ফেসবুকে মেয়েদের ছবি দেয়া নাজায়েজ, ছেলেদের জন্য খুব জায়েজ?
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ৩১ অক্টোবর, ২০১৫, ০৮:৫৭:০৬ সকাল
দেখুন, বোনেরা কিন্তু ক্ষেপে যাচ্ছে-
"মেয়েদের মানা করেন যে, ফেসবুকে ফটো দিওনা ছেলেরা দেখে চোখের দেখায় মনে কুচিন্তা করে অথচ পুরুষরা নিজেরা সিক্স প্যাক, নুরানী বদনের হাজার ছবি আপলোড ঠিকই করছেন। কেন ভাইয়া মেয়েদের বুঝি চোখ নেই?? কুচিন্তা করার মত অন্তর নেই?"
"আর পুরুষরা তো বিশ্বাসই করে নিয়েছেন যে, পর্দা নারীরই জন্য। হালের ফ্যাশন- পুরুষরা টাইট জিন্স প্যান্ট,শরীর প্রদর্শনের জন্য বা শো অফের জন্য শর্ট টাইট টি শার্ট, নিতম্বের অনেকখানি অংশ বের করে কোমরের প্যাণ্টটা নীচে নামিয়ে পরবেন_ যেন সর্বদাই তাদের যৌনতা নামক বস্তু ঠিকরে ঠিকরে পরে।"
"আচ্ছা আপনারা ফেইজবুকটাকে কি ফটো গ্যালারী পাইছেন?"
"যারা ইসলামের গবেষক ও চিন্তাবিদ ,উনারা কেন নিজেদের প্রোফাইলে বা অযথা বার বার উনাদের ছবি দিচ্ছেন ।এই খানে তো কাউকে সমালোচনা করতে একবারও দেখি না। আপনারা পুরুষ বলে ৭ খুন মাফ?"
"আপনারা মেয়েদের ছবি দেখলে আপনাদের পর্দা নষ্ট হয় । ইসলামের অনেক লেকসার দেন কিন্তু আপনাদের ছবি দেখা কি মেয়েদের জন্য জায়েজ হয়ে যায় ? সেই খানে কি পর্দা নষ্টের বিধান আসে না ?"
"ছেলে/মেয়েদেরকেও বলব আপনারাও এতো সেলফি ফোনের তোলা ছবি দিয়ে দেশে বিদেশে পুরুষ/ মহিলাদের মাথা নষ্ট করে প্রবাসী /দেশি পরিবার গুলোতে আর নদীর পাড় ভাঙ্গনের মতন সংসার ভাঙ্গার মত উত্তাল ঢেউ তুলবেন না ।প্লিজ ।"
পুরুষের ডাবল স্টান্ডার্ড দেখে কয়েকজন পর্দানশীল বোনের তীর্যক কিন্তু যৌক্তিক কয়েকটি মন্তব্য তুলে ধরলাম। ভায়েরা আমার, কি জবাব দেবেন?
এইবার আমার কিছু কথা। আপনি কেন ফেসবুকে ছবি দিচ্ছেন? নিজেকে অন্যের সামনে প্রেজেন্ট করা, তাইতো? আপনি কোথাও ঘুরেছেন, হরেক রকমের লাক্সারিয়াস খাবার খাচ্ছেন, ফেসবুকেও বিলাচ্ছেন, বিবাহ বা যাবতীয় অনুষ্টানের সরব উপস্থিতির জানান দিচ্ছেন, অসুস্থ শরীর নিয়ে বেডে শুয়ে আছেন অথবা কাউকে ব্লাড দিচ্ছেন ইত্যাদি ইত্যাদি কারণেইতো?
কিন্তু আপনার এইসব দেখে অন্যের কি লাভ? তার চাইতে আপনার চেহারা সুন্দর হলে ভেতরে জ্বালা বাড়বে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আপনার ভেটকি মার্কা হাসি এবং আড়ম্বরপূর্ণ উপস্থিতি দেখে তার ভেতরে সাধ্যাতীত ইচ্ছেগুলো জেগে উঠবে, দামী সব খাবার দেখে নিজের দৈন্যদশার কথাই মনে পড়বে, আর যখন বলছেন অসুস্থ, তাতেই বুঝে নেবে আপনার অবস্থা, ছবি দেয়ার কি প্রয়োজন! এছাড়া আর কি কল্যাণ করতে পারছেন তার?
যখন সবাই সেলফীর নামে নিজেদের অন্যের সামনে নিজেকে আরো থেকে আরো বেশি এট্রাক্টিভ করে প্রেসেন্ট করায় ব্যস্ত তখন কিছু ভাই বোন প্রদর্শনেচ্ছা থেকে বিরত থাকতে অনন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আপনি পারেন তাদের প্রচেষ্টায় হেল্প করতে, কিন্তু তা না করে নিজেই যখন প্রদর্শনেচ্ছায় ডুবে থাকেন, তখন তারা যে বড়ই একা হয়ে পড়ছে!
ইসলাম বিরোধী শক্তি রাত দিন খেটে মরছে আবৃতকে অনাবৃত করতে, খুলে ফেলতে সব লজ্জার বাধন, ভেঙ্গে দিতে সব নিয়ম কানুন, প্রমাণ করতে দৈহিক সৌন্দর্যও শ্রেঠত্বের মাপকাঠি, তখন আপনার সহযোগিতা না পেলে যে বোনদের প্রচেষ্টা ভেস্তে যেতে পারে। কারণ সেওতো মানুষ। তারওতো ইচ্ছে হয় এই সুন্দর রূপ যৌবনকে সবার সামনে নিয়ে আসতে, বাহ বাহ পেতে কার না ভালো লাগে।
এটা ঠিক যে, মেয়েদের ছবি ছেলেদের যতোটা আকৃষ্ট করে, ছেলেদের ছবি মেয়েদের ততটা করে না, কিন্তু একেবারেই করে না, তা কি ঠিক? আমি মানছি, ছেলেদের ছবি ফেসবুকে দিলে ফেতনা বা পর্দা লঙ্ঘনের আশঙ্কা কম, তাই বলে ছবি দেয়াটাকে ঢালাওভাবে জায়েজ করে নেয়া কতটা যৌক্তিক অথবা বিধিসম্মত? হ্যাঁ, মানুষকে উৎসাহ দিতে, ভালো কাজে উদবুদ্ধ করতে সামাজিক কল্যাণমূলক কিছু কাজের গ্রুপ ছবি দিতেই পারেন, কিন্তু দল বেঁধে আনন্দ মাস্তি অথবা ব্যক্তিগত ছবি ঘন ঘন পোস্ট করা একটা বাতিক। এই বাতিকটা একসময় আমারও ছিল, আলহামদুলিল্লাহ্, এখন রোগ নিয়ন্ত্রণে।
ভায়েরা আমার, সেদিন আর কিছুই করার থাকবে না, যখন বোনেরা ফেসবুকে ছবি দেয়ার প্রতিযোগিতায় আপনাদের কাতারে শামিল হবে। এখন শুধু উত্তাম ছড়াচ্ছে, আপনার আবেগে লাগান দিন, নয়ত তাদের আবেগও দড়ি ছিড়ে বের হবে, গোটা মানুষটাই হয়ে যাবে বল্গাহীন। অতএব সাধু সাবধান!
বিষয়: বিবিধ
৭৬৫৬ বার পঠিত, ২৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ফেসবুক আসার ফলে মানুষের ছবি তোলার হার বহুলাংশে বেড়ে গেছে । যেখানে আগে ১ টা ছবি তুলতো , ফেসবুক আসার ফলে লোক দেখানোর জন্য তারা এখন ১০০০০ ছবি তোলে । নিজেকে জাহির করার জন্যই এসব করা হয় বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ।
মেয়েদের দিকে দৃষ্টি পড়লে তা নামিয়ে নেবার কথা বলা আছে এবং এর একই কথা মেয়েদের জন্যও বলা আছে ।
ছেলেদের ব্যাপারে বলা হয় যে , যেহেতু কোন মেয়েকে দেখলেই একজন ছেলের সেক্স করার বাসনা জাগে তাই হয়ত এরকম বিধান এসেছে
আর মেয়েরা এটা দাবী করে যে ছেলেদের দেখলে উনাদের এরকম কিছু জাগে না বলে ছেলেদের দেখা উনাদের জন্য তেমন রেস্ট্রিকটেড নয় যেমনটা ছেলেদের জন্য ।
ছবি তোলার ব্যাপারে এবং এতে বিভিন্ন পোজে ছবি তোলার ক্ষেত্রে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে লক্ষকোটি গুন এগিয়ে । মূল লক্ষই হচ্ছে এদের নিজেকে একজন পুরুষের সামনে প্রেজেন্ট করা এবং অন্য মেয়েদের চোখে ঈর্ষা জাগানো ।
প্রয়োজন ব্যতিরেকে ছবি তোলা এবং তা প্রচার করে নিজেকে জাহির করা - কোনটাই ভাল নয় । কিন্তু ফেসবুকে যখন নেমেছেন তখন তো এসব নীতিবাক্য প্রচার করা ভন্ডামীর লক্ষণ ।
আপনার লেখার বিষয়ে ভিন্নমত পোষণের সুযোগ নেই!
আমি নিজেও তো এই রোগে আক্রান্ত!
ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহ!
আপনাকেও ধন্যবাদ। জাযাকাল্লাহু খাইর
প্রায় ৬মাসের মাথায় প্রতিউত্তর!
এটা একটা ভয়াবহ ব্যাধির আকারে সমাজ কে ছেঁয়ে আছে, ফেসবুক, নতুন আধুনিক মোবাইল গুলোর কারণে এটা এখন সহজতায় পরিণত হয়েছে।
আল্লাহা আমাদের সুবুদ্ধি দিন। শুকরিয়া
যথার্থই বলেছেন, বিষয়টা নিয়ে কথা বললেই বরং অবাক হয়।
আমিন।
নিজের ছবি বেশী তোলাটাও মানসিক রোগ। নারসিসিজম এর একটা হালকা রূপ।
ব্যাক্তিগতভাবে আমার কাছে মনে হয়
'ফেইসবুক (ঠিক যেমন নেশা দ্রব্য মদ ইত্যাদি) এর ভাল কিছু গুন থাকার পরও এর খারাপ কিংবা মন্দ অংশ অনেক অনেক বেশী।
সো মুসলিম মাত্রর ই সুযোগ থাকলে এর থেকে বের হয়ে আসা উচিত। আর আপনার সাবজেক্ট মেটার ও কনক্লুশান যথার্থ হয়েছে। ধন্যবাদ।
'ফেইসবুক (ঠিক যেমন নেশা দ্রব্য মদ ইত্যাদি) এর ভাল কিছু গুন থাকার পরও এর খারাপ কিংবা মন্দ অংশ অনেক অনেক বেশী।
আমিও আপনার সাথে একমত
সুন্দর মূল্যায়নের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
আপনাদের দোয়া পাশে থাকলে আল্লাহ চাহেতো নিশ্চয় কাজে লাগাবো
ধন্যবাদ আপনাকেও
মন্তব্য করতে লগইন করুন