মুদী দোকানদার থেকে ব্লগার ‘নূর আয়শা আব্দুর রহিম’, আপনিই সফল, প্লিজ ব্লগে ফিরে আসুন!
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৫:৪৮:০২ বিকাল
যাবতীয় কাজ শেষ করে ঘুমাতে যাব, লোভ হল একবার ব্লগে চোখ বুলিয়ে আসি। এটা এখন আমার রুটিন মাপিক কাজ, প্রতিদিন অন্তত একবার করে হলেও ব্লগে আসি, পড়ার জন্য নয়, জাস্ট দেখার চেষ্টা করি, কারা পোস্ট দিয়েছে, কি বিষয়ে, কারা নিয়মিত আসছে আর কারা অনিয়মিত হতে হতে আঁখির আড়াল হয়ে মনেরও আড়াল হতে বসেছে। রাত তখন একটা। ঢুকেই দেখি দুই দুইটা স্টীকি পোস্ট! ব্লগের স্বরূপে ফিরে আসা বেশ লাগল। কিন্তু কয়েক সেকেন্ড পরেই ‘প্রস্তুত করে রাখা ভাতের উপর ছাই পড়ার’ মত আমার আনন্দ বিষাদে রূপ নেয়। আমার অত্যন্ত প্রিয়, শ্রদ্ধেয় ব্লগার ‘নূর আয়শা আব্দুর রহিম’ ব্লগ ত্যাগের ঘোষণা দিয়ে বসে আছে! উনার পোস্ট পড়ে স্পষ্ট কোন কারণ খুঁজে পেলাম না। তাহলে সারা ব্লগ জুড়ে দাপিয়ে বেড়ানো সরব ব্লগার ভাইটির হঠাৎ চলে যাবার ঘোষণা কেন?
উনার লেখায় ‘সফলতা’ ও ‘ব্যর্থতা’, এমন কিছু শব্দের উল্লেখ পেয়েছি, যার আগা মাথা কিছুই বুঝি নি। উনি কি বুঝাতে চেয়েছেন, উনিই ভাল জানেন। তবুও উনার যদি মনে হয়ে থাকে উনি ব্যর্থ ব্লগার, সফলতার মুখ দেখতে না পারাই চলে যাবার কারণ, তাহলে শুধু এই কারণে উনাকে চলে যেতে দিতে পারি না!!!! কেননা আমি ভাল করেই জানি এবং আপনাদেরও জানিয়েছিলাম, উনি ব্যর্থ নন, একজন সফল ব্লগার। ব্লগে লেখালেখির জন্য উনার চেষ্টার জায়গা দেখলে, এমন একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে কিনা বিস্ময়ে হতবাক হবে না।
উনার সম্পর্কে আমার একটা লিখা নিচের লিংকে-
Click this link
আপনারা হয়ত জেনে থাকবেন, ‘নূর আয়শা আব্দুর রহিমের’ লেখাগুলোতে বানানে অসংখ্য ভুল থাকতো, বোধ করি এখনও আছে। প্রথম দিকে আমি কিছুটা শোধরেতে দিতাম, আর ভাবতাম, একজন ব্লগার বানানে এতো ভুল করে, একবারও কি বানানের দিকে নজর দেওয়ার সময় হয় না! আরও অনেক ব্লগার উনার বানান নিয়ে কথা শুনিয়ে দিত। তবুও বেচারার বানানে তেমন পরিবর্তন আসত না। তখন আমি উনার সাথে খোলামেলা কথা বলি আর জানতে থাকি একজন মানুষের মনের কোণে লুকিয়ে থাকা কষ্ট যন্ত্রণায় ভরপুর অব্যক্ত কথাগুলো।
যতই জানি, ততই শ্রদ্ধায় হৃদয় বিগলিত হয়ে ওঠে। এমন মানুষের লেখার প্রতিটি লাইনে শব্দের বানানেও যদি ভুল থাকে তবুও তা ক্ষমার যোগ্য। সে যে লিখতে পারে, সুন্দর ভাবনাগুলো চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলে এটাই তার অন্যসব সীমাবদ্ধতাকে ছাড়িয়ে যায়।
যে মানুষটি ক্লাস সিক্স শেষ করার আগেই পড়াশোনার ইতি টানে বা টানতে বাধ্য হয়, তারপর একটা দীর্ঘ সময় কাটে মুদী দোকানে, সে মানুষটি এখন ব্লগার। গত তিন চার বছর ধরে লিখেই যাচ্ছেন নন স্টপ। তার বানানে ভুল না হওয়া অস্বাভাবিক বরং ভুল হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, বানানে ভুল থাকলেও তার অধিকাংশ লেখাই চিন্তার গভীরতা, যুক্তি, বিচক্ষণতার দিক থেকে অনেক বেশি ইর্ষণীয়। উনি এমন অনেক জিনিস তুলে নিয়ে আসেন অথবা ভাবনার প্রকাশ ঘটান, শিক্ষা দীক্ষায় এতোদূর আসার পরেও আমাদের পক্ষে সেসব বিষয়ে চিন্তা করাই সম্ভব হয়ে উঠে না। শৈশব কালে মুদী দোকানে বসে উনার লেখা একটা কবিতায় উনার চমৎকার ভাবনার প্রকাশে চমৎকৃত হতেই হয়। যা আমি এডিট করে নিচে উপস্থাপন করলাম-
---ক্ষুধা----
পেটের ক্ষুধা নিবারণে চাই নুন ডাল ভাত
মনের ক্ষুধা নিবারণে চাই শিক্ষার আলোকিত প্রভাত।
সাধ্য নেই যার, সে কি পাবে বই কলম খাতা?
শিক্ষার ক্ষুধায় আজ মনে বড় ব্যথা।
সময় শেষে বুঝেছি ছিল শিক্ষার বড় প্রয়োজন
অনুশোচনায় ঠুকরে কাঁদে এই অশিক্ষিত মন।
কে শিখাবে এই সময়ে কোথায় পাব সার্টিপিকেট
সময় শেষে দেখেছি জীর্ণ শীর্ণ শূন্য পকেট!
যত স্বাদ , নেই তত সাধ্য, কি করে জীবন গড়ি?
মনটা আজ অন্ধকার পরিত্যাক্ত বাড়ি!!
যে বাড়িতে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষার আলো,
সে মনের সিদ্ধান্ত কি করে সঠিক হয় বলো.!
পেটের ক্ষুধা নিবারণে ঘৃণা লজ্জা মাথা খায়
শিক্ষাহীন মন নিয়ে বেঁচে থাকা দায় ।
খুব সামান্য শিক্ষা নিয়ে যে মানুষটা ব্লগের কল্যাণে অনেকটাই স্বপ্রণোদিত হয়ে অনন্তর লেখালেখির চেষ্টা অব্যাহত রাখছেন, লেখনীর মাধ্যমে সত্য ন্যায়ের পক্ষে কলম চালিয়ে যাচ্ছেন, মন্তব্য প্রতিমন্তব্যে আড্ডা দুষ্টামি করে পরিবেশটাকে আনন্দ মুখর করে রাখছেন, সে মানুষটা হঠাৎ কোন জানা কারণে দৃশ্যের আড়ালে চলে যাবেন, আর আমি উনার একজন স্নেহভাজন হয়েও উনার প্রস্থান দেখব, এ হয় না! আমি উনাকে পছন্দ করি, আমাদের মধ্যে সুখময় ভ্রাতিত্বের বন্ধন আছেন, সে ভ্রাতিত্বের জোরে, ভালবাসার জোরে উনাকে আটাকনোর চেষ্টার অংশ হিসেবে আজকের লেখা। আমি আশাবাদী, আমার এই লিখা পাবার পর উনি পুনরায় ব্লগে আসবেন, একজন ব্লগার হিসেবে ব্লগের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে যা কিছু করেছেন, তারই ধারাবাহিকতা বজায়ে রাখবেন।
যৌক্তিক কারণ ছাড়া একজন ব্লগারেরও ব্লগ ছেড়ে চলে যাওয়া আমার কাছে কাম্য নয়। জানি, নতুনরা আসবে, পুরনোরা চলে যাবে, যেতেই হবে, এটাই জগতের নিয়ম, আজ আমরা আছি, এক সময় থাকব না, আমাদের শূন্য জায়গাগুলো কেউ না কেউ দখল করবে। কিন্তু অসময়ে চলে যাওয়া মেনে নেওয়া কঠিন। অনেক জাত ব্লগার ছিল এই ব্লগে, আজ তারা নেই, শুধুই স্মৃতি হয়ে মাঝে মাঝে মনের চোখে ভেসে উঠে। এটা মেনে নেওয়া, ভারাক্রান্ত মনকে সান্ত্বনা দেওয়া খুব কষ্টকর যে, এক সাথে থেকে আড্ডা গল্প, ভাললাগা, ভালবাসায় টুইটুম্বুর বিরাজিত পরিবেশ থেকে আকস্মিক প্রিয়জনের বিদায় অথবা না বলে না কয়ে উধাও হয়ে যাওয়া।
এমন অনেক ব্লগার ছিলেন, এইতো কিছুদিন আগেও যাদের পদচারনায় ব্লগপাড়ায় আনন্দ মুখর পরিবেশ বিরাজ করতো, আজ তাদের অধিকাংশই উধাও, নাম উল্লেখ করছি না, তবে সংখ্যাটা অনেক বড়। এখন যে তেমন পরিবেশ নেই, তা নয়, এখনো আছে, নতুনরা নতুনদের নিয়ে ব্লগ মাতিয়ে রাখে, তবে তারা থাকলে নতুনরা আরো বেশি কিছু নিতে পারতো ব্লগ থেকে, আমাদেরও তাদের জন্য মনে হাহাকার সৃষ্টি হত না।
নুর আয়শা আব্দুর রহিমসহ সকল ব্লগারদের উদ্দেশ্যে করজোড়ে অনুরোধ, যেখানেই থাকেন, যত দূরেই যান না কেন, এই ব্লগ, ব্লগের প্রিয়জনদের টাচে রাখুন। আপনি চলে গেলে, একাকীত্বের কষ্টটা শুধুই আপনার একার, অথচ আপনাকে হারিয়ে শূণ্যতার কষ্ট কিন্তু সবার। তাহলে নিজের কষ্টটার চাইতে সবার কষ্টটা নিশ্চয় বড় করে দেখা উচিত। তাই নয় কি? সবশেষে বলব, ‘বিদায়ের বাণী বলা অতি সহজ, মেনে নেওয়া অত্যন্ত কঠিন’। অতএব এমন কঠিন, ভারী জিনিসটা আমাদের উপর চাপিয়ে দেবেন না!
বিষয়: বিবিধ
১৮৭৩ বার পঠিত, ২৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এ রকম ভালোবাসা ভাইবোন আত্মীয় স্বজন হলেও বর্তমান সময়ে খুঁজে পাওয়া মুসকিল।
যাই হোক আপনাদের ভালোবাসা দির্ঘ্য থেকে দির্ঘ্য হোক এটাই প্রত্যাশা।
আশা করছি আপনাদের প্রিয় আব্দুর রহিম ভাই আপনাদের ভালোবাসা ভরা বুকে ফিরে আসবেন। ধন্যবাদ।
না, আমরা কোন আত্মীয় নই, একজন আরেক জনকে ইহ জন্মে এখনো দেখিনি, আমাদের পরিচয়, ভাললাগা ভালবাসা এখানেই, তবুও আমরা আত্মার আত্মীয়।
আপনার অভিভূত হওয়া দেখে মনে হচ্ছে আমাদের পারস্পরিক বন্ধন অন্য সবার চাইতে একটু আলাদাই।
আপনার প্রত্যাশা বাস্তবে রুপাইত হোক।
আল্লাহ চাহেতো নিশ্চয় আসবেন, নয়তো উনার একদিন, আমার যে কয় দিন লাগে!
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান উপস্থিতি এবং সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
আমিও সেই প্রত্যাশাই করি। উনি ফিরে আসবেন।
আপনার উপস্থিতি খুব ভাল লাগল, ভাললাগা অব্যাহত রাখুন।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ নেবেন।
আপনার বিশেষ উপস্থিতি এবং সমহত জ্ঞাপন সমেত মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ বোনটি।
দাম্পত্য জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বুঝি!
রহিম ভাইয়ের বিয়োজনে সমব্যথিত, দেখি শুক্রবারে দেখা করে কিছু করা যায় কিনা!
সুন্দর ও দরদমাখা পোষ্টটির জন্য শুকরিয়া।
না সে ব্যাপারে ব্যস্ততা নেই, ব্যস্ততা অন্য জায়গায়। আমার কি সাধ হয় না, সবার সাথে দিব্যি মজা করি, কিন্তু হয়ে উঠে না। তবে হয় না বলে যে হবে না, এমনও কিন্তু না।
তাই করবেন, আচ্ছামত.. দিবেন!
আপনার উপস্থিতি আমাকে বাড়তি আনন্দ দেয়, জানেন তো? তাই সবসময় টাচে রাখবেন এই কামনা।
আমরা সবাই আমাদের আব্দুর রহিম ভাইকে অনুরোধ করছি ফিরে আসার জন্য! আশাকরি আমাদের তিনি আশাহত করবেন না!
শুকরিয়া আপনাকে সময়োপযোগী পোস্টটি লিখার জন্য!জাযাকাল্লাহ খাইর!
আমার ব্লগে আপনাকে শুভেচ্ছা ও স্বাগতম। অনেক দিন পর, তবুতো এলেন, সত্যি ভাল লাগল দেখে। ভাললাগা অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টায় সহযোগিতা কামনা করছি।
তিনিতো আসবেনই, সাথে চৌদ্দ গোষ্ঠীকেও আনব। পাইছেডা কি! হঠাৎ করে বিবির জন্য মনের নদীতে ঢল নামছে তাই এতো বাইরম বাইরম করে!
আল্লাহ চাহেতো আপনার আশা পূর্ণ হবে।
আপনার দূর্লভ উপস্থিতি দিয়ে আমাকে ধন্য করার জন্য শুকরিয়া। জাযাকাল্লাহু খাইর।
কেউ যখন আমার প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে চলে যায়, তাহলে তাকে আটকে রেখে আমার কাজ কি। কিন্তু দুঃখ, কষ্ট নিয়ে যেতে চাইলে একবার নয়, হাজারবার তাকে আটকানো উচিত, তাই নয় কি?
অনুরোধ রাখলাম....ব্লগে লুকোচুরি বাদ দিয়ে নিয়মিত হবেন। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন, ধন্যবাদ।
পড়ার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ।
আমার অনুভূতি যত্ন করে রেখে দিচ্ছেন শুনে খুব প্রীত হলাম।
ইনশাআল্লাহ, আপনার অনুরোধ রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
আপনিও অনেক অনেক ভাল থাকুন।
কিন্তু এভাবে ঘোষণা দিয়ে চলে যাওয়া আরো বেশী কষ্ট জাগায়!
আপনার উৎসাহী সুন্দর আহবান আশা করি উনাকে ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখবে!
আল্লাহ তাওফিক দিন,আমিন!
চুপিসারে যাওয়ার চেয়ে ঘোষনা দিয়ে যাওয়া অনেক ভালো, আমরা অন্তত জানতে পারি তিনি ভালো আছেন অথবা খারাপ।
ওই বদটা এসেছেও। উনি আমায় খুব ভালোবাসেন, আমার প্রেসারেই খুব দ্রুত আসতে বাধ্য হয়েছেন, যদিও তা কেউ জানে না। এই পোস্ট দেয়া ফর্মালিটি, আগেই ফেসবুকে বুঝিয়ে কাবু করে ফেলেছি।
আপনার আহ্বান যেন সকলের আহ্বান হয়..
ধন্যবাদ.
(এই মন্তব্য করার সময় দেখলাম উনি ফিরে এসেছেন ব্লগে। অনেক ধন্যবাদ দু'জনকে)
মন্তব্য করতে লগইন করুন