গোস্বা না করে বকা খাওয়ার কারণটি মিটিয়ে ফেললে ঝামেলা চুকে যায়।
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৩:৩৩:৫৯ দুপুর
স্বামী খেতে বসলে শুধু দোষ ধরে। এতো বেশি লবণ দিয়েছে যে কয়ডা বানিয়ে ফেলেছে, আনুনা তরকারী মুখে দেয়া যায় না, মরিচ দিতে গেলে হুঁশ থাকেনা অন্যদিকে হলুদ দেয়ার খবর খবর থাকেনা, হাটু সমান ঝোল দিয়েছে যেন সাতার কাটা যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এইসব শুনে বিবি চোখের জল, নাকের জলে ফোয়ারা বানিয়ে ফেলে। আর দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে মনে মনে বলে, সবি আমার পোড়া কপাল। হেরে! কপালের লিখন যায় কি খণ্ডন!
আচ্ছা, এখানে বিবির দোষ কয়টা? লবণ, ঝোল, হলুদ, মরিচ, এইতো। বকা খেয়ে গোস্বা না করে, চোখের পানিতে বুক না ভাসিয়ে এই কয়টা দোষ বারবার না করে তরকারী রান্নায় একটু মনোযোগী হলে স্বামী কোন দু:খে এই কয়টা ব্যাপারে আর বউকে বকা দেবে! আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি, অন্য দোষে বকা খেলেও এই কয়টা কাজ উত্তমরূপে করলে এসবের জন্য কখনোও আর বকা খাবে না।
বন্ধুটি কিছু মূদ্রা দোষে আক্রান্ত, যেমন ভাত খাওয়ার সময় চুক চুক আওয়াজ করা, কথা বলার সময় থুতু বের হওয়া, দাঁত দিয়ে নখ কাটা ইত্যাদি। তাই অপর বন্ধুটি বলে, এই তুই দাঁত দিয়ে নখ কাটিস ক্যান, কথা বলার সময় থুতু ফেলবিনা, ভাতে কবজি পর্যন্ত হাত ডুবিয়ে বতর বতর করে মাখবিনা, বিশ্রি দেখায়। গেলো রে গেলো, বন্ধুটির মান সম্মান সব গেলো। বন্ধু হয়ে বন্ধুর হাঁটতে বসতে দোষ খোঁজা! আঁতে ঘা লাগায় বন্ধুটির উপর চরম ক্ষুব্দ, সম্পর্কটা রাখাই মুশকিল!
আচ্ছা, এই কয়টা দোষ কি এতোই কঠিন যে, তা ত্যাগ পাহাড়সম কঠিন? বরং এগুলো তো ব্যক্তিত্বেরও ব্যাপার। বন্ধুকে ভুল না বুঝে নিজের ভালোর কথা চিন্তা করে এইসব না করলে সে বন্ধুটা কেন তাকে কথা শোনাবে! অন্য কোন দোষের জন্য বকলেও উল্লেখিত দোষগুলোর পুনরাবৃত্তি না করলে কখনোই এইসবের জন্য বকা খাবে না।
স্ত্রীর মোবাইল বর হাতে নিয়ে দেখে সর্বনাশা কান্ডকারখানা ঘটেই চলেছে। বউকে প্রশ্ন করে, তোমার মোবাইলে এই টেক্সটগুলো কে পাঠিয়েছে, আর কল লিস্টে এতো নাম্বারই বা কার। তোমার কি তাহলে অন্য কারো সাথে এফেয়ার আছে? ছি ছি তুমি এমন, আমাকে ঘুমে রেখে এইসব কর! পুরনো প্রেমিকের সাথেই যদি সম্পর্ক কন্টিনিউ করবেই, তাহলে আমাকে বিয়ে করলে কেন?
স্ত্রী সোজা লাইনে উত্তরে না গিয়ে আরো তিনগুণ জ্বলে ওঠে বলে, ও, তাহলে তুমি আমার মোবাইল ল্যাপটপ ঘাটাঘাটি কর! সন্দেহ বাতিক! নিজের বউকেও বিশ্বাস করতে পারো না! আমার মোবাইল ধরার আগে একবারের জন্যও জিজ্ঞেস করেছ! হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ, আগের সম্পর্ক কন্টিনিউ করছি, বেশ করছি! কি পেয়েছি তোমার কাছে! কি দিয়েছ বিয়ের পর, খালি দুঃখ-কষ্ট-লাঞ্ছনা! তুমি তো একটা পাথর, মানুষ না। একটা মেয়ের কি চাওয়া পাওয়া থাকতে পারে, সেদিকে কখনো খেয়াল আছে!
বুঝলেন কিছু? দোষ যখন করেছে, এবং ধরাও পড়ে গেছে, ক্ষমা চেয়ে আগের সম্পর্কটা নষ্ট করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে হয়তো বিষয়টা তখনি মিটে যেতো, কিন্তু তা না করে উল্টো সাপের মত ফ্যানা তুললে সমাধান হবে কি করে, বকা খাওয়া বন্ধ কিভাবে কমবে! যদি এরপরেও একসাথে থাকে, তাহলে স্ত্রীর মাঝে কোন দোষ দেখলে ঘুরে ফিরে ঐ প্রসঙ্গটা আসবেই এবং তখন বকোনি খাবেই।
বাবা মা চায় ছেলে মেয়েরা নামাজ পড়ুক, সকাল সন্ধ্যা পড়তে বসুক, খারাপ বন্ধুদের সাথে না মিশুক। কিন্তু যখনি তারা এসবের ব্যত্যয় করে, বাবা মা তখন বকা দেয়, কখনো কখনো অন্য লোক বা মেহমানের সামনেও বকা দেয়, তাতে তাদের ইজ্জত ধূলয় মিশে যায়! দোরা সাপের মত ফুলতে থাকে। খোদা এমন জঘন্য বাপ মায়ের ঘরে জন্ম দিলো ক্যান! যার তার সামনে ঠুনকো বিষয় নিয়ে অপমান করে! জীবনটা হয়ে উঠে দুর্বিষহ! আহারে আহা! আহ! বেচারা!
আচ্ছা, এখানে কোন কাজটা বাপ মায়ে সন্তানের খারাপের জন্য বলেছে? নামাজ পড়লে বেহেশতে যেতে পারবে, পড়াশোনা করলে নিজেদের অনেক উচ্চতায় নিতে পারবে, খারাপ সঙ্গ ত্যাগ অনেক অন্যায় কাজ থেকে বাঁচা যাবে, ভাল মানুষরূপে নিজেদের মেলে ধরতে পারবে, আর বাবা মা তা দেখে একটু তৃপ্ত হবে। এর চেয়ে এখানে তাদের বেনিফিট আর বেশি কিছু কি! বকা খেয়ে না ফুলে পেপে ওঠে উক্ত কাজগুলোর পুনরাবৃত্তি না করাতে একটু মনোযোগী হলে কি আর কখনো এইসবের জন্য বকা খাবে? খাবে না।
এইভাবে নানান কাজে কর্মে, চলতে ফিরতে ইচ্ছাকৃত কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল ত্রুটি করে ফেলি, অন্যায়ে নিমজ্জিত হয়ে পড়ি, যার ফলশ্রুতিতে অনেক বকা, ধমকী, অপমান হজম করতে হয়। কখনো মুখ বুঝে হজম করি, কখনো বা উল্টো রিএ্যাক্ট করি। ঘুরে ফিরে কেবল অপমান, বকা খাওয়াটার বিষয়টাকে ভেবে ভেবে মনে জমে থাকা জেদ, ক্ষোভকে আরো বাড়িয়ে তুলি, তাতে করে যা হয়, তা হলো, উক্ত দোষগুলো আমার কাছে অভ্যস্ততায় পরিণত হয়ে চিরবিদ্যমান সমস্যায় রুপ নেয়।
তাহলে আমাকে যা করতে হবে তা হলো, অপমান, বকার বিষয়টা নিয়ে বেশি মাথা না ঘামিয়ে মনোযোগী হতে হবে বকা খাওয়ার কারণটার দিকে। আমার মধ্যে যদি উক্ত দোষটি থেকেই থাকে, তাহলে দোষটি ত্যাগ করতে যা যা চেষ্টা করা দরকার আমি তাই করবো। আমি আর কখনোই বকা খাওয়ার কারণটির পুনরাবৃত্তি করবো না। তাহলে কারো বাপ কেন, তার হদানা গোষ্ঠীও আমাকে বকা কিংবা দোষ ধরার সুযোগ পাবে না!
আমার সাথে কে কে একমত, হাত তুলেন। আজ থেকে স্লোগান হবে,
‘বকা খাইছি, আরো খাবো,
মাগার গোস্বা করবোনা’
দোষ ধরার সুযোগ দেবো না
বকা খাওয়ার কাজ করবো না
আর কোনো দিন বকাও খাবো না
বিষয়: বিবিধ
১৭৯০ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
হদানা গোষ্ঠী
জী, হদানা গোষ্ঠী
আর যারা হাটতে বসতে দোষ ধরে তারাতো নিতান্তই বর্বর আচরণ করছে। আলহামদুলিল্লাহ, আমার খাওয়াতে দোষ ধরার সমস্যাটা একেবারেই নেই। যা আমার 'জুনার কিসের হাগ আর কিসের জাউ' শিরোনামে লেখাটাতে বর্ণিত হয়েছে।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জনাব।
অনেক সুন্দর লিখা সাকাভাইয়া ।
রান্না মানেই নারীদের প্রধান কাজ । আর কাজটা যখন সে করে তখন সে চেষ্টা করে সর্বোচ্চ ভাল করার তাই তরকারিতে লবন ,হলুদ , মরিচ একটু কম বেশী হতেই পারে এটা কোন দুষের মধ্যে পড়ে না ও এটা চাইলে সে শুধরাতে পারবে না কারন একজন মানুষের রান্না মাসের ত্রিশদিন একই রকম হবে না ।
মেয়েরা রান্না খারাপ হলে সেনিজেই খুব কষ্ট পায় আর কেউ যখন রান্না খারাপ বলে তার চোখে এমনিতেই কান্না চলে আসে ।
আপনার ২য় পয়েন্টের সাথে ১০০% একমত । এই তিনটা বদঅভ্যাস খুব ই খারাপ ও বিরক্তিকর এগুলো কারো মাঝে দেখলে সাথে সাথেই বলা উচিত ,তাকে ও সেটা স হজভাবে নিয়ে নিজেকে সংশোধন হওয়া উচিত ।
খাবার খেতে শব্দ হয় এমন লোকের সাথে আমি কখনো এক টেবিলে বসে খাবার খাব না ।
৩য় : স্ত্রীর মোবাইল বর হাতে নিয়ে দেখে সর্বনাশা কান্ডকারখানা ঘটেই চলেছে !!!!!! এটা আবার কেমন গাধা স্বামী বউ এত কিছু করেছে আর সে টেরই পাচ্ছে না মোবাইল হাতে নিয়ে দেখতে হয় ।
তাই এখানে বরের বউকে কিছু না তার নিজের দুষ গুলো খুজে বের করা ও নিজে সংশোধন হয়ে তার পর ও যদি স্ত্রী ঠিক না হয় তখন তাকে বলা উচিত ।
বাবা, মা সন্তানের ভাল চায় , তারা সন্তানকে যাই বলে ভালর জন্য ই বলে , বকা-সকা দেয় সেটা ভালর জন্য তবে সন্তান ছোট হলেও তার একটা ব্যক্তিত্ব আছে , তাই বাহিরের লোকের সামনে কখনো গাল মন্দ করাকে সাপোর্ট করতে পারিনা ,বাকীটুকুর সাথে একমত ।
কোন সমস্যা একদিক থেকে তৈরী হয় না তাই একদিক থেকে সমাধান ও সম্ভব নয় ।
সমস্যা যেমন দুই দিক থেকে আসে তাই সমাধান ও দুই দিক থেকে আসলে সমাধান হওয়া দুইজনের জনই সহজ হয় । সমাধান দুইদিক থেকে আসলে আপনার লিখাটা আরো সুন্দর ও পরিপূর্ণ হত ।
চুপি চুপি একটা কথা বলে যাই আপনি মুডু হিছেন আর কেউ না জানলে ও আমি কিন্তু জানি ভাইয়া ।
অনেক ধন্যবাদ সাকা ভাইয়া ।
আমি কিভাবে বুঝাবো, আমার লেখায় বর্ণিত দোষগুলোর একটাও আমি নিজে করিনা এবং কারো দেখলেও পারলে সমাধানের জন্য কিছু বলি, কিন্তু ঘেন্না করিনা, অপমান অপদস্থ করিনা। আর খাবার দাবার নিয়েতো একেবারেই সাদামাটা।
বিশ্বাস করেন, আমি যাকেই দেখেই রান্না বান্না নিয়ে ঘ্যান ঘ্যান করে, তাদের বুঝিয়ে বলি, দেখেন ,একজন নারী খুব চেষ্টা করে ভালো রান্না করতে, আচ্ছা আন্তরিকতা নাই থাকুক কিন্তু কষ্ট তো হয়, তাই রাঁধুনিকে বকা দেওয়া উচিৎ নয়।
আর আমি এটাও জানি যে, মেয়েরা রান্না করে নিজে খেয়ে যতনা খুশি হয়, তাঁর চেয়ে বেশি খুশি পুরুষদের খাইয়ে।
আর আমার তো মনে হয়, যাদের দোষ ধরার অভ্যাস নেই, রান্না বেশি খারাপ হলেই তারা বকা ঝকা করে, তাই এই রকম মানুষরা বকা দিলে কষ্টের কথা মাথায় না রেখে বরং দোষটা সারিয়ে নেওয়া উচিৎ।
এখন স্ত্রীরাও এতো বোকা যে, স্বামীকে দেখিয়ে খারাপি করবে, ভুল করে দুচারটা মেসেজ ডিলিট করতে ভুলে গেছে বলেই ধরা খেয়েছে।
এটা সবাই বুঝে, অন্যের সামনে বকা দিলে আত্মসম্মানে বাঁধে, তবুও এটা সবসময় মেইন্টেইন করা কঠিন। অনেক রাগের সময় কে সামনে আছে কে পেছনে তা মাথায় আসেনা, বরং বকা দিতে পারলেই রাগটা কমে, ঐ অবস্থাতেও মনে কষ্ট পেলে কষ্টের কথা না ভেবে দোষটা সমাধান করে ফেলা উচিৎ।
আমি আবারো বলছি, এক বাক্যে, যে দোষের জন্য বকা দিয়েছে, তা আর না করার চেষ্টা করা। তারপরেও যদি বকা দেয়, তাহলে তা নি:সন্দেহে বর্বরতা।
শেষ কথাটার কয়েক রকম হতে পারে, এক আমি মোটা হয়ে গেছি, তারপরেরটা এখানে উল্লেখ করা সম্ভব না, কিন্তু আপনি কোনটা বুঝিয়েছেন, সেটা জানতেও লাভ, উত্তর তো দিতে পারবেন না! আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আর আমি কিন্তু কিছুই মনে করিনি
লম্বা একটি মন্তব্য করবো স্থীর করেছিলাম, কিন্তু আফরা পিচ্ছি মেয়েটি আমার মনের সব কথাই বলে দিয়েছে।
তবে একটি কথা এখনো বাকি আছে, তা হল ২য় ও ৪র্থ পয়েন্ট বুঝলাম আপনার বন্ধুবান্ধব ও বাল্যকালের অভিজ্ঞতা। কিন্তু ১ম ও ৩য় পয়েন্ট কিভাবে আস্তস্থ করলেন?????
নদীতে না নেমেই সাতার শিখা!!
আপনারা যে একই নায়ের মাঝি আমি কি তা বুঝিনা!!!!! এই জন্যই এই ব্লগে এতো মজা। সমমনা মানুষ বেশি। আপনিও আবারো ব্যক্ত করে, হয়তো আফরার চেয়ে কিঞ্চিৎ বেশি কথা আপনার থেকে শুনতে পারবো।
হা হা হা, বিয়ে করিনিতো কি হয়েছে, বরের সাথেও কি যাইনি??????? ধরেন এইভাবেই আর কি!
সাধ্য নাইতো কি হয়েছে, স্বাদ তো আছে। নদিতে নামতে ভয় হয়, কিন্তু হাত পা নেড়ে চেড়ে উপর থেকেই সাতার কাটতে ক্ষতি কি!
জনাব, অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আপনার ভাল লাগা জেনে প্রীত হলাম।
যথার্থ বলেছেন, একটু সিরিয়াস হলে সব লেটা চুকে যায়!
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ জনাব জনাব
-এক্কেবারে পাক্কা অভিজ্ঞ লোকের মত গাজী ভাই। এত্ত অভিজ্ঞতা পেলেন কই?
মন্তব্য করতে লগইন করুন