ভারাক্রান্ত্র মনের অব্যক্ত কিছু কথা
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ০৫ নভেম্বর, ২০১৪, ০৭:০০:৫৩ সন্ধ্যা
আমার জন্ম ইহুদী, খৃষ্ঠান, হিদু অথবা বৌদ্ধ দেশে হলেই ভাল হত! যেখানে ৯০% মুসলমানের বসবাস নেই, যেখানে আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি কটুক্তি, কোরআন হাদিসের প্রতি অবমাননা ও কুরুচি মন্তব্য, মন্তব্য করে তার উপর দাম্ভিকতা প্রকাশ, ইসলামী বই পড়ার অপরাধে গুরুদন্ডের কথা শোনে আনন্দ উল্লাস করতে পারতাম। কিন্তু না, আমার জন্ম সেসব দেশে হয়নি, হয়েছে বাংলাদেশে, যে দেশটি ইসলাম প্রচার ও প্রসারের জন্য উর্বর স্থান, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান, ওলী আল্লাহর দেশ, ধর্মের পথে জীবন উতসর্গ করে দেয়া অগণিত শহিদদের রকে রঞ্জিত ভূমি। তাই এই দেশে বাস করে কোরআন হাদিস, আল্লাহ রাসূল নিয়ে কটুক্তি অবমাননা, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, নিবেদিত প্রাণ মুসলমান, দায়ী ইলাল্লাহদের উপর অবর্ননীয় নির্যাতন, বাড়িঘরে হামলা, মেয়ে ছেলেদে ইজ্জত হরণ, হত্যা জেল জুলুম দেখে দারুণভাবে আহত হই।
প্রশ্ন জাগে, অত্যাচারিত কারা আর অত্যাচারী কারা? উভয়েই মুসলমান, দেশটাও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ, ধর্ম ও ইসলাম। অবাক বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ, এখন আর চোখে জল আসেনা, অধিক শোকে পাথর হয়েছে মন, ভিতরটা ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেলেও বাহির দেখে বুঝবেনা কতটা খারাপ আছি। জানে শুধু অনর্জামী। মহররাম মাস, মনে পড়ে যায়, কারবালার বিভীষিকার কথা। একদল বিপথাগামী মুসলমান তথা ইয়াজিদ বাহিনীর হাতেই রাসূলের প্রিয় দৌহিত্র সেদিন নির্মম্ভাবে শাহাদাত বরণ করেন। ইয়াজীদের উত্তরসুরীরা যুগ যুগ ধরে থাকবে, কাফের মুশরিকরা যতটা ইসলামের ক্ষতি করবে তার চেয়ে বেশি করবে মুসলমানরা।
গত দুদিন ধরে একটা সংবাদ আমাকে অস্থির করে তুলে। ‘তিনজন মেয়ে গভির রাতে নামাজ ঘরে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে গেলে নামাজ রত অবস্থায় তাদের আটক করা হয়, একটি কক্ষে নিয়ে বেধরক মারধর এবং হল থেকে বের করে দেয়া হয়’। মেয়েদের উপর অত্যাচার কখনোই সইতে পারিনা, আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ি। তার উপর নির্যাতন যদি করা হয় নামাজ পড়া অবস্থায়, একজন মুসলমান হিসেবে কেমন করে সইব! মনে পড়ে, নামাজে আক্রমণ এটাই প্রথম নয়, আগেও নামাজে গুলি, নামাজ্রত মুস্ললিদের উপর বোমা বর্ষণ, মসজিদে আটকে রেখে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা, মসজিদ গুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। অশান্ত মন আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানায়, কেন নামাজীদের সুরক্ষা আল্লাহ দিচ্ছেনা, কেন অত্যাচারিতদের কালো হাত ভেঙ্গে দিচ্ছেন না? আল্লাহ পাকের সহ্য হয় কেমন করে প্রিয় বান্দাদের উপর অত্যাচার দেখে? হতাশ মন ফিরে তাকায়, রাসূলের জামানার দিকে, প্রিয় নবীর নামাজরত অবস্থায় আবু জেহেল ঘাড়ের উপর উটের পচা নাড়ি ভূড়ি চাপিয়ে দেয়, হজরত ওমরের নামাজ পড়া অবস্থায় আবু লুলু নামক এক ব্যক্তি তীর ছূড়ে মারলে তিনি এই অবস্থাতেই শাহাদাত বরণ করেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তখনও নীরব ছিলেন, শাস্তি দেন নি। চূড়ান্ত দিনেই শাস্তি দিয়ে আমাদের অশান্ত মন কে শান্ত করবেন।
আবু জেহেলের উত্তর সুরী এখনো বিদ্যমান, আপ্নারা ইতোমধ্যে জেনে থাকবেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে নামাজঘরে তাহাজ্জুত নামাজ পড়তে গেলে তিন জন মেয়েকে ধরে বেধরক মারধর করে হল থেকে বের করে দেয়া এবং একাডেমিক ভাবেও কঠিন সিদ্ধান্ত আসতে পারে। পত্রিকার রিপোর্ট অনুসারে নামাজ ঘরে নাকি ২০-৩০ টি ইসলামী বই পাওয়া গেছে, তারপর থেকে নজর দারী করা হয় নামাজীদের উপর, কে পড়ে এইসব বই! মেয়ে তিনটির রুমেও নাকি ৩০-৪০ টি ইসলামী বই পাওয়া গেছে। বিচারা বিশ্লেষণ করে দুটি ছাত্র সংঠনের কর্মী সন্দেহে হল থেকে বের করে দেয়া হয়। জানিনা বোনদের কপালে কি দূর্গতি অপেক্ষা করছে! কিছু ভাইয়ের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার আমাকে দারুণভাবে আহত করেছে। বোনদের ব্যপারে আশংকায় রয়েছি। আল্লাহ উত্তম হেফাজতকারী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে প্রশ্ন, নামাহ ঘরে ইসলামী বই থাকবেনাতো কি থাকবে? গীতা, রামায়ন, বাইবেল,নাকি কোন গল্প উপন্যাস, অথবা কারো আত্মজীবনী? বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নিয়মে লিখা আছে নামাজ ঘরে ইসলামী বই রাখা যাবেনা? গভীর রাতে তাহাজ্জুত পড়া যাবেনা, পড়লেই হল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার হওয়ার কারণ বলে গন্য হবে? টেবিলে গাদা গাদা বইয়ের পাশে মহাগ্রন্থ আল কোরআনের একখানা কপি আর দুই একটা ইসলামী পাওয়া গেলেই জিহাদী বলে বিবেচিত হবে? অন্য সংঠনের কর্মী সন্দেহে কিছু ছাত্র সংগঠন প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য অত্যাচার করতে পারে, কিন্তু কর্তিপক্ষ কেন কোন নিয়ম কে অনুসরণ করে ভিন্ন মতাদর্শি কর্মীদের হল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দিবে? তাদের উত্তর হবে হয়ত একটা হাস্যকর গোজামিল। “ ওরা হলে বসে জিহাদী কর্মকান্ড চালাচ্ছে”।
তাহলে বলতেই হয়, আল্লার রাসূল জিহাদী ছিলেন। তিনিও রাত বিরাতে তাহাজ্জুত নামাজ পড়তেন, লোক জড়ো করে কোর আন হাদিস শিক্ষা দিতেন। ঘরে বাহিরে শিক্ষা পরিতিষ্ঠানে মসজিদে তথা সবকিছুতে ইসলাম কে পরিব্যপ্ত করেছেন। আল্লাহর রাসুল জিহাদী হওয়া সত্ত্বেও তার দরুদ পড়তে পড়তে মুখ দিয়ে লালা ঝরাচ্ছে অনবরত, আবার তার জিহাদী পন্থাকে অনুসরনকারীদের জিহাদী জিহাদী বলে অপমান অপদস্থ জীবন নাশ করে ছাড়ছে। এমন দ্বৈত নীতি অবলম্বন ভন্ডদের পক্ষেই সম্ভব! কিছু জগত বিখ্যাত তাফসীর কারক, লিখক দের তাফসীর, বই দেখলেই যদি বিশ্ববিদ্যালয় হল কর্তিপক্ষের অথবা নাম ধারী ছাত্র সংগঠন গুলোর গায়ে জ্বালা ধরে যায়, তাহলে উক্ত লেখকের বই গুলো সরিয়ে ফেল্লেইত হয়। কিন্তু বই পড়া, রাখার অপরাধে ছাত্র ছাত্রীদের বের করে দেয়ার জন্য কর্তিপক্ষের ভূমিকা আবু জেহেলদের উত্তরসুরীদের উপযুক্ত ভূমিকা হিসেবেই বিবেচিত হয়।
দেশে যখন আজ এইভাবেই স্বীয় দ্বীনি ভ্রাতাদের হাতে ইসলাম, ইসলামের পথে অনুসারী, তার উৎস কোরআন হাদিস, ইসলামী বই প্রতিনিয়ত লাঞ্চিত হচ্ছে, তখন রাষ্ট্রযন্তের কর্তা ব্যক্তিদের মুখে এই কথা মানায় না “ আমাদের সময়ে ইসলাম সবচাইতে নিরাপদ আছে”। এইরকম কপোট দুমুখী আচরণ করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের মনে নিদারুণ আঘাত দিয়ে সহজে পার পাওয়া যেতে পারে, কারণ তারা দুর্বল অসহায়, মজলুম, কিন্তু আল্লাহর কাছে পার পাওয়া যাবেনা, কেননা মজলুমের দোয়া আল্লাহর কাছে দ্রুত পৌছায়। আল্লাহ কর্তিক শাস্তি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। কি জবাব দেবেন সেদিন? মুখে তালা পরানো হবে, আপ্নার হা পা চোখ সাক্ষী দেবে নিরপরাধ মেয়ে গুলোকে তাহাজ্জুত নামাজ পড়া অবস্থায় মারধর করেছেন, টেবিলে কোরআন, নামাজ ঘরে ইসলামী বই রাখার অপরাধে অথবা ইসলামী সংগঠন করার অপরাধে অপমান জনক ভাবে হল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দিয়ে শিক্ষাজীবন কে হুমকীর মুখে ঠেলে দিয়েছেন। সেদিন মুখ মিথ্যা বলতে চাইবে, সেজন্যোইত হাত পা থেকে সাক্ষী গ্রহণ করা হবে, বলবে তাদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই পা এই হাত দিয়ে নিষ্ঠুর ভাবে তাদের পূত পবিত্র শরীরের উপর আঘাতের পর আঘাত করেছে। সেদিন আজকের সাময়ীক প্রভাব প্রতিপত্তি কোন আকজে আসবে না।সব চলবে আল্লাহর কতামত। তাহলে প্লিজ বন্ধ করুন ইসলামের অবমাননা, অনুসারীদের প্রতি নির্দয় ব্যবহার।
সবশেষে অত্যাচারিত বোনদের বলছি, ভেঙ্গে পড়বেন না, নিরাশ হবেন না এই জন্যো যে, আপ্নারা বহিস্কৃত হন নি বড় বড় সাহেবদের মনোরঞ্জনের সামগ্রী হতে গিয়ে, রুমে বয় ফ্রেন্ড কে ডেকে এনে নোংরামীতে ধরা পড়তে গিয়ে, ক্যন্টিনে ফাও খাওয়ার অপরাধে, রুমে বসে নেশা করতে গিয়ে, অবৈধ অস্র রাখার অপরাধে। বরং আপ্নারা বহিস্কৃত হয়েছেন হলের মত ইসলাম বৈরি পরিবেশে আল্লাহর রঙ্গে জীবন রঙ্গীন করার প্রচেষ্টার জন্য। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করুন। যেকোনো সিদ্ধান্ত আসুক না কেন, ধৈর্য ধরুন, মনোবল চাঙ্গা রাখুন।আল্লাহর উপর ভরসা করুন। এই হাদিসটি মনে রাখুন, ‘ মুমিনদের ব্যপারখানা বড় আশ্চর্যজনক, বিপদ এলে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা ভেবে ধৈর্য ধারণ করে, সুসময় আসলে আল্লাহর কৃপা ভেবে শোকরিয়া আদায় করে’। সকল অবস্থায় আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন, হেফাজত করুন। আমিন।
বিষয়: বিবিধ
১৭০৪ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
"আর তোমরা নিরাশ হইও না এবং দুঃখ কোরও না। যদি তোমরা মুমিন হও, তোমরাই জয়ী হবে।" (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১৩৯)
জাযাকাল্লাহ খইর
ভাল থাকুন ভাল রাখুন। জাজাকাল্লাহু খাইর।
মানুষ আসলে বড়ই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে।
তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করতে থেকেছে এবং একজন অন্যজনকে হক কথার ও সবর করার উপদেশ দিতে থেকেছে।
মনটা এমনিতেই ভালনাই আজ ৬/৭ দিন যাবত, আমরা কোথায় যাচ্ছি, কেন ইসলামি আন্দোলন কর্মীদের এই অবস্থা, আল্লাহ কি আমাদের নতুন কোন মেসেজ দিচ্ছেন?নাকি এরই মাধ্যমে জান্নাতের ফয়সালা করতাছেন? আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই ভালো জানেন ।
জাজাকাল্লাহু খাইর। ভাল থাকুন ভাল রাখুন।
জাজাক্কাল্লহু খাইর। ভাল থাকুন ভাল রাখুন, আমার জন্য দোয়া করবেন আপু।
কিন্তু আমরা তো এখন প্রতিবাদি হতেই ভুলে গিয়েছি। কেউ তো জবাব চাইছে এই কাজের। সবাই যেন হৃদয়হিন হয়ে গিয়েছি।
জাজাক্কালহু খাইর।
আপ্নাকেও অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকুন ভাল রাখুন এই কামনা। দোয়া করবেন আমার জন্য।
নির্মম বাস্তবিকের এমন সাবলিল উপস্হাপনা মন্তব্যের ভাষা কে আটকে দেয়!এই অবস্হার পরিবর্তনে নিজেদের ব্যর্থতা-অক্ষমতা কুড়ে কুড়ে খায় যেন! আর কতটা পরিস্হিতির অবনতি হলে আমাদের হুশ ফিরবে......???
হুশ ফিরতেই হবে। ধন্যোবাদ ভাল থাকুন ভাল রাখুন, দোয়া করবেন ।
ধন্যবাদ আপ্নাকেও।
আল্লাহ জালিমদের হেদায়াত দান করুন।
ধন্যবাদ অয়ন ভাই, সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন