মা আমিন।
তবে দু’দিন ধরে ব্লগে আপনার অনুপস্থিতিতে উদ্বিগ্নবোধ করছি! সুস্থ আছেন তো? ছোট ভাই?
মাত্রতো দুইদিন। প্রতিদিন কি আর থাকা সম্ভব হয়রে বোন।
মনে রাখার জন্য শুকরিয়া।
ধন্যবাদ আপনাকে
কথায় কথায় স্যালুট দেইয়ে ফেলেন কোন দুঃখে! স্যালুট দেওয়া কি আদৌ ঠিক???? আমাদের স্যালুট হবে আল্লাহর কাছে।
কিঞ্চিৎ সংশোধনী আছে। ভিটামিন লাঠিপেটায় নয়, বাঁশের কঞ্চি বা বেত দিয়ে মারাকে ভিটামিন বলা হয়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন