অনন্যোপায় হয়ে কিছু নাজায়েজকে জায়েজ করেছি, কিন্তু সবসময়ের জন্য নয়!!!!!
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:২৩:৫৮ দুপুর
আমরা খেলাধুলা করি কারণ এটাকে জায়েজ করেছি শরীর চর্চা হিসেবে, কিন্তু মাঠে খেলার পর টিভিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা খেলা দেখে তারপর এটা নিয়ে আরো কয়েক ঘণ্টা বিশ্লেষণ করে কাটিয়ে দেয়া জায়েজের কোন কাতারে পড়ে? পাসপোর্ট, রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদি অত্যাবশ্যকীয় কাজে ছবি তোলাকে জায়েজ করেছি; কিন্তু সেলফী, ভ্রমণ, বিয়ে-শাদী, আড্ডা, পার্টি ইত্যাদিতে ছবি তোলা এবং সেগুলো নিয়ে প্রদর্শনেচ্ছায় মেতে থাকা কিভাবে জায়েজ হয়?
সহশিক্ষা ছাড়া প্রতিষ্ঠান খুব কম, অগত্যা বেছে নিতে হয় সহশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নিরুপায় হয়ে এটাকেও জায়েজ করেছি, কিন্তু ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে হরদম মেলামেশা কিভাবে জায়েজ হয়?
কোচিং সেন্টার খুললে ছাত্র-ছাত্রীরা আসবে, প্রয়োজনের তাগিদে ছেলে হয়ে মেয়েদের, অথবা মেয়ে হয়ে ছেলেদের দিক নির্দেশনা দিতে হয় দিবে, কিন্তু বাসায় যাওয়ার পরেও মেয়েদের পড়াশোনার খোঁজ নেয়ার নাম করে দুচার রাকাত মিষ্টি কথা বলা জায়েজের কোন কাতারে পড়ে? অথচ ছেলেদের খোঁজ নেয়ার খবর থাকে না!
জানেন, আমি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির প্রস্তুতির জন্য একটি প্রসিদ্ধ কোচিং সেন্টারে ভর্তি হই, ছিলাম স্পেশাল ব্যাচের ছাত্র, কিন্তু কোনো দিন আমাকে একবারের জন্যও ফোন করে খোঁজ নেইনি, কেমন পড়ছি, কতু দূর, প্রিপারেশন কেমন। কারণ আমিতো ছেলে!
ইসলামী আন্দোলন যারা করে, তারা ইসলামী সংগঠনের বৃহত্তর স্বার্থে পুরুষ নেতৃত্ব কখনো কখনো নারী নেতৃদের সাথে যোগাযোগ করবে শুধুই সংগঠনের প্রয়োজনে, কিন্তু এর বাইরেও ফোনালাপ, স্যোশাল মিডিয়ায় আমাদেরই বোন বা ভাই বলে নিয়মিত যোগাযোগ করে যাওয়া জায়েজের কোন কাতারে পড়ে?
অনেক দেখেছি, চেনা নেই জানা নেই, যখনি শুনল, ছেলেটা অথবা মেয়েটা সংগঠনের কর্মী, তখনি কথা বার্তা শুরু! আচ্ছা, অন্য ছেলে বা মেয়েদের সাথে রসালাপ করা যদি নাজায়েজ হয়, তাহলে নিজ দলের কর্মী, হোক তা ইসলামী দলের, তাতে কি বিষয়টা জায়েজ হয়ে যায়?
টিভি-রেডিওতে খবর দেখা শোনাকে আমরা জায়েজ করেছি, কিন্তু তাতে ফিল্ম, নাটক, সিরিয়াল ইত্যাদি ঘণ্টার পর ঘণ্টা খুব আয়েশের সঙ্গে দেখা কি জায়েজ?
আমরা অনেকেই ক্যাম্পাসে টাখনুর নিচে প্যাণ্ট পরে হাটঁতে পারিনা বিশেষ গোষ্ঠীর বলে বিবেচিত হয়ে মার খাওয়ার ভয়ে, তাই কৌশলের অংশ হিসেবে ক্যাম্পাসে টাখনুর নিচেই পরি, কিন্তু অন্য সময়েও টাখনুর নিচে প্যান্ট পরা কিভাবে জায়েজ হতে পারে?
ইসলামী দলগুলোর কিছু কর্মী বিরোধী পক্ষের ভেতরে কাজ করে, যাতে ভেতরের খবর নিয়ে সার্বিক বিষয়ে অবহিত করতে পারে, যার জন্য তাদের বিরোধী পক্ষের লোকদের মত করেই চলতে হয়, এটাকে আমরা জায়েজ করেছি কৌশল হিসেবে, কিন্তু তা করতে গিয়ে নামাজ কালাম টোটালি ভুলে ধর্ম কর্মের নাম নিশানাও মুছে ফেলা, এটা জায়েজের কোন কাতারে পড়ে, যেখানে আল্লাহ্ কর্তৃক বিধি নিষেধের চর্চাটাই বন্ধ হয়ে যায়?
একজন মেয়ে পর্দা মেইনটেইন করে চলবে, এটাই ইসলামী শরীয়তের দাবি, তবে অসুখে বিসুখে ডাক্তারের কাছে যাওয়া, পরীক্ষা, ভাইভা ইত্যাদিতে পর্দার লঙ্ঘন হলেও অনন্যোপায় হয়ে করেছে বিধায় আল্লাহ্ নিজ গুনে ক্ষমা করে দিতে পারেন, কিন্তু পহেলা বৈশাখ, ফাল্গুন, বিশ্ব ভালবাসা দিবস, ক্লাস পার্টি, শিক্ষা সফর, র্যা গ ডে ইত্যাদিতে পর্দা শিথিল করা জায়েজের কোন কাতারে পড়ে?
অনেকে হয়তো ফেসবুক চ্যাটিং রোগে আক্রান্ত নন, তাই চরিত্রকে হেফাজত করার জন্য ব্লগটাকে নিরাপদ মনে করছে, এখানে কেউ কাউকে দেখতে পায়না, তাই সীমা লঙ্ঘনেরও সুযোগ নেই, কিন্তু ছেলেরা মেয়ে ব্লগারদের আপু আপু আপু বলে মুখ দিয়ে ফেনা তুলে ফেলা, মেয়ে বলে মন্তব্য প্রকাশে আবেগকে প্রশ্রয় দেয়া, মেয়েদের লেখায় হুমড়ি খেয়ে পড়া, ছেলেদের লেখা এড়িয়ে যাওয়া কিভাবে জায়েজ হয়?
খবর দেখার জন্য আপনি টিভিকে জায়েজ করলেন, কিন্তু তার ভেতরের আর সব কিছুকে দেদারসে গিলে খাওয়া কেন? খেলাধুলাকে ব্যায়ামের অংশ হিসেবে জায়েজ করলেন, কিন্তু ধ্যান জ্ঞান সব কিছু খেলা করা এবং টিভি, স্টেডিয়ামে দেখাতে নিবদ্ধ করে রাখা কেন? অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়েজ করলেন, কিন্তু অপ্রয়োজনেও সারাক্ষণ ছবি তোলায় ব্যাস্ত থাকা কেন?
সহশিক্ষার বিকল্প নেই বলেই ছেলে মেয়ে এক সাথে পড়তে যাওয়া, কিন্তু অবাধ মেলা মেশা কেন? সংগঠনের স্বার্থে নারী এবং পুরুষ নেতৃত্বের মাঝে অথবা সাধারণ কর্মীদের মাঝে যোগাযোগ হতে পারে, কিন্তু এর বাইরেও যোগাযোগের নামে অন্য কিছুতে মেতে থাকা কেন? নিরুপায় হয়ে পর্দায় শিথিলতা আনা যেতে পারে কিন্তু বিয়ে, র্যা গ ডে ইত্যাদিতেও পর্দার শিথিলতা কেন?
আমরা প্রয়োজনের তাগিদে কিছু কিছু বিষয়কে জায়েজ করেছি বলে সবসময়ের জন্য জায়েজ হয়ে গেছে?
আগে দেবরের সাথে ভাবীর পর্দা মেনে চলতে হতো, এখন লাগেনা, কেন? সম্ভব না।
আগে বউকে বন্ধু বান্ধব কে দেখানো হতো না, এখন সবাই কে দেখাতে হয়, কেন? না দেখায়ে পারা যায় না।
আগে জন্ম নিয়ন্ত্রণকে বড় গুনাহ মনে করে তা থেকে ইমানদাররা বিরত থাকতো, এখন ইমানদার আর বেইমানদার সবাই গ্রহণ করে, কেন? বিরত থাকা সম্ভব না।
আগে পাত্র পক্ষ মেয়ে দেখতে গেলে শুধু পাত্র এবং মহিলারাই পাত্রীকে দেখতে পারতো, এখন সবাই দেখে, অন্তত একদিনের জন্য হলেও, কেন? সবাইকে না দেখিয়ে রাখা সম্ভব না।
আচ্ছা, সম্ভব নয় বলে কি আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন আগের নাজায়েজ সব বিষয়কে জায়েজ করে দিয়েছেন? যার মানে দাঁড়াল, যা কিছু করা অসম্ভব, তাতে শরীয়তের বিধি নিষেধ থাকলেও ইমানদার নিজের মর্জি মতই তা কখনো জায়েজ করবে, আবার হালাল করবে, যার আরও মানে হল, সব হালকা, বাধাহীন কাজগুলোই মুমিন ব্যক্তিরা করবে, কঠিন কাজগুলো এড়িয়ে যাবে। আর তাতেই মিলবে আল্লাহর কাছে সর্বোচ্ছ পুরস্কার!!!!!!
আমরা নিজেদের পাক্কা মুমিন দাবি করলেও প্রাধান্য, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ কিন্তু সেভাবে করতে পারছি না।আমি একটা কাজ করতে গেলে চৌদ্দবার ভাবি, মানুষ তাতে কি ভাববে, অথচ আল্লাহ্ আমার এই কাজকে কিভাবে নেবেন, আমি কাজ টা করে সীমা লঙ্ঘন করছি কিনা তা নিয়ে ভাবনা থাকে না।
ক্লাস পার্টিতে শাড়ি পরে না গেলে, র্যা গ ডে তে গেঞ্জি না পরলে বন্ধু বান্ধবীরা কি ভাববে, তা নিয়ে চিন্তার শেষ নেই, তাদের ভালোলাগা খারাপ লাগার উপর ভিত্তি করেই আমি বেছে নেই পোশাক আশাক, রুচি অথচ আমার আল্লাহ্ কি তাতে সন্তুষ্ট হবেন, নাকি বিরাগভাজন হবেন, সে বিষয়ে মাথা ব্যাথা নেই।
এমনি করে সব কর্মকাণ্ডে আমি ভাবি, লোকে কি ভাববে, সমাজ বিষয়টাকে কিভাবে নেবে, সামাজিক রীতি নীতি কি বলে, আমার স্ট্যাটাস ঠিক থাকবে কিনা, এবং এসবের উপর ভিত্তি করেই আমি জীবন পরিচালনা করি, জায়েজ নাজায়েজকে এক করে নিজেদের পাক্কা ইমানদার, আল্লাহ্র খালেছ বান্দাহ বলে দাবি করি, অথচ আমার মন থেকে সব কিছুর উপরে আল্লাহ্র কথা, নির্দেশকে অগ্রাধিকার দেয়ার মানুষিকতা ধুয়ে মুছে নিঃশেষ করে দেই। তাহলে এটা আমাদের পাক্কা ইমান নাকি পুরোটাই ইমানের নামে ভণ্ডামি, তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।
আমি দ্বীনদার, তাই আমার সব সিরিয়াসনেস শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, রোজা, দান-খয়রাত, হজ্জ্ব, কোরবানি ইত্যাদি কাজে। কিন্তু এই ইবাদতগুলোর মতই সুদ, ঘুষ, মিথ্যা, ব্যাভিচার, পরকীয়া, বেহায়াপনা, অনুষ্ঠানের নামে অনৈসলামিক সংস্কৃতিতে ডুবে থাকা, পাত্র বা পাত্রী দেখায় ধার্মিকদের বাদ দিয়ে আল্ট্রা মডার্নদের প্রাধান্য দেয়া ইত্যাদি থেকে বিরত থাকায় আমাদের সিরিয়াসনেস থাকে না, কেউ যদি এইসব বিষয়ে সিরিয়াস হয়, তাহলে ধার্মিকের নামে বক ধার্মিক ব্যক্তিরাই মহৎ প্রাণ ব্যক্তিদের অপমান অপদস্থ করে সংকীর্ণমনা, গোঁড়া ইত্যাদি বলে।
আসলে কারা সংকীর্ণমনা? যারা এই ক্ষুদ্র জগতের মায়া মোহকে আঁকড়ে ধরে অনন্ত অসীম পরকালের কথা ভুলে আছে, যারা মহান রবের নির্দেশকে কম গুরুত্ব দিয়ে দুনিয়ার মানুষের নির্দেশ, চাওয়া, কামনাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, তারাই কি সবচেয়ে বেশি সংকির্ণমনা, গোঁড়া নয়? তারাই দুনিয়ান্ধ, সংকীর্ণমনা, গোঁড়া।
সব শেষে একটা কথাই বলব, অনন্যোপায় হয়ে কোন নাজায়েজ কাজ কেউ যদি করে ফেলে, আল্লাহ্ চাইলে ক্ষমা করে দেবেন, কিন্তু মনগড়াভাবে জায়েজকে নাজায়েজ আর নাজায়েজকে জায়েজ করলে আল্লাহ্ ক্ষমা করবেন না, ঠিকি সময়মত পাকড়াও করবেন। সো, সাধু সাবধান।
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৬ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনাকেও ধন্যবাদ
ধন্যবাদ আপনাকে
আপনি ঠিকই বলেছেন এটার অভাবেই সমাজের আজকে এই অবস্থা।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ নেবেন।
বর্তমানে শয়তান অনুমোদিত সব কিছুই মানুষের কাছে সহজলভ্য এবং গ্রহণযোগ্য!!
আল্লাহর দিকনির্দেশনা যেন মানুষ তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেই চলছে! এর পুরস্কার বা তিরস্কার অপেক্ষা করছে হাশরের ময়দানে।
উত্তর খোঁজে পান অথবা না পান, কাজ করার বিষয়ে সচেতন করাই লেখকের উদ্দেশ্য ।
সাধারণ মানুষ শয়তানেরটা গ্রহণ করলেও ইমান দারেরা করে যাবে এটাতো মানা যায়না.
যে যাই করুক , প্রতিফল কিন্তু পাবেই
আপনাকে ধন্যবাদ জনাব।
সব কিছুকে সহজভাবে গ্রহন করার মানসিকতা নিয়ে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে ।
আর আমার এই লিখা, অতি উদার এবং তার বিপরীতে অতি কট্টরদের উদ্দেশ্যে লেখা হয় নি। যারা জায়েজ নাজায়েজের তারতম্য বুঝে, বুঝে এই দুনিয়ার পর এসবের ফলাফল কি হবে, তবুও দুনিয়ার চাকচিক্যে নিজের জানা জিনিসগুলো মানতে অথবা পরিহার করতে গড়িমসি করে। কখনো কখনো জেনে বুঝে নিজে পাপাচারে লিপ্ত বলে নাজায়েজকে জায়েজ করতে এবং জায়েজ কে নাজায়েজে পরিণত একটুও দ্বিধা করে না।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
আপনাকেও আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ, কিন্তু কেন? ও, হা, আমাকে ধন্যবাদ দিয়েছেন তাই আমিও দিলাম। ভদ্রতা আর কি!
অপবাদের ভয়ে আজ সবাই আল্লাহর ভয় থেকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে।
সহমত, মুসলিম পরিচয়টাই আজ অনেকের জন্য লজ্জার কারণ।
জাযাকাল্লাহু খাইর।
আপনার প্রোফাইলে ছবিটি কার ভাইজান?
এটাও কিন্তু সেলফীর চেয়ে কম নয়!
লা জবাব রে ভাই লা জবাব,
কী জবাব দেব, নেই জবাব?
জবাব সবাই হয়েছে কাবাব
মোর যোগ্যতার যে বড় অভাব!
-কিছু কওয়া থেকে স্যারেন্ডার করছি।
খেয়াল করছেন ব্রাদার? আমার এই লেখাটা অনেকেই এড়িয়ে গেছে। আপনিতো তারপরেও এসেছেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন