মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০ টি পরামর্শ (পর্ব-০৪)
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ৩১ মার্চ, ২০১৬, ০৭:২১:০৫ সন্ধ্যা
পরিবার, বিয়ে, দাম্পত্য সম্পর্ক, সন্তান প্রতিপালন সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার, অন্তত আমার মতো আবিয়াইত্তার জন্য। কিন্তু মানুষের কাছ থেকে ভালো ভালো পরামর্শগুলো সংগ্রহ করে সবার মাঝে বিলিয়ে তো দিতে পারি। তাই মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০ টি পরামর্শ নিয়ে হাজির হলাম। পরামর্শগুলো দিয়েছেন ‘শেখ মুহাম্মদ আল মুনাজি’। আমি ইংরেজি থেকে বঙ্গানুবাদ করেছি মাত্র। তাহলে চলুন দেখে আসি সে পরামর্শগুলো কী।
১৫। ঘরে মন্দ লোকদের প্রবেশে অনুমতি না দেওয়া
মন্দ লোকেরা কূটচাল ও শয়তানী দ্বারা ঘরে অশান্তি সৃষ্টির সুযোগ খোঁজে। যখনই এই ধরণের লোক গৃহে প্রবেশ করে, পরিবারের সদস্যদের মাঝে শুরু হয়ে যায় পারস্পরিক শত্রুতা-রেষারেষি, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দেখা দেয় বিভাজন। আল্লাহ এমন লোকের উপর অভিসম্পাত করেছেন, যারা স্ত্রীকে স্বামীর বিরুদ্ধে এবং স্বামীকে স্ত্রীর বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেয়।
এই ধরণের লোকদের অবশ্যই গৃহে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবেনা, যদিও তারা প্রতিবেশী হয়, এমনকি দেখতে শুনতে বন্ধুসুলভ মনে হলেও।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “স্ত্রীদের উপর তোমাদের অধিকার হল, তোমাদের বিছানায় এমন কাউকে বসতে দিবেনা, যাদের তোমরা অপছন্দ কর। অথবা তোমাদের ঘরে প্রবেশে অনুমতি দিবেনা, যাদের তোমরা পছন্দ করনা”। (তিরমিজি-১১৬৩, সহিহ আল যামী ৭৮৮০)
মুসলিম নারীদের মেজাজ খারাপ করা সমীচীন হবেনা, যদি তাদের স্বামী অথবা পিতা প্রতিবেশী এমন নারীদেরকে ঘরে প্রবেশে বাধা দেয়, যারা সংসারে ফাটল ধরাতে তৎপর। যদি কেউ কোন স্ত্রী এবং তার স্বামীর মাঝে তুলনা করতে চেষ্টা করে, তখন তাদের কথায় কান না দেওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ। নচেৎ স্ত্রীকে স্বামীর নিকট এমনসব আবদার করতে উস্কে দিবে, যা দিতে তার স্বামী সমর্থ নয়।
আর স্ত্রীও যদি লক্ষ করে যে, স্বামীর ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা তাকে বিপথে পরিচালিত করতে উদ্বুদ্ধ করছে, তাহলে তার কর্তব্য, স্বামীকে ঐসব কাজ থেকে বিরত রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাওয়া এবং ইসলামী শরীয়তের আলোকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া।
১৬। সতর্কতার সাথে পরিবারের সদস্যদের তত্ত্বাবধান বা পর্যবেক্ষণ করা
-সন্তানদের বন্ধু বান্ধব কারা, এ সম্পর্কে ধারণা রাখা
-বন্ধুরা কি নতুন মুখ, নাকি আগে থেকেই বন্ধুতা
-সন্তানরা বাহির থেকে ঘরে কি নিয়ে আসে
-সন্তানরা কোথায় যায় এবং কাদের সাথে মিশে
কিছু বাবা-মা জানেইনা, তাদের আদরের সন্তান অশ্লীল ছবি-মুভি দেখায় ব্যস্ত। এমনকি মাদকাসক্তও। কিছু বাবা-মা জানেনা, তাদের মেয়ে সন্তানরা বাজার, কোচিং, ক্লাসে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে অভিসারে যায়, অথবা ধুমপান করে, অথবা খারাপ বন্ধুদের সাথে নোংরা কাজে জড়িয়ে পড়ে। যারা সন্তানদের ব্যাপারে এইরকম উদাসীন থাকে, রোজ হাশরের দিন কঠিন বিপদের মুহুর্তে আল্লাহ্র পাকড়াও থেকে তারা পালাতে পারবেনা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ্ প্রত্যেক দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে অধীনস্থ ব্যক্তিদের প্রতি অর্পিত দায়িত্ব পালন সম্পর্কে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। সে ব্যক্তি দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছে নাকি দায়িত্বে অবহেলা করেছে। তিনি মানুষকে তার পরিবার-পরিজন সম্পর্কেও জিজ্ঞাসাবাদ করবেন”। (নাসাঈ ২৯২, সহীহ আল যামী ১৭৭৫)।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট:
১-এই তত্ত্বাবধান অবশ্যই বুদ্ধিমত্তার সাথে হতে হবে।
২-ঘরের পরিবেশকে ভীতিকর, গুরুগম্ভীর করে রাখা যাবেনা।
৩-সন্তানেরা যেন এটা উপলব্দি করতে না পারে যে, তাদের অবিশ্বাস করা হচ্ছে।
৪-বয়স, বুঝ শক্তির পরিপক্কতা, মন্দ আচরণের মাত্রা অনুযায়ী উপদেশ অথবা শাস্তি প্রদান করতে হবে।
৫-নেতিবাচক উপায় বা পদ্ধতিতে সন্তানদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা যাবেনা, কেননা এতে তাদের মনে হতে পারে, তাদের নজরদারী করা হচ্ছে।
একজন বাবা ফেরেশতা নয় যে, সন্তানের কাজগুলো বসে বসে নোট করবে অথবা রেকর্ড করবে। বরং বাবার প্রয়োজন, সন্তান প্রতিপালনে ইসলামী নীতিমালাগুলো উত্তমরূপে জেনে নেওয়া।
অনেক বাবা আছেন, যারা বলে থাকেন, “আমাদের ছেলেমেয়েরা যৌবনাবস্থায় তাদের মর্জিমত জীবনটাকে উপভোগ করবে, আমরা কেন তাতে বাধা দেব”। অথচ এই বাবারা এ কথা চিন্তা করেনা, শেষ বিচারের দিন তাদের সন্তানরা পিতার জামা টেনে ধরে বলবে, “হে আমার পিতা, কেন তুমি আমাকে পাপ কাজে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলে”?
১৭। গৃহে সন্তানদের প্রতি মনোযোগী হওয়া
বাবা-মায়েরা ঘরে সন্তানদের কুরআন মুখস্ত, অধ্যয়ন এবং ইসলামিক গল্পগুলো শিক্ষাদান করবে।
এর চেয়ে সুন্দর আর কি হতে পারে, পিতা-মাতা এবং সন্তানরা একসাথে কুরআন মুখস্ত-অধ্যয়ন করবে, উৎসাহব্যঞ্জক মন্তব্য করবে এবং ছোট ছোট পুরষ্কারের ব্যবস্থা করবে।
বাবা-মা সন্তানকে ইসলামী আকিদাগুলো শিক্ষাদান করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ্র আদেশগুলো মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ কর, এবং তিনি তোমাদের হেফাজত করবেন”। শিক্ষা দিতে পারেন, উত্তম আচরণ এবং চলন-বলন সংক্রান্ত নিয়ম-কানন। যেমন: খাওয়া, ঘুমানো, হাঁচি দেওয়া, শুভেচ্ছা বিনিময়, ঘরে প্রবেশের অনুমতি ইত্যাদি।
সন্তানদের ইসলামিক গল্প শোনানোর মত কার্যকর কিছু আর নেই। যেমন: নুহ (আ.) এর সময়ে মহাপ্লাবন, ইবরাহীমকে (আ.) আগুনের কুণ্ডলী থেকে আল্লাহ্ কর্তৃক রক্ষা, মুসাকে (আ.) ফেরাউন থেকে বাঁচিয়ে ফেরাউনসহ তার দববলকে সাগরে ডুবিয়ে মারা, মাছের পেটেও ইউনুস (আ.) নিরাপদ থাকা, কূপে ইউছুপ এর নিরাপদ থাকা, সর্বোপরি মুহাম্মদ এবং সাহাবাদের জীবন কাহিনী শোনাতে হবে।
-সন্তানের খেলাধুলা যেন বিনোদন এবং উদ্দেশ্যপূর্ণ হয়, সেদিকে বাবা-মাকে খেয়াল রাখতে হবে। এমন পুতুল দিয়ে খেলতে দেয়া যাবেনা, যা শরীয়তের বিরুদ্ধে যায়। যেমন: মিউজিক্যাল উপাদান আছে এমন খেলনা।
-কম্পিউটারে গেমস খেলা নিয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। যেসব গেমে নারী অথবা স্বল্প বসনা নারীদের ছবি বারবার স্ক্রিনে ভাসে, তা কম্পিউটার থেকে ডিলিট করে দিবে।
-ছেলে এবং মেয়ে সন্তানদের জন্য বয়সানুপাতে পৃথক পৃথক বিছানা এবং ঘুমানোর ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
-বাবা-মায়েরা মাঝে মাঝে সন্তানদের সাথে দুষ্টমি করবে,
দেখাবে স্নেহ-মমতা। আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিশুদের সাথে খেলতেন এবং বুলিয়ে দিতেন তাদের মাথায় স্নেহের পরশ। ছোট বাচ্চাদের সাথে কথা বলতেন মার্জিত ভাষায়, ফল-ফ্রুট দিতেন এবং মাঝে মাঝে বাচ্চাদের পিঠেও চড়াতেন।
চলবে......
আগের পর্বগুলো-
মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০ টি পরামর্শ (পর্ব-০১)
মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০ টি পরামর্শ (পর্ব-০২)
মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০ টি পরামর্শ (পর্ব-০৩)
বিষয়: বিবিধ
১৯৬৬ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যদি একেবারেই না পাওয়া যায়, তাহলে যেগুলোতে শুধু বাজনা বাজে, গান থাকেনা, সেগুলো নেওয়া যেতে পারে।
এখন অনেক ইসলামিক কার্টুন হয়েছে, হচ্ছে, যা বাচ্চাদের দেখানো যেতে পারে।
আল্লাহ্ আমাদের চেষ্টার জায়গাটা দেখবেন। এ কঠিন অবস্থাতেও আমাদের খারাপ পরিহার করে ভালটা গ্রহণ করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
আপনাকেও ধন্যবাদ শেখ ভাই
আমি দেখেছি শহুরে বাচ্চারা স্কুল আর হাউজ টিউটরের কাছ পড়ার সময়টা বাদে বাকি সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা কিভাবে টিভির সামনে বসে থাকে। তাও যদি কার্টুন দেখতো মনটাকে বুঝাতে পারতাম, কিন্তু হিন্দী গান সিরিয়াল এইসব নিয়েই পড়ে থাকে, গার্ডিয়ানদেরও এই ব্যাপারে কোন মাথা ব্যথা নেই।
আপনি যথার্থই বলেছেন, এইসব অনুষ্ঠান শিশুদের উপর দীর্ঘ মেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
ইনশা আল্লাহ্।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ নেবেন।
আমার পাড়ায় আপনাকে স্বাগতম।
কিন্তু খুবই গুরুত্ব রাখে,
তবে যাদের এই লিখাগুলো পড়া বেশি দরকার, তারা এগুলো এড়িয়ে যায়
আর এই কঠিন কাজটি সম্পন্ন করেই আল্লাহর প্রতিশ্রুত জান্নাতে যেতে হবে।
ঠিক বলেছেন। তারা জানতে পারলে ভালোই হত। তবে যারা জানে তারাও অনুশীলনের অভাবে নাজানাদের মতই কাজ করে। তাই ভিতরে নাড়া দিতে এই বিষয়গুলো কিছুটা হলে কাজে দেয়
০ তাহলে তো ভাই বিয়েই করা যাবে না ।
১৬. সতর্কতার সাথে পরিবারের সদস্যদের তত্ত্বাবধান বা পর্যবেক্ষণ করা
০ তাহলে তো চাকরি/ব্যবসা ফেলে দিয়ে সন্তানের পিছে পিছেই লেগে থাকতে হবে । সংসার চালানোর টাকা আসবে কোথ্থেকে ?
১৭. সন্তানদের প্রতি মনোযোগী[/q] হওয়া
০ সন্তানের বাবা বাইরেরটাও দেখবে আর ঘরেটাও দেখবে , মায়ের কাজ তাহলে কোনটা ?
যতটুকু পারা যায়, আল্লাহ আমাদের চেষ্টা দেখবেন।
মাথা নষ্ট ম্যান!!!! অফিস থেকে বাসায় আসার পর যেটুকু সময় হাতে থাকবে, সেটুকুই ওদের পেছনে ব্যয় করেন না! ঘরে এসেও যদি কাজ কাজ কাজ নিয়ে পড়ে থাকেন, তাহলে যখন সন্তানরা বাবার গাইডেন্স না পেয়ে গোল্লায় যাবে, তখন বুঝি ভাল লাগবে।
আর আপনি যখন থাকবেন না, তখন বিবি করবে।
মাও যদি চাকুরীজীবি হয়, তাহলে মায়ের দায়িত্বতা বেড়ে যাবে, এখন কোন মা যদি নিজের দায়িত্বকে নিজেই বাড়িয়ে নিতে চান, তবে আমার আপনার কি বা করার আছে।
এখন শরিয়তের বিধান পালন না করে বা আলগা করে যদি অন্যের চাকরানীগিরি করে - সেটাকে কিভাবে অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব বলবেন ? এটা কি শরিয়তের দ্বায়িত্বকে এড়ানোর অজুহাত নয় ?
আমি আগেও বলেছি, এখনও বলি, চাকুরীর নাম করে এখন মেয়েরা যে হারে ঘর থেকে বের হচ্ছে, তার অযাচিত ফলাফল দেখে আমি খুবই মর্মাহত। কিন্তু কি করার আছে!
বিয়ের পর উপদেশ দেব, যদি এই আশাতেই বসে থাকি, তাহলে বিয়ে করতে না পারলে আফসোস থেকে যাবেনা!
মন্তব্য করতে লগইন করুন