ব্লগীয় হালচাল : অনিয়মিত এবং হারিয়ে যাওয়া ব্লগারদের খোঁজে.... (পর্ব-০৩)
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ০৭ মার্চ, ২০১৬, ১১:৫৮:১৮ সকাল
আপনি হয়তো নিজেও জানেন না, আপনার একটা লেখা একজন পাঠকের অন্তর্চক্ষু কিভাবে খুলে দেয়, বদলে দেয় দৃষ্টিভঙ্গি, পাল্টে দেয় জীবনের গতি পথ। লেখা-লেখির উদ্দেশ্যই ছিল এমন কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসা অথচ আজ আপনি লিখছেন না। হয়তো খুব ব্যস্ততা অথবা মান-অভিমান অথবা অন্য কোন কারণ। লেখনীর মাধ্যমে যদি পরিবর্তন আনতে চান, আপনাকে লিখে যেতে যেবে। লেখা বন্ধ করে দিলে একটা সময়ে গিয়ে আপনার সদুপদেশ পাঠক ভুলে যাবে, অত:পর আবারো সেই পুরনো গন্তব্যে। তাহলে আসুন না, শত ব্যস্ততার মাঝেও একটু ফুরসত কি হবে না?
ব্লগীয় হালচালের তৃতীয় পর্বে এসে আজ যাদের কথা বল্বো, তারা হলেন, আফরোজা হাসান, ইমরান ভাই, গন্ধসুধা এবং আয়ন শাহ।
শিশুদের মনস্তাত্বিক বিষয়, সংসার, নৈতিক অবক্ষয় নিয়ে উনার এক একটি লেখা এতো সুন্দর সাজানো-গুছানো, এক্সক্লুসিভ যে, পড়লে অন্তর্চুক্ষু খুলে যায়, নিজের ভেতর পরিবর্তনের অদম্য স্পৃহা জেগে ওঠে। আল্লাহ্ এই মানুষটিকে উত্তম প্রতিদানে ধন্য করুন। শিশুদের উত্তমরূপে প্রতিপালনে বিশেষ করে ইসলামের রঙে রাঙ্গিয়ে তুলতে বাবা-মা এবং বড়দের যেসব পরামর্শ দিয়েছেন, এক কথায় অসাধারণ। আপনারা কি জানেন, এই মানুষটি কত দিন ধরে ব্লগে নাই? দীর্ঘ নয় মাস ধরে ব্লগে অনুপস্থিত! উনি সর্বশেষ পোস্ট দিয়েছেন ১৩ই মে ২০১৫ ‘একটি শিশুর আর্তনাদ -২’ নামে। এই ধারাবাহিকটি শেষ না করেই উধাও! কেন বলছি এমন ব্লগারের ব্লগে খুব প্রয়োজন, উনার লেখার কিছু চুম্বক অংশ নিচে দিচ্ছি, পড়লেই বুঝতে পারবেন। ব্লগে ফিরে আসার সুতীব্র অনুরোধ রইল ব্লগার
আফরোজা হাসানের প্রতি।
বাচ্চারা অতিরিক্ত আন্তরিকতা দেখলে খুশি হয়। তাই বাচ্চাদের সাথে বাবা-মার আন্তরিক সম্পর্ক থাকলে তাদের যে কোন কিছু বোঝানো ও শেখানো অনেক সহজ এবং তাদের উত্তমরূপে গড়ে তোলা যায়। বেশির ভাগ সময়ই বাবা-মায়েরা সন্তানদের আসল ভবিষ্যৎ অর্থাৎ, পরকালের কথা ভুলে যান। যার ফলে শুধু যে সন্তানদের পরকাল ঝুঁকির সম্মুখীন হয় সেটিই নয়, দুনিয়ার জীবনেও ভুল পথে চলা সহজ হয়ে যায়। “তুমি মুসলিম” এই একটি বাক্যের প্রকৃত উপলব্ধিই যথেস্ট একজন শিশুসহ যেকোনো মানুষকে সমস্ত দীনতা-হীনতা, স্বার্থপরতা, অপবিত্রতা থেকে মুক্ত রাখার জন্য।
সময় কাটানোর জন্য টিভিতে সিরিয়াল দেখতে হবে এমন তো কোন নিয়ম নেই। আপনি কোরআন পড়ুন অর্থ সহ, তাফসীর পড়ুন। হাদীস, সাহাবীদের জীবনী, ইসলামী ইতিহাস, ইসলামী সাহিত্য কত কিছু আছে সময় কাটানোর উপকরণ হিসেবে। এছাড়া বাংলা সাহিত্যের গল্প-উপন্যাস-কবিতা তো আছেই। নিত্যনতুন রান্না শিখুন। বাইরে থেকে শোপিস না কিনে নিজের ভেতরের সৃজনশীলতাকে বের করে নিয়ে আসুন এবং বানিয়ে নিন বেতের ঝুড়ি, মোড়া ইত্যাদি। চাইলে করার মত অনেক কিছু পাবেন। যা করতে গেলে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটতে হবে আপনাকে। তখন সিরিয়াল দেখা তো দূরে থাক টিভির দিকে তাকানোরই ফুরসত মিলবে না।
ইমরান ভাই। উনি জাতীয় ভাই। বুঝতেই পারছেন সমীহ করে চলতে হবে। জাতির ভাইকে আবার কোন রোগে ধরল! এক সময়ের মাঠ কাঁপানো আমার ভাই তোমার ভাই ইমরান ভাই ইমরান ভাই, যার চারিপাশে ছোট ভাইয়েরা ভীড় করতো, একটা হেন্ডশেইক করতে পারলে ধন্য হত, দেখলেই সবাই ভাই সালামুয়ালাইকুম সালামুয়ালাইকুম বলে অস্থির করে তুলত, আর মেয়েরা ভাইয়ের কারণেই নির্ভয়ে রাস্তায় চলাচল করতে পারতো, ভাইও ছোট ভাই বোনদের আপন মমতায় আগলে রাখতো, কিন্তু এখন ভাইও নাই, ছোট ভাই বোনদের ভীড়ও নেই। জাতির ভাইকে দীর্ঘ দিন না পেয়ে জাতি আজ হতাশ।
এই হতাশাগ্রস্ত জাতির আগের সেই উৎসব মুখরতা ফিরিয়ে আনতে ইমরান ভাইয়ের আজ খুবই প্রয়োজন। আসেন, জাতির ভাই ইমরান ভাই, সবাইকে নিয়ে বসেন, ব্লগ বাড়িটাকে আবারও জমিয়ে তুলেন। আমাদের জাতির ভাই সর্বশেষ পোস্ট দিয়েছেন ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর। যার মানে ১৬ মাস ধরে ব্লগে আসেন না! আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এতো লম্বা সময় ব্লগে না আসার কারণ কোনোভাবেই ব্যস্ততা হতে পারেনা। নিশ্চয় অন্য কিছু। কারণ যাই হোক, ইমরান ভাই আসবেন, এই কথাই ফাইনাল।
‘যুব সমাজের অবক্ষয়, কারণ ও প্রতিকার’ নামে একটি ধারাবাহিকে তিনি লিখেছেন, যৌবন জীবনে আগন্তুক মেহমানের মত। সেটি জীবনে একবার আসে আবার খুব দ্রুত চলে যায়। বুদ্ধিমান সে- যে তার যৌবনকে কাজে লাগায় এবং ভবিষ্যৎ জীবন তথা বার্ধক্যের জন্য পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করে। যৌবন কাজে না লাগিয়ে অবহেলায় নষ্ট করলে, যেমনিভাবে দুনিয়াতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে অনুরূপভাবে আখিরাতে আল্লাহর নিকট তার জবাবদিহি করতে হবে। যথার্থই বলেছেন।
গন্ধ সুধা, অনেক লম্বা বিরতি দিয়ে দিয়ে ব্লগে আসেন। ৩ বছর ১ মাস ১৯ দিনে উনার পোস্ট মাত্র ২১ টা! এইবারের বিরতিটা যেন একটু বেশিই হয়ে গেলো। গত ১৪ মাস ধরে ব্লগে নাই! এভাবে সবাই যদি ১ বছর ২ বছর করে ব্লগে না আসেন, তাহলে ব্লগের এমন শ্রী কেন তৈরি হবেনা, যেখানে নিয়মিত হওয়াটা ছিল সময়ের দাবি। কিন্তু কেন এমন হবে? শুধুই কি ব্যস্ততা? আমার তা মনে হয়না। এই মানুষগুলো সত্যিকার অর্থেই চমৎকার লিখতেন, তাদের ভালোটা সবাইকে বিলিয়ে দিতে এতো কার্পণ্যতা কেন? দিলে তো কমবেনা, তাদেরটা তাদেরই থাকবে। আপনারা নিশ্চয় কেউ না কেউ তাদের খুব কাছ থেকে অথবা দূরে থেকে চিনে থাকবেন, নিশ্চয় আমার এই মেসেজটা পাঠিয়ে দেবেন, তাদেরকে তাদেরই প্রাণের ব্লগ বিডি টুডে খুব করে চায়।
এই ব্লগের প্রতি উনার ভালোবাসা এক বছর পূর্তিতে জানিয়েছেন এইভাবে, টুডেতে রেজিস্ট্রেশন করার পর ব্লগটাকে মনে হয়েছিল মন খারাপ করে এককোনে মুখভার করে বসে থাকা ছোট্ট একটা শিশু! তখনো জানতামনা ঠিক একবছর পরে এটাই হবে সিংহ শার্দুল! ব্লগ হচ্ছে নিজেকে প্রকাশ করার, নিজেকে যাচাই করার প্লাটফর্ম। জ্ঞানের মাধ্যম হচ্ছে বই আর সেই বই থেকে প্রাপ্ত কনটেক্সে অভিযোজিত হয়ে নিজেকে প্রকাশের প্লাটফর্ম হচ্ছে ব্লগ।কিন্তু টুডে বা টুমরো সেই পরিসর ছাড়িয়েও আজ চলে গেছে বহুদুর! কেন? কারন বর্তমানে বাংলাদেশের ক্রান্তিকাল আর টুডের ভুমিকা!
বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০১৩ এক রক্তাক্ত বছর! ঠিক এমন এক সময় টুডে কিছু মানুষকে অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে চিৎকার করে প্রতিবাদ করার সুযোগ দিয়েছে যখন একের পর এক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সত্য প্রকাশী নিউজপেপার,টিভি চ্যানেল! বটবৃক্ষের মতো পিঠে আঘাত নিয়ে টুডে এই প্রতিবাদী মানুষগুলোকে আগলে রেখেছে পরম মমতায়! আমি জানিনা নেটজগতে এরকম আর একটাও ব্লগ আছে কিনা!!!
আয়ন শাহ।সমসাময়িক রাজনীতি নিয়েই বেশি লিখতেন এবং ছিলেন প্রতিবাদীও। শুধু উনি নয়, আরও এমন অনেক ছিলেন যারা রাজনিতি নিয়ে খুব লিখতেন এবং রাজনীতিতে এমন কিছু, যা সাদা চোখে আমরা দেখিনা, সরকার, মিডিয়া, মানবাধিকার কর্মীরা যে মিথ্যাচার করতেন তাই বিশ্বাস করতাম, এর বিপরীতে সত্যটা তুলে নিয়ে আসতেন, যা পড়ে প্রকৃত সত্যটা জানতে পারতাম। এখন আর সেইসব জাদরেল, প্রতিবাদী ব্লগাররা আসেন না।
আয়ন শাহের অনেক লেখাই পড়েছি, খুব খুব ভালো লেগেছে। এই ভালোলাগা অব্যাহত রাখার জন্য উনার মত লেখকের যে খুব প্রয়োজন তা কি করে বুঝাই! দীর্ঘ ৮ মাস ধরে ব্লগে অনুপস্থিত! কি হয়েছে সবার? তাও আবার একযোগে? উনি সর্বশেষ পোস্ট করেছিলেন ২০১৫ সনের ২৯ ফেব্রুয়ারী। অভিজিত হত্যার রায় নিয়ে একটা মজার ঘটনা শেয়ার করেই নাই নাই নাই হয়ে গেলেন!
আমার লেখাটা কিন্তু ধারাবাহিক, এ কথা ভুলে যাবেন না! আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, প্রতি পর্বে এমন কিছু ব্লগারদের সম্পর্কে জানব, যারা এক সময় ব্লগে খুব সরব ছিলেন, এখন কোন অজানা কারণে উনাদের আমরা পাচ্ছিনা। আমি চাই, তারা আবার ফিরে আসুক, খুব বেশি না হলেও অন্তত কিছু সময় এখানে ব্যয় করুক।
ব্লগীয় হালচাল : অনিয়মিত এবং হারিয়ে যাওয়া ব্লগারদের খোঁজে... (পর্ব-০১)
ব্লগীয় হালচাল : অনিয়মিত এবং হারিয়ে যাওয়া ব্লগারদের খোঁজে... (পর্ব-০২)
ধন্যবাদ সবাইকে। সঙ্গেই থাকার প্রত্যাশায় আজ তাহলে আসি!
বিষয়: বিবিধ
১২২৪ বার পঠিত, ৩০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নিয়মিত লিখে যান। হয়তো কোন সময় ফিরেও আসতে পারে। আপনার আহবান তাদের কর্ণে ও চক্ষে পৌছুক এটাই প্রত্যাশা।
ইনশাআল্লাহ্। সব ঠিক থাকলে লিখে যাবো। আপনাদেরকেও সঙ্গে পেলে উৎসাহ পাব।
আপনার প্রত্যাশা আমারও প্রত্যাশা, আসেন, কোলাকোলি করি।
তারিখ : ৭ মার্চ ২০১৬..
হতে না পারলাম, শুনতে কিন্তু খারাপ লাগছেনা। ব্লগ বিশেষজ্ঞ!
তারিখটা মনের পাতায় একে রাখবো হে কবি!
আপনি নিয়মিত লিখতেন, এখনো লিখবেন, আপনাদের পুরনোরা নেই বলেই নতুন এসে হতাশ হয়ে ফিরে যায়। আসুন, তাদের অনুপ্রেরণা দিন।
আপনার ত্যাগ এবং কোরবানির বিনিময়ে আল্লাহ্ নিশ্চয় উত্তম জাযা দেবেন।
আপনার অসুস্থ বাবার জন্য দোয়া রইল।
ধন্যবাদ আপনাকে
ধন্যবাদ
ধিক্কার
ধন্যবাদ জনাব
মিস করি প্রতিনিয়ত সবাইএ তবু পথ চেয়ে থাকা ছাড়া কি ই বা করার আছে?
শুকরিয়া আপনাকে, সবাইকে নিয়ে লিখা রজন্য!
কেন আশা বেধেঁ রাখি
জানি আসবেনা ফিরে আর তুমি
তবু পথ পানে চেয়ে থাকি
ঠিক তাই কিছু করার নাই। এখানে কেউ কাউকে চিনিনা, চিন লে
আর হ্যাঁ আমার গতরাতের পোস্টে আপনার মূল্যবান পরামর্শের সূত্র ধরেই বলছি। আমার মোবাইল সেট থেকে ব্লগে পোস্ট লেখা বা অন্যের পোস্টে কমেন্ট করার কোন সমস্যা নেই। সমস্যা হয় কেবল কমেন্ট এর জবাব দেওয়ার বেলায়। তাই আমি নিজের পোস্টে কারও কমেন্টরই জবাব দিতে পারিনা | সুন্দর পরামর্শের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
সুন্দর মূল্যায়নের জন্য শুক্ররিয়া।
আপনার জন্য ব্লগ কর্তৃপক্ষ অপসনটি এখনো চালু করেনি। নতুন আরো অনেকের এই ধরনের অভিযোগ রয়েছে।
ঠিক হয়ে যাবে এক সময়
আপনাকেও সাধুবাদ সুন্দর মূল্যায়নের জন্য।
আপনার প্রত্যাশার বাস্তব রুপায়ন হোক, সেটা যে আমারও খুব করে কামনা।
হে প্রিয়, আমার পাড়ায় এসে পায়ের ধূলো দেয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
বিরহী রাত জানে
আছি কিসের টানে
আছি কেন আজও স্মৃতির
দরজা খুল ...
মন্তব্য করতে লগইন করুন