একটি রাইফেলের বেলজিয়াম থেকে গাজায় ভ্রমণ
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১২:৩৭:০৩ দুপুর
বিবিসি থেকে অনূদিত-
বছর তিনেক আগে অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা ফিলিস্তিনের গাজায় একজন যোদ্ধার হাতে বেলজিয়ামে তৈরি একটি রাইফেল চিহ্নিত করেন। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ ঘোষিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে কিভাবে অস্ত্রটি আসল? অস্ত্র বিশেষজ্ঞ নিক জেনজেন জোনস এবং বিবিসির থমাস মার্টিনসেন এর খোঁজ নিয়েছেন।
২ই অক্টোবর, ২০০১২, প্যালেস্টেনিয়ান ইসলামিক জিহাদের সশস্ত্র শাখা কুদস ব্রিগেইট ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ কর্তৃক তাদের একজন কমরেডকে হত্যার ১৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে গাজার দক্ষিণে রাফাহ শহরের রাস্তায় বিক্ষোভ করে।
এটি একটি বাৎসরিক সামরিক প্যারেড, যেখানে সৈন্যরা সবচেয়ে আধুনিক অস্র এবং স্বোপার্জিত সমর উপকরণ প্রদর্শন করে থাকে। ২০১২সালের প্যারেডে নিশ্চিতভাবেই তারা নতুন কিছু অর্জন করেছিল।
সাধারণ অস্ত্র যেমন, এ কে রাইফেল, ভারী মেশিনগান, রকেট, গ্রেনেড লনচার ইত্যাদির সাথে বেলজিয়ান এফ-২০০০ এবং রাশিয়ান এ কে-১০৩ ছিল ব্যতিক্রম।
এযাবৎ, সংগ্রামরত দলগুলোর হাতে এই দুটি অস্ত্র কদাচিতই দেখা গেছে। তবে লিবিয়া গৃহ যুদ্ধে গাদ্দাফী বাহিনী এবং বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর হাতে এফ-২০০০ এবং রাশিয়ান এ কে-১০৩ দেখা গিয়েছিল।
কিভাবে অস্ত্র দুটি লিবিয়ায় গেল এবং সেখান থেকে তা গাজায় পৌঁছল? আহমেদ নামে লিবিয়ার সাবেক একজন বিদ্রোহী যোদ্ধা আমাদের বলেছেন সে কথা।
২০১১সালের আগস্টে ত্রিপলীর পতনের পর অধিকাংশ বিদ্রোহী সিরতে এবং সাবহার দিকে নজর দেয়। সাবহা গাদ্দাফীর নিয়ন্ত্রণে থাকা সর্বশেষ কয়েকটি এলাকার একটি যা ছিল আহমেদ এবং তার মিলিশিয়া গ্রুপের পঅরবর্তী টার্গেট।
কিন্তু তারা সেখানে অনেক দেরিতে পৌছায়। টানা দুইদিন লড়াইয়ের পর সাবহা স্বাধীন হয় ২০শে নভেম্বর। অনেক বিষয়ই তারা মিস করে কিন্তু আহমেদের বয়সী আলী নামে একজন ছাত্রের কাছ থেকে অনেক গল্প শুনতে পায়। এইসবের মধ্যে আগের দিন সাবহায় ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা-
আমরা তখন সাবহার বাহিরে একটি চেক পোস্টে ছিলাম। একটি গাড়ি আমাদের সামনে এসে থামে। গাড়ির ভেতর থেকে একজন বলল, সে ‘৩২ ব্রিগেট’ অফিস থেকে এসেছে। আমাদের হাতে বৈপ্লবিক পতাকা ছিল না, তাই তারা ভাবল আমরা গাদ্দাফীর বাহিনী।
অফিসার এবং তার স্টাফদের আটক করল আলি। লোকগুলোর সাথে দুটি আধুনিক, বড়, অদ্ভূত এ কে রাইফেল ছিল যা নাকি ফ্রেন্স এফএন থেকে এনেছে।
বেলজিয়াম ২০০৮ সালে গাদ্দাফী সরকারের কাছে ৩৬৭-এফ-২০০০ রাইফেল, ৩৬৭-P-৯০ ইত্যাদি অস্ত্র বিক্রি করে, যার জন্য গুনতে হত ১২ মিলিয়ন ইউরো।
লিবিয়া বলছে, সুদানের সমস্যাগ্রস্ত দারফুরে রক্ষীদলকে সহায়তা করতে অস্ত্রগুলোর প্রয়োজন ছিল। ইউরোপের সবচেয়ে বড় সামরিক অস্ত্র রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘এফএন হেরস্টসল’ জোর দিয়ে বলেছে, লিবিয়ার কাছে অস্ত্র বিক্রয়ের বিষয়টি ছিল সম্পূর্ণ বৈধ।
২০০৯ সাল নাগাদ, অস্ত্রগুলো বেলজিয়াম থেকে লিবিয়ায় ‘খামিস’ গ্রুপের কাছে চলে যায়, যার কমান্ডিং অফিসার ছিল গাদ্দাফীর ছোট ছেলে খামিস গাদ্দাফী।
২০০৩ এবং ২০০৪ সালের শেষের দিকে জাতিসংঘ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে লিবিয়া বিভিন্ন দেশের সাথে অস্ত্র কিনতে আলাপ আলোচনা শুরু করে। সে অস্ত্রগুলোর মধ্যে স্ব লোডিং রাইফেল এ কে-১০৩ ও ছিল।
ইন্টেলিজেন্স কন্টালসেন্সি আর্মামেন্ট রিসার্স সার্ভিস(ARES), হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অন্যান্য এনজিউর বিশ্লেষণ ইঙ্গিত দেয় যে, ২০০৪সালের এপ্রিলে একটি চুক্তির আওতায় লিবিয়া এ কে-১০৩-২ এর তিনটি অর্ডার করেছিল।
পরবর্তীকালে লড়াই শেষ হলে আহমেদ এবং তার সঙ্গীরা নতুন সরকারের কাছে সব অস্ত্র হস্তান্তর করে যেখানে দুটি এফ-২০০০ রাইফেলের একটি ছিল।
কিন্তু এফ-২০০০ রাইফেলের দ্বিতীয়টি মিসরাতায় কালোবাজারে খালেদ নামে এক অস্ত্র ব্যবসায়ীকে আটক করে তার কাছ থেকে নিয়ে নেয়।
ARES এর একজন পরিচিত সোর্সের মাধ্যমে খালেদ নিশ্চিত করে যে, গাজায় এফ-২০০০ এবং এ কে-১০৩-২ পাচারের জন্য সেই দায়ী। সে বলল, “আমরা অস্ত্র দিয়েছিলাম গাজার জনগণকে সহায়তা করার জন্য”।
প্যালেস্টেনিয়ান ইসলামিক জিহাদের ‘আল কুদস’ তাদের প্যারেডে অস্ত্রগুলো নিয়মিত প্রদর্শন করে যাচ্ছে। ব্রিগেটটি সম্প্রতি নিশ্চিত করেছে, এফ-২০০০ এখনও তাদের দখলে আছে।
এফ-২০০০ অস্ত্রগুলো সম্পরতি মিশরের সিনাই উপদ্বীপে মিলিশিয়াদের হাতেও দেখা যায়।
ধারণা করা হচ্ছে, আমদানীকৃত এফ-২০০০ অস্রগুলো এখনও লিবিয়ায় রয়েছে এবং এপ্রিলে ইসলামী স্টেইট কর্তৃক খৃষ্টান হত্যায় ব্যবহৃত হয়ে থাকবে। শুধু তাই নয়, মধ্য প্রাচ্য এবং উত্তর আমেরিকায় ধীরে ধীরে বিস্তৃত হচ্ছে।
মূল: নিক জেনযেন জোনস
পরিচালক
ইন্টেলিজেন্স কন্টালসেন্সি আর্মামেন্ট রিসার্স সার্ভিস(ARES)
অনুবাদ: গাজী সালাউদ্দিন
বিষয়: বিবিধ
১৭৮৫ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো আছি। আপনি ভালো তো? আপনার আন্তোরিকতায় আমি আনন্দিত।
আপনি যথার্থই বলেছেন,অর্ধমৃতই মনে হয়। দোষটা কিন্তু আমাদেরই। পুরনো ব্লগাররা নিয়মিত আসে না বলে আমরা মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে পালাই। কেন, নতুনদের নিয়ে মেতে থাকলে ক্ষতি কি? অনেক নতুন ব্লগার আসছে, কিন্তু আমাদের ভাললাগা ব্লগারদের অনুপস্থিতিতে আমাদেরকেও কেন পর্দার আড়ালে চলে যেতে হবে!
ইদানিং কালে যা হচ্ছে তাও হল, একজন আসে না বলে তিনজন, তিনজন আসে না বলে নয়জন, এইভাবে সংখ্যাটা জ্যামিতিকহারে বাড়ছেই।
এটাকে আমরা আড্ডার উপযুক্ত জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছি, কিন্তু উচিত হবে আড্ডার পাশাপাশি এমন কিছু নিজে জানা এবং অন্যকেও জানানো যা কল্যাণজনক।
আপনার বেশ কয়েকটি মন্তব্যের জবাব দিতে পারিনি বলে দুঃখিত।
সদ্যই মাস্টার্স শেষ করে প্রফেশনাল লাইফে প্রবেশ করেছি, তাই...
আগে এরা আসতো মধ্যপ্রাচ্য ও উপমহাদেশে ব্যবসায়ের নাম করে দেশ দখল করে এসব সম্পদ লুট করতে । সেসব দেশে নিজেরা বসে ক্রিমগুলো পাঠিয়ে দিত নিজেদের দেশে ।
বর্তমানে এক দেশ আরেকদেশকে দখল করার কালচার না থাকলেও নতুন কালচার হিসেবে এসেছে সে দেশের সরকারকে নিয়ন্ত্রন করা , তাদের তাঁবেদারী করা সরকার বসানো এবং সেসব দেশে যে কোন উপায়ে অশান্তি বা গৃহযুদ্ধ বাঁধিয়ে দেওয়া ।
যুদ্ধের জন্য যে অস্ত্র লাগে সেটা বেলজিয়ামেরাই দেয় । আবার যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে তাদের দেশের লোকেরা মায়াকান্না করে , লোক দেখানো দয়া মায়া দেখিয়ে লভ্যাংশের ৯৯% দান করার কথা বলে নাম কামায় । যুদ্ধ পীড়িত মানুষদের দুর্দশার কাহিনী নিয়ে ফিল্ম বানিয়ে , ছবি তুলে অস্কার , পুলিৎজার লুটে ।
বেলজিমায়দের চাই ধন সম্পদ , অত্যাধিক প্রাচুর্য যা আসলেই তাদের নেই । সেটা পাবার জন্য তাদের পূর্বসূরিরা তাদেরকে লুটপাটের পথ দেখিয়ে গেছে ।
সেটাই তারা ফলো করছে । মধ্যপ্রাচ্য ও উপমহাদেশের সম্পদ এখন তারা লুট করছে সে সব দেশে গৃহযুদ্ধ বাঁধিয়ে দিয়ে । যুদ্ধ করার জন্য তলে তলে অস্ত্র পাঠিয়ে দিয়ে ।
অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে যেহেতু তাদের নেতারা নির্বাচনের জন্য বড় বড় ফান্ড নেয় সেহেতু অস্ত্র ব্যবসায়ীদের অস্ত্র বেচার জন্য ফিল্ড গড়ে দেবার দ্বায়িত্ব অটোমেটিকভাবেই তাদের ঘাঁড়ে চলে আসে। তাদের দেশের সাধারণ জন গন এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না , ঘামালেও সেটা লোক দেখানো - কারণ এসব লুটপাটের আলটিমেট বেনিফিশিয়ারী তো তারাই ।
গৃহযুদ্ধ বাঁধিয়ে দিয়ে উনারা নিজেদের সৈন্য পাঠায় না । পাঠায় জাতিসংঘের মাধ্যমে বাংলাদেশের মত গরীবদেশের সৈন্যদেরকে পাঠিয়ে । আমাদের দেশের মানুষও এই মনে করে পুলকিত থাকে যে এসব শান্তি মিশনে গিয়ে আমাদের সৈন্যরা দেশের জন্য বৈদেশিকমূদ্রা আনতেছে।
শান্তি মিশন হচ্ছে উপরে উপরে , ভেতরে ভেতরে এরা বেলজিয়ামদের খনিজ সম্পদ চুরি/লুট করাটাকেই পাহাড়া দেয় । আমরা সেটাও বুঝি না ।
এই কথাটাই বুঝানোর চেষ্টা করেছি। অনুবাদে নিজের কথা লিখতে নেই তাই লেখা হয়নি।
আপনার সবগুলোর কথার সাথেই সহমত।
এই বিষয়ে একটা পোস্ট দেয়ার অনুরোধ থাকল যদি সম্ভব হয়।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন