অধ্যাপক শফিউল ইসলাম হত্যা, অভিযুক্ত শিবির, জঙ্গী এবং প্রাসংগিক কিছু কথা।
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ১৬ নভেম্বর, ২০১৪, ০৮:৩০:২২ রাত
রগ কাটা শিবির! এইবার শুধু রগই কাটেনি, ডিরেক্ট মেরে ফেলেছে, প্রকাশ্য দিবালোকে, বর্বোরীয় কায়দায় কুপিয়ে! জাতীর মেরুদন্ড শিক্ষা, শিক্ষা বিতরণকারী শিক্ষক কে। শিবির একটি হিংস্রতার নাম, বাংলার প্রতিটি জনপদ আজ শিবিরীয় রগকাটা আতংকে আতংকগ্রস্ত। শিশুর বিকাশ ঘটে রগ কাটা আতংক নিয়ে। বাবা ছেলে মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর সময় বলে, “ সাবধানে থাকিস, সেখানে রগ কাটা শিবির আছে”। আমার বন্ধু, কদিন আগে পার্সোনাল কন্টাক্টে সবশেষে জিজ্ঞেস করি, শিবির সম্পর্কে জানো কখন থেকে? তার জবাব “ ঢা বি তে প্রথমবার চান্স না পেয়ে ভর্তি হই একটি প্রাইভেট বিশ্ববদ্যালয়ে, মন টিকেনা, আবার পরীক্ষা দেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, ভর্তি হওয়ার আগে ভাই সতর্ক করে দেয়, সেখানে শিবির আছে খুব, সাবধানে থাকিস ওরা রগ কেটে দেয়, কেও তাদের সাথে ঝামেলা করলে, তখন থেকেই জান তে শুরু করি। তারপরতো ঢা বিতে চলে আসি, এখন এখানে জানতেছি রগ কাটা শিবির কে”।
আমিও ছোট থেকে বড় হই সবার মুখে মুখে রগ কাটা শিবিরের নাম শোনেই। আমার গৃহশিক্ষক সবাই শিবিরের জনশক্তি ছিল, তারা আমার রগ কাটেনি, রগ কাটাও শিখায়নি, কালসের ফার্স্ট বয়, সত্য কথা বলা, হক পথে চলা আর নামাজী হতে শিখিয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শফিউল ইসলাম নৃশংশভাবে খুন হয়, তাও দিন দুপুরে। পরিবারের অভিযোগ শিবিরই মেরেছে! বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলের দাবী জঙ্গীরা হত্যা করেছে। কেননা মৃত্যুর আগে উনি প্রায় বলতেন, শিবির আমাকে মেরে ফেলার হুমকী দিচ্ছে, তারা আমাকে মেরে ফেলবে। যদিও খুনি এখনো শনাক্ত হয়নি, তদন্ত চলছে, তবু জোর দিয়ে বলে দিল শিবির মেরেছে! বাংলাদেশে একটি দল আছে, যার নাম শিবির, মুরগী চুরি থেকে শুরু করে ধর্ষণ খুন খারাবি, সব কিছুতে প্রথম অভিযোগের আঙ্গুল তাদের দিকেই উঠে, নিরপেক্ষ তদন্ত হলে আঙ্গুল অবশ্য অন্য দিকে ঘুরে যায়। দোষ করুক অথবা না, প্রমাণা মিলুক অথবা না, খুব সস্তাভাবেই শিবিরকে অভিযুক্ত করা যায়। আর সব অভিযোগ সয়ে যেতে শিবির অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ফেসবুক ফ্যান পেজের মাধ্যমে আনসার আল বাংলাদেশ নামক একটি সঙ্গঠন এই হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছে, এই খবরের নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণের চেষ্টা চলছে, তবু শিবির কে জড়ানো হাস্যকর বটে।
এইতো কিছুদিন আগে রা বি ক্যাম্পাসে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটে, প্রথম আলো ফেসবুক ফ্যান পেজে রিভল্ভার হাতে গুলিরত অবস্থায় একটি যুবকের ছবি দিয়ে বলা হয় শিবিরের ক্যাডার, ক্যাম্পাসে অশ্র নিয়ে প্রবেশ করেছে! শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টায় সুবিধা করতে পারেনি, সেদিনই বাঁশেরকেল্লা প্রমাণ করে, রিভল্ভার হাতে যুবকটি শিবিরের কেও নয়, যুবলীগের ক্যাডার, নাম পরিচয় সহ ছবি দেওয়া হয়, সেই রাতেই প্রথম আলো ফ্যান পেইজ ছবিসহ নিউজটি সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়, কি জঘন্য মিথ্যাচার!!!! রা বি ক্যামপাসে ছত্রলীগের প্রথম সারীর একজন নেতা তুহিন। কে বা কারা রগ কেটে দেয়, রব উঠে শিবির করেছে! তদন্তে পরে জানা যায় তুহিন আভ্যন্তরীণ কোন্দলের স্বীকার। আমার হল লাইফ শুরু হয় ছাত্রলীগের নিজেদের মধ্যে মারামারী দেখে। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যোক আহত হওয়ার ঘটোনা ঘটে। রক্তাক্ত সংঘর্ষে ৭০ জন আহত হয়। সিড়ি, বারান্দা, হল রুম, গেস্ট রুম, এন্টারটেইন রুম, দেয়াল মাঠ রকে রঞ্জিত হয়। একজন মাঠের কোণে রক্তমাখা নিথর দেহ নিয়ে পড়ে থাকে, সারাশরীর কুপের আঘাতে জর্জরিত। যেই সিএনজি তে উঠাতে যাবো, পুলিশের টিয়াল শেল আর ধাব্রানী খেয়ে হলের দিকে জান নিয়ে দৌড় দেই। সেদিন বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছিল, শিবির নয়, ছাত্রদল নয়, নিজেরাই নিজেদের কেমন করে এমন রক্তাক্ত করতে পারে! এটা ভাবা বেশি হবেনা যে, শিবির কে জড়ানোর উদ্দেশ্যেই রা বি তে ছাত্রলীগ অথবা শিবির বিদ্বেষী অন্যো কেও এই হত্যাকান্ড ঘটীয়ে থাকবে।
গত এক দশকে রা বি তে তিনজন শক্ষক খুনের স্বীকার হয়। প্রথম জন ড। ইউনুস, বঙ্গপরিষদ সভাপতি ছিলেন। অভিযুক্ত হয় শিবির। পরে প্রমাণ হয় শিবির নয়, তারা মুক্তি ও পায়। ২য়জন এ আস তাহের, সেখানেও অভিযুকত এক জামাত সমর্থক শিক্ষক এবং ততকালীন শিবির সভাপতি, যাদের মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয় মিথ্যা অভিযোগে, পকৃত খুনিরা ধরা ছোয়ার বাহিরেই রয়ে যায়। সর্বেশেষ শফিউল ইসলাম হত্যার পিছনেও সস্তা অভিযোগ শিবিরের বিরুদ্ধেই দেওয়া হয়। খুনিদের ধারণা এই অভিযোগ মানুষ বিশ্বাস করবে, কেননা শফিউল সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে বোরখা নিশিদ্ধ করে, নাম্বার কম দেওয়া পরীক্ষা দিতে না দেওয়া, ক্লাসে দাড় করিয়ে রাখার হুমকী দেওয়া হয় তার পক্ষ থেকে। অনেক মেয়ে বোরখা খুলে আসতে বাধ্য হয়, কেও আসলেও ভয়ে থাকে কখন অপমান করে বসে আর কেও ক্লাস করাই বন্ধ করে দেয়। এইসব ব্যাপারে শিবির বেশ সরব। সো ইসলাম বিরোধী এমন শিক্ষক কে শিবিরই মেরে থাকবে! এটাই মানুষ বিশ্বাস করবে।
উনি একজন শিক্ষক। সিক্ষকের যখন ছাত্রীর উপর কুনজর পড়ে, নাম্বার কম পাওয়ার ভয়ে ছাত্রী হয় তার সাথে মিশতে হয় নয়ত ইজ্জত রক্ষা করতে প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে যায়। ঘরে স্ত্রী দুই সন্তান রেখে বউয়ের অনুমতি না নিয়ে বিভাগের এক ছাত্রীকে বিয়ে করে শফিউল সাহেব। সহ্য করতে না পেরে স্ত্রী আত্মহত্যা করে। ২য় স্ত্রী কে তালাক দেন সৎ সন্তান্দের বিষ পানে মেরে ফেলার চেষ্টা করার অভিযোগে। আবারো বিয়ে করেন, আরো অভিযোগ আছে অনেক নারীর সাথে পরকীয়ার, আল্লাহ ভাল জানেন। আমার ডীপার্ট্মেন্টে এক শিক্ষক ছাত্রীর সাথে প্রেম করে পেটে বাচ্ছা দিয়ে রিলেশন ব্রেক আপ করে, আর অনাগত সন্তান টি এবরশনের মাধ্যমে পৃথিবীর মুখ দেখা থেকে বঞ্চিত হয়। সে ছাত্রী এখন আমাদের পড়ান, উনার প্রেমীক শিক্ষক ও আমাদের পড়ান। এখানেই শেষ নয়, পরে আবার আরেক ছাত্রীর প্রেমে পড়েন, এইবার আর পেটে বাচ্ছা দেন নি, বিয়ে করে ফেলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে নাকি এইসব হতেই পারে, হয় হয় এমন হয়। কি যুগরে বাবা, একি সাথে প্রাক্তন প্রেমিক প্রেমিকা আর নতুন বউ!
কে পকৃত খুনি, তদন্তে বের্যেে আসবে, অথবা নানা ঘটনার আড়ালে ধামাচাপা পড়ে যাবে। কিন্তু কিছু না দেখে না জেনে সব কিছুতে শিবির কে অভিযুক্ত করার নোঙরা অভ্যাস ত্যাগ করা ভাল নয় কি!!!! আনসার আল বাংলাদেশ২ নামুক সং গঠনটি বোরখা নিষিদ্ধ করার শাস্তি হিসেবে শফিউল কে হত্যা করেছে, এমন দায় স্বীকারের পর বোরখা বিদ্বেষী শিক্ষকদের মধ্যে মৃত্যু ভীতির সঞ্চার হবে সন্দেহ নেই। মানহানী, চর থাপ্পর অথয়া হামলা করে সামান্য আহত নয়, বরং মেরে ফেলাতে মৃত্যু ঝুকির কারণে বোরখা পরা নিয়ে উক্ত শিক্ষকদের চুলকানী কিছুটা হলেও থামবে।
তার হত্যাকান্ডে অনেকে খুশি হতে পারে ইসলাম বিদ্বেষী বলে , আমি নই। এইভাবে একা পেইয়ে কাওকে হত্যা করা শুধু প্রতিশোধ স্পৃহা বাড়াবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু নাস্তিক মার্কা বা ইসলাম বিদ্বেষী ছাত্র শিক্ষক থাকেনা, ধর্ম ভীরুরাও থাকে। তারাও যদি ধর্মভীরু কাওকে একা পেয়ে মেরে ফেলে ( যদিও তারা ধর্ম ভীরুদের মেরেও থাকে) প্রতিশোধের জ্বলা মেটায়, তাহলে যে যেখানে যেখানে হত্যাকান্ড ঘটতেই থাকবে। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমেই নাসিত্যকতার অবসান ঘটাতে হবে, তাতেও যদি কাজ না হয় সকল ইসলামীদল গুলো একাট্টা হয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টা মাধ্যোমে ইসলাম বিরোধীদের শায়েস্তা করবে। তাতেও কাজ না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাবে আর অপেক্ষা করবে রাস্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে আসার, ‘ইসলাম কারো কাছে মাথা নোয়ায়না, মুসলমানরা বীরের জাতী’ এই কথা মাথায় রেখে ইসলাম বিদ্বেষী সকল কর্মকান্ডের অবসান ঘটাতে হবে। দুই একজন কে একা পেয়ে হত্যা করা কোন সমাধান নয়। যদি আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ২ মেরে থাকে এই কথা তাদের জন্যো প্রযোজ্য। কিন্তু পারিবারিক কলহের জের ধরে অথবা অন্যো কোন কারণে হত্যাকান্ডটি ঘটে থাকলে তবেতো যথা তথা।
বিষয়: বিবিধ
১৫৫৩ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
প্রথম কমেন্ট টি আপনার! আমার যে কি ভাল লাগছে বলে বুঝানো যাবেনা। ভাল্ থাকুন সুস্থ থাকুন এই কামনা করি।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
সাথে থেকে ভাললাগা অব্যাহত রাখুন।
শ্রদ্ধা ও ভালবাসা দিলাম, নিয়ে নেবেন।
বিশেষ ধন্যবাদ ফেরারী ভাই। ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন এই কামনা।
সত্য তিক্ত, আবারও জেলে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখতাছি.।
আল্লাহ আপনাকে ভালো রাখুক ধন্যবাদ।।
জেলের ভয় করলে ভিতর থেকে সত্য তিক্ত যে বেরিয়ে আসবেনা ভাই!!!! ভয়টা আপাতত শিকায় তুলে রাখলাম।
আপনার দোয়া যেন আল্লাহ কবুল করেন আমিন।
আপ্নাকেও অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।
সুন্দর গোছানো মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
ভাল থাকুন শেখ ভাই।
নিত্য খায় দুধ কলা"
এই কথার মতই চলছে সবকিছু! আপনার সর্বাধিক কল্যান কামনা করি আল্লাহ সাহায্য করুন সবসময়!
আপনি যথার্থই বলেছেন "চোরের মায়ের বড় গলা
নিত্য খায় দুধ কলা" এই কথার মতই চলছে সবকিছু!
আল্লাহ নিশ্চয়ই কবুল করবেন আপনার দোয়া।
আল্লাহ যেন আপ্নাকেও সদা সর্বদা সুস্থ স্বাভাবিক রাখেন।
সব দোষ এক জায়গায় চাপাইতে পারলে পুলিশের কষ্ট কমে।
যদি তদন্ত না করেই কারো উপর সহজে দোষ চাপানো যায় তবে কষ্ট করার কি বা দরকার।
সুন্দর কমেন্টের জন্য অশেষ ধন্যোবাদ সবুজ ভাই।
ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন
সুন্দর কমেন্টের জন্যো শুভেচ্ছা ও ভালবাসা নিবেন।
প্রিয়জন আছেন আছেন থাকুন প্রিয়জন হয়েই।
শুভেচ্ছা ও ভালবাসা নিবেন। ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন এই কামনা।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য। ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন এই কামনা।
সত্য চির ভাস্বর হলেও মিথ্যা প্রপাগান্ডা অনেক দিন পর্যন্ত সত্য কে দমিয়ে রাখতে পারে! শিবির-জামাতের বিষয়টি মাথায় আনলেই এ কথার বাস্তবতা উপলব্ধি করা যায়!
বাংলাদেশীদের বুদ্ধি-বিবেক পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে!সর্বশ্রেণীর লোকই এই প্রকারে!তা না হলে এই যে জামাত-শিবিরের বিরোদ্ধে এত সব মিথ্যা অভিযোগ কখনো তার প্রমান মিলেছে...???
তারপরেও শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই কেমন মিথ্যার পিছু নেয়া ছেড়েছে কি???
যুক্তিপুর্ণ সাবলীল উপস্হাপনার জন্যে অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহ জানাচ্ছি!!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন