গোপনীয়তা বলে বেড়ানোর জিনিস নয়!!!!
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৮:৪৯:১৪ রাত
“দোস্ত, তোর বউ একটা জিনিসরে, এমন বউ পেলে আমার জীবন স্বার্থক”! বন্ধুর মুখ থেকে এমন কথা শোনে যদি ভাল লাগে তাহলে শরীর সর্বস্ব বউয়ের নাট বল্টু স্ক্রুর চিত্তাকর্ষক বর্ণনা দিয়ে বেড়ান, তাতে কত লোকের জিব্বার জল খসে পড়ল, কত লোকের ঘুম হারাম হল, তার একটা পরিসংখ্যান করে নিন। আর যদি বন্ধুর এমন আবাল মার্কা নোংরা উচ্চ্বাস প্রকাশে আপনি প্রীত হতে না পারেন তবে আজি এখনই বউ সম্পর্কে অন্যের কৌতুহলে আপনার মুখে লাগাম পড়িয়ে নিন। বউয়ের গোপনীয়তা রক্ষা করুন, বউয়ের সৌনদর্য সবার তরে বিলিয়ে দেয়ার জিনিস নয়, আপনার জন্য সে আমানত, আমানত হেফাজত করুন, বাঘের কাছে হরিনীর বর্ণনা বাঘের ক্ষুধাই বাড়িয়ে তুলে। জানেনতো কথার হাত পা নেই কিন্তু বাতাসের আগে চলে। একটু বেখেয়াল হলে ঘরের কথা সর্বজন শ্রুত হয়ে যায়।
কমন ডায়ালগঃ
“তুই আমার একমাত্র বন্ধু, একটা গোপন কথা বলছি, তুই ছাড়া আর একটা পক্ষীও যেন না জানে”। “ ওকে, কেও জানবেনা, নির্বার থাকতে পারিস, বুক ফাটবেতো মুখ খুলবেনা, প্রমিজ”। বাস হর হর করে পেটের সব কথা ঘনিষ্ঠ বন্ধুটিকে বলে দিলেন। তৃতীয় কোন ব্যক্তি যদি আপনার গোপন কথাটি আপনার সামনে অবতারণা করে (বিষয়টি সম্পর্কে তার একেবারেই জানার কথা নয়) তবে কি অবাক হবেন? অবাক খওয়ার কিছু নেই, খুব সিম্পল। যার কাছে গোপন কথাটি বল্ললেন, সে আপনার ঘনিষ্ট বন্ধু, ভেবেছেন কি তারও ঘনিষ্ঠ বন্ধু আছে বা থাকতে পারে যে আপনার বন্ধু নয়? সেও একি স্টাইলে তার বন্ধুকে বলবে, এ”এক্টা কথা বলব কাওকে বলিস না, আমার অমুক বন্ধুটি একটা কাজ করে ফেলেছে, সে আমাকে বলেছে, আমি তোকে বল্ললাম, কাওকে বল্বিনা কিন্তু”। বাস সে বন্ধুকে, বন্ধু তার বন্ধুকে, তার বন্ধুকে, তার বন্ধু বন্ধুর বন্ধুকে……… গোপন কথাটি বলেই চলেছে। গোপন কথাটি আর গোপন থাকেনা, জনে জনে রাস্ট্র হয়ে যায়। এইভাবেই আমরা যাচ্ছেতাইভাবে যাকে তাকে বন্ধু ভেবে কথার আমানত রাখছি, নিজেও আমানত গ্রহন করে বারংবার ভেঙ্গেই চলেছি। এ সম্পর্কিত কিছু ঘটনা উল্লেখ না করলেই নয়-
ঘটনা-১
সালাম এবং জামিল। কর্মসূত্রে পরিচয়, পরে বন্ধুতা। ঘনিষ্ঠতা বেড়ে গেলে কথাবার্তায় আর রাখডাক থাকেনা। সালাম বিবাহিত আর জামিল অবিবাহিত। দাম্পত্য জীবন সপর্কে জামিলের আগ্রহ সীমাহীন। অসীম আগ্রহকে সসীম করতে সালামতো আছেই, যার ঘরে একটা সুন্দরী বউ আছে। সালাম বউয়ের সাথে শারীরিক মেলামেশার মুখরোচক গোপন সব কথা আবেগের ঠেলায় বন্ধুকে বলে দেয়। বন্ধু বলে কথা! কথা শোনতে শোণতে জামিলের মাথা ভনভন ঘুরতে থাকে, ভাবীর শরীরের প্রতিটি দিক কোন বন্ধুর বর্ণনায় চোখের সামনে ভেসে উঠে। এইবার নয়া আবদার, ভাবীর মোবাইল নাম্বার চেয়ে বসে। সহজ সরল সালাম বউয়ের নাম্বার বন্ধুকে নিঃসংকুচিত্তে দিয়ে দেয়। বন্ধু বলে কথা, সব আবদার মেটাতে এক পায়ে খাড়া হতে হয়, নয়ত বন্ধুত্বের দাবী মিথ্যা! দেবর ভাবীর খবর নেবে, খুব ভাল কথা। বন্ধুর কাছে দাম্পত্য কাহিনী শোনে মন ভরেনি, নারীর কাছ থেকে না শোনলে কি যথার্থ হয়না, তাই ভাবীর কাছ থেকেও খুচিয়ে খুচিয়ে জেনে নেয় নানান কথা। কৌতুহল নিভেছে, কামনার ঝড় থেমেছি কি? থামেনি, আরো বেড়েছে, তারপর ভাবীর সাথে আনলিমিটেড হাসি ঠাট্টা গিলি গিলি পাপ্পা! বন্ধুর বউ এখন আলাদা লাগেনা, নিজের মনে করেই বিবাহবহির্ভূত অবৈধ সম্পর্ক চালিয়ে যায়। আর সালাম? বেচারা ঘুমিয়ে, ঘুম কবে ভাংবে কে জানে!
ঘটনা ২
দুই ক্লাসমেইট। নাম সাব্বির ও বেলাল। বেলালের সাথে জুনিয়র তিথির প্রেম। মন পাবিতো দেহ পাবিনা। বাংলা ছবির চিরায়ত ডায়ালগ এখন অচল। দেহ বিহীন প্রেম এখন অথর্বের কাজ বলে পরিগণিত। তাই তিথি মনের সাথে বেলালের দেহটাও জুড়ে দেয়। আনন্দঘন মুহুর্তে বেদিশা হয়ে প্রতিরোধক ব্যবস্থা নিতেই ভুলে যায়। কিছু আগে সুখ সাগরে অবগাহন দুঃস্বপ্নে রুপ নেয়। পেটে সন্তান আসার ভয়ে দুজনার কলিজা পানিশূন্য। এতোদিন পর্যন্ত দুজনার প্রেম গোপন ছিল, নিরুপায় হয়ে বন্ধু সাব্বিরের সাথে বিষয়টি শেয়ার করে। ডাক্তারের কাছে গিয়ে সেবারের মত একটা ইউপায় করে নেয়। ঘটোনার একবছর পর সাব্বিরের সাথে বেলালের বাদানুবাদ, তা থেকে বন্ধুতা শত্রুতায় রুপ নেয়। সাব্বির প্রতিহিংসাবশত একবছর আগে তিথি আর সাব্বিরের মাঝে ঘটে যাওয়া অবৈধ সম্পর্কের কথা ফাঁস করে দেয়। ফলাফলঃ বেলাল আর তিথির নাকে খড় দিয়ে লাঞ্চনা মাথায় করে প্রতিষ্ঠান ছাড়া।
ঘটনা ৩
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ইইয়াং ডাক্তার আলফাজ নাঈম। মহিলা রোগীরা তার কাছে আসে নানান গোপন সমস্যা নিয়ে, সবিস্তারে বর্ণনা করে গোপন ও জটিল রোগের সমস্যা। ডাক্তারের কাছে লজ্জা করতে নেই, রোগের কারণ নির্ণয়ের জন্য রোগীর মুখ থেকে পূর্ণ বয়ান চাই। কোন রাখডাক রাখতে নেই। ভাল কথা কিন্তু রোগীর কাছ থেকে খুটিয়ে খুটিয়ে অন্দরের কথা জিজ্ঞেস করার উদ্দেশ্য শুধু রোগের পকৃত কারণ নির্ণয় নয়, রোগীর বর্ণনার সাথে সাথে রোগীর দেহভ্যান্তরের খুটিনাটি চোখের পাতায় ভাসিয়ে এনে কথার মাধ্যমে যৌনস্বাদ আস্বাদন করা, আপত্তি এখানেই!!!! প্রতিদিন রোগী দেখা শেষে বন্ধুদের আড্ডায় গল্পের রসদ হয়ে উঠে মহিলা রোগীদের নানান বর্ণনা। কৌতুহলী বন্ধুদের দল আলফাজের বর্ণনা শোনে নারীদের স্পর্শকাতর অংগ চিন্তায় মাথা নষ্ট ম্যানে পরিণত হয়। একদিন আলফাজ এক রোগির রগ্রগে বর্ণনা দিচ্ছে, বন্ধুদের মাঝ থেকে হেলাল জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা মেয়েটার নাম কী? আলফাজ জানায়, রোগীর নাম ‘মায়মুনা’। নামটা শোনেই হেলালের বুক ধক করে উঠে। আবারো শোধায়, সে কি বোরখা পড়ে তোমার কাছে আসে? আলফাজ জানায়, হা, বোরখা পড়েই এসেছিল। হেলাল প্রচন্ড ক্ষেপে যায়, চিতকার দিয়ে বলে, চুপ কর হারামজাদা, আর একটা কথাও বল্বেনা। মায়মুনা আমার বউ!!!!!
ঘটনা ৪
‘স্বামী স্ত্রীর মধুর মিলন’ নামক একটি বইয়ে ফরিদার ফুল শয্যা ১ম ২য় ৩য় রাত। সেখানে দেবর বউ ভাবী অর্থাৎ ভাসুরের বউয়ের প্রশ্নের জবাবে স্বামীর সাথে সহবাসের রগরগে বর্ণনা দেয়। ঐ বই পড়ে আমার মাথা পুরাই নষ্ট!!!! নির্লজ্জতা কাকে বলে! মেয়ে হলেই কি অন্য মেয়ের কাছে সব অনর্গল বলে দিতে হবে? দেবরের প্রতি ভাবীর দূর্বলতা অস্বীকার করা যায়না। কাহীনি বর্ণনার সময় দেবরের উলঙ্গ মূর্তী ভাবীর চোখের সামনে ভেসে উঠবে তাতে কোনরকম সন্দেহ নেই। তা থেকে পরবর্তীতে অনাকাংক্ষিত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায়না।
শিক্ষাঃ
১, নিজের বউ অথবা স্বামীর বিশেষ মুহুর্তে মেলামেশার কথা অথবা দেহের বর্ননা বা গোপন কোন কিছু অন্য কারো কাছে বর্ণনা করা বৈধ নয়। তবে একান্ত প্রয়োজনে ডাক্তার, ফতোয়াদানকারী এবং নিকট্ম্যীয় কারো কাছে বলা যেতে পারে। আল্লাহর রাসূল মেয়েদের বলছেন তারা স্বামীর রুপের বর্ণনা বান্ধবীর কাছে বর্ণনা না করে কেননা তখন বান্ধবী তার বান্ধবীর স্বামীকে কল্পনা করে।
২, নিজের কোন অপরাধ অন্যের নিকট প্রকাশ উচিত নয় বরং আল্লাহর কাছে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে পুনরায় না করার ওয়াদা করে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। তবে নিজের অপরাধ স্বীকার যদি পরিবার, সমাজ দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে আসে, তাহলে অবশ্য দোষ স্বীকার করতে হবে।
৩, বোনেরা যখন মেয়েলী সমস্যা ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়, ঠিক যতটূকু বললে ডাক্তার রোগের কারণ বুঝে নিতে পারে ঠিক ততটূকু বলবে। অসতর্ক লাগামহীন বর্নোনা ডাক্তারের বিনোদনের কারণ হতে পারে।
৪, অন্যের গোপন কথা বলা যেমন পাপ, তেমনি শোনাও সমান পাপ।
আল্লাহ আমাদের গোপনীয়তা পরস্পরের কাছে গোপনীয় করে রাখার তাওফীক দান করুন।
বিষয়: বিবিধ
২৬৭৭ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
স্ত্রীরা/প্রেমিকারা তাদের স্বামী/প্রেমিকের কাছ থেকে কি কি খসিয়েছে সেটার আলাপ কিন্তু করে বান্ধবীদের কাছে দেদারসে করে
হতভাগা ভাই এইরকম আবালের সংখ্যা নেহাত কম নয় যারা বউয়ের কথা বন্ধুদের বলে বেড়ায়, বন্ধুর সাথে বউকে অবাধ মেলামেশার ব্যবস্থা করে দেয়, ফ্রী মাইন্ড সমাজতো। তবে আপ্নারা যারা সে দলের নয় তাদের কাছে আমার এমন কথা অবিশ্যাস্যই মনে হবে।
হুম আমিও আপনার সাথে একমত, বান্ধবীর কাছে খসিয়ে দেয়ার কাহীনি বর্ণনা করে খুব পুলক লাভ করে থাকে।
আপনাকে অনেক ধন্যোবাদ, কেননা প্রথম কমেন্টটি যে আমার প্রিয় ব্লগার ভাই হতভাগার!
আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন।
আপনার সাথে একমত হয়ে বলছি- “আল্লাহ আমাদের গোপনীয়তা পরস্পরের কাছে গোপনীয় করে রাখার তাওফীক দান করুন। আমীন”
আপনি সম্ভবত আমার লিখায় প্রথম কমেন্ট করেছেন, আশা করি ভবিষ্যতেও করে যাবেন এই কামনা।
ভাল থাকুন।
না, দুনিয়া সহজই থাকবে। একজন স্বামীর দায়িত্ব স্ত্রীকে পরিচালনা করা, শুধু কিছু টাকা ভাত কাপড় দিয়ে নয়, বুঝে অথবা না বুঝে অন্যায় কাজে পা বাড়ানোর আগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া।
আমার অতীত জীবন খুব কদাকার। কাছ থেকে ভিতরে ঢুকে এতো বেশি সামাজিক অসঙ্গতি, অন্যায় পাপাচার দেখেছি, যা সবিস্তারে বর্ণনা করলে মানুষ আমাকে গালি গালাজ কতে থাকবে তাঁদের সাধুভাবের আড়ালে নষ্টামী ফাঁস হয়ে যাবে বলে।
আমার লিখা কখনো বাজে মনে হতে পারে, কিন্তু আমি অবাস্তব আজগুবী গল্প লিখি না। তাই কখনো ছোট হওয়া সত্ত্বেও লিখে ফেলি, যেমন পরকীয়া, ব্যভিচার, যৌনাচার, গর্ভপাত, মিলনে প্রতিরোধক ব্যবহার, ঢালাওভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ইসলামের গন্ডি ক্রস করে নিজের মত ফতোয়া দেয়া ইত্যাদি। য়ামি ঠোঁট কাটা স্বভাবের, মাঝে মাঝে বলতে গেলে লজ্জাটা থাকে না।
ধন্যবাদ, ভাই অনেক আগের লিখা কত কষ্ট করে পড়েছেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন