ফেব্রুয়ারি এলেই শহীদ মিনারে জুতা নিষিদ্ধ, অন্য সময় জুতা নিয়ে প্রবেশে শহীদদের অবমাননা হয় না?
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৭:৫২:৫৫ সন্ধ্যা
জুতা নিয়ে শহীদ মিনারে প্রবেশ করলে নাকি ভাষা শহীদদের প্রতি চরম অবমাননা হয়, সে জন্য শ্রদ্ধা জানাতে আগত মানুষদের জুতা নিয়ে প্রবেশ ঠেকাতে চেষ্টার কমতি থাকে না। ২০১১ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি, পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসির সদস্য হিসেবে শহীদ মিনারে শৃঙ্খলা বিধান করতে রাতভর আমিও দাঁড়িয়ে থাকি এবং জনতার স্রোত থামাতে গলদঘর্ম হলেও জুতা নিয়ে প্রবেশ ঠেকাতে চেষ্টার সর্বোচ্চটাই দিয়েছি। কাউকে ভালভাবে বলেছি, আবার কাউকে কঠোর স্বরে, কাউকে তিরস্কার করেছি জুতা নিয়ে ঢোকার কারণে। আবার এলো একুশে ফেব্রুয়ারি, তাই সেসব কথা মনে করে ভাষার প্রতি আজাইরা আবেগ, চেতনায় আমি লজ্জিত!
শহীদদের মর্যাদা কি এতোই হালকা যে, কবরে কারো জুতা পড়লেই সর্বনাশ? যাক, তাদের সম্মান তাতে গেল কি থাকল, তার চেয়ে বড় কথা, তাদের সম্মান করলে আমাদের ক্ষতিটা কি? আর কেউ যদি জুতা নিয়ে প্রবেশ করেও, তাতে একদিনের জন্য এতো আদিখ্যেতা দেখানোর কি আছে।
আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে এতো মানুষ যখন এক সাথে আসবে, তখন সবার জুতার ব্যাপারে খেয়াল না থাকাই তো স্বাভাবিক। একদিন এতো দরদ শহীদদের প্রতি, বছরের বাকি দিনগুলোতে শহীদ মিনারে শহীদদের বুক ফুলে ফুলে ভরে ওঠে নাকি লক্ষ কোটি শক্ত জুতা, মেয়ে ছেলের নিতম্বের পদভারে দলিত মথিত হয়, সেদিকে ক’জনার খেয়াল থাকে?
সারা বছর শহীদ মিনারে কি হয় আপনাদের নিশ্চয় জানার কথা। গত পাঁচটা বছর ঐ এলাকায় কাটিয়েছি, দেখেছি ভাষা শহীদদের প্রতি আবেগি বাঙ্গালির শ্রদ্ধার কদর্য রূপ। প্রায় প্রতিদিন এই শহীদ মিনারে বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে নানা ধরণের সংগঠনের মানব বন্ধন, অবস্থান কর্মসূচী, সংবাদ সম্মেলন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি হয়ে থাকে, তখন কেউ কি আমাকে বলতে পারবেন, এইসব কর্মসূচী পালন করতে আসা লোকেরা জুতা খুলে শহীদ মিনারে প্রবেশ করেছে? পারবেন না।
এতো গেল নানান কর্মসূচীর কথা। সেখানে বসে জুতা নিয়ে আড্ডা, গল্প, সন্ধার পর মদ খোর গাঁজাখোরদের নিশ্চিন্তে নেশা করে যাওয়া, প্রেমিক-প্রেমিকাদের অশ্লীল কর্মকান্ডে সব সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া দেখেছেন কি?
এই তারাই কিন্তু রাত বারোটায়, শহীদ দিবসের প্রথম প্রহরে ফুল নিয়ে কয়েক ঘণ্টা ব্যাপী লাইনে দাঁড়িয়ে থাকবে হাতের ফুলটি শহীদের কবরে রেখে সম্মান প্রদর্শন করতে, জুতা খুলতে, নিজে খুলে প্রবেশ করতে। এমন ভালোবাসা কোথায় থাকে যখন সারা বছর জুতা নিয়ে প্রবেশ করে থাকে? এমন স্ববিরোধী কর্মকান্ড থেকেই বুঝা যায়, ভাষার প্রতি আমাদের দরদ কতটা প্রখর।
বাংলা ভাষার প্রতি দরদের নমুনা চলতে ফিরতে বহু দেখা যায়। কিছু দিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নোটিশে ৮ লাইনের বিজ্ঞপ্তিতে ২২টি ভুল ধরা পড়ে। বিজয় সরণি একটা জায়গার নাম, সে একই জায়গায় এক শব্দের তিন রকম বানান। বিজয় সরণি, স্মরণী, স্বরণি! ভুল লিখতে গিয়ে ‘ভূল’ হওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। মূর্ধন্য আর দন্ত ন নিয়েতো জগাখিচুড়ি চলছেই। এক লাইনে শব্দ যদি থাকে বিশটা, তাতে বানানে ভুল থাকে দশটা।
বাংলা লিখতে, পড়তে, বলতে সতর্ক থাকবে না, অথচ শ্রদ্ধা জ্ঞাপনে সবার আগে হাজিরা দেবে, এ কেমন ভাষা প্রেম! এমন দরদের কোন অর্থ নেই। আবেগ দিয়ে নয়, কথা দিয়ে নয়, আদিখ্যেতা দিয়েও নয়, ভাষা শহীদদের প্রতি সত্যিকার শ্রদ্ধা, সম্মান, ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হবে কাজের মাধ্যমে, এবং দিবস কেন্দ্রিক নয় বরং বছরের প্রতিটি দিনে।
আর সে কাজটা হবে, বাংলা বানান রীতি উত্তমরূপে জেনে লিখায় তার প্রয়োগ ঘটানো, প্রমিত উচ্চারণ যথাযথভাবে শিখে নেওয়া, প্রয়োজনের স্বার্থে অন্য ভাষার প্রয়োগ করলেও বাঙলাটাকেই প্রাধান্য দেওয়া ইত্যাদি।
অন্য ভাষায় যে কারো পারদর্শিতা থাকতে পারে, তবুও বাংলা বলতে গর্ববোধ করাতেই প্রকাশ পাবে প্রকৃত ভক্তি ভালোবাসা। তাহলে, আসেন, গোল বসেন সবে, দেশ, শহীদ, আপনজনের প্রতি ভালোবাসা দিবস কেন্দ্রিক না করে সদা সর্বদা মন মগজে জাগরূক রাখি।
আপনারা সবে কি বলেন?
বিষয়: বিবিধ
১৭৩৮ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আবারো বলছিঃ সবই চেতনার তেল খসানো।
জান্নাতের বাপ, হক কথাই কইছেন।
আমি আবারো সহমত জ্ঞাপন করছি। আপনি খারাপ বলেন নাই।।
পুলিশ যে দেশে জুতা সহ নামাজী ধরে মসজীদে ঢুঁকে সেদেশে ঠাকুর তলা এত পবিত্র হয় কি করে?
নামাজীদের মাঝে জঙ্গী চেতনা থাকে, তাই এখানে জুতা তত্ত্ব প্রযোজ্য নয়।
কাউকে শ্রদ্ধা জানানোর ইসলামী রীতি মানাই আমার পছন্দ৷ আপনার সাথে আমিও সহমত।
মন্তব্যের ধন্যবাদ নেবেন
;;;; ফুল নয় দোয়া কাম্য ;;;;;
আমি মরে গেলে দিওনা
আমার কবরে ফুল ,
যদি পারো দোয়া করো
দোয়ায় আমার আবেদন আকুল ।
মানুষ মরে গেলে তার জন্য
ফুল নয় দোয়ায় কাম্য ,
মিনার বানিয়ে ফুল দেওয়া টা-
১০০ তে ১০০ রাজনৈতিক রাম্য ।
রাজনৈতিক রস দেখে
আমরা যদি হই রসালো ,
বুঝতে হবে মানুষ হিসাবে
'' আমার '' মানুষুত্ব হারালো ।
রাজনীতির রঙে যদি
আমরা রঙীন হতে থাকি ,
আমাদের মনের চাহিদার-
কি থাকে বাকী ?
আমাদের মনের চাহিদা
হতে হবে সত্যে পথের ,
মিনারে ফুল দেওয়া টিক নয়
তাই আমার প্রকাশ আজ ভিন্ন মতের ।
আমরা প্রত্যেকে জানি
অপচয় কারি শয়তানের সহযোগী ,
শয়তানের সহযোগী হতে কেন-
হব আমরা অর্থ ত্যাগী ।
আমাদের ত্যাগ হওয়া চাই
সত্য ও শান্তির পথে ,
আসুন যুদ্ধে যারা মরেছে তাদের আত্মার
জন্য দোয়া করি দিবা রাতে ।
আল্লাহর রহমত ও আমাদের দোয়া
তাদের এক মাত্র কামনা ,
আমরা কেন মিনারে ফুল দিয়ে
বড়াব নিজের খাতায় গুনা ???
>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>
সুন্দর লিখাটির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
তবে কালো পাথরটার মধ্যে/ শহীদদের বেদীতে ফুল দেওয়ার মাঝে আমি কোন কল্যাণ দেখিনা। এই ফুলের টাকাটা কোন গরীবকে দান করলে হয়তো শহীদেরা খুশি হবেন।
ধন্যবাদ আপনাকে
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন