মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০ টি পরামর্শ (পর্ব-০৩)
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ১৫ মার্চ, ২০১৬, ০৬:৫৩:২৪ সন্ধ্যা
পরিবার, বিয়ে, দাম্পত্য সম্পর্ক, সন্তান প্রতিপালন সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার, অন্তত আমার মতো আবিয়াইত্তার জন্য। কিন্তু মানুষের কাছ থেকে ভালো ভালো পরামর্শগুলো সংগ্রহ করে সবার মাঝে বিলিয়ে তো দিতে পারি। তাই মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০ টি পরামর্শ নিয়ে হাজির হলাম। পরামর্শগুলো দিয়েছেন ‘শেখ মুহাম্মদ আল মুনাজি’। আমি ইংরেজি থেকে বঙ্গানুবাদ করেছি মাত্র। তাহলে চলুন দেখে আসি সে পরামর্শগুলো কী।
মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০ টি পরামর্শ (পর্ব-০১)
মুসলিম পরিবারের জন্য ৪০ টি পরামর্শ (পর্ব-০২)
১১। মুত্তাকী এবং জ্ঞানান্বেষী ব্যক্তিদের গৃহে আমন্ত্রণ জানানো
আল্লাহ্ তায়ালা বলেন: “আমার প্রভূ! আমাকে এবং আমার পিতা-মাতাকে ক্ষমা করুন। যে মুমিন আমার ঘরে প্রবেশ তাকে এবং সকল মুমিন নারী ও পুরুষদেরকেও ক্ষমা করুন”। (কুরআন ৭১: ২৮)
ঘরে আমন্ত্রিত মুমিন ব্যক্তির সাথে কথোপকথন এবং আলোচনা অনেক কল্যাণ বয়ে আনে। কস্তুরি বিক্রেতা হয় তোমাকে কিছু দেবে, অথবা তুমি তার থেকে ক্রয় করবে, অথবা যদি ক্রয় নাও করো, তার সংস্পর্শে গেলেই তুমি গন্ধ পাবে। শিশুরা এবং বড়রা যখন তাদের সাথে বসবে, এবং মহিলারা পর্দার অন্তরাল থেকে তাদের শুনবে, এতে তাদের জ্ঞান অর্জন এবং অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হবে।
১২। ঘর সম্পর্কিত ইসলামী নিয়ম কানুন শেখানো
ঘরে নামাজ আদায়:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নির্ধারিত নামাজ (ফরজ) বাদে ঘরে পড়া নামাজই সবচেয়ে উত্তম নামাজ”। (বুখারী, আল ফাতহ ৭৩১)
উল্লেখ্য যে, বিধিসম্মত কারণ ছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ মসজিদে জামাতের সাথেই পড়তে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “একজন মানুষের নফল, সুন্নত নামাজগুলো বাইরে আদায় করার চেয়ে ঘরে আদায় করাই উত্তম। তবে ফরজ নামাজগুলো একাকী আদায় করার চেয়ে সবার সাথে জামাতবদ্ধ হয়ে আদায় করা উত্তম”। (ইবনে আবু সুহাইব, সহিহ আল যামী, ২৯৫৩)
আর মহিলাদের জন্য ঘরের নির্জন কোণে নামাজ আদায় অধিক উত্তম। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ঘরের নিভৃত কোণে নামাজ আদায় মহিলাদের জন্য অধিক উত্তম”। (আত তারাবী, সহিহ আল যামী, ৩৩১১)
কক্ষে প্রবেশে অনুমতি চাওয়া:
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্যের গৃহে প্রবেশ কোরো না যতক্ষণ না গৃহবাসীদের সম্মতি লাভ করো এবং তাদের সালাম করো। এটিই তোমাদের জন্য ভালো পদ্ধতি, আশা করা যায় তোমরা এটাকে স্মরণ রাখবে। যদি তোমরা গৃহে কাউকে না পাও, তবু অনুমতি গ্রহণ না করা পর্যন্ত সেখানে প্রবেশ করো না। যদি তোমাদেরকে বলা হয়--ফিরে যাও, তবে ফিরে যাবে। এতে তোমাদের জন্য অনেক পবিত্রতা রয়েছে। তোমরা যা কর আল্লাহ তা‘আলা তা ভালোভাবে জানেন।(কুরআন ২৪:২৭-২৮)
আল্লাহ্ তায়ালা আরো বলেন: ...... সুতরাং সামনের দরজা দিয়ে তাদের ঘরে প্রবেশ করবে”। (কুরআন ২:১৮৯)
যে ঘরে সাধারণত বসবাস করা হয়না, যেমন গেস্টরুম, তাতে অনুমতি ছাড়াই প্রবেশ করা যেতে পারে। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন: “তোমার জন্য দোষনীয় নয় এমন ঘরে প্রবেশ করা (অনুমতি ছাড়া) যাতে কেউ বসবাস করেনা। এবং আল্লাহ্ তোমার প্রকাশ্য এবং গোপনীয় সবকিছুর খবর রাখেন”। (কুরাআন ২৪:২৯)
তিন সময়ে শিশু এবং কাজের লোকেরা যেন অনুমতি ছাড়া হুড়মুড় করে বাবা-মায়ের শোয়ার ঘরে ঢুকে না পড়ে, পাছে তাদের নিকট সতর প্রকাশ হয়ে পড়ে। যদি দুর্ঘটনাবশত অন্য সময় তারা কিছু দেখে ফেলে, তবে তা ক্ষমার যোগ্য।
আল্লাহ্ তায়ালা বলেন: “হে বিশ্বাসীগণ, তোমাদের বৈধ দাস-দাসী এবং এখনো যারা বয়স:সন্ধিকালে পৌঁছায়নি, এমন শিশুদের বল, তারা যেনো তিন সময়ে তোমাদের কক্ষে প্রবেশের পূর্বে অনুমতি নেয়: ফজরের পূর্বে, দুপুরে যখন জামা কাপড় ছেড়ে বিশ্রাম নেয়া হয় এবং এশার নামাজের পর। এই তিন সময় হল, তোমাদের জন্য গোপনীয়তা। এছাড়া অন্য সময় একে অপরের নিকট যাতায়াতে দোষ নেই......... (কুরআন ২৪:৫৭)
অনুমতি ছাড়া কারো ঘরের ভেতরে তাকানো নিষেধ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, অনুমতি ছাড়া কেউ যদি অন্যের ঘরের ভেতরে তাকায়, তার চোখ ছিদ্র করে দাও। এবং এক্ষেত্রে বদলা দিতে হবেনা”। (মুসনাদে আহমদ, ২/৩৮৫, সহিহ আল যামী ৬০৪৬)
এমন ছাদের উপর ঘুমানো নিষেধ, যার চারিপাশে বেস্টনি নেই। যাতে পড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “কেউ যদি এমন ছাদে ঘুমায় যাতে বেস্টনি নেই, তাহলে সে ব্যক্তি ছাদ থেকে পড়ে গেলে এর দায় দায়িত্ব তারই”। (আবু দাউদ, আবু সুনান, ৫০৪১; সহিহ যামী, ৬১১৩)
১৩। পারিবারিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা বা মিটিং করা
আল্লাহ্ বলেন: “...... যে সমাধা করে তাদের (পারিবারিক) বিষয়গুলো পরামর্শের ভিত্তিতে”। (কুরআন ৪২:৩৮)
পরিবারের সদস্যরা একত্রে বসে পারিবারিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করলে তাদের মধ্যকার বন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে, পরস্পরের মধ্যে পরস্পরকে সহযোগিতার মনোভাব তৈরি এবং বোঝাপড়াটা ভালো হবে। মতামত প্রদান করার ক্ষেত্রে ছোট বড় সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে।
পিতা-মাতা এবং সন্তানের মাঝে খোলামেলা আলোচনা হওয়া জরুরী। বয়:সন্ধিকালীন সমস্যাগুলো নিয়ে ছেলের সাথে বাবা শান্তভাবে আলোচনা করবে এবং এব্যাপারে ইসলামের নিয়ম কানুনগুলো তুলে ধরবে। অন্যদিকে, মা মেয়ের সাথে কথা বলবে, প্রয়োজনীয় বিধিনিষেধগুলো তাকে জানাবে, এবং এ বয়সে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে, তাতে সহযোগিতার হাত বাঁড়িয়ে দেবে।
উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েদের সাথে বাবা-মায়ের এমন খোলামেলা আলোচনা না হওয়ার কারণে সন্তানেরা বাধ্য হয় খারাপ বন্ধুদের সাথে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে, যার ফলে শয়তানের পথে পরিচালিত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
১৪। সন্তানের সামনে ঝগড়া বিবাদ না করা
একই ছাদের নিচে একত্রে বসবাস করবে, আর নিজেদের মাঝে ঝগড়া হবে, এটা খুব বিরল। কিন্তু যতদ্রুত সম্ভব মিটমাট করে নেয়া উত্তম। আর ঝগড়া যদি পরিবারের সদস্যদের মাঝে ছড়ীয়ে পড়ে, তখন পরিবারের কাঠামো, শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়ে। আর শিশুদের মানসিক সমস্যা হয়ই।
চিন্তা করে দেখুন সে পরিবারের কথা, যেখানে বাবা সন্তানকে বলে, তোমার মায়ের সাথে কথা বলবেনা! মাও সন্তানকে বলে, তোমার বাবার সাথে কথা বলবেনা! সে অবস্থায় সন্তানের অবস্থা কি হতে পারে? নিশ্চয় সে মহা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যাবে এবং পরিবারটিতে তৈরি হবে একটি শত্রু ভাবাপন্ন পরিবেশের।
আমাদের উচিৎ ঝগড়া বিবাদ এড়িয়ে চলা। কিন্তু কখনো যদি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে হয়েই যায়, তাহলে প্রকাশ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ সন্তানরা জানার আগেই মিটমাট করে ফেলতে হবে।
চলবে......
বিষয়: বিবিধ
১৩৮৮ বার পঠিত, ৩১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ জনাব।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ জনাব। আর হ্যাঁ, প্রথম মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা নেবেন।
এখনো আনলাকি হয়ে আছে
আলোচনা হয় ঠিক ই কিন্তু সেই অনুযায়ী
পালন করা হয় না ..
খালি সবাই বাইরের কথা শুনে
তয় ঠিক কতাই কইছেন, আঁর বাপ মায়ে আরে কিছু কয়ন, আই নিজেও হেরাত্তুন জাইনতে চাইন, এরহরে আঁর লেয়ায় আঁই যা কইছি, আঁর বেলায় হেইডাই অইছে।
তই যাইয়া, আঁই অধম অইছি দেইক্কা, আন্নেরে কি উত্তম কইত্তান্ননি!
অবশ্যই কইরাম। এর লাইগগাই এট্টু গলাবাজি কইত্তেছি আর কি।
আল্লাহ্ আমাদের এইসব বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার তাওফীক দিন। আমিন।
আপনাকেও ধন্যবাদ
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ পনা
চমৎকার বিষয় নির্বাচন ও লিখনীর মাধ্যমে সকলকেই সচেতন করার প্রচেষ্টা অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী মাশাআল্লাহ।
গুরুত্বপূর্ণ লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
লেখা যেমনি হক, মূল্যায়ন যদি উৎসাহব্যঞ্জক হয়, তাহলে পরবর্তী লেখাগুলো ভালো করার জন্য দায়িত্ব সচেতনতা বেড়ে যায়।
আল্লাহ্ আপনাকেও উত্তম প্রতিদানে ধন্য করুন।
আর যোহর , মাগরিব ও 'এশার যে সব সুন্নত নামাজ আছে সেসব মাসজিদ থেকে ফরজ নামাজ আদায় করে বাসায় এসে পরে আদায় করব?
একেবারে মাসজিদে গিয়ে ফরজ সুন্নত পড়ে আসাতে কি কোন সমস্যা আছে ?
বরং একই ওয়াক্তের নামাজ কিছু মাসজিদে আর কিছু বাসায় পড়লে একটা হারমনি নষ্ট হয় না ? বিশেষ করে 'এশার এর ফরজ নামাজের পর সুন্নত ও বিতরের নামাজ বাসায় এসে পড়ার মাঝে গ্যাপ হয়ে গেলে আলসেমী চলে আসা খুবই স্বাভাবিক ।
বরং সুন্নত ও বিতরের নামাজ মাসজিদে পড়ে আসাই সঠিক মনে হয় , কারণ শয়তান তো ওয়াসওয়াসা দিতে ক্লান্ত হয় না কখনই।
তীর চিন্হিত স্থানে মনে নয় ''না'' বসার কথা ।
ঝগড়া করবে কেন ? স্ত্রীকে তো স্বামীর অনুগত হয়ে থাকার কথা বলা আছে ?
অফিসে বসের (Head of the Department) সাথে কি সে ঝগড়া করে ?
না, মসজিদ থেকেই একেবারে সুন্নত, নফল, ফরজ সব পড়ে আসাতে কোন সমস্যা নাই।
আমার লেখাতে আমি উল্লেখ করেছি যে, ঘরে সুন্নত নফল নামাজগুলো পড়া উত্তম, বলিনি বাধ্যতামূলক। কেন পড়া উত্তম, তার কারণ হল, এর মাধ্যমে ঘরেও ইবাদতের পরিবেশ তৈরি হয়।
উত্তম কাজ আদায় করতে গিয়ে ফরজ মিস করা কোনোভাবেই ঠিক হবেনা। জামায়াত শুরু হওয়ার যদি অনেক সময় বাকি থাকে যাতে ঘরে সুন্নত পড়ে মসজিদে যেতে পারেন, তাহলে ঘরেই পড়বে, আর ফরজ শেষে আপনি ঘরে এসেই সুন্নত পড়তে পারেন যদি মসজিদ থেকে ঘর কাছে হয়।
জী, তীরযুক্ত স্থানে না হবে।, ধরিয়ে দেয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
মানুষের মাঝে ঝগড়া করার প্রবণতা রয়েছে বলেই অনুগত থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যেখানে অলরেডি শান্তি বিরাজমান, সেখানে আদৌ দরকার আছে কি শান্তি আইনের?
বসের সাথে কেবল কাজের সমপর্ক। সেখানে বেশি বাড়াবাড়ি করলে চাকুরী চলে যাবে। অন্যদিকে বরের সাথে স্ত্রীর সম্পর্কটা ভালোবাসার, যেখানে ভালোবাসা, মান অভিমান, ঝগড়া ঝাটি ইত্যাদির সংমিশ্রণ থাকে, তাই বরের সাথে ঝগড়া করলেও বসের সাথে করেনা।
আর হ্যাঁ, বসের সাথে বরের মত ভালোবাসার সম্পর্ক অর্থাৎ পরকীয়া বা হাসি ঠাট্টার সম্পর্ক থাকে, তাহলে সেখানে অবশ্যই ঝগগড়া থাকবে, হয় সবাইকে দেখিয়ে করবে নয়তো গোপনে গোপনে।
ধন্যবাদ হতচ্ছাড়া
আপনি সারাজীবজন ধরে কুয়েত থেকেই বলে যাবেন? আচ্ছা, যেখান থেকেই বলেন, আসল কথা হলো, বলছেন, তাতেই আমরা ধন্য
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ভাগিনার পাড়ায় এসে ভালোলাগার কথাটুকু ব্যক্ত করার জন্য।
ওরাও করবে আমরাও করব, পার্থক্যটা হবে শালিনতার।
মাশা আল্লাহ! জাযাকাল্লাহ! প্রতিটি পয়েন্ট অত্যন্ত কার্যকর আদর্শ ইসলামী গৃহায়ণের জন্য!
শুকরিয়া!
যথার্থই উপলব্ধি করেছেন।
মোবাইল থেকে মন্তব্যের জবাব দেয়া খুব সময় সাপেক্ষ ব্যাপার, তাই লেইট হয়ে যায়।
জাযাকাল্লাহু খাইরান
আপনাদের ম্যাগাজিনে এই ধারাবাহিক যদি প্রয়োজন মনে করেন কখনো, ছাপিয়ে দিতে পারেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন