নিয়ন্ত্রণ
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৭:০৯:৪১ সন্ধ্যা
কোথায়, কার কাছে, কার সাথে মিশব, হালাল খাব কি হারাম খাব, তা ডিটার মাইন্ড করার চাবিকাঠি আমার হাতে। আমি আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি অন্যকে নয়। কিছু ধরা বাধা নিয়ম কানুন চাপিয়ে দিলে বাহ্যত মনে হবে নিয়ম অনুযায়ী সব চলছে, দেহ চলছে, মনে চলছে কি? কিন্তু না, কিঞ্চিত কখনো আংশিক আবার কখনো পুরোপুরি বেঠিক চলছে। যতসামান্যই নিয়ম অনুযায়ী চলছে।
বাবা মা চায় সন্তান তাদের নির্দেশমত, স্বামী চায় স্ত্রী তার কথামত, স্ত্রী চায় স্বামী তার ইচ্ছেমত, প্রেমিক চায় প্রেমিকা তার পছন্দমত, আর প্রেমিকা চায় প্রেমিক তার আবদার মত, শিক্ষক চায় ছাত্ররা তার আদেশ নিষেধ মত চলবে। তো, চলছে কি? চলছেনা, চলছেনা বলেই পরিবার সমাজে সন্দেহ, সংশয়, প্রস্পরের প্রতি দোষারোপ, রাগ, ক্ষো্ মনমালিন্য, ত্যাজ্য, বিচ্ছেদের মত ঘটনা ঘটে চলেছে। চাইলেও আমরা অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা যদি না তার শতভাগ ইচ্ছে থাকে। এটাই মোদ্দা কথা।
বাবা মা সন্তান কে আদেশ, নিষে্ধ, উপদেশ দিতে পারেন, পালনে বাধ্য করতে পারেন, সার্বক্ষণিক নজরদারী করতে পারেন না। তা সম্ভবও না। বাবা মা কে কিছু সময় সন্তান থেকে আলাদা থাকতে হয়, ঘুম কাজ কম্ম, চাকুরী করতে হয়। দশ মিনিটের জন্য ও যদি ওয়াশরুমে গিয়ে থাকেন, এই দশ মিনিটেই বাধ্য সন্তানটি অবাধ্য হয়ে যেতে পারে, যা বাবা মায়ের অগোচরেই থেকে যাবে। দিনের এক তৃতীয়াংশের কম সময় সন্তানের সাথে ব্যায় করতে পারেন বাবা মা। বাকী সময় সন্তান ঠিক কি করে তা নিশ্চিতভাবে বুঝা দুঃসাধ্য।
স্বামীর সামনে স্ত্রী অনুগত বাধ্য লাজুক বধুটি। স্বামীর অবর্তমানে তেমনি বাধ্য নাকি পাড়াবেড়ানী, তা আল্লাহ ভাল জানেন। স্বামীর বুঝা মুশকিল। কেও হয়ত বলবে, “তোমার বউ ঘরে থাকেনা, পাড়া বেড়ায়, বেটাছেলেদের সাথে হেগের হেগের বেগের বেগের ঠাট্টা মশকারিতে মেতে থাকে”। কিন্তু কান কথায় বিশ্বাস কি, নিজের চোখে না দেখলে। মিথ্যাওতো হতে পারে। আবার বউয়ের সামনে স্বামী ভেজা বেড়াল, ভাজা মাছটি উলটে খেতে জানেনা। সতচরিত্রবান সৎ মানুষটি। ঘরের বাহিরেও কি ঠিক চরিত্রবান ভদ্র মানুষ টি? “আমায় ছাড়া আর কোন নারীর দিকে কুনজরে তাকাবেনা, অফিসের মেয়ে কলিগদের সাথে উঠাবসা করবেনা, বাজে বন্ধুদের আড্ডায় যাবেনা’ স্ত্রীর এমন আবদার স্বামী কতটকুক রাখে, নাকী সব ভুলে বিপথেই গমন করে তা স্ত্রী জানবেন কেমন করে?
প্রেমিক চায় প্রেমিকা তার মর্জিমত চলুক। কেমন করে চলবে তা প্রেমিকই নির্ধারণ করে দেবে। প্রেমিকাও ঘাড় নেড়ে সায় দেয়, হুকুম জাহাপনা। তারপর প্রেমিকের মর্জিমত নাকি হরেক জায়গায় হরেক রকম প্রেমিক কর্তিক নিষিদ্ধ মানুষের সঙ্গ দেয় প্রেমিক পুরুষটি জানবেন কেমন করে? কতটুকু সময় প্রেমিক থাকের তার প্রেয়সীর কাছে? দিনের খুব সামান্য কিছু সময়। বাকী লম্বা সময়টাতে অনেক কিছুই হতে পারে। রাতদুপুরে ফোনালাপ শেষে হাই তুলে প্রেমিকা বলে, “এই ঘুম পাচ্ছে, এখন ঘুমাই তবে”। গুড নাইট, সুইট ড্রীম। নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে প্রেমিক, আর প্রিয়াটি না ঘুমিয়ে তৃতীয় কারো সাথে রিলাক্স মোডে কথা বলছে। ঘুম ভেঙ্গে প্রেমিক বরের সন্দেহ হল, প্রিয়াটি কারো সাথে কথা বলছেনাতো? দেখিনা। যেই ভাবা সেই কাজ। কল দিলে, একি!!! ওয়েটিং এতো রাতে কার সাথে? আমি ছাড়া কি তবে অন্য কেও???? সকালে জিজ্ঞেস করলে রেডী করা উত্তরঃ “ ভাইয়া বিদেশ থেকে কল দিয়েছিল, ঐ দেশে তখন দিন, তাই……”।
অন্য রাতে কল দিলে বেস্ত দেখায়। আবারো মাথা নষ্ট! এতো রাতে কার সাথে? প্রশ্ন করলে “ ও হা, ব্যাস্ত ছিলাম সত্যি, আমার বান্ধবী কল দিয়েছিল, খুব ঘনিষ্ঠত তাই রাত বিরাত বাছ বিচার করেনা, যখন তখন ফোন দিয়ে ফাজলামো করে”। অন্য একদিন রাতে কল দিলে বন্ধ দেখায়, প্রশ্ন করলে, “ ও হা, ঠিক ধরেছ, বন্ধই ছিল, তোমার সাথে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়ি, চার্জ করতে ভুলে যাই”। এইবার প্রেমিকার পালটা প্রশ্ন, আচ্ছা, “তুমি এতো সন্দেহ বাতিক কেন”? আরেক দিন প্রেমিক কে, “ এই শোননা, আজ রাতে কথা হবেনা, মা আবদার করেছে আজ আমার সাথে ঘুমাবে, কল দিলে মায়ের কাছে ধরা পড়ে যাবো”। এইতো সুযোগ, মায়ের নাম তৃতীয় কারো কাম, মায়ে থাকার অযুহাত দেখিয়ে সারারাত অন্যজনের সাথে ফূর্তি করবে।
এইভাবেই প্রতিনিয়ত আসল প্রেমিক কে বোকা বানিয়ে পাগল বুঝ দিয়ে ছাগল বানিয়ে ভাত না খাইয়ে ঘাস খাওয়ায়। অন্যদিকে ছেলেদের এখন এক প্রেমে পোষায় না, এক সাথে দশটা বিশটা না হলে বড্ড বেমানান লাগে। কলি যুগের চাহিদা, প্রেম হোক হাজারটা, বিয়ে হোক একটা। স্বামী বউয়ের জন্য এড্রেস আর বউ হবে স্বামীর জন্য এড্রেস, আর বন্ধুদের জন্য স্টপেজ, যতক্ষণ স্টপেজে থাকবে, বন্ধুরা ভোগ করবে। প্রেমিকেরা ঠিক একি কায়দায় প্রেমিকাদের সাথে প্রতিনিয়ত ভালবাসার ঢং করে যাচ্ছে। নিশ্চিত করে প্রেমিক অথবা প্রেমিকা, কারো বুঝার সাধ্য নেই প্রিয়াটি কি শুধু তার নাকী অন্য কারো অথবা এজমালী সম্পত্তি?
আপনজনদের সমস্ত কাজে আপনি চাইলেও নিয়ন্ত্রণ বজায়ে রাখতে পারবেন না! আমার কথাই বলি, বাবা মায়ের বাধ্য অনুগত সৎ ছেলেটি আমি। ঢাকা আসার সময় বারবার বলেছেন, “পড়াশোনা ঠিকমত করবে, আল্লাহর পথে চলবে, খারাপ ছেলদের সাথে মিশবেনা”। গত ৫টা বছরে বাবা মায়ের উপদেশগুলো কতটুকু মেনে চলেছি, নাকি বিপথেই চলেছি, তা আমি জানি।কিন্তু বাবা মায়ের পক্ষে কতটুকু জানা সম্ভব? এখনো বাড়ি গেলে আমি সেই বাধ্য ছেলেটি। বুঝার সাধ্য আছে আমি ঢাকাতেও সে বাধ্য ছেলেটি? নাই। তাহলে কি আমরা হাল ছেড়ে দেব? আপনজনদের ভাল কাজে আদেশ, খারাপ কাজে নিষেধ প্রধান করবনা? অবশ্যই করব, এটা আমাদের গুরুদায়িত্ব। মানুষ লোহা নয়, আগুনে পুড়িয়ে নরম করবে, রাবার নয় ইচ্ছেমত বাকা করবে। তাই সদোপদেশ, আদেশ নিষেধ, উত্তম কথা সুন্দর পরামর্শই বেকে যাওয়া মানুষগুলোকে সোজা করার উপায়, এইসব উপায় অবল্মবন করে অনেকাংশে পরিবর্তন আনা যায় তবে একমাত্র উপায় নয়, সোজা হবেই এমনটাও ভাবার প্রয়োজন নেই।
নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন নি বলে মহা হুলুস্থুলু কান্ড ঘটিয়ে বসা বোকামী। যেমন ছেলে মানুষ করতে পারেন নি বলে দিলেন ত্যাজ্য করে, বউ কথা শোনে না বলে দিয়ে দিলেন তালাক সংশোধনের সুযোগ না দিয়ে। আপনি আশাবাদী হতে পারেন, আপনজন আপনার ইচ্ছেমতই চলবে, কিন্তু চলবেই এবং চলতেই হবে, এমন কঠিন মন মানুষিকতা থেকে বেরিয়ে আসুন। নিজে সৎ থাকুন, অপরকে যা বলছেন, তা ঠিক ঠিক নিজের মাঝে বাস্তবায়ন করুন, এটাইতো বড় সান্ত্বনা, কেও আপনার কথা শুনুক অথবা না, কিন্তু আপনার কথা আপনি শোনেছেন, পালন করেছেন অক্ষরে অক্ষরে। আল্লাহ আপনাকে জিজ্ঞেস করবেন না, কতজন মানুষ কে জান্নাতে পাঠাতে পেরেছ। জিজ্ঞেস করবে মানুষের কাছে সৎ কাজের আদেশ ও অসত কাজে নিষেধ প্রধান করেছ কিনা? সুতরাং ভাল কাজে উতসাহ এবং মন্দ কাজ থেকে আপনজনদের বিরত রাখায় আপনার চেষ্টা অব্যাহত রাখুন। আল্লাহ নিশ্চয় হতাশ করবেন না। আপনার আপনজন আপনার মত ভাল মানুষটিই হবে। ইনশা আল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
১২৮৪ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভাল থাকুন।
বিশেষ ধন্যবাদ।
কত জনকে বেহেশ্তে নিতে পরেছি জিজ্ঞেস না করলেও কত জনকে নিতে চেষ্টা করেছি তা কিন্তু আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন৷
আর হা আপনার ভাললাগায় আমি কৃতজ্ঞ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
ভাললাগা অব্যাহত রাখুন।
ভাল থাকুন সবসময় এই কামনা।
নিজেকেই নিজে যদি সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে অযাচিত অনেক সমস্যা হতেই বেচে থাকা যায়! যদিও আমরা তা পারিনা স হজে!
শাসন ও সোহাগের সমন্বিত প্রয়াসে মানুষকে শুধরানোর চেষ্টা চালাতে হবে!!
আপ্নাকেও ধন্যবাদ।
আল্লাহ আপ্ননাকেও নেক কাজের উপর অটল অবিচল রাখুন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন