যে কথাগুলো ঠোঁটে এলেও গিলে ফেলবেন
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ২২ মার্চ, ২০১৬, ০৯:৪২:৩৯ রাত
কারো সাথে ক্যাচাল বাজলেই আমরা কথায় কথায় উক্ত ব্যক্তিকে এমনসব তীর্যক বাক্যবাণে বিদ্ধ করি, তাতে করে যা হয়, কি হয়? মধুর সম্পর্কটা গরলে রূপ নেয়। আমি কথাটি স্বাভাবিক ভাবেই বলেছি, কিন্তু যাকে বলেছি, সে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পেরেছি কি? তাইতো, এটাতো কখনো ভাবিনি! হুম, আপনি ভাবছেন না, আর ওদিকে আপনার কথায় কষ্ট পেয়ে মানুষটি মনে-মনে, বনে-বনে, সঙ্গোপনে কেঁদে বেড়াচ্ছে। “আমি স্বপ্নেও ভাবিনি, এমন একটা জঘন্য কথা সে আমাকে বলবে”! কি সেই কথাগুলো? আসুন এবং মিলিয়ে নিন আপনার মুখ নি:সৃত বাণীর সাথে।
শূকরের গলায় মণি-মুক্তো পরিয়ে লাভ নাই:
লাভ হলে শুকুরের গলে মালা পরাবেন, আর ক্ষতি হলে পরাবেন না, তাতে কারো কিছু যায় আসেনা। কিন্তু জ্বলজ্যান্ত একটা মানুষকে যখন শূকর বানিয়ে ফেলবেন, তখন অনেক কিছুই যায় আসে।
হ্যাঁ ভাইসব। আপনি অধিনস্ত কাউকে একটা দামি জিনিস উপহার দিলেন, আর সে এটার যথাযথ ব্যবহার করতে পারে নাই। তাই আপনি কটাক্ষ করে বললেন, ‘শূকরের গলায় মণি-মুক্তা পরিয়ে যেমন লাভ নাই, তোকেও জিনিসটা দিয়ে লাভ হলোনা’।
“কি, এতো বড় কথা! আমি শূকর! একটা ত্যানার জন্য আমাকে শূকর বলল”! বাস, বৈরিতার শুরু এখান থেকেই।
পাগলের মত বক বক করবি নাতো:
একজনের সাথে আপনার কথা কাটাকাটি চলছে। তার কথায় কোন লজিকই খুঁজে পাচ্ছেন না। আপনার মনে হচ্ছে সবই পাগলের প্রলাপ। তাই বলে দিলেন, ‘কি সব পাগলের মত বক বক করছিস! তোর কথা হয়না। সবই পাগলের প্রলাপ’।
“কি, তুই আমাকে পাগল বলেছিস! আমি পাগল, আমি পাগলের মত কথা বলি! তুই ভালো? যা যা যা, আমি পাগল, আর তোরা সবাই শুদ্ধি”!
আপনি তাকে পাগলের মত বলছেন, পাগল বলেননি, কিন্তু সে ভালো করেই কথাটা গায়ে মেখেছে। বাস, মনোমালিন্য এখান থেকেই শুরু।
পাগলে কি না বলে, ছাগলে কি না খায়:
একজন মানুষকে শুধু পাগলই বানালেন না, ছাগলও বানিয়ে দিলেন! বললাম তো, আপনি সরল মনেই কথাটা বলেছেন, কিন্তু যাকে বলেছেন, সেতো সরল ভাবে নিতে পারে নাই, নিয়েছে একটু বাঁকা করেই।
যেমন কুকুর তেমন মুগুর:
এইবার বানালেন কুকুর! সাথেও মুগুরও!
কুত্তার পেটে ঘিও হজম হয়না:
কুকুরের পেটে ঘি হজম হয় কি হয়না, তা নিয়ে গবেষণা সেল খুলে বসতে পারেন, কিন্তু মানুষকে কেন্দ্র করে এমন কথা বলা কি ঠিক ভাই আমার?
বেঁটে মানুষের প্যাঁচ বেশি:
ধরুন, একজন বেঁটে মানুষের কাছে অন্য কোন বেঁটে মানুষ সম্পর্কে বিষোদগার করছেন, যার কূটনামি দ্বারা আপনি বিপর্যস্ত হয়েছেন, “জীবনে যত বেঁটে মানুষ দেখলাম, সব ক’টার ভিতরে জিলাপির মত প্যাঁচ, কূটনামিতে ভরা! দোস্ত, তুই আবার মনে করিস না তোকে বলছি। আমার দেখা বেঁটে মানুষদের মধ্যে তুই আলাদা”। কথাটা যেভাবেই বলেন, গায়ে কিন্তু একটু লাগবেই!
আরো কিছু কথা, যে বুঝে সে সহজ ভাবেই নেবে, কিন্তু যে বুঝেনা, তাকে বলা মাত্রই হয়তো ঝগড়া জুড়ে দেবে, অথবা ভিতরে জেগে ওঠা ক্ষোভকে ফুলিয়ে ফুলিয়ে তালগাছ বানাবে। কে বুঝে, আর কে বুঝেনা, তাও বুঝা কি সহজ? কথাগুলো বলার পরই বুঝ আর বেবুঝের স্বরূপ সুন্দরভাবেই ফুটে ওঠে।
এরকম আরও কিছু কথা:
‘তুই একটা গাধা’
‘তুই একটা বলদ’
‘আবালের মত কথা বলিস নাতো’
‘তোর কি মাথা খারাপ হয়েছে?’
‘ধুর মিয়া, আপনি কিছুই জানেন না’
‘যা বুঝেন না, তা নিয়ে কথা বলতে আসবেন নাতো’
‘কিরে মাইয়্যা মানুষের মত হাঁটিস কেন’
‘বিড়ালের মত মেউ মেউ করস ক্যান’
‘তুইতো পুরাই বেক্কল দেখতেছি’।
আরো আরো আরো অনেক আছে, মনে নাই। আমরা যারা এইসব বলি, তারা আজ থেকে আর বলবোনা, কেমন!
তাহলে কি এইসব কথা একেবারেই বলা যাবেনা? অথচ এই কথাগুলো বলতে পারলে খুব শান্তি লাগে। গর্ব হয়। আহ, আজকে মজা দিছি ভালো করে। জনমের শিক্ষা হয়েছে। গাধা খচ্চরের সাথে তুলনা করে বকেছি!
না না না। আপনারা বইলেন। কোন অসুবিধা নাই। আসলেই মানুষের এমন কাজ আছে, যা পশু-পাখির কাজকেও লজ্জা দেয়। তখন এইসব কথাগুলো বলতে না চাইলেও প্রসঙ্গক্রমে এসে যায়। তাহলে কোথায় বলবেন? বলছি দাঁড়ান।
নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে ইঙ্গিত বা উদ্দেশ্য করে, যদিও লোকটি উক্ত কথাটি শোনার যোগ্য, তবুও সরাসরি না বলি। কথাটা বলতে হবে এমনভাবে, যেন সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে, অর্থাৎ জেনারেলি বলতে হবে। তাহলে ব্যক্তি সরাসরি গায়ে মাখবেনা। সম্পর্কগুলোও ভালো থাকবে। কি, সম্পর্ক ভালো থাকলে ভূতে কিলায়? তাহলে আর আমি কি বলবো।
বিষয়: বিবিধ
১২৬০ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আচ্ছাঃ সবতো বুঝলাম কিন্তু এই কথাটি বুঝলাম না।
সুন্দর পোষ্টটির জন্য শুকরিয়া।
হাতুড়ি যেভাবে চালাইতেছেন, ব্যথার পরিবর্তে আমার আরাম লাগবে বলেই মনে হচ্ছে। চালান বেশি করে চালান। অনেক দিন হয় কেউ মাথাটা টিপে দেয়না। আহ, কি আরাম!
'কিরে মাইয়্যা মানুষের মত হাঁটিস ক্যান?'
মত লিখতে ভুলে গেছি গো।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জান্নাতের বাপ।
এতো লজ্জা কেনে তোমার?
পরামর্শগুলো ভালো, সবার মেনে চলার চেষ্টা কর উচিত।
ভালো কথা কে আল্লাহ উঁচু,মজবুত,শক্ত গাছের তুলনা করেছেন। যার দৃঢ়তা আর শিকড়ের গভীরতা অনেক, যা মানুষের মনে স্বস্থি আনে এবং মানুষ ভালো ও বাসে। সুতরাং ভালো কথার চর্চা করা উচিত।
শুকরিয়া!
আপনার মন্তব্যই যেন এক একটা পোস্ট। আলহামদুলিল্লাহ্।
আপনি যথার্থই বলেছেন। ভালো কথা বলার চর্চা করাটা সবারই উচিৎ।
আল্লাহ আপনাকে সবসময় ভালো রাখুন।
আমি মানিনা কে বলেছে, ওই পাজির পাজি, কামের বেলায় ফাঁকি!
না বুঝিনাই! আপনি বুঝাতে পারেন নাই! এটা আপনার চরম ব্যর্থতা!
অসুন্দর কথা যা মানুষের কষ্টের উদ্রেক করে তা পরিহার করা এবং মানুষের জন্য স্বস্তি, শান্তিদায়ক সুন্দর কথা বলাকে ইসলামে অনেক গুরুত্ব সহকারে তার অপরিহার্জতা বর্ণনা করা হয়েছে। বিভিন্নভাবে করে হয়েছে উৎসাহিত।
এমনকি দানের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, কাউকে দান করে কোন খোঁটা দিয়ে দানের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়ো না।
সুতরাং...... জিহ্বা ও ঠোঁটের কারণে আমরা যেন ভালো কাজের নেক আমল থেকে মাহরুম না হই।
গুরুত্বপূর্ণ লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্যের কথাগুলো খুবই সুন্দর। এই ক'টা কথা মনে রাখতে পারলে সুন্দর বৈ অসুন্দর কথা মুখ দিয়ে বের হবেনা। তাছাড়া উত্তম মানুষের সাথে চললে সুন্দর কথা বলার প্র্যাকটিস হয়ে যায়।
আমিন ছুম্মা আমিন
আপনাকেও আল্লাহ উত্তম প্রতিদানে ধন্য ধন্য করুন
আপনাকে ধন্যবাদ ভাই. আল্লাহ্ আপনাকে ভালো রাখুক
পরামর্শগুলো ভালো, সবার মেনে চলার চেষ্টা কর উচিত।
ভালো কথা কে আল্লাহ উঁচু,মজবুত,শক্ত গাছের তুলনা করেছেন। যার দৃঢ়তা আর শিকড়ের গভীরতা অনেক, যা মানুষের মনে স্বস্থি আনে এবং মানুষ ভালো ও বাসে। সুতরাং ভালো কথার চর্চা করা উচিত।
শুকরিয়া!
সবাইকে ভালো হবার উপদেশ দিয়ে,
নিজে একা খালি মাঠে গোল দিবার মতলব, না??
বাই দা ওভার ব্রিজ
আসসালামু আলাইকুম
দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভেটকি মার্কা হাসি হাসিতেছেন আর এই ফাকে আমিও দিয়ে দেই গোল!
বাই দি ফ্লাইওভার
ওয়ালাইকুম আসসালাম।
আমি ভুল ধরি বলেই কি পালিয়ে ছিলেন? আচ্ছা, আর ধরবনা। তবুও আইসেন
তবে রাগ উঠলে আর এগুলা মনে থাকে না।
সামলানো কঠিন, তবুও যে সামলাতে হবে
মন্তব্য করতে লগইন করুন