বিদায়, সবার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ০৭ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:৩৯:১১ রাত
বিদায় সবসময়ই বেদনার হয়, তবুও বিদায় নিতে হয় দিতে হয়। সুকান্ত বলেছিল, 'এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান'।
আমিও ছেড়ে দিলাম স্থান নতুনদের জন্য। এটাই চিরায়ত নিয়ম। আসার পরই তো যাওয়ার প্রহর গোণা শুরু হয়ে যায়।
এইতো সেদিন। ২০১২ সালের শেষের দিকে। আপাদমস্তক নষ্ট হতে যাওয়া আমি কতগুলো হৃদয়বান, খোদার পথে নিবেদিত প্রাণ মানুষের হাত ধরে সরল পথের দিশা খুজেঁ পাই। আলহামদুলিল্লাহ্।
এই পথ যে কতটা কণ্টকাকীর্ণ, তা টের পেতে খুব বেশি সময় ব্যয় করতে হয়নি। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই অগ্নিপরীক্ষায় পড়তে হয়। শুরুতেই জেল, জুলুম। আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া, এমন ভয়ানক পরিস্থিতিতে যেখানে হতাশায় দুমড়ে মুচড়ে যাওয়ার কথা, সেখানে সবর করার তাওফীক তিনি দিয়েছেন।
ইসলামের পথে বিপদ-আপদে পতিত না হলে, সাচ্চা মুনিম হওয়ার অদম্য স্পৃহা খুব একটা জাগ্রত হয়না। আর জাগলেও কঠিন মুছিবতে ইমানের খুলুছিয়াত নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হয়না। তার মানে, আমি বলছিনা, সবাইকে বিপদে পড়তে হবে। তবে আল্লাহ্ যখন বলেছেন, বিপদ-আপদ দিয়ে পরীক্ষা করবেন, তখন সেরকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকা চাই।
এভাবে নানান বিরুপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে কখন যে বিদায় নামক বেদনা দরজায় হাজির, টেরই পাইনি, করাঘাত করতেই নড়েচড়ে বসি। হ্যাঁ, আজ ছিল আমার বিদায়ের দিন। এই বিদায়ে ছোট বড় প্রিয় মুখগুলো আনুষ্ঠানিক ভাবে আর দেখা হবেনা। অনানুষ্ঠানিক ভাবে হয়তো কখনো কখনো দেখা হতেও পারে।
বিদায় বেলায় সবার মত আমিও হিসেব নিকেশ করতে বসি। কি দিয়েছি আমি সংগঠনকে? কিছুই না। আর আমি কি পেয়েছি? এ যে বলে শেষ করা যাবেনা। আমার জীবনের আমূল পরিবর্তনের কারণ এই সংগঠন। আমি নিজেকে কতটুকু পরিবর্তন করেছি সেটা বড় কথা নয়। আমাকে যে পরিবর্তনের একটা রাস্তা ধরিয়ে দিয়েছে, জুগিয়েছে প্রেরণা, এটাই সবচাইতে বড় পাওয়া।
বিদায় ক্ষণে বলেছি, একজন মুসলমান হিসেবে মুসলমানিত্বের নিজস্বতা আমাকে সদা সর্বদা ধরে রাখতে হবে। যখন যেখানে যেকোন অবস্থায়। আমাদের উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। পরীক্ষার সময়ে বিকেল বেলা পরীক্ষার হলে অনেক নামাজী স্টুডেন্ট আছর নামাজ কাজা করে বসে। আমরা দু একজন মিলে জায়নামাজ এনে অনুমতি নিয়ে পরিক্ষার হলেই নামাজ আদায় করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। আলহামদুলিল্লাহ্, পরে আমাদের দেখাদেখি অনেকেই নামাজ পড়েছে।
আমার কাজই হচ্ছে, গড্ডলিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে তার উল্টো পথে চলা। এই শিক্ষাটা সকল ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে হবে। যদি স্বাভাবিক ভাবেই সব করা যায়, আলহামদুলিল্লাহ্। আর যদি বাধা প্রতিবন্ধকতা থাকে, তবে বিচক্ষণতার পরিচয় দেবে। কিন্তু অনুশীলন থেকে কখনোই বিরত থাকা যাবেনা।
কিছুকাল দায়িত্ব পালনকালে আমল আখলাক সব ঠিক চলবে, এখান থেকে বেরিয়ে গেলে আমলে ঢিলেমি চলে আসবে, তাতো হবেনা। যখন যেখানে থাকি, আমার অনুশীলন একইভাবে চালিয়ে যেতে হবে। তবেইতো আল্লাহ্ আমার ত্যাগ তিতিক্ষা কবুল করবেন। নয়তো সবকটাই হবে গাধার খাটুনি।
সদ্যই স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শেষ করে কর্ম জীবনে প্রবেশ করেছি। আলহামদুলিল্লাহ্। যদিও উচ্চতর শিক্ষা অর্জনের ইচ্ছে আছে, কিন্তু এখনকার মত ছাত্রত্ব শেষ। তাই অনিচ্ছা সত্বেও সংগঠন থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। দুইটা সমন্বয় করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
আজকের বিদায় ছিল আনুষ্ঠানিক। একটা নিয়ম রক্ষা মাত্র। আমি ছিলাম, আছি এবং ইনশাআল্লাহ আমৃত্যু থাকব। আমার দেহটাই কেবল যাচ্ছে। আত্মার সাথে আত্মার যে মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়েছে, তা যে কখনোই বিচ্ছিন্ন হওয়ার নয়।
এই যাওয়াই শেষ যাওয়া নয়। আসব ফিরে বারে বারে। আপনাদের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।
বিষয়: বিবিধ
১৬৫২ বার পঠিত, ৩৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর উপলব্ধির জন্য শুকরিয়া।
আমিও তাই বিশ্বাস করি। সন্দেহাতীতভাবে তা আল্লাহর অনুগ্রহ।
আমার জন্য আপনার প্রাণখোলা দোয়া আল্লাহ্ কবুল করুন।
আমারও কথা তাই। প্রয়োগটা হোক জীবনের সকল পর্যায়ের জন্য.
আল্লাহ্ আপনাকেও আল্লাহ্ উত্তম প্রতিদান দিন।
আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।
"পালাবে কোথায় কদীর হতে নাহিক পরিত্রান৷"
দোলনা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত চলতেই থাকে।
আমি চিন্তা ভাবনা পরিষ্কার। শত ব্যাস্ততার মাঝেও আমি জ্ঞান অন্বেষা করেই যাব। ইনশাআল্লাহ।
দোয়া করবেন।
আপনাদের ছেড়ে যাওয়া যে সহজ কথা নয়।
আসলে এক্ষেত্রে 'বিদায়' বলতে কিছু নেই। এতদিন ছিল প্রশিক্ষণের জায়গা আর এখন হবে প্রাকটিস।এই বাস্তব জীবনে এতদিনকার শিক্ষা ও দীক্ষার কে কতটা প্রয়োগ ঘটাতে পারে সেটাই মূখ্য বিষয়।
আল্লাহ তায়ালা আপনিসহ আমাদের সবাইকে আমৃত্যু তার দ্বীনের পথে অবিচল থাকার তাওফীক দান করুক।
-আমীন।
আরও স্মরণ করিয়ে দিবে, আমার প্রশিক্ষণের চর্চা বাস্তব জীবনে করছি কিনা।
আমিন ছুম্মা আমিন
যেখানেই থাকো , যেভাবেই থাকো
মনে রেখো
আমিও আছি তখনো |
সত্যিই ভাই বিদায় বেলায় আপনার এই আবেগপূর্ণ লেখা আমাকে দারুণ ভাবে আলোড়িত করেছে |
এই আলোড়ন আমৃত্যু থাক, এই কামনা থাকল খুব করে।
আপনার জন্যও অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
আমিন
আমিন।
আমার পাড়ায় আপনাকে এই প্রথম দেখছি। অনেক অনেক শুভেচ্ছা নেবেন।
খুব সুন্দর!
ধন্যবাদ।
আপনাদের আশা, কামনা শতভাগ বাস্তবায়নে সদা সচেষ্ট থাকব ইনশাআল্লাহ।
আপনার কমেন্ট অনেক ভালো লেগেছে।
আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ। আল্লাহ আপনাকেও ভাল রাখুন।
যাই হোক নতুন কর্ম জীবনে সুখি হোন, সততা ও নিষ্ঠার সাথে এগিয়ে যান। তবে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ হাতছাড়া না করাই কাম্য।
আগে সবাই ফোন করে আপনার খবর নিতো, এখন আপনাকে সবার খবর নিতে হবে। আগে আপনাকে হাত ভরিয়ে দিতো প্রকাশ্যে গোপনে। এখন আপনাকে দিতে হবে। কারো বাড়িতে এখন খালি হাতে যাওয়া যাবে না।
জীবনের আরো অনেক দিক ছাত্রত্ব হারানোর সাথে সাথে হারিয়েছেন। আগে উষ্ঠা খেলে হাত ধরে উঠানোর লোক খুজে পেতেন, এখন যে আপনাকে অন্যের হাত ধরে উঠাতে হবে।
সো লঙ্গিত রাত্রিনিশিতে যাত্রিরা হুসিয়ার।
আপনার চলার পথ সুগম হোক। আল্লাহ তায়ালা সহায় হোক এটাই চাওয়া। ধন্যবাদ
উচ্চ শিক্ষার জন্য আবু জান্নাত আমাকে হেল্প করবে। উনি আমাকে কানে মুখে কথাতা বলেছেন।
দেই সবাইকে ফোন। আর খালি হাতে যাবনা। ঠিক আছে! জান্নাতকে দেখতে গেলে কি কি নিতে হবে বলেন! সব নিয়া যামু।
যথার্থই বলেছেন, হাত ধরে উঠাবো, নিশ্চয় উঠাব। এমন কিছু করতে চাই, যাতে করে সবার উপকারে আসে।
আমার জন্য আপনার আন্তরিক দোয়া আল্লাহ কবুল করুন। আমিন।
যথার্থ বলেছেন, যে আল্লাহর কথা বলে, তার কথার চেয়ে উত্তম কথা আর নেই।
আপনার ভাললাগা জেনে খুবই খুশি হলাম।
আপনাকেও ধন্যবাদ কুয়েতি ভাই
বুবু, আমি যেন তাই করতে পারি।
আমিন ছুম্মা আমিন
জাযাকাল্লাহু খাইর
যেখানে থাকুন ভাল থাকুন, সহি সালামতে থাকুন প্রিয় ভাইটি আমার।ধন্যবাদ।
আল্লাহ চাহেত দীর্ঘ সময় কর্মজীবন। এর মাঝেই বিয়ে শাদী......
আমার আপনার আন্তরিক দোয়া আল্লাহ্ কবুল করুন। আমিন।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন