ছেলেটি অসামাজিক......
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৩:০১:৪৪ দুপুর
বিকেলে বন্ধুরা ডেকে বলে চল, চা নাস্তা খেয়ে আসি। কয়েকদিন বন্ধুদের সঙ্গে বের হয়ে পরে আর যায় না, অনেক সাধাসাধিতেও না। তাই সবাই মুখের উপর বলে বসে তুই বেটা একটা অসামাজিক লোক!
যার পকেটে টাকা নাই, তার আবার সামাজিক, অসামাজিক! নাস্তা করতে টাকা লাগে। পকেটে নাই টাকা, তবুও 'হুডামি' করার মানে হয় না। নাস্তা করতে যায় না বলে সবাই অসামাজিক বলে গালমন্দ করে, কিন্তু কখনো ছেলেটির পাশে বসে কেউ কি জিজ্ঞেস করে না, বন্ধু, তুই কি ফিনানশিয়াল ক্রাইসিসে আছিস? কখনো জানার চেষ্টা করে না, বন্ধুটার পারিবারিক অবস্থা কেমন!
ক্লাস থেকে সবাই খুব ধুম-ধাম করে পিকনিকে যায়। ছেলেটিকেও সাধাসাধি করে, কিন্তু এ অজুহাত ও অজুহাত দেখিয়ে পালিয়ে বেড়ানোর চেষ্টা করে। শত বলে কয়েও যখন কেউ তাকে রাজি করাতে পারে না, তখন সে হয়ে যায় সবার কাছে অসামাজিক!
ছেলেটির বুঝি স্বাদ-ইচ্ছে নেই? কখনো কি কেউ জিজ্ঞেস করে, সবার সাথে পার্টিসিপেট না করার কারণ যাতায়াতের খরচ দিতে অক্ষম? হয়তো তার কাছে টাকা আছে। সারা মাস ঘাম ঝরিয়ে টিউশনি করে যে টাকা পেয়েছে তার কিছু বাড়িতে পাঠিয়েছে আর বাকি সামান্য যা আছে তা দিয়ে কোন রকমে চলছে। তা যদি একদিনের আনন্দের জন্য দিয়ে দেয়, তাহলে সারা মাস যে না খেয়ে থাকতে হবে, সে খবর ক’জনে রাখে!
বন্ধুরা বিকেলে কোন দর্শনীয় স্থান দেখতে যাবে, সাথে ছেলেটিকেও থাকা চাই, অথচ ঠিক একই সময় তার টিউশনিতে যাওয়ার কথা। তাই সে যেতে অপারগতা প্রকাশ করে, আর তাতেই কপালে জুটে অসামাজিক তকমা!
এই একদিন টিউশনিতে না গেলে বিদায় ঘণ্টা বেজে যেতে পারে। বন্ধ হয়ে যেতে পারে রুজি রোজগারের উপায়। সে খবর কি বন্ধুরা রাখে?
ভাইভা প্রেজেন্টেশনে বন্ধুদের কাছ থেকে জুতা, প্যান্ট, শার্ট ইত্যাদি ধার করে সবার কাছে বিরক্তির কারণ হয়, অথচ কেউ কি ভাবে, এই ছেলেটার এতো দামি প্যান্ট, শার্ট ও জুতা কিনার সামর্থ নেই! দু'বেলা ক্ষুধার্ত পেট শান্ত করতেই যার হিমশিম খেতে হয়, সে কিনবে দামী-শার্ট-প্যান্ট, হবে ফর্মাল বাবু!
ছেলেটার শার্টের একটা বোতাম ছিড়ে গেছে দেখে বন্ধুরা বিব্রত, করুণা হয় তাদের। কিন্তু কেউ কি বুঝার চেষ্টা করে পেটের ধান্দায় পার্ট টাইম ফকিরি বেতনে চাকুরী করে ক্লাস, পরীক্ষা ও পড়াশোনা করতে এতো ব্যস্ততা যায় যে শার্টের দিকে নজর দেয়া হয়ে ওঠে না।
মেয়েদের সাথে খুব করে মিশে না, রঙ্গ মঞ্চ করে না বলে বান্ধবীদের কাছে সে একটা অসামাজিক-ক্ষেত। কিন্তু বান্ধবীরা একবারও কি ভেবে দেখে, যার কাঁধে শুধু নিজের পড়াশোনার খরচের ভার বহন নয়, বরং
তাকে দরিদ্র বাবা-মায়ের অন্ন দান, ছোট্ট ভাই বোনের পড়াশোনার খরচ বহন করতে হয়, তার যে এতো রোমান্টিকতা মানায় না!
ছেলেটা ক্লাসে বসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠবে, অথচ আসার সাথে সাথে বই নিয়ে পড়ে থাকে, তখন ছেলেটা অসামাজিক!
কিন্তু কেউ কি ভাবে, বুঝার চেষ্টা করে, অন্যেরা যখন সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত অবধি নির্বিঘ্নে পড়াশোনা করে, তখন ছেলেটা ক্লান্ত দেহে বাস ভাড়া মেটাতে পারবে না বলে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে হেঁটে হেঁটে বাসায় আসে, দু’টা খায়, তখন আর শরীরে পড়াশোনা করা এনার্জি থাকে না। তাই রাতের পড়াটা দিনে কাভার করে নেয়!
ছেলেটা অসামাজিক, সত্যিই অসামাজিক। কিন্তু কেন? কখনো বুঝার চেষ্টা করিনা, তার খুব কাছে গিয়ে, ভেতরের কথা বের করে শোনিনা, শুধুই দেখি তার অসামাজিক আচরণটাই!
এমন অগুনতি ছেলে-মেয়ে আছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে, যারা দারিদ্রতার কষাঘাতে অধিকাংশ সময় বন্ধুদের চাওয়া অনুযায়ী সামাজিক হয়ে উঠতে পারে না!
কেউ কেউ ঠাট বজায়ে চলে, যদিও তাদের অভাব আছে। কিন্তু অন্যের কাছে সামাজিক হতে গিয়ে ধার দেনা করে দু'হাতে খরচ করে, একটা সময় ঋণের গ্লানি টানতে টানতে ফুটাঙ্গিগিরির সব স্বাদ মিটে যায়।
বিষয়: বিবিধ
১৫৫৮ বার পঠিত, ৩৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপ্নার সাথে সহমত, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এমনি হয়।
জনাব আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। আল্লাহ আপ্নাকে ভাল রাখুন
আপনি ঠিকই বলেছেন, তারা নিজেদের জায়গা থেকে, অন্যদের কাছে গিয়ে তাদের বুঝার চেষ্টা করে না।
আপনাকেও ধন্যবাদ
ধন্যবাদ ভাই
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
জাযাকাল্লাহু খাইর।
ধন্যবাদ সাকা ভাইয়া ।
আপনাকেও ধন্যবাদ
ধন্যবাদ আপনাকে
বন্ধু এবং পরিবারের মাঝে সমন্বয় করে চলবেন, চলা উচিৎ, তবে অবশ্যই পরিবারকেই বন্ধুদের উপর অগ্রাধিকার দিতে হবে। আ
আপনাকেও ধন্যবাদ জনাব।
পড়ে মন্তব্য করার ভাষা নেই...। এক কথা বলি লেখাটি অসাধারণ।
তার মানে আমন্ত্রণ জানালেই পড়বেন নয়তো না!!!! ছি ছি ছি ধিক্কার জানাই!
তবে থাক, মাথা ঘামিয়ে মন্তব্য লিখতে হবেনা। সব কথা যায় না বলা, বুঝে নিয়েছি!
সুন্দর মূল্যায়নের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ জনাব।
আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন