অভিশপ্ত থার্টি ফার্স্ট নাইটঃ বন্যদের বুনো উল্লাস, এক নিরপরাধের নির্মম পরিণতি
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৬:৫৪:২৭ সন্ধ্যা
লাইভ কনসার্ট, সাউন্ড বক্স, হোপারের উচ্চ আওয়াজ, আতজবাজি ফটকা। ঘরে কি মন বসে! দর্শক শ্রোতা মাতাবেন ‘চুমকি চলেছে একা পথে’ খ্যাত গায়ক আউয়ুব বাচ্চু, সবচেয়ে লম্বা ব্যান্ড মাইলস। মিনার, সুবিমল এবং সাইমুম তখনও বাসায়। আজ সবাই মিলে বিয়ার, বিশেষ পানীয় পান করবে। মিনার দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগে। বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে মাঝে মধ্যে সিগারেট খেলেও বিয়ার মদ গেলেনি কখনো। তাই আজ মন সায় দেয়না। আবার ভাবে, একদিনইতো। নববর্ষের প্রথম প্রহরে একটু খেলে কি এমন হবে!
কনসার্ট থেকে বেশ কিছুটা দূরত্বে তিন বন্ধু মনের সুখে পানীয় গিলেই চলেছে। বাচচুর গানের তালে তালে উপস্থিত ভক্তকূল নেচে গেয়ে আবেগ উচ্ছ্বাসের আতিশয্যে দিশেহারা। ‘স্নেহার মোবাইলে রিং বেজে উঠে। বাবার ফোন! ভীড় ঠেলে বেরিয়ে কনসার্ট থেকে কিছুটা দূরে এসে রিসিভ করে। ৪/৫জন ছেলেও তার পিছু পিছু আসে। ক্ষণিক পর আলো আধারিতে অদৃশ্য হয়ে যায়। কিন্তু না। যখন মোবাইলে কথা বলায় ব্যস্ত তখনই একা পেয়ে ৪/৫জন যুবক তার মুখ চেপে ধরে জোর জবরদস্তী করে সম্ভ্রমহানীর চেষ্টা করে। মুখ থেকে বহু কষ্টে হাত ছাড়িয়ে চিৎকার দিলে লোকজন জড়ো হতে দেখে যুবকেরা পালিয়ে যায়। কিছুটা পাশেই মদ পান রত তিন বন্ধুর দু'জন বিপদ বুঝে দৌঁড় লাগায়। থেকে যায় মদ পানে নবাগত টলতে থাকা মিনার। হাতের কাছে পেয়ে ভিক্টিমের এ্যাটাকার ভেবে উত্তেজিত জনতা গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।
পরেরে দিন সব পত্রিকা, টিভ, রেডিওর প্রধান সংবাদ, ‘থার্ট ফার্স্ট নাইটের অনুষ্ঠানে মাতাল, বখাটে মিনারের হাতে যৌন নিপীড়ণের শিকার স্নেহা নামের এক তরুণী’। গণধোলাইয়ের পর পুলিশ কর্তৃক মরার উপর খাড়ার ঘা! অবিরাম পিটুনি খেয়ে মিনার ভাবলেশহীন। বুঝেই উঠতে পারছেনা ঠিক কোন অপরাধে পৃথিবীসুদ্ধ মানুষ তার ছোট দেহটার উপর ঘৃণা আর প্রচন্ড রাগে ঝাপিয়ে পড়ল। পুলিশ একটিবারও জিজ্ঞেস করেনা, ‘কেন তুই মেয়েটার উপর আক্রমণ করেছিস? সজোরে হাত, পা, লাঠি চালায় আর বলে “ শিকার কর, তুই মেয়েটাকে লাঞ্চিত করেছিস”। মিনার ভেবে কুল পায়না, কেন অপরাধ না করেও শিকার করবে! নীরবে সহ্য করে যায় মারপিট।
আদালতে পুলিশ রিমান্ড আবেদন করে। পাঁচ দিন মঞ্জুর হয়। রহস্যজনক কারণে ভিকটিম তথা স্নেহা আদালতে অনুপস্থিত থাকে। রিমান্ডের নামে মিনারের উপর চলতে থাকে আবারও অত্যাচারের স্ট্রিম রোলার। কিছুতেই শিকার করানো যাচ্ছেনা। এইবার নয়া কৌশল অবলম্বন করে, আর তা হল, পুলিশ মিনারকে বলে, “বাড়িতে তোর যুবতী বোন আছে, তোর বোনের ধর্ষণের খবর শোনতে কি খুব ভাল লাগবে? তবে শিকার করে নেয় তুই স্নেহাকে লাঞ্চিত করেছিস। নয়ত তোর বোনের পরিণতি স্নেহার চাইতে ভয়াবহ হবে। আমরা জানি তুই অপরাধ করিস নি, তবু তোকে শিকার করতেই হবে কেননা যারা অপরাধ করেছে তারা খুব ক্ষমতাবান লোকদের ছেলেপেলে, তাদের ক্ষমতার কাছে আমরা জিম্মী। যদি শিকার না করিস তাহলে তোর মা বোনের ইজ্জত ওরা ধুলোয় মিশিয়ে দিবে”।
রিমান্ড শেষে মিনারকে আদালতে তোলা হয়। বিস্ময়কর হলেও সত্য আজকেও স্নেহা আদালতে অনুপস্থিত। ভিকটিম এবং ঘটনার একমাত্র সাক্ষী স্নেহা স্বয়ং। মিনারকে সবাই মদ্যপ অবস্থায় দেখেছে, কিন্তু স্নেহাকে আক্রমণ করতে কেউ দেখেনি তবুও আদালত মিনারের বিরুদ্ধে কঠিন সাজা ঘোষণা করে। বর্তমান সমাজে নারী নির্যাতনের বিষয়টি এতোটাই বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে গেছে, একবার কোন পুরুষের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করলেই ছি ছি রব পড়ে যায়, দোষ করুক অথবা না করুক। কঠিন থেকে কঠিন শাস্তির দাবীতে লুঙ্গির কোঁচা বেধে, নারীরা কোমরে শাড়িয়ে পেঁচিয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। কেউবা অভিযুক্ত পুরুষটির বিশেষ অঙ্গ কেটে ফেলার দাবীও তুলে। কেউ চিন্তা করে না অভিযুক্ত নির্দোষও হতে পারে। অতএব মিনার ভাগ্যের নির্মম পরিহাস মাথা পেতে নেয়।
পাঁচ বছর পর। বিবেকের ধ্বংসনে অসহ্য স্নেহা। আর কতকাল মিথ্যা বয়ে বেড়াবে! সমাজের উঁচু তলার হুমকী ধমকি আর সামান্য কয়টা টাকার লোভে কঠিন সত্যকে মাটি চাপা দেয়। নিরপরাধ একজন মানুষ কে ঠেলে দেয় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। সত্যটা এইবার প্রকাশ করবেই, আসুক যত হুমকী ধমকি। মিনারের উকিলের মাধ্যমে আদালতকে অনুরোধ করে মামলাটি পুনরায় শুরু করতে।
কাঠগড়ায় স্নেহাঃ
“সেদিন কনসার্টের শুরুতেই ৪/৫জন ছেলে আমাকে ফলো করে। অশোভন অঙ্গভঙ্গী এবং কুতসিত মন্তব্য করে। তাদের গতিবিধি আমার ভাল ঠেকেনা। মোবাইলে বাবার কল আসলে আমি বের হলে তারাও পিছে পিছে বের হয় এবং অদৃশ্য হয়ে যায়। কিছু বুঝে উঠার আগেই কিছু ছেলে আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ে, ধ্বস্তাধস্তিতে তাদের চেহারা স্পষ্ট দেখতে না পেলেও দুএকজনের মুখ চিনে নিয়েছি। এরা ঐ ছেলেগুলোই। কাঠগড়ায় দাঁড়ানো মিনার তাদের মাঝে ছিলনা। ঘটনাস্থল থেকে সে বেশ কিছুটা দূরে ছিল। সেদিন প্রকৃত অপরাধীরা আমিসহ আমার পরিবারের সবাইকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকী দেয়। তখন আমাদের আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য করা হয় তাই আদালতে সত্যটা জানাতে পারিনি।
আজ সব ভয়কে উপেক্ষা করেই এসেছি। সব কিছুর উপর আল্লাহ সর্ব শক্তিমান। কেউ আমার ক্ষতি করতে পারবেনা যদি আল্লাহ চান আমি নিরাপদ থাকি। রাতে ঘুমাতে পারিনা। আমার একটা সত্য লুকানোর কারণে এক নিরপরাধ যুবক জেলে পচে মরছে। শেষ বিচারের দিন প্রভুর কাছে কি জবাব দেব! আজ বলছি আসল সত্যিটি। মিনার আমার উপর আক্রমণকারী নয়। ঐ ৪/৫জন প্রকৃত অপরাধী। অনুরোধ আদালতের কাছে, মিনার কে মুক্তি দিন”।
অতঃপর-
মিনারের স্বসম্মানে মুক্তিলাভ অন্য দিকে স্নেহার সাহসী ভূমিকার কারণে পকৃত অপরাধীরা ধরা পড়ে। ঘটনার পর থেকে স্নেহা অনুশোচনায় ভুগতে থাকে, নিজেকে অনেক শোধরে নেয়, ভুলেও উশৃংখল আনন্দ উল্লাসের দ্বারে কাছেও ঘেষেন। সুশৃঙ্খল জীবন যাপনে আজ সে অভ্যস্তও। স্নেহার একটা সত্য গোপন করার কারণে মিনারের করুণ পরিণতি হয়, তার প্রায়শ্চিত্ত কি শুধু মুক্তির ব্যাবস্থা করাই যথেষ্ট? স্নেহার কাছে তা যথেষ্ট মনে হয়না। সারাজীবন সুখে দুঃখে মিনারের পাশে থেকে প্রায়শ্চিত্ত করার নিমিত্তে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব করে। মিনারও স্বানন্দে প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং নিজেকেও এইসব নোংরামী থেকে বাঁচিয়ে রাখার প্রচেষ্টায় নেমে পড়ে। উভয় পরিবারের সম্মতিতে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে শিকার আর শিকারী আজ পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রেম-ভালোবাসার মামলা দেয় ঠুকে......
পুনশ্চঃ
স্নেহা এবং মিনার ঘটনার শিকার অতঃপর তাদের মাঝে অনুশোচনা এসেছে বলেই রাইট ওয়েতে ফিরে আসতে পেরেছে। সবার ভাগ্যে তা জুটেনা। কারো কারো ক্ষেত্রে বারংবার ঘটনার বলী হতে হতে জীবনটাকে একেবারেই ধ্বংস করে দেয়। সম্প্রতি থার্টি ফার্স্ট নাইটের উপর কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, নিঃসন্দেহে তা প্রশংশনীয় উদ্যোদ। তবে এটা ভুলে গেলে চলবেনা, নেশাগ্রস্ত মাতাল তরুণ তরুণীদের জন্য এইসব নিষেধাজ্ঞা বিশেষ কাজে আসবেনা। মদের বার বন্ধ থাকবে, কিন্তু মদের চালান বন্ধ করবে কে? যতদিন না তাদের চিন্তা চেতনা মন মগজে থার্টি ফার্স্ট নাইটে ঘটে যাওয়া উগ্র আনন্দ উল্লাসের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিরুপ ধারণা জন্মাবে ততদিন কোন নিষেধাজ্ঞাই তাদের অসামাজিক কার্যকলাপে বাধা হয়ে দাঁড়াবেনা।
শুভবুদ্ধির উদয় হোক।
বিষয়: বিবিধ
১৪৭৪ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন এই সব গজব থেকে । অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন এই সব গজব থেকে ।
আমিন।
পাঠ এবং সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
সবাই তাই শুধু আধাঁর এর অানন্দতেই মত্ত।
ধন্যবাদ মূল্যবান মন্তুব্যের জন্য।
আমরা আশাবাদী, একদিন মুসলমানরা তাদের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করবে ইনশা আল্লাহ।
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7228
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
মারিয়া
পরীবানু
মরুর মুসাফির
পরীবানু ,সততার আলো
অশ্বথমা
অপ্রতিরোধ্য স্বাধীন সমালোচক
পরমা ,নীলমণীলতা
বিলকিস লায়লা
দস্তার
রুপবান
মুক্তিযুদ্ধ ৭১
দ্রাবীড় বাঙাল
লেয়লা ইসলাম
বিলকিস
বাংলা ৭১
ভিক্টোরিয়া
হেলেনা
পল্লব প্রভাতে
খালেদ
রুশো তামজিদ
বারাংগনা
মধুবালা
সখি
ফয়সাল১
মাঝি-মাল্লা, ,
লায়লার
লায়লা০০৭
রাতুল দাস
চকো চকো
সায়েদ-রিয়াদ
বিভ্রান্ত নাবিক
ফাজিল
অপ্রতিরোধ্য স্বাধীন সমালোচক
মুক্তিযুদ্ধ ৭২
দ্রাবীড় বাঙাল
পিচ্চি পোলা
কাওসাইন হক
চাষা
jahed_ullah
নীরু
সাদা মন
সাদা মন
চোথাবাজ
আমি বিপ্লবী
সততার আলো সকাল সন্ধ্যা
এই নেরিকুত্তাকে বেন করা হোক। যার এত নিক ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন